[এই ব্লগের প্রত্যেকটি লেখা সরাসরি আপনার মেলে পেতে চাইলে, ডান দিকের কলমে "ফলো করুন" 👉
বক্সটি ক্লিক করে নিজের নাম ও মেল আইডি রেজিস্টার করে নিন]
[আগের পর্ব পড়া যাবে এই সূত্রে "সুরক্ষিতা - পর্ব ১৮"]
১৯
মেয়েকে নিয়ে মালতী
শুভময়ীদেবীর ঘরে ঢুকতেই শুভময়ীদেবী হেসে বললেন, “ কি রে, ঘুমিয়ে পড়েছিলি নাকি? চোখগুলো
ফোলা ফোলা লাগছে। আয় বস”। মা আর দিদুর পাশেই
বসল ছবি।
শুভময়ীদেবী বললেন, “তোর মা আর দিদুর
সঙ্গে আলোচনা করে – আমরা তোর কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেছি”। তার সঙ্গে মিঠুদিদির সম্পর্কের
কথাটা যদি জানাজানি হয়ে গিয়েই থাকে, তার শাস্তির ব্যপারটা মামী নিশ্চয়ই হাসি হাসি মুখে
বলবে না। খুব অবাক হয়ে মায়ের এবং মামীর মুখের দিকে তাকাল। “তোকে বিয়ে করতে হবে”, শুভময়ীদেবী
হাসতে হাসতে ঘোষণা করলেন, “কোন ভাবেই তোর পরিত্রাণ নেই”।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ছবি, তারপর
মাথা নীচু করে বলল, “বিয়ে আমি করব না, মামী”।
“বিয়ের আগে সব ছেলে-মেয়েই অমন
বলে, ছবি। ওটা কোন কাজের কথা নয়, ছবি”।
“সবাই কী করে জানি না, আমি করব
না”। ছবি বেশ জোরের সঙ্গে বলল।
“কেন বল তো? হঠাৎ এমন ধনুক-ভাঙা
পণ করে বসলি কেন?” শুভময়ীদেবী স্মিতমুখেই জিজ্ঞাসা করলেন।
মালতী বলল, “ওর ভয় লাগে। আমাদের মতো
কাজের লোকের সংসার অনেক দেখেছে কিনা, তাই ভয় পায়। সারাদিন এই কাজের মেয়েরা বাবু-বৌদিদের
বাড়ি কাজ করে, রাত্রে বাড়ি ফেরে। তারা তখন ক্লান্ত, তাদের সারা গায়ে-গতরে ব্যথা। সারাদিন পর তাদের
ছেলে-মেয়েরা মাকে পেয়ে খুশি হয় এবং ঘরে ফিরে তাদের জন্যেও সেই মাকেই দুটো ভাত-ডাল-তরকারি
রান্না করে তাদের মুখের সামনে ধরতে হয়। যতই হোক মায়ের প্রাণ। কিন্তু এসবের পরেও, বহু
পরিবারেই তাদের স্বামীরা অনেক রাত্রে বাড়ি ফেরে গলা অব্দি মদ গিলে। শুরু করে
গালাগাল, মারধোর, বউয়ের চরিত্র নিয়ে নানান আকথা-কুকথা...” মালতী দীর্ঘশ্বাস ফেলে
আবার বলল, “আমাদের মতো সংসারে মেয়েদের এমনই ঝ্যাঁটা-খাওয়া কপাল, বৌদি। এই জন্যেই ছবিকে আমি
জোর করতে পারি না”।
ছবির
মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন শুভময়ীদেবী, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “একটা
কথা মানছি, ছবি। একটা ছেলে আর মেয়ের যখন বিয়ে হয়, তাদের মনে তো বটেই, তাদের দুজনকে
ঘিরে দুই পরিবারের মনেও অনেক স্বপ্ন কাজ করে। খুব কম ক্ষেত্রেই সেই সব স্বপ্ন পূরণ
হয়, নানান ভুল বোঝাবুঝিতে অধিকাংশ স্বপ্নও দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে। তা বলে স্বপ্ন
দেখাটাই ছেড়ে দিবি, ছবি?
ধর আজ
যদি তোর নিজের যোগ্যতায় একটা স্থায়ী চাকরি হয়ে যায়... লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করার
বিড়ম্বনা থেকে তুই যদি মুক্তি পেয়ে যাস। সেই নতুন জীবনের জন্যে, নতুন একটা স্বপ্ন
দেখতে ক্ষতি কি?”
“আমার
একটা স্থায়ী চাকরি হয়ে যাবে...কী বলছো, মামী?” এত অবাক জীবনে কোনদিন হয়নি ছবি।
“আমাদের
স্কুলে একটি কেয়ার-টেকার, মানে বাচ্চাদের আয়ার কাজ খালি হয়েছে। স্কুলে একদম নীচু
ক্লাসে যারা পড়ে – ক্লাস ওয়ান, টু, থ্রির বাচ্চারা – তাদের দেখাশোনা করার জন্যে। আমি
তোর সব কথাই স্কুলের কর্তৃপক্ষকে বলেছি। স্কুলের দিদিমণিরা সকলেই তোর কথা জানে –
মানে আমিই বলেছি আরকি। সকলেরই ধারণা এতদিন ধরে বিট্টুকে যে বুক দিয়ে সামলেছে, তার
কাছে এ কাজ কিছুই না। কর্তৃপক্ষও মেনে নিয়েছে। তোর চাকরিটা হয়ে গেছে”।
অপ্রত্যাশিত
এমন একটা সংবাদের জন্যে কেউই প্রস্তুত ছিল না। ক্বচিৎ কখনও যেমন শোনা যায়, লটারির
টাকা পেয়ে কেউ কেউ নাকি রাতারাতি বড়োলোক হয়ে গেছে। এও যেন সেইরকম। তবে এ ঘটনা ঘটেছে
মালতীর অভাগী মেয়ে ছবির কপালে। মালতী ছবির দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। তার দু চোখ
ভরে জল চলে এল।
“আগামীকাল
তোর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা অফিসে চলে আসবে। কাল একবার স্কুলে গিয়ে তোকে ওটা নিয়ে
আসতে হবে, ছবি...”।
“আমাকে স্কুলে গিয়ে কী আনতে হবে, মামী”?
“তোর
চাকরির চিঠি। আমার সঙ্গেই যাবি, স্কুলের বড়োবাবুর সঙ্গে দেখা করলেই তোকে চিঠিটা
দিয়ে দেবে। সকলের সঙ্গে কথাবার্তা হবে আর কিছু সইসাবুদও করতে হবে তোকে”।
চাকরি,
স্কুল, অফিস, অফিসের বড়োবাবু...কথাগুলো ছবির চোখের সামনে নতুন এক দিগন্ত খুলে দিল।
বহুদিন পর তারও চোখ জলে ভরে উঠল। তার হাতের সামনে কি তাহলে সত্যিই এসে দাঁড়াল নিশ্চিন্ত
ও সুরক্ষিত একটা জীবন?
--০--
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন