Powered By Blogger

বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫

কমপ্লেক্স

 

সাইকেলে বাজার থেকে ফিরে নিশীথবাবু রান্নাঘরের দুয়োরের পাশে থলেটা নামিয়ে হাঁক দিলেন, “কোথায় গেলে সব - হ্যারে তনু, এক কাপ চা খাওয়াবি মা?” উঠোনের ধারের কলঘর থেকে মণিকা সাড়া দিলেন, “থলে থেকে মাছগুলো বের করে, ঝুড়ি চাপা দিয়ে রাখ, তনু। ইল্লুতে বেড়ালগুলো ছুঁকছুঁক করে বেড়াচ্ছে… হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু, দীনবন্ধু জগৎপতে, গোপেশ গোপীকাকান্ত ...”। মণিকাদেবী স্নান সেরে গামছা দিয়ে চুলের খোঁপা বেঁধে বের হলেন। তারপর উঠোনের দড়িতে ডিং মেরে ভেজা কাপড় মেলতে মেলতে বললেন, “পুরোনো তেঁতুল আনতে বলেছিলাম, ভুলে যাওনি তো?” নিশীথবাবু বারান্দাতেই বসেছিলেন, বললেন, “কিচ্ছু ভুলিনি, পুরোন তেঁতুল দিয়ে মৌরলা মাছের অম্বল…”।

তনু বাবার হাতে চিনি ছাড়া লিকার চায়ের কাপ ধরিয়ে বলল, “কোথায়? আমি তো মৌরলামাছ, পুরোন তেঁতুল কিছুই দেখলাম না, বাবা? চিংড়ি আর ভেটকি মাছ দেখলাম”। চায়ের কাপ হাতে নিশীথবাবু অবাক হয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “কী বলছিস?” “দেখবে?” দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে দুটো থালা নিয়ে বারান্দায় এল তনু, “এই দ্যাখো”। নিশীথবাবুর হাত কেঁপে উঠল। অবোধ অসহায় চোখে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

বারান্দা পেরিয়ে শোবার ঘরের কোনায় রাখা ঠাকুরের সিংহাসনের দিকে যেতে যেতে মণিকা আড়চোখে মেয়ের হাতের থালাদুটো দেখে মন্তব্য করলেন, “বিয়ের পর থেকে পয়লা মাসেও কোনদিন তোমাকে চিংড়ি-ভেটকি একসঙ্গে আনতে দেখিনি। আজ মাসের ছাব্বিশ তারিখ… লক্ষ্মীস্তং সর্বদেবানাং যথাসম্ভব নিত্যশঃ। স্থিরাভব তথা দেবী মম জন্মনি জন্মনি...”। আসনে বসে দুই চোখ বন্ধ করে মণিকা অতি দ্রুত মন্ত্রোচ্চারণ করলেন। তারপর ঘাড়ে আঁচল জড়িয়ে গড় হয়ে প্রণাম করলেন সিংহাসনের ঠাকুরসমূহকে। তারপর দ্রুতপায়ে গেলেন রান্নাঘরের দিকে।

রান্নাঘরের মেঝেয় বসেছিলেন নিশীথবাবু, সামনে কন্যা তনুজা আর দুজনের মাঝখানে মেঝেয় ঢালা আনাজের বিস্ময়। কেজি দুয়েক কড়াইশুঁটি, টোমাটো, দুটো নারকেল, ‘হাতিরমাথা’ দুটো ফুলকপি...। নিশীথবাবু অবাক হয়ে মেয়েকে বলছিলেন, “হ্যারে, আমি তো পুঁই-কুমড়ো, বাঁধাকপি, আড়াইশ কড়াইশুঁটি, একটা ছোটসাইজের ফুলকপি কিনেছিলাম। আর ছিল মৌরলামাছের প্যাকেটটা...সে সব এমন বদলে গেল কী করে বল তো, মা? এমনও নয় যে বাজারের থলি বদলাবদলি হয়ে গেছে...এই ব্যাগটা আমাদেরই তো...”।

তনুজা ফিক করে হাসল, বলল, “দশকর্মার দোকানে এমন নকশার থলে অনেক ঝোলানো থাকে বাবা, বদলে যে গিয়েছে, তাতে তো সন্দেহ নেই। কিন্তু কার সঙ্গে হতে পারে, সেটা মনে করার চেষ্টা করো”

নিশীথবাবু বললেন, “এই বাজারের বদলে, আমার থলেটা যে বাড়ি নিয়ে গেল, সে যে আমার চোদ্দ পুরুষ উদ্ধার করে দেবে – সে তো বেশ বুঝতে পারছি”।

এতক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে মণিকা বাপ-বেটির কাণ্ড দেখে বললেন, “গবেষণা করে করবে কী, শুনি? এক কাজ তো করতে পার – পাড়ায় যত বাড়ি আছে, যত ফ্ল্যাটবাড়ি আছে – তাদের দুয়োরে দুয়োরে গিয়ে শুধিয়ে দেখতে পার...মৌরলার বদলে চিংড়ি-ভেটকি নেবে গো...”।

পত্নীর কথায় নিশীথবাবু খুবই ক্ষুণ্ণ হয়ে বললেন, “কী যে বলো না, তার ঠিক নেই”।

মণিকা বললেন, “সে কথাই তো বলছি...ভেবে আর লাভ কি? তনু, আনাজগুলো যেমন ছিল থলেতে ভরে রাখ, মাছের থালাদুটো ফ্রিজে তুলে দে। তুমি বাইরে গিয়ে বসো, আমি জলখাবার নিয়ে আসছি। তনু, হাত চালা মা, অনেক বেলা হল...”।

 


সাততলায় উঠে ফ্ল্যাটের দরজায় বেল দিলেন সোমেশ্বরবাবু। কাজের দিদি সুলতা দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকে বাজারের থলিটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “দিদি আজ দারুণ চিংড়ি পেয়েছি, বেশ গুছিয়ে মালাইকারি করো তো। তাছাড়া ভেটকি আছে – ফুলকপি দিয়ে জমিয়ে ঝোল...ওঃ আজ দুপুরের খাওয়াটা জমে যাবে”।

সুলতাদিদি হেসে ফেলে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করলেন, “চা খাবে তো”?

“জলখাবার হয়নি?”

“হয়ে গেছে। লুচিকটা ভাজতেই যা দেরি...”।

“তাহলে আর চা নয়, জলখাবারই দাও”। সোমেশ্বরবাবু বসার ঘরের সোফায় বসে নিশ্চিন্তে খবরের কাগজটা খুললেন।

সোমেশ্বরবাবুর স্ত্রী সুলগ্না ছেলেকে নিয়ে ক্রিকেট-কোচিং করাতে নিয়ে গিয়েছেন। কোচিং সেরে ফিরতে ফিরতে ওদের একটা-দেড়টা হয়েই যাবে। অন্য রোববারগুলো ছেলেকে নিয়ে সোমেশ্বরবাবুকেই দৌড়তে হয়। আজ সুলগ্না গিয়েছেন। ওঁর কোন এক বান্ধবীর বাড়ি বিবেকানন্দ পার্কের আশেপাশেই। সে বান্ধবী কেনটাকিতে থাকেন – দিন কয়েকের জন্যে কলকাতায় এসেছেন। ছেলেকে কোচিংয়ে দিয়ে সুলগ্না তার বাড়িতে যাবেন, সুখ-দুঃখের গল্প করতে। রবিবারের এমন নিশ্চিন্ত-নিরিবিলি সকালটাকে বৃথা যেতে দেওয়ার মানে হয় না, অতএব সোমেশ্বরবাবুর ইচ্ছে, জলখাবার সেরেই ভদকা নিয়ে বসবেন।

খবরের কাগজের প্রথম চারটে পাতার বিজ্ঞাপনে চোখ বোলাতে বোলাতেই সুলতাদিদি প্লেটে চারটে লুচি আর আলুর তরকারি নিয়ে হাজির হলেন। গরমগরম ফুলকো লুচির চেহারা দেখেই সোমেশ্বরবাবুর খিদেটা চাগিয়ে উঠল, বললেন, “ওফ দিদি, তোমার জবাব নেই...। বৌদিকে বলতে যেও না, যেন। জিগ্‌গেস করলে বলবে, ওটের খিচুড়ি খেয়েছি”।

সুলতাদিদি মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হেসে বললেন, “আরো দুটো দেব, দাদা, তারপর আর নয়, ব্যস। চা খাবে না কফি?”

“আর কিচ্ছু না। সে অন্য ব্যবস্থা আছে”।

“বুজেছি। তাহলে দু পিস মাছ ভেজে দিই?” সুলতাদিদি হাসলেন।

বড়ো তৃপ্তি করে ছটা লুচি শেষ করে সোমেশ্বরবাবু বেসিনে মুখহাত ধুয়ে নিজের ঘরে গেলেন। সেলার থেকে ভদকার বোতল, গেলাস বের করে, ডাইনিং হলে গেলেন, জলের বোতল নিতে।

সুলতাদিদি বাজারের থলি হাতে নিয়ে সামনে এসে বললেন, “এসব কী এনেছ, দাদাবাবু? কোথায় তোমার চিংড়ি আর ভেটকি? এই পুঁই আর কুমড়ো দেখলে বৌদিমণি কিন্তু খুব রেগে যাবেন। সঙ্গে আবার মৌরলা মাছ!”

“তার মানে? কী বলছো?” সোমেশ্বরবাবু থলিটা হাতে নিয়ে ভেতরে উঁকি মেরে দেখতে দেখতে বললেন, “কী সর্বনাশ। তার মানে থলি বদল হয়ে গেছে”।

বসার ঘরের সোফায় ধপ করে বসে, হতভম্ব সোমেশ্বরবাবু চিন্তা করতে লাগলেন, কী করে এমন হল? তিনি মাত্র একবারই থলিটা নামিয়েছিলেন। তিনটে পান আর সিগারেট কিনতে গিয়ে, সেই পানের দোকানের পাশে। মনে পড়ল সেখানে একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক দোকানীর সঙ্গে কথা বলছিল। দোকানী নিতাই সোমেশ্বরবাবুর চেনা।  ওর থেকে তিনি নিয়মিত সিগারেটের বড়ো প্যাকেট নেন, তার সঙ্গে আজ নিয়েছেন তিনটে পান। দোকানী পান সাজা শুরু করতে সেই ভদ্রলোক বলেছিল, “আমি এখন তাহলে চলিরে নিতাই, দুপ্যাকেট বিড়ি আর দেশলাইটা খাতায় লিখে রাখিস”।

সোমেশ্বরবাবু মনে মনে অশ্রাব্য কিছু গালাগাল দিয়ে চিন্তা করলেন, ওই লোকটাই নির্ঘাৎ ব্যাগটা হাতিয়েছে। শালা চোর-চোট্টায় দেশ ছেয়ে গেল? একটু আনমন হয়েছ কি, ব্যাটারা চোখের কাজলটা পর্যন্ত ঝেড়ে দিচ্ছে! গুম হয়ে বসে সোমেশ্বরবাবু আরও কিছুক্ষণ ভাবলেন, নিতাইয়ের দোকানে ওই বিড়িখোর লোকটার খাতা আছে। তার মানে নিতাই ওকে ভালোভাবেই চেনে। নিতাইকে গিয়ে চেপে ধরলেই ওই পুঁই-কুমড়োখোর ছোটলোকের হদিস পাওয়া যাবে। সোমেশ্বরবাবু সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “দিদি থলেতে যা যা ছিল, কিছু বের করোনি তো?”

সুলতা বললেন, “তা করিনি, কিন্তু যে নিয়েছে তাকে তুমি এখন খুঁজবে কোথায়?” সোমেশ্বরবাবু লুচির আনন্দ এবং ভদকার স্বপ্ন ফেলে দরজা খুলে লিফ্‌টের দিকে ধেয়ে যেতে যেতে বললেন, “হতভাগাকে আমি খুঁজে বের করবই, দেখো না”।

 

নিতাইয়ের কাছে সত্যিই হদিস পাওয়া গেল। সোমেশ্বরবাবুর রাগ এবং উত্তেজনা দেখে নিতাই বলল, “উনি তো নিশীথস্যার। উনি আপনার ব্যাগ চুরি করেছেন? না দাদা, হতে পারে ভুল করে তুলে নিয়ে গেছেন, কিন্তু চুরি? অসম্ভব। উনি এ পাড়ার বহুদিনের বাসিন্দা, ওঁনাকে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনি। এ বাজারের সবাই চেনে। আপনি ওই জিতেনদার রিকশয় যান - জিতেনদা, ও জিতেনদা, এঁনাকে নিশীথস্যারের বাড়ি নিয়ে যাও তো। যান জিতেনদাই আপনাকে স্যারের বাড়ি নিয়ে যাবে”।

জিতেনের সাইকেল রিকশায় চড়ে সোমেশ্বরবাবু দুপায়ের ফাঁকে পুঁই আর মৌরলার থলি নিয়ে গুম হয়ে বসে রইলেন। নানান অলিগলির প্যাঁচ বেয়ে সাইকেল রিকশ চালাতে চালাতে জিতেন জিজ্ঞাসা করল, “নিশীথস্যার কী করেছেন, দাদা?” সোমেশ্বরবাবু নিতাইকে যে উত্তেজনা নিয়ে তাঁর থলি চুরির কথা বলেছিলেন, এখন আর সেটা বলতে পারলেন না। একটু ইতস্ততঃ করে বললেন, “ইয়ে মানে, মনে হচ্ছে, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে, ওঁনার সঙ্গে আমার বাজারের থলিটা বদলাবদলি হয়ে গেছে...”।

জিতেন হাসল, বলল, “তাই? বোঝো কাণ্ড। ও নিয়ে ভাববেন না, থলি আপনি পেয়ে যাবেন”।  

সোমেশ্বরবাবুর গনগনে রাগটা ধীরে ধীরে থিতিয়ে আসছিল। মৌরলা-পুঁই-কুমড়ো খাওয়া লোকটাকে এ পাড়ায় সবাই চেনে! আশ্চর্য! তার ওপর পানওয়ালা থেকে রিকশওয়ালা সবারই এত বিশ্বাস! তাঁর সোয়া দুকোটির ফ্ল্যাট, বত্রিশ লাখি গাড়ি। ছেলে বিখ্যাত স্কুলে পড়ে, ক্রিকেটের কোচিং নেয়। তাঁকে তাঁর কমপ্লেক্সেও তেমন কেউ চেনে না। কমপ্লেক্স তো অনেক বড়ো ব্যাপার, তাঁর নিজের অ্যাপার্টমেন্টের ছতলা কিংবা আটতলার বাসিন্দাদের, তিনিই কি চেনেন? লিফটে ওঠানামার সময় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, হাই, হেলো, গুড মর্নিং, গুড ইভনিং – ব্যস ওইটুকুই!

নোনাধরা দেওয়ালে সবুজ রঙের দরজার সামনে রিকশ থামিয়ে, জিতেন বলল, “এই যে নিশীথস্যারের বাড়ি”। তারপর ভেজানো দরজা ঠেলে উঠোনে দাঁড়িয়ে ডাকতে শুরু করল, “তনু, এই তনু, স্যার কোথায় রে? এই দাদা স্যারকে খুঁজছে”।

রিকশ থেকে নেমে সোমেশ্বরবাবু বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন। সিমেন্ট বাঁধানো ছোট্ট উঠোন। একধারে তুলসীমঞ্চ। উঠোন ঘিরে ছোট ছোট ফুলগাছ, গাঁদা, টগর, জবা...। সামনে লোহার গ্রিল দেওয়া লম্বা বারান্দাওয়ালা একতলা বাড়ি – বিবর্ণ, নোনাধরা…।  

নিশীথবাবু ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন, “কী ব্যাপার, বাবা জীতেন?”

সোমেশ্বরবাবু বললেন, “ইয়ে মানে, আজ নিতাইয়ের দোকানে আপনার থলির সঙ্গে আমার বাজারের থলিটা মনে হয় ...”। সোমেশ্বরবাবুর কথা শেষ করতে দিলেন না নিশীথবাবু, উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, “ওফ, আপনি আমায় বাঁচালেন, ভাই...বাড়ি এসে বাজারের থলি আজার করে যা আতান্তরে পড়েছিলাম...ভেতরে আসুন, ভাই, ভেতরে আসুন, হ্যাগো শুনছ, ওঁনার থলিটা গুছিয়ে দিয়ে দাও...”।

তনুজা থলিটা নিয়ে উঠোনে এল, মুচকি হেসে বলল, “কাকু, এই যে আপনার থলে”।

নিশীথবাবু সোমেশ্বরবাবুর হাত থেকে নিজের থলিটা নিয়ে তনুজাকে বললেন, “যা মা, মাকে গিয়ে বল, সব সমস্যার মীমাংসা হয়ে গেছে”।

সোমেশ্বরবাবু বললেন, “থলিটা একবার চেক করে নিন ...”।

নিশীথবাবু উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠে বললেন, “ধুর মশাই, পুঁই-কুমড়ো আর মৌরলা বুঝি চেক করা যায়? মৌরলা কেউ কোনদিন গুনেগুনে কেনে নাকি? বরং আপনার চিংড়ি আর ভেটকির পিস গোনাগুনতি...”।

সোমেশ্বরবাবু হাত তুলে কোনরকমে নমস্কারের ইশারা করে বললেন, “আচ্ছা, এখন তাহলে চলি?”

“আপনাকে নাহক হয়রান হতে হল...”

 

জিতেনের রিকশায় উঠে সোমেশ্বরবাবু পায়ের কাছে রাখা থলি থেকে চিংড়ি আর ভেটকির প্যাকেটদুটো হাতে নিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করলেন…পনের পিস চিংড়ি আর ভেটকির পিস ছিল ষোলটা। জিতেন হঠাৎই রাস্তার বাঁদিক ঘেঁষে রিকশাটা দাঁড় করাল, ঘাড় ফিরিয়ে বলল, “দেখে নিন, সব ঠিকঠাক আছে তো?” সোমেশ্বরবাবু একটু ইতস্ততঃ করেও প্যাকেট খুলে গুনলেন। তারপর মুখে বোদা হাসি ফুটিয়ে বললেন, “ঠিকই আছে। জিতেন আবার রিকশা চালাতে শুরু করে জিগ্‌গেস করল, “আপনার কোন কমপ্লেক্স?”

“আকাশপথ”।

“ওঃ ও তো বিশাল কমপ্লেক্স… কমপ্লেক্স মানে অনেক বাড়ি বা মনের জটিল কারবার, তাই না দাদা? নিশীথস্যারের কাছে পড়েছিলাম, উনিই আমাদের স্কুলে ইংরিজি পড়াতেন…ইলেভেনে বাবা মারা গেলেন, তারপর থেকেই এই রিকশ…”।

অ্যাপার্টমেন্টের সামনে নেমে, সোমেশ্বরবাবুর মনে হল - তাঁর আড়াইহাজারি বাজারের থলিটা দেওয়ার সময় ওই মাস্টার চেক করতে বলল না। কিন্তু দেড়শটাকার বাজারের জন্যে চেক করার কথা কেন তিনি ওই মাস্টারকে বলতে গেলেন? আসলে তিনি যে শুধু মস্তো এক কমপ্লেক্সেই থাকেন তা নয়, তাঁর মনের মধ্যেও গড়ে তুলেছেন গভীর কিছু কমপ্লেক্স, যে কথা মনে করিয়ে দিল জিতেন নামক রিকশাওয়ালাটাও!  

 

--০০--

২টি মন্তব্য:

নতুন পোস্টগুলি

জঙ্গী ব্যবসা

  ১   ভারতে কবে কবে কোথায় কোথায় সন্ত্রাসবাদী হানা হয়েছিল তার একটা লিস্ট নিয়ে নিজের দপ্তরে বসে সুলতান মামুদ রাগে ফুঁসছিল। আর মনে মনে ঘোরির ...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ