“কেমন করে আছি?”
“তোলো হাঁড়ির মতো”!
“তোলো হাঁড়ি? তার মানে”?
“ধুর বাবা, তার মানে কী আর আমিও জানতে গেছি। যেমন শুনেছি
তেমন বললাম”।
“কোথায় শুনেছিস?”
“ছোটবেলায়। দিদিমার কাছে!”
“তোর ছোটবেলা মানে, সেই বর্ধমানের গ্রামের কথা?”
“বাঃ বেশ মনে রেখেছিস তো! এমন ভাব করিস, আমাকে যেন পাত্তাই
দিস না। অথচ দিব্যি মনে রেখেছিস, আমার ছোটবেলা কেটেছিল বর্ধমানে”!
“মনে না রেখে উপায় আছে? একবার শুরু করলে তো, থামতেই চাস না”।
“রাগ করিস না রে, সেদিন আর বেশি দেরি নেই, যখন তোর বকবকের ঠ্যালায়
আমি এক্কেবারে চুপ মেরে যাবো!”
“ইস্ কী মজা, সেদিনটা কবে আসবে রে?”
“আসবে খুব শিগ্গিরি আসবে! আচ্ছা তুই বিয়ের পর
হাজব্যাণ্ডকে হাবি না ডার্লিং, কী বলে ডাকবি?”
“কেন বল তো? এ বিষয়ে তোর সঙ্গে কেন আলোচনা করবো, তার
অন্ততঃ একটা গুড রিজ্ন্ দেখাতে পারবি?”
“না মানে, জাস্ট কৌতূহল। আজকাল “আর্যপুত্র”, “ওগো শুনছ”,
“হ্যাঁগো ডাকছিলে”, বলার রেওয়াজ তো আর নেই। তবে ছেলেপুলে হয়ে গেলে, টুকাইয়ের বাবা
কিংবা পুকুর মা বলে ব্যাপারটা ম্যানেজ করা যায়, অবিশ্যি...”!
“আর্ন্ট ইউ ক্রসিং দা লিমিট? এসব কথা তোর মাথায় আসে কী
করে, ইতর”?
“যাক বাবা, তাও ভালো, “বাড়িতে মা-বোন নেই?” জিগ্যেস করিসনি!”
“এক্স্যাক্টলি, আমার তাই করা উচিৎ ছিল”!
“শোন না, একবার একটা মেয়েকে আমি বলেছিলাম, অসভ্যা, আপনার
বাড়িতে বাপ, ভাই নেই?”
“অসভ্যা? তুই বলেছিলি? তারপর? সেই মেয়েটা তোকে জুতো পেটা
করেনি?”
“না রে, মনে মনে বলেছিলাম, মুখে আর বলতে পারলাম কই?”
“তুই কোনদিনই আর মানুষ হবি না, হতভাগা উল্লুক, গণ্ডার,
জলহস্তী...”!
“বাবা, তুই তো মুখে মুখে চিড়িয়াখানা বানিয়ে তুললি! হ্যারে,
ছোটবেলায় তুই কী প্রত্যেক শীতকালেই চিড়িয়াখানা যেতিস? “ওঁ বাঁপিঁ, আলিপুর জুঁ নিয়ে
চল্হোঁ না...”“।
“আমি মোটেই ওরকম নাকে কথা বলে, ন্যাকামি করতাম না, আর
বাবাকে আমরা বাবাই বলি, বাপি নয়”।
“সে যাগ্গে, তার মানে চিড়িয়াখানায় প্রত্যেক শীতকালে নিয়মিত
যেতিস। আচ্ছা, কোনদিন
চিড়িয়াখানা গিয়ে তোর মনে হয়নি, হোয়াই অ্যাম আই আউট অব দিস ওয়ার্ল্ড?”
“তার মানে”?
“মানে, ইয়ে...এই যে এত সুন্দর সুন্দর জন্তুগুলো খাঁচার
মধ্যে বন্দী রয়েছে...অথচ তুই কী করে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিস?”
“আমার কোনদিন মনে হয়নি। তোর হতো?”
“আমার কিন্তু মনে হত, জানিস?”
“খুব স্বাভাবিক। মানুষের মতো চেহারা হলেও গত জন্মের স্মৃতিটা
থেকে গেছে...!”
“গত জন্মে হীনজন্মা ছিলাম বলছিস? আর নেক্সট জন্মে তির্যকজন্ম
পাবো?”
“সেগুলো আবার কী বস্তু?”
“ও বাবা, জানিস না, মানুষ হল সবার সেরা প্রাণী? বাকিরা
সবাই হয় হীন নয় তির্যক”।
“এসব গপ্পো কোথা থেকে বানাস বল তো”!
“গপ্পো বানাই? তারমানে গীতা-টিতা, উপনিষদ-টুপনিষদ গপ্পো
বানায়?”
“তার মানে? বেরিয়ে যা আমার সামনে থেকে...গীতা-উপনিষদে ওই
সব কথা বলা আছে?”
“আছেই তো! মানুষ এই জন্মে খারাপ খারাপ কাজ করলে পরজন্মে
তির্যক বা হীনজন্ম লাভ করে!”
“তুই কী করে জানলি, তুই পড়েছিস?”
“পাগল হয়েছিস, আমি পড়বো ধর্মগ্রন্থ, তাহলেই হয়েছে আরকি!
আমি শুনেছি, বাবাদের মুখে”।
“বাবাদের মানে? তোর কটা বাবা?”
“বাবার কী অভাব আছে? লালবাবা, ভোলাবাবা, রামবাবা,
শ্যামবাবা...কত্তো বাবা। বাইরে চটি খুলে, ভেতরে গিয়ে পা মুড়ে বসে পড়লেই বাবার
সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, বাবাদের বাণী শোনা যায়”।
“বাবা, আজকাল তুই বাবা ধরেছিস মনে হচ্ছে!”
“মাথা খারাপ। ঠেলার নাম বাবাজি! একজন বিগ বিজিনেসম্যান,
একটা চাকরি দেবে বলে অনেকদিন ধরে ঘোরাচ্ছিল। এস্টোর কিপারের চাকরি”।
“বিজিনেসম্যান? এস্টোর?”
“হ্যাঁ তাই তো বলেন ওই ভদ্রলোক। একজন সফল বিজিনেসম্যান ভুল
বলবেন? আর আমি চাকরির উমেদারি করতে গিয়ে, তাঁর ভুল ধরবো? সেই লোকটা বেশ কদিন
ঘোরালো, বেশ ঘোরালো লোক, বুঝলি? শুক্রবার গেলে বলে নেক্সট মঙ্গলবার এসো। মঙ্গলবার
গেলে বলে নেক্সট মান্থের ফার্স্ট উইকে যে কোনদিন। পরের মাসে
ফার্স্ট উইকের বুধবার গেলে বলে, এঃ হে তোমাকে মঙ্গলবার আসতে বলেছিলাম, তো! আমি আজ
সকালেই বেরিয়ে এসেছি, আউট অফ এস্টেসন”।
“এস্টেসন?”
“হুঁ। এই করে মাস ছয়েক কাটিয়ে বলল, তুমি এই শনিবার
নীলবাবার আশ্রমে চলে এসো, ওখানে গেলে শান্তিতে দুটো কথা বলতে পারবো”।
“তুই গেলি?”
“গেলাম। সকাল সকাল বাইরে চটি খুলে, ওই যেমন বললাম আর কি!
বাবার লঅঅঅঅম্বা সেসন চলছে। গীতা, বেদ, উপনিষদের ভরপুর ব্যাখ্যা-ট্যাখ্যা ! শুনতে
লাগলাম। বিজিনেসম্যানের আর দেখা নেই। ওইখানেই ওই জন্ম-টন্মের আসল রহস্যটা বুঝে
ফেললাম। অনেক জন্ম হীন-জীবন কাটিয়ে তবে নাকি মানবজন্ম পাওয়া যায়। ধর সাত জন্ম আগে
তুই আরশোলা ছিলি...ময়লা খেয়ে দিন কাটাতিস, একদিন ঝ্যাঁটার বাড়ি খেয়ে, ফটাস করে পেট
ফেটে, থেঁতলে মৃত্যু। পরের জন্মে হলি টিকটিকি...দেয়ালে সিলিংয়ে ঘুরে ঘুরে পোকা ধরে
মুখে পুরছিলি...হঠাৎ একদিন জানালার পাল্লায় ঘাপটি মেরে বসেছিলি, দমকা বাতাসে
পাল্লাটা দমাস করে বন্ধ হল। আর তুই পট করে পেট ফেটে পঞ্চভূতে লীন হয়ে গেলি।
অনেকদিন পর একটি মেয়ে বন্ধ জানালার পাল্লাটা ঠেলে খুলতেই, তোর নশ্বর পিঁপড়ে খাওয়া
শুকনো ফাঁপা দেহটা ঠকাস করে মেঝেয় পড়ল এবং মেয়েটা “এ ম্যা, মরা ঠিঁকঠিঁখিঁ” বলে
লাফিয়ে উঠল”!
“ওফ্, এত বাজে বকতেও তুই পারিস”।
“একটুও বাজে কথা বলছি না। আজকাল ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেয় দেখেছিস
তো? ‘ছেলেমেয়েদের বই পড়িয়ে আপনারা বিজ্ঞান শেখাচ্ছেন? ছ্যা ছ্যা করছেন কি? তারা তো
কিস্সু শিখছে না। আসলি বিজ্ঞান শিখতে গেলে দরকার থ্রি ডি শিক্ষা
ব্যবস্থ!’ অর্থাৎ চাঁদে বসে হাতে ব্ল্যাক কফির মাগ নিয়ে যে বিজ্ঞানীরা
অ্যাটম বম্ব ফাটানোর আশি বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে, তারা ছাতার মাথা বিজ্ঞানের কিস্সু
বোঝে না। ঠিক সেরকমই নীলবাবার বলা শাস্ত্রীয় বাণী, ধরে নে, আমি
তোকে থ্রিডিতে বোঝাচ্ছি – মেড-ইজি ভার্সান উইথ ইলাস্ট্রেসন। যাই হোক শোন না, এরকম
বেশ কজন্ম ধরে অনেক পুণ্য সঞ্চয় করলে, তোর ক্রেডিটে কতটা পুণ্য রইল, সেই হিসেব কষে
মনুষ্য জন্ম লাভ করা যায়!”
“আরশোলা-টিকটিকির পুণ্য সঞ্চয়? তোর নীলবাবা তাই বলেছেন?”
“ঠিক এভাবে না বললেও, কতকটা তাই! তুই আরশোলাকে ভয় পাস?”
“ওরেঃ বাবা, ভীষণ”।
“কেন ভয় পাস? আধো অন্ধকারে দেয়ালের কোণে চুপটি করে
দাঁড়িয়ে, হাল্কা হাল্কা শুঁড় নাড়ায় বলেই না! এখন ধর তুই আরশোলা হয়ে চিন্তা করলি,
কাউকে ভয় দেখাবি না। তুই কী করবি? নর্দমার অন্ধকারেই বসে থাকবি, বাইরে বের হবি না,
তাহলেই আর কেউ তোকে দেখে ভয় পাবে না। কেউ ভয় না পেলেই তোর নামে পুণ্য ক্রেডিট হবে!
অনেকটা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের রিওয়ার্ড পয়েন্ট জমা হওয়ার মতো। অনেক জন্মের এই
জমানো রিওয়ার্ড পয়েন্টস্ রিডিম করলেই, মানুষজন্ম। একদম ফ্রি”!
“ওফ্। আমি এবার উঠবো রে”!
“আরে বোস না, একটু। আসল কথাটা তো বলাই হয়নি এখনো! রিওয়ার্ড
পয়েন্টস্ রিডিম করে মানবজন্ম তো পেলি, এবার? মানব জন্মটাকে কীভাবে এক্সপ্লয়েট
করবি? দান-ধ্যান, তীর্থদর্শন, গুরুসেবা করে পুণ্য করবি নাকি,
দেদার ঢপের কেত্তন করে প্রচুর টাকা কামাবি? প্রচুর টাকা কামালেও অনেক পুণ্য কামানো
যায়...টাকাটাকে পুণ্যে কনভার্ট করার জন্যে প্রচুর মঠ, মন্দির, আশ্রম-টাশ্রম আছে,
তাঁরা পুণ্যের ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে বসে আছেন। ভাণ্ডারা দিলে পুণ্য। ঠিকঠাক জায়গায়
দান-টান করলে সেকসন ৮০জিজি কিংবা ৮০জিজিএতে আইটি রিলিফ, প্লাস পুণ্যের
ক্রেডিট...টু-ইন-ওয়ান ধামাকা! এভাবে পুণ্য সঞ্চয় করতে পারলে, নেক্সট জন্মেও
মানুষের পোস্টিং গ্যারাণ্টেড!”
“বাঃ, তাহলে তো মিটেই গেল”!
“কাঁচকলা মিটল। সে তো ওদের হল,
যাদের গোলাভরা টাকা আছে, পুকুরভরা সোনার বিস্কুট আছে, গোয়াল ভরা মার্সিডিস গাড়ি
আছে। কিন্তু আমাদের কী হবে? যাদের পেটের ভাত আর পরনের কাপড়
যোগাড় করতেই দিন চলে যায়? আমরা তো দীন-দুঃখীদের সেবা-টেবা দান-টান করার চান্সই পাই
না! অতএব আমাদের অ্যাকাউন্টে কোন পুণ্য ক্রেডিটই হচ্ছে না! ফলতঃ আমরা পরের জন্মে
তির্যকজন্ম পেয়ে হয়তো আরশোলা বা ব্যাং হবো”!
“বাঁচা যাবে, তোর মতন দু একজন
অকাজের লোক, ব্যাং-ট্যাং হলে, সমাজের উপকারই হবে”।
“কিন্তু তোর কী হবে?”
“কী আবার হবে? চাকরি বাকরি করবো,
বিয়েথা করবো, বাচ্চা-কাচ্চা মানুষ করবো”।
“কাকে বিয়ে করবি? তুই কী জানিস
না, স্বামী-স্ত্রী একটা ইয়ে... মানে, জন্মজন্মান্তরের সম্পর্ক? স্বামীজ অ্যাণ্ড স্ত্রীজ
আর অলওয়েস মেড ফর ইচ আদার। এই “মেড” মানে - ভুলেও ভাবিস না মেড ইন চায়না – মেড ইন
হেভেন! হুঁ হুঁ বাব্বা, এ হচ্ছে - দেখলে হবে - খর্চ্চা আছে টাইপের! যাগ্গে যে কথা বলছিলাম, তোর হয়তো মনে নেই, গত
জন্মে আমি যখন টিকটিকি ছিলাম, তুই আমার টিকটিকিনি ছিলি! সারাদিন খুব টিকটিক করতিস
কানের কাছে, ভুলে গেলি? তোর ডিম ফুটে কত্তো বাচ্চা হয়েছিল আর কী সুন্দর সেই
বাচ্চাগুলো! অন্য টিকটিকিরা আমায় হিংসে করত, আর তোকে করতো অন্য টিকটকিনিরা, মনে
নেই?”
“না মনে নেই! ইস্স্স্স্, টিকটিকিনি!
কী আমার সাতজন্মের টিকটিকিরে!”
“ভুলে গিয়ে ভালই করেছিস। পাস্ট ইজ
পাস্ট। কিন্তু ফিউচার– ভবিষ্যৎ? তার কী হবে? কিছু ঠিক করলি?”
“কীসের কী ঠিক করবো!”
“মানে এভাবেই উড়ুনচণ্ডী হয়ে কাল
কাটাবি, নাকি নিজের ঘর-বর-বাচ্চা-কাচ্চা
নিয়ে স্থিতু হবি! মাথায় ওড়না ঢেকে রোজ নাচ দুয়োরে সন্ধে প্রদীপ দেখাবি, তিনবার
শাঁখ বাজাবি!”
“তখন থেকে কী আজেবাজে বকছিস বলতো?
নাচ দুয়োর আবার কি?”
“নাচ দুয়োর মানে সামনের দরজা।
আজকালকার ফ্ল্যাট কালচারে একটাই দরজা। সামনের নাচদুয়োর, পেছনের পাছদুয়োর তো থাকেই
না! আর এতক্ষণ ধরে তোর সঙ্গে আজেবাজে বকছি কী আর সাধে? তোকে কনভিন্স করতে...”
“কনভিন্স আমাকে? কেন? কিসের
জন্যে?”
“সেটাই যদি বুঝতিস খেপি, তাহলে আর
আমার চিন্তা ছিল কী?”
“অ্যাই, উল্টোপাল্টা কথা ঘোরাস
না, কী বলতে চাইছিস, সোজা সাপটা বল, তা নইলে পিঠে কিল খাবি!”
“যাক, তাও মন্দের ভাল, আপন-পর
বুঝতে শিখেছিস!”
“আপন-পর মানে?”
“এই যে তুই কিল দিবি বললি, এটা তো
আপন ভেবেই বললি না কী? পর হলে কী বলতিস?”
“তুই বসে বসে হিসেব ভাঁজতে থাক,
আমি উঠি!”
“আরে দাঁড়া না, আমি কী এখানে
থাকতে এসেছি নাকি? আমিও তো উঠবো! একসঙ্গেই যাবো। আমার আসল কথাটা এক কথায় প্রকাশ
করতে পারলে ভাল হত। কিন্তু পারছি কই? যেমন, দোরে দোরে ভিক্ষে করে বেড়ানো, মাধুকরী। যেমন, আগে
ঘুমোচ্ছিল, এই উঠল, সুপ্তোত্থিত। সেরকম, আমি একটা চাকরি পেয়েছি, সামনের পয়লা থেকে
জয়েনিং, মাইনে বত্রিশের ওপর - এই এতগুলো কথা না বলে, এককথায় যদি...”
“ওয়াও, কনগ্র্যাচুলেশন্স। ওফ্ এই
কথাটা বলতে এতক্ষণ এত ভাঁট বকে আমার মাথা খারাপ করলি? এখন কী খাওয়াবি বল!”
“এখন কিচ্ছু খাওয়াবো না। প্রথম
মাসের এবং প্রত্যেক মাসের মাইনে পেলেই, সে টাকা এনে তোর হাতে তুলে দেবো, তখন তুই
যা ভালো বুঝবি, করবি... ”
“আশ্চর্য! তুই শুধু শুধু এমন করবি
কেন!”
“শুধু শুধু? তুই কী জানিস আমি আরও
কী কী করব তোর জন্যে? স্নানের সময় তোর উন্মুক্ত পিঠে সাবান ঘষে দেবো। প্রতি রোববার
দুপুরে তোর গোড়ালি ঘষে দেবো। সন্ধেবেলা তুই বগলে, ঘাড়ে আর গলায় পাউডার দিয়ে
সেজেগুজে আমার অপেক্ষায় বসে থাকবি, আমি অফিস থেকে ফিরে তোকে নিয়ে আমাদের পাড়ার
চেনা রামখিলাওনের থেকে তিখা ঝাল ফুচকা খেতে যাবো।”
“আমি মোটেই ঘাড়ে গলায় পাউডার দিই
না, কিন্তু এসব.. ”
“আচ্ছা, পাউডার না দিস দিবি না,
বগলে ফ্যাসফ্যাস ডিও দিস। তাছাড়া প্রতি রোববার সকালবেলা রীতিমতো থলি নিয়ে বাজার
যাবো। মাসকাবারি আনবো তোর ফর্দ মিলিয়ে! রোজ সন্ধেবেলা সোফায় তোর গায়ে গা ঠেকিয়ে
বসে কত যে সিরিয়াল দেখব, সিরিয়াস মুখে...”
“চোওওওপ, চোপ। একদম চুপ। তোর বকা
আর শেষই হচ্ছে না...তুই থামবি?”
“আজকেই থামাস না প্লিজ। কয়েকদিন
পর থেকে শুধু তুইই তো বলবি, আমি সারাজীবন চুপ করে তোর কথা শুনবো!”
“তার মানে? কেন?”
“বারে। তুই আমার বউ হবি না? আমিই
তো তোকে বিয়ে করব। একটু কষ্ট হলেও, তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবে না, শ্রুতি? আমার
জীবনে তোমাকে যে আসতেই হবে – তা নইলে আমি যে কচুরিপানা হয়ে যাব, শ্রুতি! জোয়ারের
গা-জোয়ারিতে কখনো চলে যাবো নৈহাটি – কখনো ভাঁটার টানে নেমে আসব ডায়মণ্ডহারবারের
আঘাটায়...”।
শ্রুতি হাতের কাছে আর কিছু না
পেয়ে, পাশে রাখা হাতব্যাগটা ছুঁড়ে মারল শ্রবণের দিকে। দক্ষ হাতে শ্রবণ সেটা লুফে নিয়ে
বলল, “এভাবেই তোমার সর্বস্ব আমাকে সমর্পণ করে দিও, শ্রুতি – সারাটা জীবন”।
মিটিয়াবুরুজ ঘাটের আড়ালে নেমে
যাওয়ার আগে সূর্যদেব চোখ তুলে তাকালেন শ্রুতির মুখের দিকে – কনে দেখা লাজুক আলোয় ভরে
উঠল সগঙ্গা প্রিন্সেপ ঘাট।
..০০..
বড় মিঠে লেখা।
উত্তরমুছুনথ্যাংকিউ ভাই।
উত্তরমুছুন