["ধর্মাধর্ম"-এর তৃতীয় পর্বের ষষ্ঠ পর্বাংশ পড়ে নিতে পারেন এই সূত্র থেকে "ধর্মাধর্ম - ৩/৬"]
তৃতীয় পর্ব - সপ্তম পর্বাংশ
(৬০০ বিসিই থেকে ০ বিসিই)
৩.৫.৩ ধর্মাশোকের প্রভাব
রাজা অশোকের ছত্রিশ বছরের রাজত্ব ভারতের ধীরস্থির
শ্লথগতি সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে ভীষণভাবে উজ্জীবিত করেছিল, সে বিষয়ে
কোন সন্দেহই নেই। বিশ্ব দরবারে প্রাচীন সভ্যতা, শিল্প, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সাহিত্য, দর্শন নিয়ে
আজ ভারতবর্ষের যে গৌরবময় অবস্থান, অনায়াসে বলা যায় অশোক তার সূচনা করেছিলেন। বিচ্ছিন্ন কিছু
মহাজনপদ এবং রাজ্য নিয়ে গড়ে উঠতে থাকা খণ্ড-খণ্ড ভারতীয় সমাজকে বিশাল এবং
বৈচিত্রময় একটি দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলেছিলেন মৌর্যরা, বিশেষ করে
সম্রাট অশোক। শুধুমাত্র পরিচয়ই নয়, ভারতের আশ্চর্য দর্শন, জ্ঞান এবং
সম্পদ, বিদেশী
মানুষদের বিস্মিত করে তুলল এবং ভারতবর্ষ সম্পর্কে বাড়তে লাগল তাদের কৌতূহল, আগ্রহ, বেড়ে উঠল
পারষ্পরিক আদান-প্রদান,
যোগাযোগ এবং উৎসাহ দিল অজস্র জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ।
৩.৫.৩.১ লিপি এবং ভাষা
অশোকের শিলা-নির্দেশে বহুল প্রচলিত ব্রাহ্মীলিপি[1] সত্যি কথা
বলতে ভারতীয় সংস্কৃতির হাতে তুলে দিল কলম আর কালি। ব্রাহ্মীলিপি কোথা থেকে এল, কীভাবে
সম্রাট অশোক এই লিপির প্রচলন করলেন, সে নিয়ে পণ্ডিতদের যতোই মতভেদ থাক –
শোনা কথার তুলনায় লিখিত কথার গুরুত্ব বুঝতে ভুল করেননি সেই সময়ের বিদ্বজ্জনেরা।
ব্রাহ্মীলিপির চর্চা করতে করতেই পণ্ডিতেরা ধীরে ধীরে নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষার লিপিও আবিষ্কার
করায় মগ্ন হয়ে পড়লেন। এতদিনের নিরক্ষর একটি সমাজ সাক্ষর হয়ে উঠতে লাগল ধীরে ধীরে।
পরবর্তী কয়েকশ বছরের মধ্যেই তাঁরা সংস্কৃত ভাষায়, তার নির্দিষ্ট নিয়মের লিপি অনুসরণ
করে লিখে ফেলতে লাগলেন,
বেদ, উপনিষদ
এবং অন্যান্য দর্শন শাস্ত্র, এমনকি রামায়ণ, মহাভারতের মত মহাকাব্যগুলিও। এতদিন
মুখস্থ আর আবৃত্তি করার অধিকারে, যে জ্ঞানের ভাণ্ডার সীমাবদ্ধ ছিল নির্দিষ্ট কিছু গুরু-শিষ্য
পরম্পরার মধ্যে, সে
সব উন্মুক্ত হয়ে গেল সাক্ষর সাধারণের কাছেও।
ব্রাহ্মী লিপি থেকে আধুনিক দেবনাগরী ও বাংলা লিপির ক্রমোত্তরণ
অশোক তাঁর নির্দেশে প্রাকৃতভাষার ব্যবহার করেছিলেন সে কথা আগেই বলেছি। তিনি যে শুধু ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির বিরোধী ছিলেন বলেই সংস্কৃত ব্যবহার করেননি তা নয়, তিনি জানতেন সংস্কৃত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের ভাষা, দেশের জনগণের ভাষা প্রাকৃত। যেহেতু তাঁর নির্দেশের লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষ, অতএব তিনি মাগধী প্রাকৃত এবং আঞ্চলিক প্রাকৃত ভাষাই ব্যবহার করেছিলেন তাঁর নির্দেশগুলিতে। এর অপরিসীম গুরুত্ব বুঝে সংস্কৃতর পাশাপাশি গড়ে উঠতে লাগল প্রতিটি অঞ্চলের ভাষা এবং তাদের নিজস্ব লিপি। অর্থাৎ আজ আমি বাংলাভাষায় এই যে লেখাটি লিখছি এবং আপনি যে সেটি পড়ছেন, তার পিছনে সম্রাট অশোকের অসাধারণ এই অবদান স্বীকার করে আমরা যেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় প্রণত থাকি।
৩.৬.১ মৌর্য
শিল্প-ভাস্কর্য-স্থাপত্য
এক সিন্ধুসভ্যতা ছাড়া ভারতের প্রাক-মৌর্য
প্রত্ননিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিল্প এবং স্থাপত্যের পরিমাণ বিরল। হয়তো কিছু
ছিল, কালের
নিয়মে ধ্বংস হয়ে গেছে। কারণ মৌর্য যুগের আগে পাথরের স্থাপত্যের প্রচলন ছিল, রাজধানী বা
রাজপ্রাসাদের প্রাচীরে অথবা দেওয়ালে। ভারতবর্ষের স্থাপত্যে পোড়া-ইঁট এবং
আমা-ইঁটেরই বহুল ব্যবহার ছিল, তার সঙ্গে ছিল অলংকৃত কাঠের স্তম্ভ এবং কাঠের কারুকাজ।
পাথরের শিল্প-স্থাপত্য তৈরির কারিগরি দক্ষতার কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না।
চন্দ্রগুপ্ত এবং পরবর্তী কালে অশোক অবশ্যই অ্যাকিমিনিড সাম্রাজ্যের পারসিপোলিস
শহরের প্রাসাদ এবং অন্যান্য পাথরের স্থাপত্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই অনুপ্রেরণা
থেকেই তাঁরা ওই অঞ্চলের বেশ কিছু দক্ষ শিল্পীকে পাটলিপুত্রে নিয়ে এসেছিলেন।
পাটলিপুত্রের রাজপ্রাসাদের প্রধান স্থপতিরা ছিলেন পারস্য এবং ব্যাক্ট্রিয়া থেকে
আসা বেশ কিছু দক্ষ শিল্পী।
সেলুকাসের গ্রীক রাজদূত মেগাস্থিনিস দীর্ঘদিন
পাটলিপুত্রে ছিলেন। তাঁর ভারত ভ্রমণের মূল গ্রন্থ “ইণ্ডিকা” লুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু
পরবর্তী বহু গ্রীক পর্যটক এবং পণ্ডিতদের রচনায়, তাঁর গ্রন্থের বহু উদ্ধৃতি পাওয়া
যায়। সেই উদ্ধৃতি থেকে জানা যায়, “পাটলিপুত্র শহর ছিল গঙ্গা এবং শোন নদীর সঙ্গমে। দৈর্ঘে
১৪.৫০ কি.মি এবং প্রস্থে ২.৪০ কি.মি.। রাজধানীর সীমানা জুড়ে ছিল কাঠের প্রাচীর, তারমধ্যে
৫৭০টি কাঠের টাওয়ার এবং ৬৪টি দরজা ছিল”। যদিচ পাটলিপুত্রের ধ্বংসাবশেষ থেকে
সামান্য কিছু কাঠের কড়ি-বরগা আর পাটা পাওয়া গেছে। আর পাওয়া গেছে ৮০টি
প্রস্তর-স্তম্ভের অবশেষ – বিশেষজ্ঞরা তার পালিশ এবং শিল্প-দক্ষতাকে মৌর্য-শিল্প
নাম দিয়েছেন। তাঁরা অনুমান করেন, এই পাথরের স্তম্ভের ওপর কাঠের কাঠামোর ছাদ নিয়ে হয়তো কোন
বড়ো সভাঘর ছিল পাটলিপুত্র রাজধানীতে। হয়তো এটি পারসিপোলিসের “শত-স্তম্ভ সভাঘর” (“hundred -pillared hall”)-এর
অনুকরণে তৈরি হয়েছিল।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সম্রাট অশোক অজস্র বৌদ্ধ বিহার ও স্থাপত্য নির্মাণ করিয়েছিলেন। বৌদ্ধ ঐতিহ্যের অতিরঞ্জিত মতে ৮৪০০০! তার মধ্যে সামান্য কিছুর হদিশ পাওয়া যায়, অধিকাংশই কালের নিয়মে ধ্বংস হয়েছে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। সম্রাট অশোকের বানানো অনেকগুলি স্তূপের মধ্যে সারনাথ স্তূপের অবশেষটুকুই সম্রাট অশোকের বানানো। তক্ষশিলার “ধর্মরাজিকা” স্তূপ সম্ভবতঃ কুষাণরাজ কণিষ্কের বানানো, তিনি “ধর্মরাজ” অশোককে অনুসরণ করেই হয়তো এটির নামকরণ করেছিলেন। কারণ সারনাথের স্তূপটিরও নাম “ধর্মরাজিকা”। প্রত্নখননে দেখা গেছে, অশোকের স্তূপটিকে আবৃত করে দ্বিতীয় থেকে দ্বাদশ শতাব্দী সি.ই.-র মধ্যে ছটি স্তূপ বানানো হয়েছিল। অশোকের স্তূপটির চারপাশে পাথরের রেলিং রয়েছে যার পালিশ এবং ফিনিশিং মৌর্য-শিল্পের অনুগামী। অশোক যে সাঁচী স্তূপ বানিয়েছিলেন, সেটিকেও চাপা দিয়ে পরবর্তীকালে অনেক বড় করে স্তূপ বানানো হয়েছিল। অশোকের স্তূপের শীর্ষে থাকা পাথরের ছাতার কিছুটা অবশেষ থেকে তাকে মৌর্য-শিল্পের নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সাঁচী স্তূপের প্রত্নখননে অশোকের যে স্তূপটি পাওয়া যায়, সেটির আকার অর্ধগোলক, যার ব্যাস প্রায় ৬০ ফুট। স্তূপটি বড়ো বড়ো ইঁট দিয়ে বানানো। অশোকের বানানো সারনাথ স্তূপের আকার ও উপাদান সাঁচী স্তূপের মতোই। বৈরাত স্তূপের ভিত, পাথরের দুটি স্তম্ভ, ছাতা এবং একটি পাত্র পাওয়া গেছে, যেগুলি বিশেষজ্ঞরা মৌর্য-শিল্পের নিদর্শন বলে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। পাথরের ছাতাটি নিশ্চয়ই স্তূপের শীর্ষে বসানো ছিল।
পাহাড় কেটে বারাবর গুহাবাসগুলি অশোক এবং পরবর্তী
কালে তাঁর পৌত্র দশরথ বানিয়েছিলেন। এই গুহাবাসগুলিই ভারতবর্ষের প্রথম গুহা
স্থাপত্য। গুহাগুলি আজীবিক সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীদের জন্যে নির্মিত হয়েছিল। পাথর
খোদাই করে, কাঠের
কাঠামোর অনুকরণে গুহাগুলির ছাদ, দেওয়াল ও গুহামুখ বানানো হয়েছিল। একই পদ্ধতিতে
অজন্তা-ইলোরার গুহাগুলিও পরবর্তী সময়ে বানানো হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাথর কেটে
এই গুহাগুলি বানানোর অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন পারসিপোলিস এবং নকশ্-ই-রুস্তম্-
এর ছোট ছোট পাহাড় কেটে বানানো গুহাগুলি দেখে। যেগুলির নির্মাণ কাল ৩৩৫-৩৩০
বি.সি.ই।
অশোকের সময়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন যা পাওয়া গেছে, সেগুলি হল পাথরের স্তম্ভগুলি (Stone pillars)। অশোক নিজে এই স্তম্ভগুলিকে “শিলা থভে” (শিলা স্তম্ভ) বলতেন। পাথরের স্তম্ভগুলি নিখুঁত গোল, নিচ থেকে ওপরে সামান্য সরু (tapered), একটিমাত্র পাথর কেটে বানানো অর্থাৎ মনোলিথিক (monolithic) এবং চকচকে পালিশ করা। হলদেটে বাদামি রঙের এই বেলেপাথরগুলি সম্ভবতঃ উত্তরপ্রদেশের চুনার এবং মথুরা অঞ্চল থেকে আনা হত। মৌর্য-শিল্পের পালিশ বলতে বার্ণিশের প্রলেপ নয়, বরং শক্ত কোন পাথর ঘষে মসৃণ করা হত। স্তম্ভগুলির উচ্চতা ৩০ থেকে ৪৫ ফুট এবং তার মাথায় থাকত অপূর্ব সুন্দর অলংকৃত শীর্ষফলক। এই শীর্ষফলকের অনেকগুলিই নষ্ট হয়ে গেছে, যে কটি পাওয়া গেছে, সেগুলি হল (ক) একক সিংহ মূর্তি – বিহারের রামপূর্বার একটি স্তম্ভ – এখন কলকাতা মিউজিয়মে রাখা আছে। (খ) একক বৃষ মূর্তি – বিহারের রামপূর্বার অন্য একটি স্তম্ভ – এখন দিল্লি মিউজিয়মে রাখা আছে। (গ) সারনাথ এবং সাঁচীর স্তম্ভ – চারটি সিংহমূর্তি, পিঠে পিঠ দিয়ে বিপরীত মুখে বসে আছে। এই মূর্তিটিই ভারতের জাতীয় প্রতীক – “অশোকস্তম্ভ”। দুই স্তম্ভেরই চার সিংহের মাথার ওপরে বসানো ছিল, বত্রিশ অরের (spokes) ধর্মচক্র। সেগুলি ভেঙে গেছে। এই পশুমূর্তিগুলি অত্যন্ত প্রাণবন্ত, সুন্দর এবং তাদের দৃপ্তভঙ্গির জন্যে সারা বিশ্বের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। পাথরের এই সূক্ষ্ম মূর্তি এবং স্তম্ভগুলি নির্মাণে বিদেশী শিল্পীর স্পর্শ যে ছিল সেকথা সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ পাথরের কাজে ভারতীয়দের এই দক্ষতা সেই সময় ছিল না, তবে পরবর্তীকালে ভারতীয় শিল্পীরাও যে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে উঠেছিল, তার অজস্র প্রমাণ ছড়িয়ে আছে সমস্ত ভারতবর্ষ জুড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মৌর্য-পালিশ, পাথরের স্তম্ভ, শীর্ষফলক, পশুমূর্তি, পদ্মপাপড়ির নকশা - এই সবই ছিল অ্যাকিমিনিড স্থাপত্যের সাধারণ চরিত্র।
অশোক স্তম্ভ - বৈশালী, বিহার
অতএব একথা সহজেই স্বীকার করা যায়, ভারতীয় স্থাপত্য এবং ভাস্কর্যের যে আশ্চর্য সুষমা সারা বিশ্বের মানুষের মন জয় করেছে, তার সূত্রপাত করেছিলেন মৌর্যবংশের দুই রাজা – চন্দ্রগুপ্ত এবং বিশেষ করে অশোক।
৩.৬.২ অশোকের ধম্ম (ধর্ম) ধারণা
অশোকের ধর্মধারণা – যাকে আমি ধর্ম থেকে আলাদা
করতে “ধম্ম” (সংস্কৃত “ধর্ম”-এর প্রাকৃত “ধম্ম”) বলেছি, সেগুলি খুবই
সাধারণ কিছু সদ্গুণের উপদেশ। এই সদ্গুণগুলি রাজা অশোক তাঁর প্রজাদের মনের মধ্যে
গেঁথে দিতে চেয়েছিলেন। এবং সেই কারণেই তিনি তাঁর পাথরের নির্দেশগুলিতে প্রায় একই
কথা বারবার বলে গিয়েছেন,
তাঁর রাজত্বকালের শেষ পর্যন্ত।
সেই সদ্গুণগুলি হল, সমস্ত জীবের
প্রতি করুণা; ব্রাহ্মণ, শ্রমণ বা
সন্ন্যাসীদের দান; বন্ধু, আত্মীয় এবং
পরিচিতজনকে উপহার। বিশ্বস্ততা, সততা, শুদ্ধ চিন্তা, বিনয়, কৃতজ্ঞতা, আত্ম-সংযম, বিপদে-আপদে
দৃঢ় মানসিকতা, মিতব্যয়িতা।
মা-বাবা-গুরুজন-শিক্ষককে ভক্তি, ব্রাহ্মণ, শ্রমণ, আত্মীয়, ভৃত্য এবং ক্রীতদাসদের প্রতি ভদ্র আচরণ। হিংস্রতা, নৃশংসতা, ক্রোধ, অহংকার এবং
ঈর্ষা ত্যাগ করা, শুভকর্ম, বৃদ্ধ, দুঃস্থ এবং
দুর্বলের সেবা। অন্য ধর্মে বিশ্বাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহিষ্ণুতা। অর্থহীন
সংস্কার এবং প্রথা বিসর্জন দেওয়া, ধর্মীয় গোঁড়ামি ত্যাগ করা।
একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে তিনি বেদ বা
উপনিষদের বক্তব্য থেকে খুব আলাদা কিছু বলেননি। মহাভারতের শান্তিপর্ব, অনুশাসন
পর্বে এমন উপদেশ দেওয়া আছে অধ্যায়ের পর অধ্যায় জুড়ে। বৌদ্ধ এবং জৈনধর্ম থেকে তিনি একটা গুণই
নিয়েছিলেন – প্রাণীহত্যা না করা। অবিশ্যি সে কথাও উপনিষদে বহু জায়গাতেই বলা আছে, যদিচ
ব্রাহ্মণ্য ধর্মের ব্রাহ্মণরা যজ্ঞে জীববলি আবশ্যিক করেছিলেন। আসলে তাঁর ধম্মের
অধিকাংশ গুণগুলিই নৈতিক গুণ, যেগুলি অনুসরণ করলে মানুষের দুঃখ-কষ্ট কমবে, জীবনে আসবে
স্বস্তি আর শান্তি।
তিনি নিজে বৌদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু তাই
বলে তিনি কখনোই অন্য বিশ্বাসীদের অস্বীকার করেননি, বরং বারবার বলেছেন, পরমত
সহিষ্ণু হতে এবং অন্যান্য বিশ্বাসকেও শ্রদ্ধা করতে। তিনি নিজেকে “দেবতাদের প্রিয়”
বলেছেন, কিন্তু
কোনদিন কোন জায়গাতেই কোন দেবতার নাম উল্লেখ করেননি এবং কখনো কোন দেবতার পূজা বা
যজ্ঞ করতে বলেননি। অশোকের ধম্ম আসলে “শীলতা” অর্থাৎ সৎ স্বভাব – বিশেষ কোন
ধর্মবিশ্বাস, মতবাদ, প্রথা, সংস্কার, ধর্মীয়
অনুষ্ঠান বা পূজা নয়। অশোক কখনো মোক্ষ, নির্বাণ, ধ্যান, সন্ন্যাস, তপস্যা, আত্মত্যাগের
কথাও বলেননি, যে
কথাগুলি ভারতীয় প্রত্যেকটি প্রধান ধর্মেরই মূল বক্তব্য।
সম্রাট অশোকের এই শিলা-নির্দেশটি, আমার মতে তাঁর ধম্ম-কথার সার সংক্ষেপঃ-
“দেবতাদের
প্রিয় রাজা প্রিয়দর্শী এই কথা বলেন, - লোকে নানাবিধ মঙ্গল অনুষ্ঠানের আয়োজন
করে। অসুস্থ হলে, অথবা
পুত্র বা কন্যার বিবাহে,
অথবা সন্তানের জন্ম হলে, অথবা (কোথাও) যাত্রার প্রাক্কালে – লোক এই সব এবং অন্য আরো
অনেক মঙ্গল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই সব অনুষ্ঠানে মেয়েরা আবার বহুবিধ এবং নানান
ধরনের তুচ্ছ এবং অর্থহীন মঙ্গল-ব্রত পালন করে। মঙ্গল অনুষ্ঠানের আয়োজন নিশ্চয়ই করা
উচিৎ, কিন্তু
এই ধরনের মঙ্গল অনুষ্ঠানে অতীব তুচ্ছ-ফল লাভ হয়ে থাকে।
কিন্তু কোন (কোন) মঙ্গল অনুষ্ঠানে মহাফল লাভ হয়ে
থাকে, যেমন
ধম্ম-মঙ্গল অনুষ্ঠান। এর (অনুষ্ঠানের) মধ্যে রয়েছে, ক্রীতদাস এবং ভৃত্যদের প্রতি সঠিক
আচরণ; গুরুজনদের
প্রতি সশ্রদ্ধ এবং প্রশংসনীয় বাধ্যতা; প্রাণীদের প্রতি প্রশংসনীয় নম্র
ব্যবহার; সন্ন্যাসী
ও শ্রমণদের প্রতি প্রশংসনীয় দান; এইগুলি এবং এই ধরণের অন্যান্য (আচরণ)-কেই ধম্মের মঙ্গল
অনুষ্ঠান বলা যায়। অতএব,
(এই) কথাগুলি একজন পিতার অথবা এক পুত্রের অথবা এক ভ্রাতার অথবা একজন প্রভুর বলা
কর্তব্য – “এই(আচরণ)গুলি প্রশংসনীয়; এই
মঙ্গল অনুষ্ঠান যতদিন না লক্ষ্যপূরণ হচ্ছে ততদিন আচরণ করা উচিৎ”।
এবং একথাও বলা হয় যে, “দান করা
প্রশংসনীয়”। কিন্তু ধম্ম-দান অথবা ধম্ম-উপকারের তুল্য কোন দান বা উপকার হতে পারে
না। অতএব একজন বন্ধু,
বা একজন শুভাকাঙ্খী বা একজন আত্মীয় বা একজন সহকর্মী সঠিক অনুষ্ঠান করার জন্যে
অন্যকে (এই বলে) উৎসাহ দেবে, যে “এই কাজই করা উচিৎ, এই কাজই প্রশংসনীয়, এই কাজেই
স্বর্গলাভ করা সম্ভব”। এবং এ ছাড়া আর কোন্ শুভ কর্তব্য হতে পারে, যাতে
স্বর্গলাভ (হয়)?” (শিলা-নির্দেশ
৯, গিরনার
– ত্রয়োদশ রাজত্ব বর্ষ – ২৫৫ বি.সি.ই - ইংরিজি অনুবাদ ডঃ অমূল্যচন্দ্র সেন, বাংলা
অনুবাদ – লেখক।)
অর্থাৎ অশোকের ধম্ম-এর মূল কথা হল- সমাজের সকল
মানুষের সঙ্গে এমনকি সকল প্রাণীদের সঙ্গেও – সৎ-আচরণ, সহমর্মীতা, সাহায্য, অহিংসা এবং
বিশ্বাসযোগ্যতা। এই কথাগুলির কোনোটাই নতুন কথা নয় এবং এটুকু বুঝতে অগাধ পাণ্ডিত্য
বা গভীর তপস্যারও প্রয়োজন হয় না। সত্যি বলতে প্রত্যেকটি মানুষই তার পরিবার, প্রতিবেশী
এবং সমাজের অন্য মানুষদের থেকে এটুকু প্রত্যাশা করে থাকে। অতএব, এমন
সিদ্ধান্ত করাই যায়,
তিনি নিজে বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বন করলেও, তাঁর প্রজাদের মধ্যে কোনদিনই বৌদ্ধ
ধর্মের প্রচার করেননি। সকলকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হতে তিনি কখনোই নির্দেশ বা উপদেশ
দেননি।
৩.৬.৩ সম্রাট অশোকের বৈদেশিক ধম্ম প্রচার
সম্রাট অশোক সিংহাসনে বসার নবম বর্ষ বা কলিঙ্গ
বিজয়ের একবছর পর থেকে ধম্ম প্রচারকেই অন্যতম কর্তব্য মনে করেছিলেন। তারপরেও তাঁর
ঊনত্রিশ বছরের রাজত্বকালে কোনদিন সেই ব্রত থেকে তিনি চ্যুত হয়েছিলেন, এমন শোনা
যায়নি। ভারতবর্ষ জুড়ে তাঁর সাম্রাজ্যের ভেতরে ধর্মপ্রচার এবং সেই প্রসঙ্গে তাঁর
শিলা-নির্দেশের কথা আগেই বলেছি। এবার তাঁর বৈদেশিক ধম্ম প্রচারের দিকে লক্ষ্য করা
যাক।
যদিও অশোক তাঁর শিলা-নির্দেশে কোথাও উল্লেখ করেননি কিন্তু তিনি যে নিকটতম বিদেশ সিংহল দ্বীপ, বার্মা (মায়ানমার) এবং নেপালে ধম্ম প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেকথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ২৪৭ বি.সি.ই-তে পাটলিপুত্রে তৃতীয় বৌদ্ধ সম্মেলন হয়েছিল। এই সম্মেলনেই বৌদ্ধধর্মের অন্ততঃ আঠারোটি শাখার উদ্ভব হয়েছিল, যার মধ্যে প্রধান ছিল প্রাচীনপন্থী থেরাবাদিন গোষ্ঠী, সর্বাস্তিবাদীন গোষ্ঠী এবং মহাসংঘিকা গোষ্ঠী। এই সম্মেলনে তিনি বেশ কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী বৌদ্ধ গোষ্ঠীকে সঙ্ঘ থেকে এবং সম্মেলন থেকে বহিষ্কারেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন।
হয়তো এই বৌদ্ধ সম্মেলনেই বিদেশে ধর্ম প্রচারের
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কারণ এর পরেই তিনি তাঁর পুত্র মহেন্দ্র এবং কন্যা
সঙ্ঘমিত্রাকে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্যে সিংহলে পাঠিয়েছিলেন। সেই সময় সিংহলের রাজা
ছিলেন তিস্র। সিংহলের দুই বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ “মহাবংশ” এবং “দীপবংশ” থেকে জানা যায়
মহেন্দ্র রাজা তিস্রকে এবং সঙ্ঘমিত্রা তাঁর রাণি এবং রাজপরিবারের মহিলাদের বৌদ্ধধর্মে
দীক্ষিত করেছিলেন। রাজা তিস্রর সঙ্গে অশোকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এবং প্রায়
ক্ষেত্রেই তিনি রাজা অশোককে অনুসরণ করতেন। রাজা অশোক বন্ধু রাজা তিস্রকে, বোধিবৃক্ষের
একটি চারা উপহার দিয়েছিলেন। কথিত আছে, সেই চারার অশ্বত্থবৃক্ষ আজও সিংহল
দ্বীপে বিদ্যমান। কিন্তু ভারতে উরুবিল্বর বোধিবৃক্ষ পরবর্তীকালে বৌদ্ধ-বিদ্বেষীরা
কয়েকবার কেটে ফেলেছিল। সিংহলের অনুরাধাপুরমের সেই প্রাচীন বোধিবৃক্ষের চারা এনে
১৮৮০ সালে বুদ্ধগয়ায় নতুন বোধিবৃক্ষর প্রতিষ্ঠা হয়েছে[2]।
রাজা তিস্র তাঁর প্রায় চল্লিশ বছরের রাজত্বে, তাঁর দ্বীপ
রাজ্যে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে নিবিষ্ট ছিলেন এবং অজস্র বৌদ্ধমঠ ও বিহার প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন। তাঁর রাজধানী অনুরাধাপুরা পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মের মহাতীর্থ হয়ে উঠেছিল
এবং সিংহল হয়ে উঠেছিল থেরাবাদ অর্থাৎ প্রাচীনপন্থী বৌদ্ধদের মূল কেন্দ্র। পরবর্তী
পর্যায়ে বৌদ্ধ ধর্ম যখন ভেঙে হীনযান, মহাযান হয়েছে, তখনও তাঁরা
সম্রাট অশোক এবং তাঁর পুত্রের প্রচারিত ধর্মমতেই পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন। অশোকপুত্র
মহেন্দ্র সিংহলেই থেকে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় ২০৪ বি.সি.ই-তে।
অনুরাধাপুরার কাছেই আজও রয়েছে তাঁর স্মৃতি-মন্দির। অশোকের প্রচারিত বৌদ্ধধর্মের
ঐতিহ্যকেই আজও বহন করে চলেছেন সিংহভাগ সিংহলবাসী।
অশোকের ত্রয়োদশ রাজত্ববর্ষের
শিলা-নির্দেশ ১৩ থেকে জানা যায়, সুদূর পশ্চিমের পাঁচটি দেশে তিনি ধম্ম-দূত পাঠিয়েছিলেন। যে
পাঁচজন রাজার নাম তিনি শিলা-নির্দেশে উল্লেখ করেছেন, তাঁরা হলেন –
ক. সিরিয়ার রাজা অ্যান্টিওকাস ২য় থিয়োস (২৬১-২৪৬
বি.সি.ই) – ইনি অ্যান্টিওকাস ১ম-এর পুত্র এবং সেলুকস নিকেটারের পৌত্র। এই
সেলুকাসকেই অশোকের পিতামহ চন্দ্রগুপ্ত পরাস্ত করেছিলেন এবং তাঁর কন্যাকে বৈবাহিক
সূত্রে মৌর্য পরিবারে এনেছিলেন। অতএব স্পষ্টতঃই এই পরিবারের সঙ্গে মৌর্য পরিবারের
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেলুকাস যেমন চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় গ্রীকদূত মেগাস্থিনিসকে
পাঠিয়েছিলেন, তেমনি
অ্যান্টিওকাস ১মও বিন্দুসারের সভায় ডিমাকসকে দূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। অনুমান করা
যায় ২য় অ্যান্টিওকাসও অশোকের সভায় কোন দূত পাঠিয়েছিলেন, যদিচ তার
স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় না।
খ. ইজিপ্টের রাজা টলেমি ২য় ফিলাডেলফস (২৮৫-২৪৭
বি.সি.ই) - ঐতিহাসিক প্লিনির বর্ণনা থেকে
জানা যায় দ্বিতীয় টলেমি ভারতবর্ষের পাটলিপুত্রের রাজসভায় তাঁর দূত ডিয়োনিসিয়াসকে
পাঠিয়েছিলেন, হয়তো
সেই রাজা বিন্দুসার অথবা অশোক। দ্বিতীয় টলেমির রাজত্বকালে আলেকজান্দ্রিয়া পশ্চিমের
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নগর হয়ে উঠেছিল এবং সম্ভবতঃ বিশ্বের বৃহত্তম নগর এবং
বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় টলেমি তাঁর রাজত্বকালে আলেকজান্দ্রিয়ার
বিখ্যাত গ্রন্থাগার ও মিউজিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার ফলে আলেজান্দ্রিয়া শহর
গ্রীস ও মিশর সভ্যতা,
সংস্কৃতি এবং শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। অতএব পশ্চিমের প্রাচীন দুই
মহান সভ্যতা, সংস্কৃতি
ও শিক্ষার অঙ্গন, আলেকজান্দ্রিয়ায়
অশোকের ধম্ম-দূতেরা পা রাখলেন তাঁদের পূর্বের জ্ঞান ও সংস্কৃতি নিয়ে। এর প্রভাব
হয়েছিল সুদূরপ্রসারী,
কারণ তাঁদের প্রাচ্য জ্ঞানের প্রভাবেই পরবর্তীকালে বদলে গিয়েছিল পৃথিবীর
ইতিহাস। কিন্তু সে কথা আসবে পরবর্তী পর্বে।
গ. ম্যাসিডোনিয়ার রাজা অ্যান্টিগোনাস গোনাটাস
(২৭৮ – ২৩০ বি.সি.ই)
ঘ. সাইরেনির মেগাস (King Magas of Cyrene, Libya) (২৮২-২৬১
বি.সি.ই)
ঙ. এপিরাসের আলেক্সাণ্ডার 2 (Alexander
II of Epirus, Greece-Albania) (২৭২-২৪২ বি.সি.ই)
এই রাজাদের সকলেই ছিলেন গ্রীক বীর
আলেকজাণ্ডারের সেনাপতিদের বংশধর। যাঁরা আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর বিশাল
সাম্রাজ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন।
চলবে...
[1] ব্রাহ্মীলিপির সীমিত প্রচলন বহুদিন
আগে থেকেই যে ভারতের রাজকোষ ও বণিক-সমিতিতে প্রচলিত ছিল, একথা সহজেই
অনুমান করা যায়। তা নাহলে বিম্বিসার, অজাতশত্রু, প্রসেনজিৎ, চণ্ডপ্রদ্যোত
কিংবা নন্দরাজারা রাজ্য এবং সাম্রাজ্যের কর আদায়ের হিসাব কীভাবে রাখতেন? নন্দরাজারা
যে নতুন ভূমি আইন প্রবর্তন করলেন, তার জন্যেও তো বিপুল তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়েছিল।
চাণক্য সেই তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করেই আরও উন্নত ও জটিলতর অর্থনীতির সৃষ্টি
করেছিলেন মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনায়। বিদিশা, শ্রাবস্তী, উজ্জয়িনী বা
কৌশাম্বীর বিখ্যাত বণিকরাই বা তাঁদের আয়-ব্যয়ের হিসাব কীভাবে কষতেন? অতএব, রাজা ও
বণিকদের কোষাগারে করণিক বা কায়স্থদের হাতে এতদিন যে ব্রাহ্মীলিপি বন্দী হয়ে ছিল, সম্রাট অশোক
তাকেই সর্বসাধারণের জন্যে মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
[2]
বোধিবৃক্ষর বিনাশ নিয়ে অনেকগুলি বিতর্কিত জনশ্রুতি শোনা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব
তৃতীয় শতাব্দীতে সম্রাট অশোকেরই কোন এক রাণি নাকি প্রথমবার এটিকে কেটে ফেলার
চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু
পুরোপুরি সফল হননি। এর পর দ্বিতীয় প্রচেষ্টা করেছিলেন গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক ৬১০-৬১৫ সিই-র
কোন সময়ে – তিনি বোধিবৃক্ষটিকে সম্পূর্ণ কেটে ফেলেছিলেন। যদিও কয়েক বছর পরে, এই গাছের
শিকড় থেকে নতুন গাছের উদ্ভব হয়। এরপর গাছটি ১৮৭৬ সালের এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে
সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায়। স্যার আলেকজাণ্ডার কানিংহাম, যিনি Indian Archaeological Survey-র
প্রথম ডিরেক্টর ছিলেন,
১৮৮০ সালে সিংহলের অনুরাধাপুরম থেকে বোধিবৃক্ষের চারা এনে একই জায়গায় রোপণ
করেন। সেই গাছই এখন দেখা যায়।