প্রথম
অধ্যায়
দ্বিতীয়
বল্লী
অন্যচ্ছ্রেয়োঽন্যদুতৈব প্রেয়স্তে উভে নানার্থে পুরুষং সিনীতঃ। তয়োঃ শ্রেয় আদদানস্য সাধু ভবতি হীয়তেঽর্থাদ্ য উ প্রেয়ো বৃণীতে।। ১/২/১ |
অন্যৎ শ্রেয়ঃ অন্যৎ উত এব প্রেয়ঃ তে উভে নানা অর্থে পুরুষম্ সিনীতঃ। তয়োঃ শ্রেয়ঃ আদদানস্য সাধু ভবতি হীয়তে অর্থাৎ য উ প্রেয়ঃ বৃণীতে।। ১/২/১ |
(নচিকেতার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে রাজা যম বললেন) “শ্রেয় মার্গ ভিন্ন এবং প্রেয়
মার্গও ভিন্ন, উভয়েই বিভিন্ন বিষয়ে পুরুষকে আবদ্ধ করে। উভয়ের মধ্যে যিনি শ্রেয় পথে
যান, তাঁর মঙ্গল হয়। আর যিনি প্রেয় পথ আশ্রয় করেন, তিনি ভ্রষ্ট হন”।
[শ্রেয় মার্গ অর্থ নিষ্কাম পরমমুক্তির সাধন পথ। আর প্রেয় মার্গ হল স্বর্গ
কিংবা পার্থিব বিষয় (পুত্র, পশু, সম্পদ ইত্যাদি) কামনার পথ। দুটি পথ সম্পূর্ণ
ভিন্ন, একই পুরুষের পক্ষে দুই পথ গ্রহণ করা অসম্ভব।]
শ্রেয়শ্চ প্রেয়শ্চ মনুষ্যমেতস্তৌ সম্পরীত্য বিবিনক্তি ধীরঃ। শ্রেয়ো হি ধীরোঽভি প্রেয়সো বৃণীতে প্রেয়ো মন্দো যোগক্ষেমাদ্ বৃণীতে।। ১/২/২ |
শ্রেয়ঃ চ প্রেয়ঃ চ মনুষ্যম্ এতঃ তৌ সম্পরীত্য বিবিনক্তি ধীরঃ। শ্রেয়ঃ হি ধীরঃ অভি প্রেয়সঃ বৃণীতে প্রেয়ঃ মন্দঃ যোগ-ক্ষেমাদ্ বৃণীতে।। ১/২/২ |
“সাধারণ মানুষ শ্রেয় এবং প্রেয় উভয়
মার্গেই জড়িয়ে থাকে, কিন্তু বুদ্ধিমান ব্যক্তি সম্যক বিচার করে উভয় পথকে পৃথক
করেন। ধীমান ব্যক্তি প্রেয় মার্গ ছেড়ে শ্রেয় মার্গ বরণ করেন, কিন্তু মন্দবুদ্ধি
ব্যক্তিরা প্রেয় মার্গ বরণ করে, যোগ ও ক্ষেমে নিযুক্ত থাকেন”।
[না পাওয়া বিষয়কে পাওয়ার প্রচেষ্টাকে যোগ বলে, পাওয়া বিষয়ের সংরক্ষণকে বলে
ক্ষেম।]
স
ত্বং প্রিয়ান্ প্রিয়রূপাংশ্চ কামানভিধ্যায়ন্নচিকেতোঽত্যস্রাক্ষীঃ। নৈতাং
সৃঙ্কাং বিত্তময়ীমবাপ্তো যস্যাং মজ্জন্তি বহবো মনুষ্যাঃ।। ১/২/৩ |
স
ত্বম্ প্রিয়ান্ প্রিয়রূপান্ চ কামান্ অভিধ্যায়ৎ নচিকেতঃ অত্যস্রাক্ষীঃ। ন
এতাং সৃঙ্কাম্ বিত্তময়ীম্ অবাপ্তো যস্যাং মজ্জন্তি বহবঃ মনুষ্যাঃ।। ১/২/৩ |
“হে নচিকেতা, (বারবার প্রলোভন দেখানো সত্ত্বেও) তুমি সেই কামনার প্রিয়
বস্তুসমূহ এবং ভোগ্য বিষয় (অনিত্য) বিচার করে, ত্যাগ করেছ। বহুমানুষ যে ধন-সম্পদবহুল
পথে মগ্ন থাকে, তুমি সেই পথ অবলম্বন করোনি”।
দূরমেতে বিপরীতে বিষূচী অবিদ্যা যা চ বিদ্যেতি জ্ঞাতা। বিদ্যাভীপ্সিনং নচিকেতসং মন্যে ন ত্বা কামা বহবোঽলোলুপন্ত।। ১/২/৪ |
দূরম্ এতে বিপরীতে বিষূচী অবিদ্যা যা চ বিদ্যা ইতি জ্ঞাতা। বিদ্যা অভীপ্সিনম্ নচিকেতসম্ মন্যে ন ত্বা কামা বহবঃ অলোলুপন্ত।। ১/২/৪ |
“বিদ্বানেরা জানেন, অবিদ্যা ও
বিদ্যা – এই দুয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য এবং সম্পূর্ণ বিপরীত। হে নচিকেতা, আমি মনে করি বিদ্যা শিক্ষাতেই তোমার বাসনা,
কারণ বহু কামনাবস্তুর প্রলোভনে তুমি লুব্ধ হওনি”।
[অবিদ্যার কর্মকাণ্ড পার্থিব বিষয়ের কামনায় সংলিপ্ত আর বিদ্যা পরমমুক্তি বা
মোক্ষ লাভের উপায়।]
অবিদ্যায়ামন্তরে বর্তমানাঃ স্বয়ং ধীরাঃ পণ্ডিতম্মন্যমানাঃ। দন্দ্রম্যমাণাঃ পরিয়ন্তি মূঢ়া অন্ধেনৈব নীয়মানা যথান্ধাঃ।। ১/২/৫ |
অবিদ্যায়াম্ অন্তরে বর্তমানাঃ স্বয়ং ধীরাঃ পণ্ডিতম্ মন্যমানাঃ। দন্দ্রম্যমাণাঃ পরিয়ন্তি মূঢ়া অন্ধেন এব নীয়মানা যথা অন্ধাঃ।। ১/২/৫ |
“অন্তরে অবিদ্যার ভাব নিয়ে, যে নিজেকে বুদ্ধিমান এবং পণ্ডিত বলে গর্ব করে,
এক অন্ধকে অন্য অন্ধ পরিচালনা করার মতো, সেই মূঢ় ব্যক্তিরা জটিল পথেই ঘুরে বেড়াতে
থাকে”।
ন সাম্পরায়ঃ প্রতিভাতি বালং প্রমাদ্যন্তং বিত্তমোহেন মূঢ়ম্। অয়ং লোকো নাস্তি পর ইতি মানী পুনঃ পুনর্বশমাপদ্যতে মে।। ১/২/৬ |
ন সাম্পরায়ঃ প্রতিভাতি বালং প্রমাদ্যন্তং বিত্তমোহেন মূঢ়ম্। অয়ম্ লোকঃ ন অস্তি পর ইতি মানী পুনঃ পুনঃ বশম্ আপদ্যতে মে।। ১/২/৬ |
“সম্পদের মোহে আচ্ছন্ন ভ্রান্ত ও মূঢ় বিবেকহীন ব্যক্তির কাছে পরলোক বিষয়ের
সাধন প্রকাশিত হয় না। “শুধু এই মর্ত্যলোকই আছে, পরলোক নেই” এই চিন্তা করে তারা
বারবার আমার বশীভূত হয়”।
[এই মর্ত্যলোকে তাদের বারবার জন্ম হয় এবং বারবার “আমার” অর্থাৎ মৃত্যুর বশীভূত
হয়।]
শ্রবণায়াপি বহুভির্যো ন লভ্যঃ শৃণ্বন্তোঽপি বহবো যং ন বিদ্যুঃ। আশ্চর্যো বক্তা কুশলোঽস্য লব্ধাশ্চর্যো জ্ঞাত্বা কুশলানুশিষ্টঃ।। ১/২/৭ |
শ্রবণায় অপি বহুভিঃ যঃ ন লভ্যঃ শৃণ্বন্তঃ অপি বহবঃ যং ন বিদ্যুঃ। আশ্চর্যঃ বক্তা কুশলঃ অস্য লব্ধ আশ্চর্যঃ জ্ঞাত্বা কুশল অনুশিষ্টঃ।। ১/২/৭ |
“অনেকে (আত্মতত্ত্বকথা) শুনতেই পায় না, আবার অনেকে শুনতে পেলেও উপলব্ধি
করতে পারে না। (অতএব) যিনি এই আত্মার তত্ত্ব উপদেশ দেন এবং যিনি সেই
তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন, দুজনেই অত্যন্ত বিরল এবং কুশল”।
ন নরেণাবরেণ প্রোক্ত এষ সুবিজ্ঞেয়ো বহুধা চিন্ত্যমানঃ। অনন্যপ্রোক্তে গতিরত্র নাস্ত্যণীয়ান্ হ্যতর্ক্যমণুপ্রমাণাৎ।। ১/২/৮ |
ন নরেণ অবরেণ প্রোক্ত এষ সুবিজ্ঞেয়ঃ বহুধা চিন্ত্যমানঃ। অনন্যপ্রোক্তে গতিঃ অত্র ন অস্তি অণীয়ান্ হি অতর্ক্যম্ অণুপ্রমাণাৎ।। ১/২/৮ |
“স্বল্পজ্ঞানী মানুষের উপদেশে এই আত্মতত্ত্ব সঠিক বোঝা যায় না, কারণ তাঁর
চিন্তার বিষয় (পরলোক আছে কি নেই, কর্তা-অকর্তা, শুদ্ধ-অশুদ্ধ বিচার ইত্যাদি)
বহুবিধ। “আত্মা তর্কের অতীত, কারণ তাঁকে সূক্ষ্মরূপে প্রমাণ করলেও সূক্ষ্মতররূপে
প্রমাণ করা যায়”, এই আত্মতত্ত্বে নিষ্ঠ আচার্যের উপদেশে এই বিষয়ে আর কোন সংশয় থাকে
না”।
নৈষা তর্কেণ মতিরাপনেয়া প্রোক্তাঽন্যেনৈব সুজ্ঞানায় প্রেষ্ঠ। যাং ত্বমাপঃ সত্যধৃতির্বতাসি ত্বাদৃঙ্নো ভূয়ান্নচিকেতঃ প্রষ্টা।। ১/২/৯ |
ন এষা তর্কেণ মতিঃ আপনেয়া প্রোক্তাঃ অন্যেন এব সুজ্ঞানায় প্রেষ্ঠ। যাম্ ত্বম্ আপঃ সত্য-ধৃতিঃ বত অসি ত্বাদৃক্ নঃ ভূয়াৎ নচিকেতঃ প্রষ্টা।। ১/২/৯ |
“হে প্রিয়, তোমার এই মতি তুমি তর্ক থেকে লাভ করোনি। কোন তার্কিক নন,
বিশিষ্ট জ্ঞানী কোন আচার্যের উপদেশ শুনেই তোমার এমন মতি হয়েছে। হে নচিকেতা, তোমার
সত্যিই পরমার্থবিষয়ে উপলব্ধি হয়েছে, তোমার মতো জিজ্ঞাসু আমাদের কাছে আরও যেন
আসে”।
জানাম্যহং শেবধিরিত্যনিত্যং ন হ্যধ্রুবৈঃ প্রাপ্যতে হি ধ্রুবং তৎ। ততো ময়া নাচিকেতশ্চিতোঽগ্নি- রনিত্যৈর্দ্রব্যৈঃ প্রাপ্তবানস্মি নিত্যম্।। ১/২/১০ |
জানামি অহং শেবধিঃ ইতি অনিত্যং ন হি অধ্রুবৈঃ প্রাপ্যতে হি ধ্রুবং তৎ। ততঃ ময়া নাচিকেতঃ চিতঃ অগ্নিঃ অনিত্যৈঃ দ্রব্যৈঃ প্রাপ্তবান্ অস্মি নিত্যম্।।
১/২/১০ |
“আমি এই জানি যে কর্মফল অনিত্য, এবং অনিত্য বিষয় দিয়ে ধ্রুবপদ লাভ করা যায়
না। তৎসত্ত্বেও আমি অনিত্য দ্রব্য দিয়েই নাচিকেত অগ্নি চয়ন করেছি এবং তার ফলে আমি
এই নিত্য (যম) পদ লাভ করেছি”।
কামস্যাপ্তিং জগতঃ প্রতিষ্ঠাং ক্রতোরনন্ত্যমভয়স্য পারম্। স্তোমমহদুরুগায়ং প্রতিষ্ঠাং দৃষ্ট্বা ধৃত্যা ধীরো নচিকেতোঽত্যস্রাক্ষীঃ।। ১/২/১১ |
কামস্য আপ্তিং জগতঃ প্রতিষ্ঠাং ক্রতঃ অনন্ত্যম্ অভয়স্য পারম্। স্তোম-মহৎ উরুগায়ং প্রতিষ্ঠাং দৃষ্ট্বা ধৃত্যা ধীরো নচিকেতঃ অত্যস্রাক্ষীঃ।। ১/২/১১ |
“হে নচিকেতা, যাতে সকল কামনার
অবসান হয়, যা জগতের (অধ্যাত্ম, অধিভূত ও অধিদৈব সকল বিষয়ের) আশ্রয়, যজ্ঞের অনন্ত ও
অভয় ফল লাভ করে, পরলোকের মহৎ ও অনাদি প্রতিষ্ঠার বিষয় ধৈর্য সহকারে বিচার করেছ, (অনিত্য
সকল বিষয়কে) ত্যাগ করে, তুমি ধীমান হয়েছো”।
তং দুর্দর্শং গূঢ়মনুপ্রবিষ্টং গুহাহিতং গহ্বরেষ্ঠং পুরাণম্। অধ্যাত্মযোগাধিগমেন দেবং মত্বা ধীরো হর্ষশোকৌ জহাতি।। ১/২/১২ |
তং দুর্দর্শং গূঢ়ম্ অনুপ্রবিষ্টং গুহাহিতং গহ্বরেষ্ঠং পুরাণম্। অধ্যাত্মযোগ অধিগমেন দেবং মত্বা ধীরঃ হর্ষশোকৌ জহাতি।। ১/২/১২ |
“তুমি যাঁর সম্বন্ধে জানতে চেয়েছো, তাঁর দর্শন দুর্লভ, তিনি (বাসনাযুক্ত)
শরীরেই, অন্তরের অন্দরে গূঢ়ভাবে অবস্থান করছেন। পরমাত্মার প্রতি একনিষ্ঠ সাধনায়
সেই সনাতন ও স্বপ্রকাশ আত্মাকে সাক্ষাৎ করলেই ধীমান ব্যক্তিরা সকল দুঃখশোক জয় করতে
পারেন”।
এতচ্ছ্রুত্বা সম্পরিগৃহ্য মর্ত্যঃ প্রবৃহ্য ধর্ম্যমণুমেতমাপ্য। স মোদতে মোদনীয়ং হি লব্ধ্বা বিবৃতং সদ্ম নচিকেতসং মন্যে।। ১/২/১৩ |
এতৎ শ্রুত্বা সম্পরিগৃহ্য মর্ত্যঃ প্রবৃহ্য ধর্ম্যম্ অণুম্ এতম্ আপ্য। স মোদতে মোদনীয়ম্ হি লব্ধ্বা বিবৃতং সদ্ম নচিকেতসং মন্যে।। ১/২/১৩ |
“মানুষ এই (আত্মতত্ত্ব) শুনে এবং সম্যক উপলব্ধি করে, ধর্মতত্ত্ব অনুসারে
শরীরের থেকে পৃথক এই সূক্ষ্ম আত্মাকে (নিজের শরীরেই) অনুভব করে। পরম আনন্দময় এই
আত্মাকে লাভ করে সেই ব্যক্তিও আনন্দিত হয়। আমি মনে করি, নচিকেতার জন্য (ব্রহ্মরূপ)
ভবনের দ্বার উন্মুক্তই রয়েছে”।
অন্যত্র ধর্মাদন্যত্রাধর্মাদন্যত্রাস্মাৎ কৃতাকৃতাৎ। অন্যত্র
ভূতাচ্চ ভব্যাচ্চ যৎ তৎ পশ্যসি তদ্বদ।। ১/২/১৪ |
অন্যত্র ধর্মাৎ অন্যত্র অধর্মাৎ অন্যত্র অস্মাৎ কৃত-
অকৃতাৎ। অন্যত্র ভূতাৎ চ ভব্যাৎ চ যৎ তৎ পশ্যসি তৎ বদ।। ১/২/১৪ |
(নচিকেতা বললেন) “ধর্ম থেকে ভিন্ন, অধর্ম থেকে ভিন্ন, সকল কার্য-কারণ থেকেও
ভিন্ন, (এমন কী) অতীত, (বর্তমান) এবং ভবিষ্যৎ থেকেও পৃথক যে বিষয় আপনি দেখেছেন,
আমাকে সেই তত্ত্ব বলুন”।
সর্ব বেদা যৎ পদমামনন্তি তপাংসি সর্বাণি চ যদ্ বদন্তি। যদিচ্ছন্তো ব্রহ্মচর্যং চরন্তি তত্তে পদং সংগ্রহেণ ব্রবীমি –ওমিত্যেতৎ।। ১/২/১৫ |
সর্ব বেদাঃ যৎ পদম্ আমনন্তি তপাংসি সর্বাণি চ যৎ বদন্তি। যৎ ইচ্ছন্তঃ ব্রহ্মচর্যম্ চরন্তি তৎ তে পদং সংগ্রহেণ ব্রবীমি –ওম্ ইতি তৎ।। ১/২/১৫ |
(রাজা যম বললেন) “সকল বেদ যে পরমপদের কথা নিশ্চিতভাবে বর্ণনা করে, সকল
তপস্যায় যাঁর উপলব্ধি উচ্চারিত হয়, যাঁকে লাভ করার জন্যে লোক ব্রহ্মচর্য আচরণ করে,
আমি সেই পরমপদ লাভের কথাই তোমাকে সংক্ষেপে বলছি – তিনিই ওঁ”।
[ ওঁ এই শব্দ বা অক্ষরটি ব্রহ্মের নাম এবং প্রতীক, “ওঁ” শব্দে ব্রহ্মকেই
বোঝায় - এই শব্দটিকেই প্রণব বলা হয়।]
এতদ্ধ্যেবাক্ষরং ব্রহ্ম এতদ্ধ্যেবাক্ষরং পরম্। এতদ্ধ্যেবাক্ষরং জ্ঞাত্বা যো যদিচ্ছতি তস্য তৎ।। ১/২/১৬ |
এতৎ হি এব অক্ষরং ব্রহ্ম এতৎ হি এব অক্ষরং পরম্। এতৎ হি এব অক্ষরং জ্ঞাত্বা যঃ যৎ ইচ্ছতি তস্য তৎ।। ১/২/১৬ |
“এই অক্ষরই ব্রহ্ম, এই অক্ষরই পরম। এই অক্ষরকে উপলব্ধি করে, যার যেমন ইচ্ছা
তেমনই হয়ে থাকে”।
এতদালম্বনং শ্রেষ্ঠমেতদালম্বনং পরম্। এতদালম্বনং জ্ঞাত্বা ব্রহ্মলোকে মহীয়তে।।
১/২/১৭ |
এতৎ আলম্বনম্ শ্রেষ্ঠম্ এতৎ আলম্বনম্ পরম্। এতৎ আলম্বনম্ জ্ঞাত্বা ব্রহ্মলোকে মহীয়তে।।
১/২/১৭ |
“এই অক্ষর (ব্রহ্মলাভের) শ্রেষ্ঠ উপায়, এই অক্ষর পরমপদের আশ্রয়, এই অক্ষরের
সাধনায় ব্রহ্মস্বরূপে মহীয়ান হওয়া যায়”।
ন জায়তে ম্রিয়তে বা বিপশ্চিন্ নায়ং কুতশ্চিন্ন বভূব কশ্চিৎ। অজো নিত্যঃ শাশ্বতোঽয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।। ১/২/১৮ |
ন জায়তে ম্রিয়তে বা বিপশ্চিৎ ন অয়ং কুতঃ চিৎ ন বভূব কশ্চিৎ। অজঃ নিত্যঃ শাশ্বতঃ অয়ং পুরাণঃ ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।। ১/২/১৮ |
“এই ব্রহ্মরূপ আত্মচেতনার জন্ম নেই, মৃত্যুও নেই। এই আত্মাকে কেউ সৃষ্টি করেনি, এই আত্মাও কাউকে সৃষ্টি করেন না। শরীরের বিনাশ হলেও, জন্মহীন, নিত্য, শাশ্বত এবং সনাতন এই আত্মা বিনষ্ট হন না”।
[এই শ্লোকটি ও গীতার সাংখ্য যোগের (দ্বিতীয় অধ্যায়ের) কুড়িতম শ্লোকটি প্রায় অভিন্ন। এরকম অনেক সাদৃশ্য থেকেই পণ্ডিতেরা নির্দিষ্ট করেন যে উপনিষদ বা বেদান্ত দর্শনের থেকেই শ্রীমদ্ভাগবত গীতার সৃষ্টি।]
হন্তা চেন্মন্যতে হন্তুং হতশ্চেন্মন্যতে হতম্। উভৌ তৌ ন বিজানীতো নায়ং হন্তি ন হন্যতে।। ১/২/১৯ |
হন্তা চেৎ মন্যতে হন্তুম্ হতঃ চেৎ মন্যতে হতম্। উভৌ তৌ ন বিজানীতো না অয়ং হন্তি ন হন্যতে।। ১/২/১৯ |
“ঘাতক মনে করে আমি হত্যা করলাম, মৃত মনে করে আমি মারা গেলাম, দুজনের কেউই
জানে না, এই আত্মা কাউকে হত্যা করতে পারে না এবং নিজেও নিহত হন না”।
অণোরণীয়ান্ মহতো মহীয়ান্ আত্মাঽস্য জন্তোর্নিহিতো গুহায়াম্। তমক্রতুঃ পশ্যতি বীতশোকো ধাতুপ্রসাদান্মহিমানমাত্মনঃ।। ১/২/২০ |
অণোঃ অণীয়ান্ মহতঃ মহীয়ান্ আত্মা অস্য জন্তোঃ নিহিতঃ গুহায়াম্। তম্ অক্রতুঃ পশ্যতি বীতশোকঃ ধাতুপ্রসাদাৎ মহিমানম্ আত্মনঃ।। ১/২/২০ |
“সূক্ষ্ম থেকেও অনেক সূক্ষ্ম, মহানের থেকেও অনেক ব্যাপ্ত এই আত্মা জীবের দেহগুহায় অবস্থান করেন। সকল প্রবৃত্তির নিরসনে নিষ্কাম ব্যক্তি, যখন এই আত্মার ব্যপ্তমহিমা উপলব্ধি করেন, তিনি সকল দুঃখশোকের ঊর্ধে অবস্থান করেন”।
আসীনো
দূরং ব্রজতি শয়ানো যাতি সর্বত্রঃ। কস্তং
মদামদং দেবং মদন্যো জ্ঞাতুমর্হতি।। ১/২/২১ |
আসীনঃ
দূরম্ ব্রজতি শয়ানঃ যাতি সর্বত্রঃ। কঃ
তম্ মদ-অমদম্ দেবম্ মৎ-অন্যঃ জ্ঞাতুম্ অর্হতি।। ১/২/২১ |
“(আত্মা) উপবিষ্ট অবস্থাতেও দূরে ভ্রমণ করতে পারেন, শায়িত অবস্থাতেও
সর্বত্র যেতে পারেন। সেই আনন্দময় অথচ নিরানন্দ আত্মাকে আমাদের মতো কয়েকজন বিবেকী
ব্যক্তি ছাড়া কে উপলব্ধি করতে পারবে?”
অশরীরং
শরীরেষ্বনবস্থেষ্ববস্থিতম্। মহান্তং
বিভুমাত্মানং মত্বা ধীরো ন শোচতি।। ১/২/২২ |
অশরীরং
শরীরেষু অনবস্থেষু অবস্থিতম্। মহান্তম্
বিভুম আত্মানং মত্বা ধীরঃ ন শোচতি।। ১/২/২২ |
“নানান দেহে অশরীরী রূপে অবস্থিত,
অনিত্য বিষয়ে নিত্য রূপে বিরাজিত, এই সুমহান ও সর্বব্যাপী আত্মাকে যে ধীমান
ব্যক্তি নিজের স্বরূপে প্রত্যক্ষ করেছেন, তাঁকে কোনদিন আর শোক করতে হয় না”।
নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন। যমবৈষ বৃণুতে তেন লভ্যস্তস্যৈষ আত্মা বিবৃণুতে তনূং স্বাম্।। ১/২/২৩ |
ন অয়ম্ আত্মা প্রবচনেন লভ্যঃ ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন। যম্ এব এষঃ বৃণুতে তেন লভ্যঃ তস্য এষঃ আত্মা বিবৃণুতে তনূং স্বাম্।। ১/২/২৩ |
“এই আত্মাকে শাস্ত্রবচনে লাভ করা যায় না, তীক্ষ্ণ মেধা দিয়ে কিংবা অনেকের
মুখে শুনেও লাভ করা যায় না। এই আত্মা যে সাধককে অনুগ্রহ করেন, সেই সাধকই তাঁকে
জানতে পারেন, তাঁর কাছেই তিনি নিজের পরমার্থ স্বরূপ প্রকাশ করেন”।
নাবিরতো দুশ্চরিতান্নাশান্তো নাসমাহিতঃ। নাশান্তমনসো বাঽপি প্রজ্ঞানেনৈনমাপ্নুয়াৎ।। ১/২/২৪ |
না বিরতঃ দুশ্চরিতাৎ না শান্তঃ না সমাহিতঃ। ন অশান্তমনসঃ বা অপি প্রজ্ঞানেন এনম্ আপ্নুয়াৎ।।১/২/২৪ |
“দুষ্কর্ম থেকে যার নিবৃত্তি হয়নি, ইন্দ্রিয়ের প্রবৃত্তি যার শান্ত হয়নি,
যার একনিষ্ঠ সাধনা নেই, যার মন সাধনার ফললাভের জন্যে অস্থির, সেই ব্যক্তি
শুধুমাত্র জ্ঞান দিয়ে এই আত্মাকে লাভ করতে পারে না”।
যস্য ব্রহ্ম চ ক্ষত্রং চ উভে ভবত ওদনঃ। মৃত্যুর্যস্যোপসেচনং ক ইত্থা বেদ যত্র সঃ।। ১/২/২৫ |
যস্য ব্রহ্ম চ ক্ষত্রম্ চ উভে ভবত ওদনঃ। মৃত্যুঃ যস্য উপসেচনং ক ইত্থা বেদ যত্র সঃ।। ১/২/২৫ |
“যাঁর কাছে ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয় অন্নের মতো, মৃত্যু যাঁর কাছে ব্যঞ্জনের
মতো, সাধারণ মানুষের পক্ষে এইভাবে তাঁকে উপলব্ধি করা সম্ভব?”
চলবে... ১/৩ বল্লী আসবে সামনের বুধবার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন