তখন আমি তোমাদের মতোই ছোট্ট – সবুজ হাফপ্যান্ট আর হলুদ হাফহাতা জামা
গায়ে দিই। ওই প্যাণ্ট আর জামা আমার ভীষণ প্রিয়, আমার রাঙা মাসীমা দিয়েছিলেন আমার
দশবছরের জন্মদিনে। আর শীতকালে গায়ে থাকত লাল টুকটুকে ফুলহাতা সোয়েটার। এটাও আমার ভীষণ প্রিয়,
দিয়েছিল আমার মেজ পিসীমা। ক্লাসে আমি তখন তিন-চারটে নলওয়ালা চৌবাচ্চার জলে
হাবুডুবু খাই। পিতা আর পুত্রের বয়েস গুলিয়ে পুত্রের থেকে পিতার বয়েস কম হিসাব করি।
আর যে কোন সরল অঙ্কের সমাধান করে অংকের
মাষ্টারমশাইয়ের কানমলা খাই। কানমলা
খাওয়ার কথায় মনে পড়ল, সেকালে আমাদের কানদুটো অধিকাংশ সময়েই গুরুজনদের হাতেই ধরা
থাকত। আমাদের দুষ্টুমিও যেমন সারাদিন চলত, তেমনি কানমলাও চলত সমানুপাতিক হারে।
আমাদের সেই সব দুষ্টুমির গল্প বলতে শুরু করলে, তোমাদের হাতপা নিসপিস করবে দুষ্টুমি
করার জন্যে, আর তোমাদের গুরুজনদের হাত নির্ঘাৎ নিসপিস করে উঠবে, তোমাদের কানমলা
দেবার জন্যে।
আমাদের অ্যানুয়াল পরীক্ষা হত শীতকালে। পরীক্ষার পর কনকনে সেই শীতের
দিনগুলোতেই আমাদের ছোটখাটো মফস্বল শহরে জড়ো হত, দেদার মজার ব্যাপার-স্যাপার। আর
তার মধ্যে সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল সার্কাস। আমাদের কলেজ মাঠে বড়োদিনের কাছাকাছি
এসে তাঁবু গাড়ত সার্কাসের দল। কোন এক রবিবারের দুপুরবেলা, মায়ের রান্না করা গরমমশলা
দেওয়া কাঁকড়া-ফুলকপি-আলুর, আহা সে কী স্বাদ ঝোল দিয়ে মেখে একপেট ভাত। তার সঙ্গে খেজুর-আমসত্ত্ব-টোম্যাটোর
চাটনি খেয়ে, আমরা দশবারো জন ভাইবোন সার্কাস দেখতে যেতাম। নানান বয়েসের
ভাইপো-ভাইঝিদের নিয়ে আমাদের সঙ্গে যেতেন আমাদের ন’কাকা আর ছোটকাকা। সেদিন আমাদের
সার্কাসের মজার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় ঠকাঠক গাঁট্টা এবং কানমলাও জুটত বিস্তর।
আমাদের কাছে সার্কাস দেখার এই মজা তো ছিলই, তার থেকেও মজা ছিল
সার্কাসের তাঁবুতে হানা দেওয়া। সার্কাসের দল বড়ো বড়ো গাড়ি নিয়ে শহরে আসার পরেও, সব
যোগাড় যন্ত্র করে, তাঁবু খাটিয়ে গুছিয়ে বসতে বসতে দিন সাত দশ লেগেই যেত। আর সেই
সময়টাতেই আমাদের কয়েকজন বন্ধুর বেজায় উৎসাহ বেড়ে উঠত। আমরা জলখাবার খেয়েই হাজির
হতাম কলেজ মাঠের ধারে। সেখানে একধারে তখন বিশাল বিশাল কাঠের বল্লা আর রশা-রশি নিয়ে
তাঁবু খাটানোর খুব তোড়জোড়। অন্য দিকে সারি সারি খাঁচার
মধ্যে বাঘ, ভালুক, হাতি, সিংহ, বাঁদর, কাকাতুয়া, কুকুর। আবার আরেকদিকে সারি সারি
তাঁবুর মধ্যে সার্কাসের কসরত দেখানোর লোকজন থাকত। সেইসব তাঁবুর কাছাকাছি যেতে দেখলেই
সার্কাসের লোকেরা আমাদের তাড়িয়ে দিত। বলত, “খোকারা, এখানে কী চাই? এখন নয়, এখন নয়,
সার্কাস শুরু হলে, বাবা-কাকাদের সঙ্গে আসবে। যাও, যাও, এখন একদম ঘুরঘুর করবে না”।
দুতিন দিন কিছুতেই সুবিধে করতে পারলাম না। শেষ অব্দি সার্কাসের দলেরই
একজন ছোট্ট ছেলের সঙ্গে আমাদের আলাপ হল। তার নাম মুরুগান। আমাদের বয়সি হবে,
সার্কাসের লোকেদের নানান ফাইফরমাস খাটে, আমাদের পাড়ার দোকান থেকে এটা সেটা জিনিষ
কিনে নিয়ে যায়। দেখেই বোঝা যায় খুব গরিবের ছেলে। তার ভালো জামাপ্যান্টও ছিল না,
কনকনে ডিসেম্বরের সকালেও তার সোয়েটার জুটত না। আমাদের সঙ্গে, বিশেষ করে আমার সঙ্গে
তার বেজায় ভাব হয়ে গেল। একদিন মুরুগান সকাল সকাল বাজার করে ফিরছিল। আমি তাকে
পাকড়াও করে, আমার জামা আর সোয়েটারটা জোর করে তাকে পরিয়ে দিলাম। আর তার জামাটা গায়ে
চাপিয়ে, তার বাজারে ভরা থলেটা নিয়ে হাঁটা দিলাম সার্কাসের তাঁবুতে। যাবার সময়
অবশ্য একপ্লেট ঘুগনি আর একটা পাঁউরুটি কিনে গণেশদার দোকানে তাকে বসিয়ে রেখে বললাম,
“তুই এগুলো খা, আমি যাবো আর আসবো”।
কোনদিন ভেতরে না ঢুকলেও, কদিন আশেপাশে ঘুরঘুর করার জন্যে কোনদিকে কী
আছে, সেটা মোটামুটি জানাই ছিল। ওদের রান্নার জায়গাতে বাজারের থলেটা ঝুপ করে রেখে দিয়েই,
আমি খাঁচাগুলোর দিকে দৌড় লাগালাম। বললে বিশ্বাস করবে না, জ্যান্ত বাঘ-সিংহ-ভালুকের
এত কাছাকাছি, আমি কোনদিন যাইনি। আমার আর ওদের মধ্যে সামান্যই তফাৎ। একখানা গরাদ
দেওয়া খাঁচার দেওয়াল! সিংহ আর ভালুকটা আমাকে মানুষ বলে গণ্যই করল না, আর কোন
পাত্তাও দিল না। বাঘটা আমাকে দেখে বিশাল একটা হাঁই তুলল, নাকি মুখ ভেঙাল, ঠিক
বুঝলাম না। তবে সে সারাক্ষণ আমার দিকেই তাকিয়ে হ্যা হ্যা করতে লাগল। বড়ো খাঁচাগুলো
পার হয়ে অনেকগুলো ছোটছোট খাঁচা। কোনটায় সাদা ধবধবে কাকাতুয়া, সবুজ চন্দনা, টিয়া,
একটু বড়ো সাইজের খাঁচায় দুটো বাঁদর। এসব পেরিয়ে দুটো হাতিও দেখলাম। মাটিতে পোঁতা
লোহার গোঁজের সঙ্গে মোটা শেকল দিয়ে বাঁধা। তারা এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে খালি দুলছিল,
আর শুঁড় নাড়ছিল। তাদের নড়াচড়ায় শিকলে আওয়াজ উঠছিল ঝমঝম করে। হাতিরা আমাকে দেখে,
তাদের শুঁড় বাড়িয়েছিল। আমি কিন্তু ঘাবড়ে একটু দূরে সরে এসেছিলাম। অবাক হয়ে হাতিদের
যখন মন দিয়ে দেখছি, সেই সময় আমার কানে এল, কেউ যেন বলছে, “আমি ব্যগ্র, আমি ব্যগ্র”। আশে পাশে কাউকে দেখতে
পেলাম না, কিন্তু পিছন ফিরেই আমি আঁতকে উঠলাম। সর্বনাশ, এ যে বাঘ! মনে হয় খাঁচা
খোলা পেয়ে বেরিয়ে এসেছে, আর এসে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক আমার পিছনেই!
ভয় পেলেও আমার একটা জিনিষ মনে হল, বাঘ কি কথা বলতে পারে? আর বাঘও কী
আমাদের মতোই বাঙালী, যে বাংলায় কথা কয়? তবে দুটোর কোনটাই খুব অসম্ভব মনে হল না,
কারণ ঠাকুমার কাছে পঞ্চতন্ত্রের অনেক গল্পেই শুনেছি বাঘ-ভালুকেরা দিব্যি কথা বলে।
বরং অনেক মানুষের থেকেও ভালো বলে। রাস্তায় ঘাটে হাটুরে বাটুরে
লোকেরা যে ভাষায় কথা বলে, তাদের তুলনায় যথেষ্ট ভালো বাংলা বলে, আর সুন্দর সুন্দর
উপদেশও দেয়। এই সব কথা মনে হওয়াতে মনে একটু সাহস হল, বললাম,
‘আপনি ব্যগ্র নন, ব্যাঘ্র’। আমার কথায় বাঘটা বলল,
‘মোটেই না, ছোটবেলা থেকেই ব্যা ব্যা শুনে, ব্যা ব্যা খেয়ে আমরা grow করেছি,
তাই আমরা ব্যাগ্র’। আমি অবাক হয়ে বললাম,
‘ব্যাকরণ তো শুনতে হয়, পড়তে হয়। ব্যাকরণ আবার খাওয়াও যায় নাকি?’
‘তুমি বেশ বোকা আর বুদ্ধু বাচ্চা তো, ছাগলের দল ব্যা-ব্যা করলে, আমরা
শুনি। আর তোমার মা আলু দিয়ে তাকে ঝোল বানিয়ে দিলে, রোববারে ভাত মেখে খাও না বুঝি?’
এবার আমি বুঝতে পারলাম, কিন্তু আমায় বোকা বলাতে আমি বেশ একটু রেগেই গিয়েছিলাম, আমি
বিরক্ত হয়ে বললাম,
‘তাহলে, ব্যাঘ্র কথাটা কী ভুল’?
‘না, না। ওটাও ঠিক। ব্যা ব্যা খায়, কিন্তু ঘ্রাও ঘ্রাও ডাকে। তাই
আমাদের ব্যাঘ্রও বলা যায়’।
‘বাঘেরা সবাই খাঁচায় বন্দী, কিন্তু আপনি খাঁচায় না থেকে বাইরে কেন’?
‘যে বাগকে বাগে আনতে পারে, তাকে খাঁচায় পুরে দেয়। আমাকে বাগে আনতে
পারেনি, কিনা? যেমন তোমাকেও তোমার বাড়ির লোকেরা, এমনকি এই সার্কাসের লোকেরাও বাগে
আনতে পারেনি! তুমি ঠিক লুকিয়ে তাঁবুতে ঢুকে পড়েছ, সে রকম আর কী’! আমি একটু লজ্জা
পেলাম, বললাম,
‘বারে, আমি তো দেখতে এসেছি। খাঁচার মধ্যে সিংহ, বাঘ কেমন থাকে’।
‘আমিও তো তোমাকে দেখে খেতে এসেছি। বাচ্চা ছেলে কেমন খেতে’।
‘সার্কাস থেকে তোমাকে খেতে দেয় না?’
‘দেয় বৈকি। রোজই কুমড়ো-পুঁইশাকের চচ্চড়ি, বাঁধাকপি-আলুর ঘ্যাঁট, ভাত আর
ডাল। এমন খেলে আমাকেও ব্যা ব্যা করতে হবে। কোনদিন আর ঘ্রাও করতে পারবো বলে, তোমার
মনে হয়’?
‘তা ঠিক। কিন্তু এই সার্কাসে আরো তো লোক রয়েছে, তাদের ছেড়ে আমাকে কেন’।
‘বারে, তাও বুঝি জানো না? আমাদের দেখার জন্যে, তুমিই তো সব থেকে ব্যগ্র’।
এই কথা বলে, ব্যগ্রটা পা ভাঁজ
করে, বাবু হয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল। বাঘকে এমন অদ্ভূতভাবে মানুষের মতো গুছিয়ে বসতে,
আমি কোনদিন দেখিনি, এমনকি ছবিতেও দেখিনি। বসতে বসতে ব্যগ্র বলল,
‘না বাপু, চার পায়ে দাঁড়িয়ে তোমার সঙ্গে আর বকবক করতে পারিনা। এবার
একটু বসি। তোমাকে খাবার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল, কিন্তু সে এখন আর হচ্ছে না’। আমি বললাম,
‘কেন’?
‘ধুর ধুর, তুমি একদম অখাদ্য! তোমার রোগাভোগা চেহারা, গায়ে মাংসের
ছিটেফোঁটা, সবটাই হাড়’।
হাতের মাস্ল্
ফুলিয়ে আমি বললাম,
‘কে বলেছে আমার গায়ে মাংস নেই? এই তো দেখুন অনেক মাংস’!
‘ওটুকু মাংস আবার মাংস নাকি?
ওতো আমার দাঁতের ফাঁকেই আটকে থাকবে, পেট পর্যন্ত আর পৌঁছোবে না’।
‘ঠিক আছে ঠিক আছে। খান বা
না খান সে আপনার ইচ্ছে। কিন্তু আমাকে অখাদ্য বলবেন না, আমার ছোটকা শুনলে...’।
‘বলো কী? তার মানে তোমার
ছোটকাও তোমাকে খাওয়ার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু এদান্তিতে তিনিও তোমাকে অখাদ্যই
বলেন, নাকি’! আমি ক্ষুণ্ণ মনে উত্তর দিলাম,
‘বলেই তো, খুব বলে আর
কানও মলে দেয়’।
‘সে কি? এ তো ভারি
অন্যায়। অখাদ্যও বলবে, আবার কানও মলে দেবে, এ তো ঠিক নয়। তা তোমার ছোটকা তোমার কান
মলে দেন কেন? তুমি খুব দুষ্টুমি করো বুঝি’।
‘তা একটু করি, তবে সে
তেমন কিছু নয়’।
‘আচ্ছা? তা তেমন কিছু নয়,
এমন কিছু দুষ্টুমির দুএকটা নমুনা শোনাও দেখি, শুনি’।
‘আমার বোনের একটা পুতুল
ছিল, সেটাকে শুইয়ে দিলেই বড্ডো চোখ পিটপিট করতো?’
‘ভালোই তো, সুন্দর পুতুল’।
‘না, না। চোখ পিটপিট করা
মোটেই ভালো কথা নয়। আমি সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসলেই ঘুমে চোখ পিটপিট করি বলে, মা খুব
বকে’।
‘অ, তাই বুঝি?’
‘হ্যাঁ, আর ছোটকার খুব
প্রিয় একটা ফাউন্টেন পেন ছিল, সেটায় কখনও আমাকে হাত দিতে দিত না’।
‘হাত দিতে দেয়নি, ঠিকই তো
করেছে। তোমাকে দিলেই তো পেনটা খারাপ করে ফেলতে’।
‘মোটেও ঠিক করেনি। যে কোন
জিনিষ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়, বাবা বলেছে’।
‘ও বাবা, বাবা তাই বলেছে?’
‘হ্যাঁ। ছোটকার পেনের
নিবের খোঁচা দিয়ে বোনের পুতুলের চোখটাকে আমি ঠিক করার অনেক চেষ্টা করেছিলাম।
কিন্তু হল না, বোনের পুতুলটাও গেল, আর ছোটকার পেনের নিবটাও বেঁকে বঁড়শি হয়ে গেল’।
‘বোঝো। তখন কী করলে’?
‘কী আবার করবো? চিলেকোঠার
ঘরে দুটোকেই লুকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু বাড়ির লোক ঠিক খুঁজে পেয়ে গেল, আর কী করে
যেন বুঝেও গেল, ওটা আমারই কীর্তি। তারপর আর কি? আমার জুটল, অনেক কিল, কানমলা আর
গাঁট্টা। আর বোন পেয়ে গেল নতুন আরেকটা পুতুল আর ছোটকা নতুন ফাউন্টেন পেন! আমি নষ্ট
করেছিলাম বলেই তো নতুন জিনিষগুলো পেল, সে কথাটা কেউ মনেও রাখল না’।
শেষ কথাগুলো বলতে কষ্টে
আমার গলাটা ধরে এল। সেই শুনে ব্যগ্র সহানুভূতি মাখানো গলায় বলল,
‘ইস, সত্যিই তো! ওরা পেলো
নতুন পুতুল আর পেন, আর তুমি পেলে সেই পুরোনো একঘেয়ে কানমলা। তা এমন দুষ্টুমি কি
আরও আছে, নাকি?’ আমি বেশ গর্বের সঙ্গে বললাম,
‘আছে বৈকি! সে সব তেমন
কিছু নয়! আমার বড়দি স্কুলে গিয়ে ফুচকা, আচার, হজমিগুলি খাবে বলে, পয়সা সরিয়ে
বুকশেলফের তাকে, বইয়ের পিছনে লুকিয়ে পয়সা জমাত। আর কেউ না জানলেও আমি জানতাম।
দশপয়সা, সিকিটা, আধুলিটা এরকম আর কি? একদিন শুনলাম, কী একটা বাজে খরচের কথায়, বাবা
মাকে বলছে, “আমার কি টাকার গাছ আছে নাকি, যে যাবো আর পাতা ছিঁড়ে টাকা করে নিয়ে
আসবো’? এই কথা শুনে আমি বুঝলাম, টাকারও গাছ হয়। এবং আমাদের এমন একটা গাছ হলে,
সকলেরই ভালোই হবে। আমাদের বাড়ির পিছনে বেশ কিছুটা জমি তখন খালিই পড়ে ছিল, ঠিক
করলাম, ওখানেই চার/পাঁচটা গাছ লাগাবো, তাতে মায়ের হাত খরচের টাকার কিংবা বড়দির
ফুচকা খাওয়ার পয়সার অভাব হবে না! বড়দির বইয়ের আড়াল থেকে সব পয়সা সরিয়ে নিয়ে, একদিন
নির্জন দুপুরে, সব কটা পয়সা জমিতে পুঁতে দিলাম। বেশ কদিন ধরে রোজ দুবেলা
জলও দিতাম। এর কদিন পর আমাদের মালি রামসুভগকাকা, তার দেশ থেকে ফিরে এল। পিছনের
জমিতে ঢ্যাঁড়সের বীজ বুনতে গিয়ে, সেই মাটি খুঁড়ে সব পয়সা পেয়ে, তার সে কী আনন্দ!
একমুঠো কাদামাখা পয়সা হাতে নিয়ে, রামসুভগকাকা মায়ের সামনে গিয়ে বলল, “মাইজি,
মাইজি, হনুমানজিকা কিরিপাসে হামকো খাজানা মিল গয়ি।” তার এই কথায় সারা বাড়ি জুড়ে
হৈচৈ পড়ে গেল, আর আমার কপালে জুটল সেই গাঁট্টা আর কানমলা’।
‘হুঁম, টাকার গাছ হলে,
সবার সমস্যা যে মিটে যেত, তোমার এই সুবুদ্ধিটা কেউ বুঝতেই পারল না? কী জানো, ছোটরা
ছোট্টতো, তাই তারা ভেতরের খবর অনেক কিছু জানে। আর বড়োরা যত বই পড়ে, তত মুখ্যু হয়,
আর ছোটদের কান মলে বেজায় মাতব্বরি করে।’
এরপর বাঘটা দু পায়ে সোজা
উঠে দাঁড়ালো। আমার হাত ধরে বলল,
‘চলো, সার্কাসে সবার
সঙ্গে তোমার আলাপ করিয়ে দিই। আমাকে ভয় পেও না, আমি একজন জোকার। বাঘের পোশাক পরে
ছোটদের নানান মজা দেখাই। এখন আমাদের সঙ্গে একটু মজা করে নাও। এখানে এসেছ জানলে,
বাড়ি ফিরে রোজকার মতো তোমার কানমলা আর গাঁট্টা না হয় পাওনা থাকুক’।
-০০-
গল্পটি আমার "এক কুড়ি কিশোর" গ্রন্থে সংকলিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন