প্রাককথা
এই উপনিষদের প্রথম শব্দ ‘ঈশা’ – ‘ঈশা বাস্যমিদং...’ ইত্যাদি, এই ঈশা শব্দ থেকেই এই উপনিষদের নাম ঈশোপনিষদ্।
মূল
ঈশোপনিষদ্খানি পদ্যের আকারে লেখা এবং অনেক পণ্ডিত এটিকে সবথেকে প্রাচীন বলে
অনুমান করেন। মাত্র আঠারোটি মন্ত্রের এই উপনিষদে, মূল তত্ত্বের যে ভাবে ব্যাখ্যা
করা হয়েছে, তাতে পণ্ডিত ব্যক্তিরা এই উপনিষদ্টিকে, শ্রেষ্ঠ উপনিষদ্গুলির মধ্যে
অন্যতম মনে করেন। সুপ্রাচীন কাল থেকে বহু পণ্ডিতজন এই উপনিষদের ব্যাখ্যা এবং ভাষ্য
লিখে গেছেন। তাঁদের মধ্যে সে যুগের আচার্যশংকর, মধ্ব, রামানুজপন্থী নারায়ণ যেমন
আছেন, তেমনি আছেন এ যুগের দিকপাল মনস্বী ও বিদগ্ধজনেরাও। ঋষি শ্রীঅরবিন্দ, ডাঃ
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এঁদের মধ্যে অন্যতম।
এই
উপনিষদের প্রথম মন্ত্রঃ
“ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ
জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ
কস্য স্বিদ্ধনম্”।।
এই উপনিষদের এই প্রথম শ্লোকটি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্মজীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। মহাত্মা গান্ধী এই মন্ত্রটি সম্বন্ধে বলেছেন, “...যদি সমস্ত উপনিষদ্ ও শাস্ত্র পুড়ে নষ্ট হয়ে, শুধু এই মন্ত্রটি রক্ষা পায়, তাহলে এই একটি মন্ত্রের জন্যই সকল হিন্দুদের মনে হিন্দুধর্ম চিরকাল সজীব থাকবে”। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধীও এই উপনিষদের কোন কোন অংশের ব্যাখ্যা করেছিলেন।
এই বিশ্ব চরাচরের সমস্ত জড় ও জীবে ব্রহ্ম ব্যাপ্ত রয়েছেন – অর্থাৎ তিনি সর্বব্যাপী। তিনি জ্যোতির্ময়, অশরীরি, বিশুদ্ধ, নিষ্পাপ, সর্বদর্শী ও স্বয়ম্ভূ। ব্রহ্মের এই স্বরূপ যিনি অন্তরে উপলব্ধি করতে পারেন, তিনি সর্বভূতে নিজেকেই দেখতে পান, সকলকে একাত্ম অনুভব করেন। অতএব তিনি কাউকে বিদ্বেষ বা ঘৃণা করতে পারেন না।
এই
বহুত্বের সঙ্গে একাত্মতার অনুভবকেই বলা হয়েছে ‘বিদ্যা’। আর একাত্মতা অনুভব না করে,
প্রত্যেকের আলাদা আলাদা অস্তিত্বের অনুভবকে বলা হয়েছে ‘অবিদ্যা’। যা কিছু সৃষ্টি
হয়েছে, বা নির্মিত হয়েছে, তাকে বলা হয়েছে ‘সম্ভূতি’, আর যা কিছু শাশ্বত ও সনাতন
তাকে বলা হয়েছে ‘অসম্ভূতি’। ‘অহং’ অর্থাৎ আমিত্ব বোধ থেকে মানুষের মনে অহংকার আসে,
আর এই প্রকৃতিতে জন্মের বন্ধন আসে মনের অহংকার থেকে। মন থেকে এই অহংবোধ বিনাশ করতে
পারলে মানুষ অসম্ভূতি অবস্থা লাভ করে, এই অবস্থাকে তাই ‘বিনাশ’ও বলা হয়েছে।
ব্রহ্ম
একদিকে বিদ্যা, অন্য দিকে অবিদ্যা; একদিকে সম্ভূতি, অন্য দিকে অসম্ভূতি। মানুষ তার
জন্মগত অহংবোধের বিনাশ করতে পারলে, সে মুক্তি লাভ করে এবং সম্ভূতি অবস্থাতে থেকেও
অসম্ভূতি অবস্থার অমৃতত্ব ভোগ করতে পারে।
শান্তিপাঠ
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুচ্যতে। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ |
ওঁ পূর্ণম্ অদঃ পূর্ণম্ ইদং পূর্ণাৎ পূর্ণম্ উচ্যতে। পূর্ণস্য পূর্ণম্ আদায় পূর্ণম্ এব অবশিষ্যতে।। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ |
ব্রহ্মাণ্ডে নিরাকার রূপে যিনি পূর্ণ, এই জগতে সাকার
রূপেও তিনি পূর্ণ,
পূর্ণ থেকেই পূর্ণের সৃষ্টি, পূর্ণ থেকে পূর্ণ গ্রহণ
করলেও, পূর্ণই অবশিষ্ট থাকেন।
সকল বিঘ্নের শান্তি হোক।
অর্থাৎ ব্রহ্ম এই জগতের ঊর্ধে, আবার এই জগতের সর্বত্রই তিনি ব্যাপ্ত। এই জগতের সৃষ্টি কিংবা বিনাশে তিনি কোনভাবেই প্রভাবিত হন না।
[জীবের
তিন ধরনের বিঘ্ন, আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক এবং আধিভৌতিক। আধ্যাত্মিক বিঘ্ন বলতে,
শারীরিক কিংবা মানসিক রোগ বোঝায়, আধিদৈবিক বিঘ্ন বলতে, প্রাকৃতিক অর্থাৎ ঝড়, বন্যা,
ভূমিকম্প ইত্যাদি বোঝায়, আর আধিভৌতিক বলতে হিংস্র প্রাণী, সাপ, বিছে ইত্যাদির
দংশনের বিপদ বোঝায়।]
ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ। তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্।। ১ |
ঈশা বাস্যম্ ইদম্ সর্বম্ যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ। তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিৎ ধনম্।। |
এই জগতে
যা কিছু অনিত্য বিষয় আছে, সর্বত্রই ঈশ্বর ব্যাপ্ত আছেন। এই জাগতিক বিষয়ের আসক্তি
ত্যাগ ক’রে আনন্দ করো। অর্থের কামনা ক’রো না, কারণ সে অর্থ কার?
কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি
জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ। এবং ত্বয়ি
নান্যথেতোঽস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নর।। ২ |
কুর্বন্ এব ইহ কর্মাণি
জিজীবিষেৎ শতম্ সমাঃ। এবং ত্বয়ি ন অন্যথা ইতঃ
অস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নর।। |
কোন
ব্যক্তির শতবর্ষ বাঁচার ইচ্ছে হলেও, তাকে সর্বদাই কর্তব্য কর্ম করে যেতে হয়; এ
ছাড়া অন্য উপায় নেই, কিন্তু এই কর্তব্য কর্ম যেন তার মনে আসক্তি সৃষ্টি না করে।
অসূর্যাঃ
নাম তে লোকা অন্ধেন তমসাবৃতাঃ। তাংস্তে
প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি যে কে চাত্মহনো জনাঃ।। ৩ |
অসূর্যাঃ
নাম তে লোকা অন্ধেন তমসা-আবৃতাঃ। তান্
তে প্রেত্য অভিগচ্ছন্তি যে কে চ আত্মহনঃ জনাঃ।। |
আত্মার উপলব্ধি নেই যে সকল ব্যক্তির, তারা মৃত্যুর পর অজ্ঞানের অন্ধকারে, অন্ধের মতো জ্যোতিহীন তমসাচ্ছন্ন অসুরলোকে যাত্রা করে।
অনেজদেকং
মনসো জবীয়ো নৈনদ্দেবা আপ্নুবন্ পূর্বমর্ষৎ। তদ্ধাবতোঽন্যানত্যেতি
তিষ্ঠৎ তস্মিন্নপো মাতরিশ্বা দধাতি।। ৪ |
অনেজৎ
একম্ মনসঃ জবীয়ঃ ন এনৎ দেবাঃ আপ্নুবন্ পূর্বম্ অর্ষৎ। তৎ
ধাবতঃ অন্যান্ অতি-এতি তিষ্ঠৎ তস্মিৎ অপঃ মাতরিশ্বা দধাতি।। |
এই আত্মা গতিহীন, অথচ মনের থেকেও
দ্রুত গতিশীল। আত্মা অত্যন্ত দ্রুতগামী বলেই ইন্দ্রিয়সমূহ আত্মার সন্ধান পায় না।
আত্মা স্থির থেকেও মন ও ইন্দ্রিয়সকলকে অতিক্রম করেন। আত্মার উপস্থিতির কারণেই বায়ু
সমস্ত কর্মের বিভাগ করতে পারেন।
[আগুনের
দাহিকা, সূর্যের জ্যোতি, মেঘের বর্ষণ ইত্যাদি কর্মের বিভাগ।]
তদেজতি
তন্নৈজতি তদ্দূরে তদ্বন্তিকে। তদন্তরস্য
সর্বস্য তদু সর্বস্যাস্য বাহ্যতঃ।। ৫ |
তৎ
এজতি তৎ ন এজতি তৎ দূরে তৎ উ অন্তিকে। তৎ
অন্তরস্য সর্বস্য তৎ উ সর্বস্য অস্য বাহ্যতঃ।। ৫ |
আত্মা
স্থির, আত্মা চঞ্চল। অজ্ঞানীর থেকে তিনি দূরে থাকেন, কিন্তু জ্ঞানীর খুব কাছেই
থাকেন। তিনি সমস্ত জগতের অন্তরে রয়েছেন, আবার বাইরেও তিনিই রয়েছেন।
যস্তু
সর্বাণি ভূতান্যাত্মন্যেবানুপশ্যতি। সর্বভূতেষু
চাত্মানং ততো ন বিজুগুপ্সতে।। ৬ |
যঃ
তু সর্বাণি ভূতানি আত্মনি এব অনুপশ্যতি। সর্বভূতেষু
চ আত্মানং ততঃ ন বিজুগুপ্সতে।। |
কিন্তু
যে ব্যক্তি জগতের সমস্ত বিষয়কে আত্মস্বরূপে এবং সর্ব বিষয়ের মধ্যে নিজের আত্মাকে
দেখতে পান, তিনি কাউকেই বিদ্বেষ করতে পারেন না।
যস্মিন্
সর্বাণি ভূতান্যাত্মৈবাভূদ্বিজানতঃ। তত্র
কো মোহঃ কঃ শোক একত্বমনুপশ্যতঃ।। ৭ |
যস্মিন্
সর্বাণি ভূতানি আত্ম এব অভূৎ বিজানতঃ। তত্র
কঃ মোহঃ কঃ শোকঃ একত্বম্ অনুপশ্যতঃ।। |
জগতের সমস্ত বিষয়ের আত্মা যখন
জ্ঞানীর আত্মার সঙ্গে মিলে একাকার হয়ে যায়, তখন সেই একাত্ম জ্ঞানীর কাছে, মোহই বা
কি; শোকই বা কিসের?
স
পর্যগাচ্ছুক্রমকায়মব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্। কবির্মনীষী
পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথাতথ্যতোঽর্থান্ ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।। ৮ |
স
পর্যগাৎ শুক্রম্ অকায়ম্ অব্রণম্ অস্নাবিরম্ শুদ্ধম্ অপাপবিদ্ধম্। কবিঃ
মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূঃ যাথা-তথ্যতঃ অর্থান্ ব্যদধাৎ শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।। |
এই আত্মা সর্বব্যাপী, জ্যোতির্ময়,
অবয়বহীন, অক্ষত, স্নায়ুশিরাহীন, পবিত্র ও অপাপবিদ্ধ। সর্বদর্শী মনের অধিকারী, সবার
শ্রেষ্ঠ এবং স্বয়ম্ভূ এই আত্মা, কর্মফল ও তত্ত্বজ্ঞান অনুযায়ী শাশ্বতকাল ধরে যথাযথ
কর্তব্য কর্ম স্থির করে দিয়েছেন।
অন্ধং
তমঃ প্রবিশন্তি যেঽবিদ্যামুপাসতে। ততো
ভূয় ইব তে তমো য উ বিদ্যায়াং রতাঃ।। ৯ |
অন্ধং
তমঃ প্রবিশন্তি যে অবিদ্যাম্ উপাসতে। ততঃ
ভূয়ঃ ইব তে তমঃ য উ বিদ্যায়াং রতাঃ।। |
যাঁরা
অবিদ্যা কর্মের উপাসনা করেন, তাঁরা অজ্ঞানের অন্ধকারে প্রবেশ করেন। যাঁরা
কর্মহীন হয়ে দেবতাদের উপাসনাকে বিদ্যা মনে করেন, তাঁরা আরো বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত
হন।
অন্যদেবাহুর্বিদ্যয়াঽন্যদাহুরবিদ্যয়া। ইতি
শুক্রম্ ধীরাণাং যে নস্তদ্বিচচক্ষিরে।। ১০ |
অন্যৎ
এব আহুঃ বিদ্যয়া অন্যৎ আহুঃ অবিদ্যয়া। ইতি
শুক্রম্ ধীরাণাং যে নঃ তৎ বিচচক্ষিরে।। |
যে সকল
জ্ঞানী ব্যক্তি এই অবিদ্যা ও বিদ্যার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাঁরা বলেছেন, ‘অবিদ্যা ও
বিদ্যার ফল আলাদা হয়, আমরা এমনই শুনেছি’।
বিদ্যাং
চাবিদ্যাং চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ। অবিদ্যয়া
মৃত্যুং তীর্ত্বা বিদ্যয়াঽমৃতমশ্নুতে।। ১১ |
বিদ্যাম্
চ অবিদ্যাম্ চ যঃ তৎ বেদ উভয়ং সহ। অবিদ্যয়া
মৃত্যুং তীর্ত্বা বিদ্যয়া অমৃতম্ অশ্নুতে।। |
যিনি
অবিদ্যা ও বিদ্যা উভয়ই জানেন, অর্থাৎ অবিদ্যার কর্ম দিয়ে দেবতার উপাসনারূপ বিদ্যার
চর্চা করেন, তিনি সেই কর্ম দিয়ে মৃত্যুকে জয় করেন ও বিদ্যা দিয়ে দেবাত্মভাব লাভ
করেন।
অন্ধং
তমঃ প্রবিশন্তি যেঽসম্ভূতিমুপাসতে। ততো
ভূয় ইব তে তমো য উ সম্ভূত্যাং রতাঃ।। ১২ |
অন্ধম্
তমঃ প্রবিশন্তি যে অসম্ভূতিম্ উপাসতে। ততঃ
ভূয় ইব তে তমঃ য উ সম্ভূত্যাং রতাঃ।। |
যাঁরা
অসম্ভূতি অর্থাৎ অবিদ্যাস্বরূপ প্রকৃতির উপাসনা করেন, তাঁরা অন্ধকারে অন্ধের মতো
প্রবেশ করেন। কিন্তু যাঁরা সম্ভূতি অর্থাৎ প্রকৃতির থেকে উৎপন্ন কার্যব্রহ্মের উপাসনা
করেন, তাঁরা আরো ঘন অন্ধকারে প্রবেশ করেন।
অন্যদেবাহুঃ
সম্ভবাদন্যদাহুরসম্ভবাৎ। ইতি
শুশ্রুম্ ধীরাণাং যে নস্তদ্বিচচক্ষিরে।। ১৩ |
অন্যৎ
এব আহুঃ সম্ভবাৎ অন্যৎ আহুঃ অসম্ভবাৎ। ইতি
শুশ্রুম্ ধীরাণাং যে নঃ তৎ বিচচক্ষিরে।। |
যাঁরা এই
দুই উপাসনায় ফলের ব্যাখ্যা করেছেন, সেই জ্ঞানীদের কাছে আমরা শুনেছি, ‘প্রকৃতির উপাসনার
ফল একরকম এবং পরমব্রহ্মের উপাসনার ফল অন্যরকম’।
সম্ভূতিং
চ বিনাশং চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ। বিনাশেন
মৃত্যুং তীর্ত্বাঽসম্ভূত্যাঽমৃতমশ্নুতে।। ১৪ |
সম্ভূতিম্
চ বিনাশম্ চ যঃ তৎ বেদ অভয়ং সহ। বিনাশেন
মৃত্যুম্ তীর্ত্বা অসম্ভূত্যা অমৃতম্ অশ্নুতে।। |
যিনি সম্ভূতি ও বিনাশ – এই দুই
তত্ত্বই উপলব্ধি করেছেন, তিনি বিনাশের সাহায্যে মৃত্যুকে অতিক্রম করে, সম্ভূতিরূপ
অমৃতত্ব লাভ করতে পারেন।
হিরণ্ময়েন
পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম্। তত্ত্বং
পূষন্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।। ১৫ |
হিরণ্ময়েন
পাত্রেণ সত্যস্য অপিহিতং মুখম্। তৎ
ত্বম্ পূষন্ অপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।। |
হে পূষন, সোনার পাত্রের আড়ালে
আপনি যেন সত্যের মুখ ঢেকে রেখেছেন, আমাদের সত্যচেতনার জন্য আপনি তাকে উন্মুক্ত
করুন।
পূষন্নেকর্ষে
যম সূর্য প্রাজাপত্য ব্যূহ রশ্মীন্ সমূহ
তেজো যত্তে রূপ্নগ কল্যাণতমং তত্তে পশ্যামি। যোঽসাবসৌ
পুরুষঃ সোঽমস্মি।। ১৬ |
পূষন্
এক-ঋষে যম সূর্য প্রাজাপত্য ব্যূহ
রশ্মীন্ সমূহ
তেজঃ যৎ তে রূপম্ কল্যাণতমম্
তৎ তে পশ্যামি। যঃ
অসৌ অসৌ পুরুষঃ সঃ অহম্ অস্মি।। |
হে পূষন, হে একর্ষি, হে যম, হে সূর্য, হে প্রজাপতিপুত্র, আপনি উজ্জ্বল কিরণ
সংযত করুন, আপনার তেজ প্রশমিত করুন, আপনার পরমকল্যাণ রূপ আমি দেখব। ঐ আদিত্যমণ্ডলে
অবস্থিত যে পুরুষ রয়েছেন, তিনিই আমি।
[পূষন- যিনি জগতের পোষণ করেন,
একর্ষি > এক ঋষি – যিনি একা বিচরণ করেন এবং বহুর মধ্যে যে একের প্রকাশ, তিনি
সেই এককে দেখতে পান। সূর্য জগতের পোষণ করেন, অতএব তিনি পূষণ। তিনি আকাশপথে একাই
বিচরণ করেন, অতএব তিনি একর্ষি। তিনি ধর্মের নিয়ামক রূপে যম। যজ্ঞের আরেক নাম
প্রজাপতি, এই যজ্ঞ সূর্যের জনক এবং ঊষা তাঁর জননী, অতএব সূর্য প্রজাপতির
পুত্র।]
বায়ুরনিলমমৃতমেদং ভস্মান্তং শরীরম্। ওঁ
ক্রতো স্মর কৃতং স্মর ক্রতো কৃতং স্মর।। ১৭ |
বায়ুঃ
অনিলম্ অমৃতম্ ইদম্ ভস্ম-অন্তম্ শরীরম্। ওঁ
ক্রতঃ স্মর কৃতম্ স্মর ক্রতঃ কৃতম্ স্মর।। |
মৃত্যুর
সময় আমার এই প্রাণবায়ু চিরন্তনী মহাবায়ুর সঙ্গে মিলিত হোক। আমার এই শরীর ভস্ম হয়ে
যাক। হে পরমাত্মন্ অগ্নি, আমার মনের সকল সংকল্প স্মরণ করুন, আমি যা কিছু করেছি,
সে সবও স্মরণ করুন। আমার সংকল্প স্মরণ করুন, আমার কৃতকর্ম স্মরণ করুন।
অগ্নে
নয় সুপথা রায়ে অস্মান্ বিশ্বানি দেব বয়ুনানি বিদ্বান্। যুযোধ্যস্মজ্জুহুরাণমেনো
ভূয়িষ্ঠাং তে নম-উক্তিং বিধেম।। ১৮ |
অগ্নে
নয় সুপথা রায়ে অস্মান্ বিশ্বানি দেব বয়ুনানি বিদ্বান্। যুযোধি
অস্মৎ জুহুরাণম্ এনঃ ভূয়িষ্ঠাং তে নম-উক্তিং বিধেম।। ১৮ |
হে অগ্নি, সম্পদ্লাভের জন্য আপনি
আমাদের সুপথে নিয়ে চলুন। হে দেব, আপনি এই বিশ্বচরাচরে সকলের কর্ম ও প্রবৃত্তির কথা
জানেন। অতএব, কুটিল পাপ থেকে আপনি আমাদের মুক্ত করুন। আপনার প্রতি বারবার প্রণাম-বচন
উচ্চারণ করি।
নিরাকার রূপেও তিনি পূর্ণ, সাকার রূপেও তিনি পূর্ণ,
পূর্ণ থেকেই পূর্ণের সৃষ্টি, পূর্ণ থেকে পূর্ণ গ্রহণ
করলেও, পূর্ণই অবশিষ্ট থাকেন।
হে পরমাত্মন, সকল বিঘ্নের শান্তি হোক।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে contradictory লাগলো। বরং এটা তোর *চিরসখা হে* র ২য় পর্যায় করে নিয়ে আয় , আমার মতন অজ্ঞ উপকৃত হবে ।
উত্তরমুছুনআচ্ছা দেখছি কী করা যায়।
উত্তরমুছুনপ্রথম শ্লোক নিয়ে কিছু বলতে চাই। প্রথম শ্লোকে "জগত্যাং জগত" এবং "তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিৎদ ধন"?
উত্তরমুছুন১ জগত্যাং জগত অর্থাৎ যা জগত রূপে তার বৈচিত্রময়তায় প্রতিভাত আসলে সেটা তা নয়। জ্ঞানী বাইরের রূপ না দেখে সবগুলোর যা কমন ডিনোমিনেটর বা অন্তর্বস্তু ব্রহ্ম --শুধু তাকেই দেখেন।
২
আমার ভুল হতে পারে। কিশোর যেন এই অংশকে দুটো ভাগ করে অর্থ করলেন।
আমার মনে হয়ঃ এই ধন কার? আমাদের কারও নয়, আসল স্বামী ব্রহ্ম, এই বোধ থেকে আমাদের উচিত আসক্তি বিহীন হয়ে ভোগ করা।