রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নীড় ছোট ক্ষতি নেই...


[এর আগের পর্ব পড়তে হলে পাশের সূত্রে যান ""জীবন -যাত্রা" ]


নীড় ছোট ক্ষতি নেই...

বেশ কদিন ধরেই আর মন বসছিল না। মামাতো দাদাদের, বন্নিদিদিদের স্কুল খুলে গেছে অনেকদিন। সবাই যে যার মতো লেখাপড়ায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। শুধু আমরা দু’ভাইয়ের কোন কাজ নেই। আমি সঙ্গে করে যে বই নিয়ে গিয়েছিলাম, সন্ধ্যেবেলা সবার সঙ্গে সে বই খুলে বসি ঠিকই কিন্তু পড়া হয়ে ওঠে না। সবই পুরোনো পড়া - মোটেই ভাল লাগে না পড়তে। মাকেও দেখতাম মাঝে মাঝেই বিষণ্ণ মুখে দোতলার বারান্দায় কাপড় শুকোতে দিতে গিয়ে বা বিকেলে শুকনো কাপড় তুলে নেওয়ার সময় অনেকক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকতেন বাইরের গাছপালা বাঁশবনের দিকে। আমাদের তিনজনের মনেই মন খারাপ বাসা বাঁধতে লাগল ধীরে ধীরে।  

বারবার মনে পড়তে লাগল আমাদের কলকাতার সেই ছোট্ট বাসা। বাবা একলা সেখানে রয়েছেন। রাতে নিজেই রান্না করে খেয়ে নেন, দুপুরের খাওয়া অফিসে। বাবার এই অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া আর বাড়তি পরিশ্রমের জন্যে মা খুব চিন্তিত ছিলেন। দিদিমার সঙ্গে মাকে এ নিয়ে কথা বলতে শুনেছি অনেকবার। মায়ের আরো চিন্তা ছিল আমাদের নিয়ে - লেখাপড়াহীন, বাঁধনহারা এই দীর্ঘ অবসর আমাদের কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যে নিয়মে আর শৃঙ্খলায় মা আর বাবা আমাদের বড় করে তুলছিলেন – তাতে বেশ বড়সড় বিঘ্ন যে ঘটছে, তাতেও মা বিশেষ উদ্বিগ্ন ছিলেন।

স্বামী ও দুই পুত্র নিয়ে তাঁর নিজের সংসার, তার আকার, পরিধি ও আয়োজন যত ছোটই হোক না কেন, সে সংসারের একক দায়িত্বে মা অভ্যস্তঅভাব-অভি্যোগ, ব্যস্ততা-দুশ্চিন্তা, ব্যাধি-আরোগ্য, সুখ-দুঃখের জটিল মিশ্রণে জারিত ভীষণ মায়াময় সেই সংসার - তাঁর নিজের হাতে গড়ে তোলা, নিজের হাতে লালিতকলকাতার সেই আপন নীড়ে ফিরে যেতে তিনি ভীষণভাবেই ব্যাকুল হয়ে উঠছিলেন দিন দিন। পিত্রালয়ের সাবলীল, শান্ত এবং সর্বদা স্নেহময় পরিবেশে মা, দাদা ও ভগিনীদের সঙ্গেও তিনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারছিলেন না। রাজ্য যতো ছোটই হোক না কেন, সে রাজ্যের স্বাধীন রাজ্ঞী আমার মা। কাজেই স্বরাজ্যে ফেরার জন্য তিনি উতলা হয়ে উঠছিলেন দিন কে দিন।

সেই সময়েই উপলব্ধি করেছিলাম, সুদীর্ঘ কর্মব্যস্ততা যদিচ সহ্য করা যায় – কিন্তু অলস ও সুখী দীর্ঘ অবসর একেবারেই অসহ্য। আমরাও অধীর হয়ে উঠছিলাম কলকাতায় ফেরার জন্যে  

ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি বাবার একখানি পোস্টকার্ড এল-

“শ্রীচরণকমলেষু বড়দা,

পত্রারম্ভে মাতাঠাকুরাণী, আপনি ও বউঠাকুরাণী আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম লইবেন। আশা করি মঙ্গলময়ের কৃপায় আপনারা সকলে সর্বাঙ্গীন কুশলে আছেন। আপাততঃ কলিকাতা অনেকটাই শান্ত ও স্থিত হইয়াছে। অদ্য সংবাদপত্রে দেখিলাম, আগামী সপ্তাহের প্রথমদিন হইতে শ্রীমান হীরকের কলেজ ও শ্রীমান পান্নার স্কুল খুলিবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হইয়াছে। কাজেকাজেই, আমি মনস্থ করিয়াছি যে, আগামী শনিবার রাত্রে পঁহুছিয়া, রবিবারদিন বৈকালের ট্রেনে সকলকে সঙ্গে লইয়া কলিকাতায় প্রত্যাবর্তন করিব। এই কয়মাসে উহাদের পড়াশুনার যে কি পরিমাণ ক্ষতি হইল তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। এই ক্ষতি স্বীকার করিয়া লওয়া ছাড়া অন্য গত্যন্তর নাই, কারণ আমরা কেহই দেশ ও কালের ঊর্ধ্বে নহি। যাহা হউক, ছোটদের সকলকে আমার স্নেহাশীর্বাদ দিবেন। মাতাঠাকুরাণীকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম দিবেন। আপনি ও বউঠাকুরাণী আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম লইবেন। আপনাদের সকলের আন্তরিক কুশল ও মঙ্গলকামনা করতঃ ইতি

প্রণতঃ

নারায়ণ”

এই চিঠি পেয়ে আমরা তিনজনেই হাঁফ ছাড়লাম। আজ বেষ্পতিবার, তার মানে কাল বাদে পরশুদিন বাবা আসছেন আমাদের নিয়ে যেতে। আবার আমরা ফিরে যাবো আমাদের অভ্যস্ত বহুচেনা – ছকবাঁধা কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রায়। পুলকে আমার উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু মানুষের কি অদ্ভূত মন, আদৌ আনন্দিত হতে পারলাম না। উল্টে ভীষণ মন খারাপ হতে লাগল এই গ্রাম, এই মামাবাড়ি, এতো লাগামছাড়া আনন্দ ফেলে চলে যেতে হবে কলকাতায়। মাঝে আর মাত্র দুটি দিন!

বাঁশঝাড়ের রহস্য, ঝোপঝাড়, গাছপালা। মাঠ, ঘাট, ক্ষেত, প্রান্তর। শিবতলা, পুকুরপাড়। গোয়ালবাড়ি, খামারবাড়ি, খিড়কি দোরের ডোবা। ঘুঘু ডাকা সকাল ও নির্জন দুপুর। বিকেলে বাঁশবাগানের মাথায় সাদা সাদা ফুলের মতো উড়ে এসে বসা বকের ঝাঁক। গৌরী গাই আর তার সুন্দর ঘন কালো আঁখির বাছুরটি। খুব সকালে কানুমামার মন ভালো করে দেওয়া উদাত্ত কণ্ঠের গান –

‘শ্যামা কখনো পুরুষ, কখনো প্রকৃতি

কখনো শূণ্যাকার

মায়ের সে ভাব ভাবিয়ে, কমলাকান্ত

সহজে পাগল হল, রে

শ্যামা মা কি আমার কালো, রে

কালো রূপে দিগম্বরী

হৃদিপদ্ম করে আলো, রে...’

এত আলো, এত অন্ধকার - সব রইবে ঠিকঠাক। শুধু আমিই আর থাকবো না। কদিনের জন্যে এসেছিলাম বহিরাগত অতিথির মতো। এখন বিদায় আসন্ন। আমার জীবনযাত্রার সঙ্গে এই জীবনযাপনের বিস্তর ফারাক। আমাকে অনেক বড়ো হতে হবে। অনেক বড়ো। আর তার জন্যে আমাকে ছেড়ে থাকতে হবে এই সব আপাততুচ্ছ কিন্তু সনাতন এক জীবনধারা।

শনিবার লাস্ট বাসে বাবা এলেন তখন প্রায় রাত সাড়ে নটা। আমরা সবাই বাসস্ট্যান্ডে গিয়েছিলাম বাবাকে আনতে। মামাতো বড়োদাদার হাতে পাঁচসেলের টর্চ, আমার হাতে হ্যারিকেন। এক হাতে চামড়ার ফোলিও ব্যাগ, অন্য হাতে আমার হাত ধরে বাবা হাঁটছিলেনসেদিন আবছা কুয়াশামাখা সেই রাত্তিরে, পথে বড়ো বড়ো ছায়া ফেলে আমরা হেঁটে আসছিলাম, পিছনে ছিল একফালি ম্লান চাঁদ।

 

 

 

ঘরে ফিরে চলো...

 যারে কও চালভাজা, তারেই কয় মুড়ি। কিন্তু আমাদের রাঢ়বঙ্গে চালভাজার সঙ্গে মুড়ির বিস্তর ফারাক । মুড়ি হয় সাদা – হলুদে মাখা চাল ভেজে বানানো হয় বলে চালভাজা হয় হলুদ তাছাড়াও চালভাজার সঙ্গে মেশানো থাকে ভাজা ছোলা আর মটর। ভাজা কুমড়োর বীজ। দু-একটা গোলমরিচের গোটা দানা। কিন্তু এ সবের চেয়েও যেটা সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং সেটা হল কুসুমবীজ ভাজা। এ জিনিষটা কিসের বীজ জানা নেইএর কোন স্বাদ নেই – কিন্তু দাঁতে চাপলেই সুন্দর গন্ধ। বছর কয়েক আগে বহু অনুসন্ধানের পর লেক মার্কেটের একটিমাত্র দোকানে কুসুমবীজ মিলেছিল। 

দোকানের মালিক অত্যন্ত শ্লাঘার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘অনেক মার্কেট ঘুরেছেন নিশ্চয়ই? আজকাল এসব জিনিষের কদর কেউ জানেই না – একমাত্র আমার এখানেই এসব পাবেন। তা, আপনার বাড়ি কোথায়’?

উত্তরে আমার কলকাতার পাড়ার নাম বলাতে মুচকি হেসে তিনি বলেছিলেন, ‘সে বাড়ি নয়, সে বাড়ি নয়। অরিজিনাল দেশ...’ 

‘বর্ধমান’

‘হ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ, তাই বলুন’।

 এহেন চালভাজা ভরা টিন। বিশ কিলোর টিন ভরা কাঠের ঘানিতে পেষা খাঁটি সরষের তেল। তেলের মধ্যে নিমজ্জমান কাঁচা আম আর কাঁচা লঙ্কা জারানো আম-তেল – মুড়ি দিয়ে মেখে খাবার জন্যে। এক নাগরি নলেন গুড়। খেজুড় গুড়ের পাটালি। প্রচুর চিনির ও গুড়ের নারকেল নাড়ু। ঢেঁকিতে ছাঁটা নতুন ধানের চাল – কিলো পাঁচেক। অন্যরকম এক বড় বোতলে তখন হরলিক্স পাওয়া যেত – সেই খালি বোতলে ঘি। এতসবের পরেও দিদিমা ভীষণ ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন – ছটা নারকেল, কিলো দশেক আলু, দুটো লাউ, মিটার তিনেক থোড়, দুখানা পাকাকলার মোচা ইত্যাদি বাবা নেন নি বলে। সবশেষে বড়মামা নিজে হাতে যখন বাবার হাতে তুলে দিলেন শালপাতায় ঢাকা এক বিশাল মাটির মালসা – আতঙ্কিত বাবা বড়োমামাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘বড়দা, আপনিও ’?

‘এ কিচছু না, কিচছু না – এটা পান্নার জন্যে – দানাদার, ও খুব ভালোবাসে খেতে – তাইসুতলিতে বাঁধা আছে – তোমাকে বইতেও হবে না – হাতে ঝুলিয়ে নিলেই হবে’

 

সুদীর্ঘ শোকাবহ বিদায়পর্বের পর মা আর আমি এই সাজানো মুদির দোকান নিয়ে গরুর গাড়িতে এসেছিলাম বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। মা সারাটা রাস্তা চোখের জল মুচছিলেন, আমিও এক-আধবার। চোখ মোছার চেয়েও আমি বেশী ব্যস্ত ছিলাম মাথায় হাত বোলাতে। এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় সাসপেনসনহীন গরুর গাড়ির ঝাঁকুনিতে সেদিন আমার মাথায় প্রচুর আলু তৈরি হয়ে উঠেছিল। বাসস্ট্যান্ডে আরেকবার সংক্ষিপ্ত বিদায় ও প্রণাম পর্বের পর বাসে উঠে পড়লাম – বাস যখন ছেড়ে দিল - অনুভব করলাম তীব্র বিদায় ব্যথা। বাসের জানালা দিয়ে যতক্ষণ দৃষ্টি যায় তাকিয়ে ছিলাম ফেলে আসা বাসস্ট্যান্ডের দিকে – আর দুগাল বেয়ে নেমে আসছিল অশ্রুধারা – নিঃশব্দ কান্নার সে ছিল একান্ত অনুভূতি।

 এতসব লটবহর নিয়ে মেমারি থেকে হাওড়াগামী ট্রেনে উঠে পড়া গেল বেশ কসরত করে – অন্য সহযাত্রীদের সহায়তায়। সিটও পাওয়া গেল চেপেচুপে একসঙ্গেই। স্টেসানে স্টেসানে স্বল্প বিরাম দিয়ে – ট্রেন দৌড়ে চলেছে কলকাতার দিকে। তিন-চারটে স্টেশানের পর, মা বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্কুল কবে থেকে খুলছে ওদের’?            

-‘কালকেই তো স্কুল চালু হয়ে যাবে। কালকে কি যেতে পারবে? না হয় একদিন...’।

-‘কেন, যেতে পারবে না কেন? এতদিন পর স্কুল খুলছে তারপরে আবার কামাই? একদম নয় কালকেই স্কুলে যাবে’

-‘তোমাদের বলা হয়নি, পান্নার ক্লাস সিক্স হয়ে গেছে’

-‘সে আবার কি? অ্যানুয়াল হবে না? পরীক্ষা ছাড়াই প্রমোশন হয়ে গেল’? মা অবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন বাবাকে। বাবা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন – পরীক্ষা ছাড়াই।

‘বাঃ, তাহলে? আর তো মর্নিং সেকসনও নয়, সাড়ে দশটায় ডাল-ভাত খেয়ে বেরিয়ে যাবে। তুমি কামাইয়ের কথা ভাবছিলে কেন’?

‘আমার অফিস - হীরকেরও কলেজ। তুমি কি কালকেই পারবে পান্নাকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতে? সেই জন্যেই বলছিলাম – কালকের দিনটা একটু গুছিয়ে নিয়ে – পরশু থেকে ...’

‘কেউ যাবে না সঙ্গে। একা একা যাবে কাল থেকে। কিচ্ছু হবে না। ঘুনু কতো বড়ো হয়ে গেছে, তুমি জান’? বলে মা আমার দিকে তাকালেন ‘কিরে পারবি না’?  খুব গম্ভীরভাবে আমি বললাম – ‘না পারার কি আছে?’ 

বাবা আমার উত্তর শুনে বললেন, ‘ভেরি গুড। তাহলে তো ব্যাপার মিটেই গেল। কাল থেকেই স্কুল শুরু। কাল বোধ হয় এমনিতেও ক্লাস পুরো হবে না। বুক লিস্ট, রুটিন আর ইনট্রোডাকশন দিয়েই হয়তো ছেড়ে দেবে-’একটু থেমে বাবা আবার বললেন – ‘তোমার ঘুনুর কিন্তু ভালই হলো, জানো। পরীক্ষা-টরীক্ষার ঝামেলা যত না থাকে খুব মজা। ফাঁকি দিয়ে কোন এক ফাঁকে প্রমোশন পেয়ে গেলেই হল – কি রে, তাই না?’ 

বাবার কথাটা আমার পছন্দ হল না – কারণ অপ্রিয় সত্যি কথা কবে আর কারই বা পছন্দ হয়? তাই আমি গম্ভীর মুখ করে চুপ করে রইলাম। মা কিন্তু প্রতিবাদ করে উঠলেন, ‘কেন, তুমি এমন কথা বলছ? কত ছেলের তো শুনি পরীক্ষার আগে নাকি জ্বর চলে আসে আতঙ্কেঘুনু তো এরকম করেনি কোনদিন – আর সব্বাই কি পরীক্ষায় ফার্স্ট আসবে নাকি – আমার ঘুনু দেখে নিও অন্যরকম ফার্স্ট হবে...’। 

বাবা হেসে বললেন, ‘হলেই ভাল...আমিও তো তাই চাই’।

সত্যি বলতে বাবার চিঠি পাওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝেই আমার মনে একটা ভয় জেগে উঠছিল। এমনিতেই আমার বিস্মরণ শক্তি ছিল ঈর্ষণীয়, সকালের পড়া পাঠ সন্ধ্যাবেলায় মনে হত জীবনে প্রথম শুনলাম। কাজেই প্রায় তিনমাসের ওপর লেখাপড়ার সঙ্গে যোগরহিত আমার মগজ, অধীত সকলবর্ণকে বেশ বিবর্ণ করতে পেরেছিল। এ-বি-সি বা অ-আ-ক-খদেরকে দীর্ঘ প্রবাসী বন্ধুর মতো মনে হত – চেনা চেনা লাগছে কিন্তু নামটা যেন – “পেটে আসছে, কিন্তু মুখে আসছে না”।

কাজেই পরীক্ষা হ’লে আমি যে ল্যাজে গোবরে হতাম সে বিষয়ে মায়ের চেয়ে বাবা আমাকে ঠিকঠাক বুঝেছিলেন। তবুও বাবার ওই কথা আর হাসিটা আমার ভালো লাগেনি সেদিন। কিন্তু মায়ের কথায় আমি কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম এবং সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম – কিছু একটা করতেই হবে, যাতে সক্কলে চমকে উঠবে, বলবে – “এই আমাদের, সেই পান্না”? আর তৃপ্তির হাসিমাখা মুখে মা বলবেন, “আমি তো বলেই ছিলাম, আমার ঘুনু...”অনেকটা রবিঠাকুরের “বীরপুরুষ”-এর ধাঁচে – কিন্তু ওরকম বীরত্ব-টিরত্ব আমার কম্মো নয় – অন্য কিছু।

সেই অন্য কিছুটা আজও আবিষ্কার করা হয়ে উঠল না - যার জন্যে মা হয়তো সত্যিই গর্ব করতে পারতেন।


...চলবে...


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন পোস্টগুলি

কিরণাগড়ের বাঘ

  ১৪৩২-এর একপর্ণিকা পূজাবার্ষিকীতে প্রকাশিত আমার "কিরণাগড়ের বাঘ" - উপন্যাস গভীর জঙ্গলের মধ্যে এক অরণ্যবাদী মানুষ ও মানুষখেকো বাঘের...