সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পায়রা

 

[গল্পটি শোনাও যাবে "ঋতুযানের অদ্ভূত গল্প" সিরিজ - ইউটিউবের এই চ্যানেলে, পায়রা ]  


ভোর সাড়ে ছটায় মোবাইলের আওয়াজে স্বপনের ঘুম ভেঙে গেলএকটা খবর কভার করে, কাল রাত দেড়টায় ফিরে দুটো নাগাদ শুয়েছিল। সাড়ে ছটায় এই ফোনটা আসাতে বেশ বিরক্ত হল স্বপন। একবার ভাবল, ওঠাবে না। আবার কী ভেবে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল বিশ্বজিৎদা কলিং। বিশ্বজিৎদা স্বপনের টপ বস্‌, “এই বঙ্গ সেই বঙ্গ” পত্রিকার চিফ এডিটার। কানেক্ট করে স্বপন বলল, ‘হ্যালো, বিশ্বজিদ্দা, গুড মর্নিং’

‘গুড মর্নিং। কতবার রিং হল বলতো? এত বেলা অব্দি ঘুমোচ্ছিলি নাকি? শোন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে পড়। হাতের কাছে পেন বা পেন্সিল কিছু আছে? লিখে নে, প্রফেসর নীলমাধব দেবনাথ..”

‘এক মিনিট বিশ্বজিদ্দা’ ফোনটা কানে নিয়ে টেবিলে একটা ডায়রি পেল, পেন...পেন...এ ড্রয়ার...সে ড্রয়ার... পেল না...দরকারের সময় কোথায় যে ঢোকে?  নাঃ পাওয়া যাচ্ছে না।

আশা ছেড়ে দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বলুন বিশ্বজিদ্দা’।

‘ওফ একটা পেন খুঁজতে এত সময় লাগে? লেখ, প্রফেসার নীলমাধব দেবনাথ, বিদ্যা ভিলা। রাজবাড়ি পাড়া’ স্বপন মনে মনে দু তিনবার আউড়ে নিল ঠিকানাটা, তারপর বলল, ‘কোনো ল্যাণ্ডমার্ক’?

‘প্রফেসার নীলমাধব, নিজেই ল্যাণ্ডমার্ক। এত জায়গায় নিউজ কভার করে বেড়াচ্ছিস, নীলমাধবস্যারকে চিনিস না? না চিনলে, খবর বানানো ছেড়ে, স্টেশনে গিয়ে ঘুগ্নিমুড়ি বানা। যে কোন লোককে জিগ্যেস করলে, নীলমাধবস্যারের বাড়ি চিনিয়ে দেবে। জরুরি ঘটনা। ভদ্রলোক পায়রার ঠোক্করে সাংঘাতিক ইনজিয়োর্ড। ফিজিক্যালি খুব একটা না হলেও, মেন্টালি সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়’।  

ফোনটা কেটে দিলে বিশ্বজিদ্দা, আর সকাল সকাল মেজাজটাও খিঁচড়ে দিল।  নীলমাধবস্যারকে সে চেনে না, তা নয়, ভালই চেনে। এ শহরের বিদ্বজ্জনদের মধ্যে তিনি প্রথম সারিতে। রিটায়ার্ড প্রফেসর, এনবিইউ। এখনও খুব অ্যাক্টিভ এবং অ্যাক্টিভিস্ট।  গত চারদিন ধরে শহরে যে প্রতিবাদী মিছিল এবং ধর্না চলছে সেখানে তিনি নিজেও পার্টিসিপেট করছেন। তাঁকে পায়রা ঠুকরেছে! পায়রা? স্বপন ঠিক শুনল তো? বিশ্বজিদ্দাকে ফোন করে আরেকবার জিগ্যেস করতে ভরসা হল না। অলরেডি ঘুগ্নিমুড়িতে নামিয়ে এনেছে, এর পর হয়তো...।

পাঁচমিনিট বললেই কী আর পাঁচমিনিটে হয়? এর মধ্যে সুমন্তকে ফোন করল, রেডি হবার জন্যে। যাবার সময় ওকেও তুলে নিতে হবে। সুমন্ত ফটোগ্রাফার। সুমন্ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। স্বপন বলল, ‘পাঁচমিনিটের মধ্যে যদি বেরোতে না পারিস, তবে স্টেশনে গিয়ে ঝালমুড়ি বেচা শুরু কর। এত আলসে হলে নিউজ লাইনে আসা তোর কম্মো নয়’। ঘুগ্নিমুড়ির পাশে ঝালমুড়ি, জমবে ভালো।

আটমিনিটের মাথায় কাঁধে ব্যাগ নিয়ে স্বপন যখন বাইক বের করল, স্বপনের বউ মিতালি জানালায় দাঁড়িয়ে প্যাঁচার মতো মুখ করে, বলল, ‘রাত দেড়টায় বাড়ি ঢুকে, আবার এই সাড়ে ছটায় বেরোচ্ছো? কখন ফিরবে শুনি?’ স্বপন বাইকে আওয়াজ তুলে বেরিয়ে গেল। কাঁধ ঝাঁকিয়ে কোন ইঙ্গিত দিল, নাকি অ্যাক্সিলেটারে চাপ দিল বুঝতে পারল না, মিতালি।

সুমন্ত রেডিই ছিল, কাঁধে ক্যামেরার ব্যাগ নিয়ে বাইকের পেছনে বসতেই, স্বপন উড়তে লাগল ভোরের শান্ত নিরিবিলি ডিবিসি রোড ধরে। কিছুটা যাওয়ার পর সুমন্ত জিগ্যেস করল, ‘কেসটা কী? এত এমারজেন্সি? নীলমাধব স্যারের শরীর খারাপ?’ 

‘শরীর নয় মন খারাপ। কিন্তু সেটা খবর নয়। খবর হচ্ছে পায়রা। পায়রা যে একটা হিংস্র পাখি সে বিষয়ে তোর কোন ধারণা আছে?’

‘পায়রা? হিংস্র পাখি? সকাল সকাল কী হেঁয়ালি করছিস, মাইরি’?

‘তোর কী মনে হয়, আমাকেও পাগলা পায়রা কামড়েছে? ভোরবেলা বাইকে চাপিয়ে তোর সঙ্গে হেঁয়ালি করছি?’ সুমন্ত আর কোন কথা বলল না, স্বপনের পিছনে চুপ করে বসে রইল

 পাড়ার লোকের হাঁড়ির খবর যারা রাখে, সেই সব পানের দোকান, মুদির দোকান এখনো বন্ধ। নীলমাধবস্যারের বাড়ির হদিশ পেতে তাই একটু বেগ পেতে হল। তিনজন মর্নিং ওয়াকার বৃদ্ধ ভদ্রলোককে জিগ্যেস করেও তেমন সুবিধে হল না। একজন ভদ্রলোক বললেন, ‘আরে এ পাড়ায়, সবাই তো স্যার। এই যে দেখছো, সার সার বাড়িতে সকলেই স্যার। তা তোমরা কোন নীলমাধবের কথা বলছ? অ্যাডভোকেট, ডাক্তার না সাহিত্যিক নীলমাধব?’ স্বপন বলল, ‘প্রফেসার নীলমাধব দেবনাথ’।

‘প্রফেসার? প্রফেসার তো আছে সমরজ্যোতি পোদ্দার। সমর ছাড়া আরে কে প্রফেসার, জানা নেই ভাই’। ভদ্রলোক ঘাড় নাড়লেন। স্বপন থ্যাংকিউ বলে, আরো এগিয়ে গেল। চার রাস্তার মোড়ে ছোট্ট একটা চায়ের স্টল, দেখে দাঁড়াল। সকালে উঠে চা খাওয়া হয়নি, চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল, তার ওপর যদি নীলমাধবস্যারের বাড়ির হদিশটাও পাওয়া যায়। বাইক থামিয়ে, দুজনেই নেমে গিয়ে চা নিল, তারপর চা খেতে খেতে জিগ্যেস করল, নীলমাধব স্যারের বাড়ির ঠিকানা।

চায়ের দোকান থেকে সঠিক হদিশ নিয়ে, তারা যখন নীলমাধবস্যারের বাড়ি পৌঁছলো তখন বাজে সাতটা পাঁচ। কলিং বেল টিপতেই দোতলার বারান্দায় এক ভদ্রমহিলা এসে ঝুঁকে জিগ্যেস করলেন, ‘কাকে চাই?’

‘নীলমাধবস্যার আছেন? ওঁনার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই’।

‘কোথা থেকে আসছেন?’

‘ “এই বঙ্গ সেই বঙ্গ” পত্রিকা থেকে, বিশ্বজিৎ সান্যাল পাঠিয়েছেন’।

ভদ্রমহিলা কোন উত্তর না দিয়ে, বারান্দা থেকে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেলেন। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর তাদের সামনের দরজায় ছিটকিনি খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল ‘খুট’। অন্য এক মহিলা দরজা খুললেন, দেখে মনে হল, কাজের দিদি। বাইক লক করে ওরা দুজনে ভেতরে ঢুকতে, মহিলা দরজাটা আবার বন্ধ করলেন, তারপর সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বললেন, ‘আসুন’। ওরা মহিলার পিছনে সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায় গেল। সামনেই বেশ বড়ো একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে, ওদের বসতে বলে, পাখা চালিয়ে দিলেন মহিলা। তারপর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।

ঘাড় ঘুরিয়ে ঘরের চারদিক দেখতে দেখতে ওরা অপেক্ষা করতে লাগল। ঘরের তিন দেওয়ালে বুক শেলফ, তাতে ভর্তি শুধু বই আর বই। সোফা, বেতের মোড়া, চা গাছের ডাল দিয়ে বানানো সেন্টার টেবিল। দেওয়ালে টিভি। তার নিচেয় একটা বড়ো ক্যাবিনেট। তার ওপরে সেটটপ বক্স। সাউণ্ড সিস্টেম। ক্যাবিনেটের ভেতরে বেশ কিছু শোপিস।

নীলমাধবস্যার কিছুক্ষণ পরে ঘরে ঢুকলেন, তাঁর পিছনে সেই ভদ্রমহিলা, যিনি বারান্দায় এসেছিলেন। এই গরমের মধ্যেও স্যারের পোষাক দেখে খুব অবাক হল স্বপন আর সুমন্ত। ভদ্রলোকের মাথা ঠিক আছে তো? প্রফেসর ঘরে ঢুকেই বললেন, ‘গুড মর্নিং। তোমরা দুজন কী স্বপন আর সুমন্ত?’

‘আজ্ঞে হ্যাঁ, স্যার’।

‘সকালে আমি যখন ফোন করেছিলাম, বিশ্বজিৎ বলল, তোমাদের ইমিডিয়েটলি পাঠাচ্ছে। স্বপন কে? তুমি? বিশ্বজিৎ বলল, ইউ আর ভেরি স্মার্ট এণ্ড ইন্টেলিজেন্ট ওয়ান টু হ্যান্ডল দা সিচুয়েশন’।

ঘুগ্নিমুড়ি শোনার পর বিশ্বজিদ্দার এমন কমপ্লিমেন্ট, মোটেই কম নয়, বেশ বেশিপ্লিমেন্ট! স্বপন কিছু বলল না, একটু লজ্জা পাওয়ার ভাব করে মাথাটা চুলকে নিল।

প্রফেসর নীলমাধব আবার বললেন, ‘তোমরা দুজনেই রেডি তো? তোমাদের নিয়ে আমি ছাদে যাবো’।

‘আমিও যাবো, বাবা’।

‘জিদ করিস না, মা। সকালে যা হয়েছে, তারপরে আমি মোটেই স্বস্তি পাচ্ছি না। তোকে তো আগেই বলেছি, যেতে হলে, আমার মতো প্রোটেকসন নিতে হবে। আমার কথাটা তোর বিশ্বাস হচ্ছে না, বুঝছি। না হবারই কথা। অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হয়’! তারপর স্বপনদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘পরিচয় করিয়ে দিই। সম্পর্কে আমার বৌমা, কিন্তু আমার মেয়েই বলতে পারো। আমার ছেলের থেকেও নির্ভরযোগ্য। তোমাদের দুজনেরই নিশ্চয়ই হেলমেট আছে?’

দুজনেই ভদ্রমহিলাকে নমস্কার করল, তারপর স্বপন বলল, ‘আছে’।

‘ফাইন, তাহলে অতটা ভয়ের ব্যাপার হবে বলে মনে হয় না’।

‘পায়রা?’

‘হুঁ পায়রা। বিশ্বজিৎ বলেছে বুঝি? কী বলেছে?’

‘ফেরোসাস, মানে ইয়ে হিংস্র হয়ে উঠেছে’।

‘ঠিক। এত শান্ত সুন্দর নিরীহ একটা পাখির আচরণ, এভাবে হঠাৎ বদলে যেতে পারে, ভাবা যায় না। এই খবরটা করতে হবে। ছবি, ভিডিও, রিপোর্ট। আমি চাই যত শিগ্‌গির সম্ভব মিডিয়াতে ছড়িয়ে যাক খবরটা। তোমাদের অনলাইন এডিসন রয়েছে না, সেখানেও ব্রেকিং নিউজ টেলিকাস্ট করো’।

স্বপন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমরা তৈরি স্যার’নীলমাধব স্যারের কথা শুনে স্বপন ভেতরে একটা উত্তেজনা অনুভব করছে।

‘ভেরি গুড। বাট আবার বলছি, ডোন্ট আণ্ডার এস্টিমেট দেম। বি কশাস’।

‘উই উইল বি, স্যার’।

নিজেও মাথায় একটা হেলমেট পরে, ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদের সিঁড়ি দিয়ে স্যার উঠতে লাগলেন। পিছনে স্বপন আর সুমন্ত। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই সুমন্ত ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে রেডি করতে লাগল।

নীলমাধবস্যার বললেন, ‘ভোরের রাস্তায় আধাঘন্টা মতো হাঁটাহাঁটি করে এসে, ছাদে ওঠা আমার অনেকদিনের অভ্যেস। কয়েকটা টবে ফুল গাছ আছে, জলটল দিই। শুকনো পাতা-টাতা থাকলে তুলে দিই। আর পাখিদের জন্যে দানা দিই, চাল দিই, গম দিই। আমি ছাদে উঠলেই ওরা আমাকে চিনতে পারে। বুঝতে পারে। আকাশ থেকে ওরা দল বেঁধে যখন নেমে আসে কী যে অপূর্ব অনুভূতি হয় সে আমি বলে বোঝাতে পারবো না। আজও উঠেছিলাম’।

বলতে বলতে সিঁড়ি শেষ, নীলমাধবস্যার ছাদের দরজার ছিটকিনি খুললেন, খুট। দরজার পাল্লা খুলতেই সামনে ছাদ। নীলমাধবস্যার ছাদে গেলেন। পিছনে পিছনে স্বপন আর সুমন্ত। সুমন্তর ক্যামেরা রেডি। স্যারকে দেখে সত্যিই পায়রার ঝাঁক নেমে আসছে। তাদের ডানায় আওয়াজ উঠছে ফটফট করে। সত্যিই অপূর্ব দৃশ্য। মানুষের সঙ্গে পাখির এই গড়ে ওঠা সম্পর্ক দেখলে মনে সত্যিই স্বর্গীয় এক আনন্দের অনুভব হয়। এখনও হচ্ছে। ওদের আচরণে কোন হিংস্র ভাব বোঝা যাচ্ছে না তো! ছাদের মেঝেয় ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে অনেক চাল ও গমের দানা। অন্যদিন পাখির ঝাঁক সেগুলি খুঁটে খুঁটে খায়। ঘুরে ঘুরে নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করে। মিনিট ছয় সাতের মধ্যে সাফ করে ফেলে সমস্ত শস্য দানা। আজ খায়নি।

কিছু পাখি এসে বসল ছাদের আলসেতে। কিছু জলের ট্যাংকের ছাদে। দু চারটে কাপড় শুকোতে দেওয়ার দড়িতে বসে দোল খেতে লাগল। আর কিছু পাখি এসে নীলমাধব স্যারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ঠোকরাতে লাগল স্যারের হেলমেটে। হাতে পায়ে। লাল টুকটুকে পায়ের আঙুল দিয়ে খিমচে দিতে লাগল, স্যারের পিঠ, কাঁধ। পাখিদের ঠোঁটে তেমন ধার নেই, কিন্ত তাদের হিংস্রতার ধার তীক্ষ্ণ। স্যার হাতে গ্লাভস, গায়ে ফুল হাতা জ্যাকেট পরেছিলেন। তেমন ক্ষতি হচ্ছে না, কিন্তু গোটা ব্যাপারটা ভয়ংকর, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

‘সকালে এসে রোজ যেমন দিই, আজও চাল আর গমের দানা দিয়েছিলাম – একটাও মুখে তোলেনি। দেখেছো?’ নীলমাধবস্যার বললেন। আলসে আর জলের ট্যাংকে বসে থাকা পাখিরাও এবার নেমে এসে ছেঁকে ধরল স্যারকে। ‘ওরা কিন্তু ক্ষুধার্ত। খাবার চাইছে। কিন্তু সে খাবার শস্যদানা নয়, অন্য কিছু। ’

‘বাবা, তুমি চলে এসো’। স্যারের বৌমা নিঃশব্দে কখন ছাদে এসেছে খেয়াল করেনি কেউ।

‘তুই আসিস না, মা। তোকেও ওরা চেনে। আমার মতো তোকেও ছেঁকে ধরবে। আমি জানি ওরা কী চাইছে!’

স্বপন আতংকের গলায় জিগ্যেস করল, ‘কী চাইছে স্যার’?

নীলমাধবস্যার পকেট থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগ বের করলেন। ব্যাগের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে, একদলা মাংসের কিমা বের করে, ছড়িয়ে দিলেন সামনে। স্যারকে ছেড়ে পায়রার ঝাঁক ঝাঁপিয়ে পড়ল ওই টুকরোগুলোর ওপর।  স্যার আরও ছড়ালেন, সমস্ত পায়রা নেমে এল মেঝেয় ছড়িয়ে থাকা মাংসের টুকরোর লোভে। তারা নিজেদের মধ্যেও মারামারি করছে। পায়ের নখে তুলে নিচ্ছে অন্যের পালক। ঠুকরে আহত করছে অন্য পায়রাকে। স্যারের বৌমা হাত ধরে টেনে আনলেন স্যারকে। স্বপন এবং সুমন্তও আস্তে আস্তে সরে এল। স্যারের বৌমা, ছাদের দরজা বন্ধ করে দিলেন। সুমন্ত ক্যামেরা অফ করল। 

নিচের বৈঠকখানা ঘরে এসে, নীলমাধবস্যার সামনের সোফায় বসলেন, তিনি বিধ্বস্ত। শরীরে নয় মনে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘ওদের আচরণে কী বীভৎস পরিবর্তন, চিন্তা করতে পারছো?’

‘এভাবে কী সবাই বদলে যাবে? আমরাও? হিংস্র হয়ে ওঠাই কী আমাদের শেষ পরিণতি?’

‘জানি না, স্বপন। জানি না। আমাদের দিন তো প্রায় শেষ হয়ে এল। কিন্তু তোমাদের, বৌমার? এবং তোমাদেরও পরের প্রজন্মের কী হবে? শান্ত, স্নিগ্ধ, সুন্দর বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না! সভ্যতা আর টেকনোলজির বিকিরণ, রণক্ষেত্র করে তুলেছে আমাদের চারদিক। কেউ কী পরিত্রাণ পাব? এখন আমাদের বেশ কিছু মানুষ চাই, যারা হবে সত্যিকারের অসভ্য, আর ইয়ে, হ্যাঁ আদিম’। খুব নাটকীয় ভাবে বললেন নীলমাধব স্যার। 

 

..০০..

  

   

                   


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন পোস্টগুলি

জীবন - যাত্রা

  [এর আগের পর্ব পড়তে পারবেন এই সূত্রে -  "লোকশিল্পীর বিলুপ্তি" ] গ্রামের বড়োরা মিলে দুটো যাত্রা করবেন এইবার মকর সংক্রান্তির দিন আর...