২১/৭/২৫ তারিখে প্রকাশিত "লিটিং লিং - শেষ পর্ব"-এর পরে...
১
প্রথমেই লেবু চিনির সরবৎ, সঙ্গে দুটো দুটো মণ্ডা আর রসগোল্লা খেয়ে একটু
বিশ্রাম নিতে না নিতেই স্নান করার নির্দেশ এল। সোনার দাদা খুব গোপন কোন কথা বলার
মতো, ভগ্নীপতি অচ্যুতকে বললেন, “ভায়া, দুপুর গড়িয়ে চলেছে। কলতলায় তোমার চানের জল
ধরা আছে। তেল, সাবান, নতুন গামছাও রাখা আছে, আজকে নমো নমো করে চানটা সেরে ফেল।
বেলা থেমে থাকে না ভাই, এরপর খেতে খেতে বিকেল হয়ে যাবে”।
এ বাড়ির জামাই অচ্যুত মুকুজ্জে, কথাটা মেনে নিলেন, কারণ, তাঁর অপেক্ষায়
সকলে অভুক্ত রয়েছেন। শ্বশুরমশাই, দাদা, বাড়ির মেয়েরা সব্বাই।
টিউবওয়েলের বাংলা নাম টেপাকল। শীতকালে টেপাকলের জলের শীতলতা একটু কমই
হয়। তারওপর সারা দিনের রোদ্দুর আর সারা পথের ধুলো মাখা অবস্থায়, সদ্য মোড়ক খোলা সুবাসিত
গ্লিসারিন সাবান আপাদমস্তক মেখে চান করে বেশ তৃপ্তিই বোধ করলেন অচ্যুত। নতুন
গামছায় গা মুছে, বালিকা ছোট শ্যালিকার বাড়িয়ে দেওয়া কাচা ধুতি, বেনিয়ান আর চাদর
গায়ে দিয়ে চুল আঁচড়ে যখন আবার দাওয়ায় এসে দাঁড়ালেন, শরীরে তেমন আর কোন ক্লান্তি
বোধ হচ্ছিল না।
ভেতরের ঘরের দাওয়ায় সবাই তাঁর অপেক্ষাতেই ছিলেন। শ্বশুরমশাই অনাদি
চাটুজ্জে, জামাইকে দেখে রান্নাঘরের দিকে হাঁক দিলেন, “কই গো, তোমাদের হলো? এসো
বাবা, এসো। বাবাজীবন কখন থেকে অপেক্ষা করছে, আর কত বেলা করবে?”
দাওয়ায় তিনটে আসন বিছানো। চটের ওপর রঙীন সুতোয় হাতে বোনা আসন। সেই আসনের সামনে দাঁড়িয়ে অচ্যুত
বললেন, “বাঃ, এই আসনগুলো বেশ তো! কে বুনেছে,
দাদা”?
“আসনগুলো? ও সব আমাদের মণি আর সুভোর বোনা। ভাল বুনেছে না? কলু, কটা আসন
সোনাকে দিয়ে দিস তো – জামাইবাবু বসবে”।
অচ্যুত কিছু বললেন না, একটু হাসলেন। দেয়ালের দিকে তিনটে আসন পাশাপাশি
একটু ফাঁক ফাঁক করে পাতা। মাঝের আসনটাই সব থেকে সুন্দর। নীল জমির মাঝখানে সবুজ গা,
লাল ঠোঁটের শুক-সারি পাখি, মুখোমুখি বসে। তাদের মাথার ওপরে হলুদে লেখা “শাসন করা
তারই সাজে” আর তাদের পায়ের নীচেয় “সোহাগ করে যে”। ওপাশের আসনের মাঝখানে
তাজমহল। ওপরে লেখা “তাজমহলের মর্মরে গাঁথা” আর তার ভিতের পাথরে “কবির অশ্রুজল”। এ পাশের আসনেও শুকসারি
পাখি, ওপরে লেখা “সংসার সুখের হয়” আর পাখিদের পায়ের নীচে “রমণীর গুণে”।
বৌদি দুহাতে ধরে সাজানো ভাতের বিশাল কাঁসার থালা নিয়ে, মাঝের আসনের
সামনে রেখে বললেন, “ঠাকুরজামাই বসুন, সেই কোন কাকভোরে বেরিয়েছেন, নিশ্চয়ই খিদে
পেয়েছে খুব”।
বৌদির পিছনে সুভা আর কলু, কিশোরী আর বালিকা দুই ননদের হাতেও বড়ো বড়ো
সাজানো ভাতের থালা। সুভার হাত থেকে থালা নিয়ে ডান দিকের আসনের সামনে রেখে বললেন, “বাবা,
বসুন”। তারপর বাঁদিকের আসনের সামনে অন্য থালাটি রেখে কিছু বললেন
না, চোখ তুলে তাকালেন দাদার দিকে।
সকলেই নির্দিষ্ট আসনে বসলেন। অনাদি জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “শুরু
করো বাবা”। কাঁসার গেলাসের থেকে হাতে জল নিয়ে গণ্ডুষ করলেন, তারপর
বাকি জলে ঘিরে ফেললেন ভোজন পাত্র। অন্ন এবং অন্যান্য ভোজ্যের সামান্য অংশ পাঁচ আঙুলের
ডগায় তুলে নিয়ে, মনে মনে মন্ত্র পড়ে থালার ডানদিকে মাটিতে উৎসর্গ করলেন, পঞ্চদেবতা
ও পিতৃপুরুষদের। তারপর ভাতের কোল ভেঙে শুরু করলেন আহার।
শাকভাজা মেখে একগ্রাস ভাত মুখে নিয়ে অনাদি বললেন, “এই অবেলায় স্বল্প
আহারই ভাল, বুঝেছ বাবা? অনিয়ম হয়ে গেল না? এই তো দেখ না, খেয়ে উঠতে উঠতেই বেলা শেষ
হয়ে যাবে। শীতের বেলা, এই আছে এই নেই। আজকাল ডাকের যে কী গণ্ডগোল হয়েছে, কি বলবো
বাবা। পাঁচদিন আগে লেখা তোমার চিঠিটা, আমরা হাতে পেলাম সবে কালকে। চিঠিটা পেয়ে কী
আনন্দ যে হল, সে আর বলার কথা নয়। কিন্তু চিন্তা করো, চিঠিটা কাল যদি না পেতাম?
আজকে তোমাদের কী আতান্তরেই না পড়তে হতো! তোমাদের কী খাওয়াতাম, কী করতাম! কোথায়
বসাতাম! যাই বলো আর তাই বলো, বারো-তেরো বছর হতে চলল দেশ স্বাধীন হয়েছে, উন্নতির
জায়গায় সবদিকে অবনতিই হয়েছে বলবো। থাকত আজ গোরা সায়েবরা, চাবকে ঠিক সোজা রাখতো
আমাদের”।
দাদা এবং অচ্যুত খাচ্ছিলেন, কেউ কোন কথা বললেন না। অনাদি কিছুক্ষণ চুপ
করে খাওয়ার পর আবার বললেন, “হ্যারে সুভা, বিকাশ আর তনু কোথায় গেল রে? দেখছি না?”
বড়ো থালায় ছটা বাটি - তিনটেয় ভাজা সোনামুগের ডাল, আর তিনটেয় মাছের ঝোল নিয়ে সুভা
রান্নাঘর থেকে অতি সন্তর্পণে উঠোন পার হয়ে আসছিল। বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে বলল, “ওরা
হাজরা পুকুরে নাইতে গেছে, বাবা”। অনাদি আদর করে তাঁর কন্যাদের
নিজস্ব নামে ডাকেন, মণিদিদিকে তনু, নদিদির ডাকনাম যদিও সোনা, উনি ডাকেন
বিকাশ!
“বাড়িতে টেপাকল থাকতে, এই অবেলায় আবার পুকুরে গেল নাইতে? এদের
কাণ্ডকারখানার বোঝা দায়! হীরুকে নিয়ে যায়নি তো?”
“গেছে তো! হীরু খুব বায়না করছিল, তাই মণিদি বলল, চলুক না, কিচ্ছু হবে
না”।
“কিচ্ছু হবে না কি রে? ছোট ছেলে, অবেলায় পুকুরে চান করে, জ্বরজারি
বাধিয়ে বসলে?”
এতক্ষণ রান্নাঘরে আড়ালেই ছিলেন, ষোড়শীবালা, অচ্যুত মুখার্জির শাশুড়িমা।
প্রৌঢ়া, একটু পৃথুলা গড়ন, ধবধবে ফর্সা রঙ। সমস্ত শরীরে ও মুখশ্রীতে মাতৃভাব। সামনে
জামাই রয়েছে, তাই মাথায় বড়ো ঘোমটা টানা। ছোট্ট পান্নাকে কোলে নিয়ে তিনি উঠোন
পেরিয়ে এসে দাওয়ায় বসলেন, বললেন, ““অত ব্যস্ত হয়ো না তো! অ সুভা, জামাইবাবুকে দুটো
ভাত দিয়ে যা, মা। কলু, জামাইবাবুকে আর এক টুকরো লেবু দে না, মা। ডাল দিয়ে মেখে খেতে
ভালো লাগবে”।
শাকভাজা শেষ করে, অনাদি ফুলকপির তরকারি দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে বললেন, “পান্না
কি ঘুমোচ্ছে”?
কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমোনো পান্নার মুখের দিকে তাকিয়ে ষোড়শীবালা বললেন, “হ্যাঁ।
কেমন অবাক ছেলে বলো দিকি। অচেনা মুখ, অচেনা জায়গা, অচেনা কোল, তবু এতটুকু কান্না
নেই গা”? সুভা আর কলুর কাছে, ছোট্ট এই ছেলে যেন জ্যান্ত এক পুতুল।
কলু খুব উত্তেজিত গলায় বলল, “জানো বাবা, পান্না আজকেই প্রথম ঝিনুকে দুধ
খেল। গলায় দুধ নিয়ে গলগল করে আওয়াজ তুলছিল, আর ঢোঁক গিলেই সে কি হাসি!”
“তাই নাকি?” পান্নার দাদামশাই হাসলেন ঘুমন্ত পান্নার দিকে চেয়ে। তাঁর
দুচোখে ভালোবাসা আর মায়া।
পান্নার দিদিমা মুচকি হেসে নাতির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে, স্নেহার্দ্র
স্বরে বললেন, “তাই না তাই, এ যেন সেই “মুখে নেই রা, পব্বতে মারে ঘা”।
ফুলকপির তরকারি শেষ করে নতুন ভাত ভাঙলেন অনাদি, তাতে মাছের ঝোল ঢেলে
বললেন, “দুটো ভাত দে দেখি সুভা, মা। ঝোলটা বেশি হয়ে গেল। বাবা অচ্যুত, সোনা আমাদের
খুব ভেতরবুঝো আর মনটা মায়া-দয়ায় ভরা, জানলে বাবা? তোমার ছেলেদুটি একদম রত্ন হবে, এ
আমি তোমায় বলে রাখলাম, পরে মিলিয়ে নিও”। বাবাকে বেশ খানিকটা ভাত দিয়ে,
সুভা জামাইবাবুকেও ভাত দিতে এসেছিল, জামাইবাবু দু হাতে পাত আড়াল করে হাঁ হাঁ করে
উঠলেন, বললেন, “আর একটাও ভাত নিতে পারবো না, সুভা”।
কিশোরী সুভা হেসে বলল, “সে কী, জাঁইবাবু? আপনি তো কিছুই খেলেন না”।
ষোড়শীবালা পিছন থেকে বললেন, “থাক থাক, এই অবেলায় আর জোর করিসনি, বাছা।
বরং চুনো মাছের অম্বল আর পায়েসটা নিয়ে এসো, বৌমা”।
“কী সর্বনাশ, এর পরে আবার পায়েস?”
ষোড়শীবালা অচ্যুতের এই কথায় একটু বিরক্ত হলেন, “ও আবার কী কথা, বাবা?
খাওয়াতেও সর্বনাশ? তোমাদের আজকালকার ছেলেছোকরাদের কথাবার্তায় কোন ছিরিছাঁদ নেই
বাপু”।
অপ্রস্তুত অচ্যুত পাশে বসা দাদার দিকে তাকালেন। দাদা চোখের ইশারায় মুচকি
হেসে খেতে খেতেই বললেন, “পায়েস না খেলে কী আর আয়েস হয়, ভায়া?”
“নাঃ”।
“কাঁচি চলে?” দাদার হাতে সিজার্স সিগারেটের প্যাকেট।
লাজুক হেসে অচ্যুত বললেন, “কলকাতার মেসে দু একদিন টেনে দেখেছি, তেমন
মজা পাইনি”।
“আরে নাও, নাও। ব্যাটাছেলের এক আধটা নেশাভাং না হলে ঠিক মানায় না”।
“আচ্ছা দিন, বলছেন যখন”।
দুজনেরই ঠোঁটে সিগারেট। কেরোসিনের লাইটারে খচ খচ চার পাঁচবার ফ্ল্যাশ
দেওয়ার পর জ্বলল। অচ্যুতর সিগারেট জ্বালিয়ে, দাদা নিজেরটা ধরালেন। সিগারেট ধরানো
আর প্রথম টানেই বোঝা গেল, অচ্যুত নেশার পথে নেহাতই নাবালক।
সিগারেটে দুটো টান দেওয়ার পর অচ্যুত বললেন, “আচ্ছা, আমার কথায় তখন মা
খুব বিরক্ত হয়েছেন, না?”
“কিসের কথায়? অ, ওই “সর্বনাশ”? ছাড়ো না ভায়া, আমাদের কথাবার্তার ধরনে
বাবা-মায়েরা অমন প্রায়ই বলেন। “আজকালকার ছোকরাদের কথাবার্তায় কোন মাথামুণ্ডু নেই”।
“আমাদের সময় বাপু এমন ছিল না”। “কালে কালে কত যে দেখবো”? হা হা হা হা, সব কথায় কান
দিলে চলে?”
“আরেকটা কথা কী যেন বললেন, মুখে নেই রা...”
“হা হা হা হা, ওটা একটা কথার কথা - প্রবাদ। আমার মা হচ্ছেন বাংলা পরিভাষা আর প্রবাদের আকর। কথাটা হচ্ছে, “মুখে নেই
রা, পর্বতে মারে ঘা”। কেউ কেউ কথা কম বলে, কিন্তু কাজে হয় খুব দড়, একদম পাহাড়ে
গিয়ে যেন ঘা মারে...হা হা হা হা। কদিন থাকো না ভায়া...”, শেষ হয়ে আসা সিগারেটটা
তোবড়ানো শানকির বাটিতে চেপে নিভিয়ে ফেলে দিলেন, তারপর আবার বললেন, “...আরো অমন কত
জেনে যাবে! অসিতবাবু, নীহারবাবু, সুকুমারবাবু আর কটা সংগ্রহ করেছেন? তাঁরা যদি আসতেন
আমার মায়ের কাছে”!
অচ্যুত হাসলেন, কিছু বললেন না। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন, “আপনার
সঙ্গে একটা পরামর্শ আছে, দাদা”।
অচ্যুতের বলার ভঙ্গিতে দাদা একটু উদ্বিগ্নই হলেন, বললেন, “কী ব্যাপার
বলো, তো?”
“আমি ওদের নিয়ে এবার কলকাতায় যাবো ভাবছি”।
“কাদের নিয়ে?”
“ওদের, মানে আপনার বোন, আর ছেলেদের নিয়ে”।
“তা সে যাও না, পরিবার নিয়ে কলকাতায় যাবে, সে তো খুবই আনন্দের কথা। মাস
খানেক থেকে জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, কালীঘাট, ভিক্টোরিয়া, দক্ষিণেশ্বর – সে তো ভালোই
হবে। কিন্তু পান্নাটা একেবারেই কচি ছেলে, হীরুই বা কী এমন বড়ো, তোমারও আপিস, সোনা
একা সামলাতে পারবে কী”?
“কদিনের জন্যে নয় দাদা। বাসা নিয়ে কলকাতাতেই থাকবো”।
দাদা অচ্যুতের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন বেশ কিছুক্ষণ, তারপর বললেন, “সে
তো আমার বোনের সৌভাগ্য। কিন্তু হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন? তুমি বাড়ির বড়ো ছেলে, গ্রামের
বাড়িতে তোমার বিধবা মা রয়েছেন, ভাইয়েরা রয়েছে, জমিজিরেত, চাষবাস রয়েছে। কলকাতার বাসায় থেকে এসব
সামলাতে পারবে? তাছাড়া, কিছু মনে কোর না, অচ্যুত, বড়দাদা হিসেবেই বলছি, কলকাতায়
বাসা ভাড়া দিয়ে সংসার চালানো, দুটো বাচ্চা, দায়দৈব, জ্বরজারি, তাদের লেখাপড়া,
বইখাতা, স্কুল। খরচের ব্যাপারটাও ভেবে দেখেছো তো?”
মাথা নীচু করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন অচ্যুত, তারপর মুখ তুলে বললেন, “ভেবেছি,
দাদা। আমাদের এমন কিছু জমিজিরেত নেই, যার জন্যে সব ভাই মিলে গ্রামে পড়ে থাকতে হবে,
সে কথা আপনি জানেন, দাদা। আর কলকাতায় বাসা ভাড়া করে সংসার চালাতে খরচ তো হবেই, ঘাটতি
যেটুকু হবে, সেটা সকাল বিকেল টিউশনি করে সামলে নিতে পারবো”।
“হুঁ, সব দিক চিন্তাভাবনা করেই ফেলেছো? আমার মা বলেন, তাঁর সকল
জামাইয়ের মধ্যে, তুমিই নাকি সব থেকে বিচক্ষণ আর জ্ঞানী”। মৃদু হেসে দাদা আরো
বললেন, “তা তোমার মাথায় হঠাৎ এমন চিন্তা এল কী করে? আমি তো জানতাম, তুমি বেশ
মাতৃভক্ত এবং মাকে বেশ ভয়ও পাও। তাঁকে আড়াল করে, এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে চলেছ!
সোনা জানে, সোনাকে বলেছ?”
“না দাদা, কেউই জানে না। কলকাতায় ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে দু’একজন জানে,
তাদেরকেই বলে রেখেছি, একটা বাসা দেখে রাখতে। আত্মীয়দের মধ্যে আপনাকেই প্রথম বললাম।
এ বিষয়ে আপনার মতামতটা ভীষণ জরুরি। কারণ, ভালো মন্দ যাই হোক না কেন,
আপনার বোনের ভবিষ্যত আমার সঙ্গেই তো জড়িয়ে? আর এই সিদ্ধান্তটাও হঠাৎ নয় দাদা, বেশ
কিছুদিন ধরেই ভাবছি। হীরুর স্কুলে যাবার বয়েস হয়ে এল, দাদা। আমাদের গ্রামের স্কুলে
ওকে পড়াতে চাইছি না। কলকাতার ভালো স্কুলে পড়ে, ভালোভাবে মানুষ হয়ে উঠুক, এটাই আমার
স্বপ্ন”।
“এ কথাটা আমি মানতে পারলাম না, ভায়া। কলকাতায় লেখাপড়ার পরিবেশ ভালো
মানছি, কিন্তু গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করে অমানুষ হয়...তুমি আমি কি অমানুষ হয়েছি
বলতে চাও”?
অচ্যুত হেসে ফেললেন, মাথা নেড়ে বললেন, “না, না, আমি ওভাবে কথাটা বলিনি,
দাদা। আমার স্বপ্ন হীরু ডাক্তার হোক। গ্রামের স্কুল থেকে পড়ে কেউ কোনদিন ডাক্তার
হয়নি, তা নয় দাদা। কিন্তু কলকাতার পরিবেশে সেটা অনেক সহজ হয়ে যায়, সেটা তো মানবেন?”
দাদা কিছু বললেন না, তাকিয়ে রইলেন অচ্যুতের দিকে, তাঁর মুখে মৃদু হাসির রেশ।
বেশ কিছুক্ষণ কোন কথা না বলায় অচ্যুত একটু অধৈর্য হয়ে উঠলেন, হাসতে
হাসতে বললেন, “কী হল? হাসি হাসি মুখে কী দেখছেন বলুন তো”?
এ কথার উত্তরে দাদা হাসি মুখে বললেন, “দেখছি হে, দেখছি। মুখে নেই রা,
পব্বতে মারো ঘা। কথাটা তোমার পক্ষেও দিব্বি খেটে যায়”।
“তার মানে?”
হা হা করে হেসে উঠলেন, দাদা। তারপর বললেন, “বেশি কথা-টথা বলো না,
কিন্তু নিজে নিজেই বেশ কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ! আজকালকার ছোঁড়ারা এটাকেই
বলে চ্যালেঞ্জ! ওই দ্যাখো, আমিও একাল-সেকাল বলতে আরম্ভ করেছি”। একটু থেমে থেকে আবার
বললেন, “স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি, অচ্যুত। কিন্তু স্বপ্নটাকে সত্যি করে তোলাটা যে
একটা চ্যালেঞ্জ, সেটা ভাবি না। যতটুকু সাধ্য, আমার সাহায্য তুমি চিরদিন পাবে। কিন্তু
সবার আগে সোনার সঙ্গে তোমার কথা বলা উচিৎ। যত শিগ্গির হয়, সম্ভব হলে আজই। তোমার
এই কঠিন ব্রতে ওই হবে তোমার একমাত্র নিত্য সঙ্গী, ওর মতামতকে অবহেলা করো না”।
..০০..
পরের পর্ব "সংসার সুখের হয়"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন