১
আজ সকাল দশটার সময় এইখানেই তাদের দেখা
করার কথা। সাগর দশটার একটু আগে যখন পৌঁছল, তিতির তখনো এসে পৌঁছয়নি। কিছুক্ষণ
অপেক্ষা করে সে এসে বসল এই চায়ের গুমটিতে। বেঞ্চে বসে ভাঁড়ের গরম চায়ে চুমুক দিতে
দিতে তার মাথায় হঠাৎই আইডিয়াটা এল।
তিতির আসবে। তাকে না দেখতে পেয়ে
তার জন্যে অপেক্ষা করবে। অপেক্ষা - তারপর প্রতীক্ষা, কিছুক্ষণ - বেশ অনেকক্ষণ - ক্রমশঃ ব্যস্ত
হয়ে উঠবে। বারবার তার ফোনে কল করার চেষ্টা করবে। তার ফোন থেকে প্রতিবার রিপ্লাই
যাবে ...কভারেজ ক্ষেত্রসে বাহর হ্যায়...থোড়ি দের বাদ ডায়াল করেঁ...। উদ্বিগ্ন
তিতির ধৈর্য হারিয়ে যখন ব্যস্ত হয়ে উঠবে ফিরে যাওয়ার জন্যে - সাগর পাশে গিয়ে
দাঁড়াবে তিতিরের। ব্যাপারটা একটু উদ্ভট এবং আজগুবি হয়তো – কিন্তু বেশ মজা হবে।
তিতিরের উদ্বেগ, রাগ অথচ চাপা
আনন্দমাখা মুখচ্ছবি সে কল্পনা করতে লাগল। তিতিরের ছোট্ট কপালের সুন্দর ভাঁজ,
ভ্রুর ওঠানামা, চোখের তারায় আলো-আঁধারি, অধরোষ্ঠের দ্রুত সঞ্চালন...। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে
যাবে তিতির, কথা বলে যাবে অনর্গল, ছোট্ট ছোট্ট উত্তরের সঙ্গে নিবিষ্ট মনে সে লক্ষ্য
করবে তিতিরের আবেগ আর রাশি রাশি অনুযোগ। তারপর তিতিরের হাত ধরে সে আর তিতির চলে
যাবে অন্য কোথাও। শুষে নেবে তিতিরের সমস্ত উদ্বেগ আর অশান্তি। আজ সে তিতিরকে
আশ্চর্য করে দেবে – তিতিরকে সে বলবে... যে করে হোক, আজ সাগর বলবেই... “তুই আমার বউ
হবি, তিতির?”
তিতির আজ কেমন টিপ পড়বে - ছোট্ট
কালো বিন্দি, নাকি ডিপ ব্লু বৃষ্টির ফোঁটা? নিরিবিলিতে তিতির কি অ্যালাউ করবে, ওর
কপালে হাল্কা একটা চুমো দিতে? আর বিয়ের প্রস্তাবে কোনটা বলা ঠিক হবে - তুই না তুমি?
“তুমি” বলার কথা ভাবতেই সাগরের বুকের ভিতরে কেমন এক সুর বেজে উঠল। সেই সুরের রেশ বুকে নিয়ে সাগর
তার মোবাইলটা উল্টে ঢাকনাটা খুলে ফেলল।
তিতির এল দশটা আঠেরোতে। উল্টোদিকের
ফুটপাথে তিতির দাঁড়িয়ে আছে। পরনে হাল্কা গোলাপি রংয়ের সালোয়ার
কামিজ তাতে ছোট্ট ছোট্ট সাদা টিপ, সাদা ওড়না। বুকখোলা কার্ডিগানে মাখনের রং। এই গোলাপি রংটা তিতিরকে
দারুণ মানায় – দুর্ধর্ষ দেখায় ওকে। তিতিরও জানে বৈকি তার এই পছন্দের কথা। লম্বা
চুলের পুষ্ট বিনুনী তিতিরের পিঠের ওপর লুটিয়ে আছে কোমরের অনেকটা নীচে অব্দি। হ্যাঁ, কোমরের অনেকটা
নীচে - কিন্তু শরীরের ওই জায়গাটির নাম উচ্চারণ করলে তিতির ভয়ানক রেগে যায়, বলে, “রাস্তার ছেলেদের মতো
অসভ্য কথা বলতে তোর লজ্জা করে না”?
তিতিরের হাতে সেই লেদারের পার্সটি
– যেটা গতবার লেক্সপো থেকে সে কিনে দিয়েছিল তিতিরকে। কালো লেদারব্যাণ্ডের
রিস্টওয়াচে একবার সময় দেখল। তারপর দাঁড়িয়ে রইল - বারবার তাকাতে লাগল
বাঁদিকে-ডানদিকে। কতক্ষণে আসবে, সাগর। “তুই – এত দেরি করছিস কেন বলতো, সাগর?
কোনদিন কী ঠিক সময়ে আসতে নেই?”
মহম্মদ আলি পার্কের কোণায়, চায়ের
গুমটির আড়ালে দাঁড়িয়ে সাগর তিতিরকে লক্ষ্য করছে অনেকক্ষণ। আর মান্না দের সেই
বিখ্যাত গানটা তার মনে পড়ে যাচ্ছে। “এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি মাঝখানে নদী
ওই...”। যদিচ এটা ফুটপাথ - সে
কূল নয় আর সে নদীও নয়, তবু মাঝখানের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউকে বহতা নদী কল্পনা করলে
আটকাচ্ছে কে? এখন এই বেলা পৌনে এগারোটায় অজস্র যানবাহন আর মানুষের স্রোতে ব্যস্ত
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ টানা-বর্ষায় ভরা পোয়াতি নদীর মতোই বহমান।
এপাশে কলুটোলা – ওপাশে মহাত্মা
গান্ধী রোডের মোড়ের ট্রাফিকে আটকে যাওয়া গাড়ির লাইন, মাঝে মাঝেই আড়াল করে দিচ্ছে
তার দৃষ্টি। তিতিরকে সে হারিয়ে ফেলছে তার নজর থেকে। সিগন্যালে ছাড়া পাওয়া গাড়ির
ফাঁকে ফাঁকে তিতিরকে আবার দেখা যাচ্ছে। তিতির নয় - যেন এলোমেলো ভেসে চলা
মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়া চাঁদ – এমনই মনে হল সাগরের।
এখন এগারোটা বাজতে দশ। আর দেরি নয়। এবার তার ধরা পড়া উচিৎ
তিতিরের হাতে। আশ্চর্য, সে ধরা পড়বে তিতিরের হাতে! অথচ তিতির নামের কবোষ্ণ ছোট্ট
পাখিকেই তো মানুষ ধরে নানান তৃপ্তির জন্যে। কোনো এক উপন্যাসে, এক বিখ্যাত
সাহিত্যিক মেয়েদের বুকের তুলনা করেছিলেন তিতির পাখির সঙ্গে। তিতির কি সে বইটা
পড়েছে? পড়লে তার কি মন্তব্য ওই সাহিত্যিক সম্পর্কে! জিজ্ঞেস করার সাহস নেই সাগরের।
কিন্তু সে এখন অধীর তিতিরের হাতে ধরা দেবার জন্যে।
রাঙা চোখের নির্দেশে সামনের মোড় বন্ধ।
সার সার গাড়ি স্তব্ধ দাঁড়িয়ে গেছে রাস্তায়। তিতিরকে আর দেখা যাচ্ছে না। সাগর
দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ফাঁক গলে রাস্তা পার হতে শুরু করল। এপার থেকে ওপারে পৌঁছতে
পৌঁছতে জ্যাম ছেড়ে আবার গাড়ির চলা শুরু হয়ে গেছে। তার মধ্যেই বিপজ্জনকভাবে রাস্তা
পার হয়ে ওপারের ফুটপাথে পৌঁছে সাগর দেখল তিতির নেই। কি আশ্চর্য এই তো - এইখানেই তো
দাঁড়িয়েছিল তিতির...তাহলে, গেল কোথায়?
এত সুন্দর উজ্জ্বল সকালটা নিমেষে
যেন ঝাপসা হয়ে এল সাগরের চোখে। রাস্তায় এত কর্মব্যস্ত লোকজন, গাড়ির চলাচল তার কাছে
ভীষণ বিরক্তিকর মনে হতে লাগল। কিসের এত চলাচল – চঞ্চলতা? কিছুক্ষণের
জন্যে কেন সবকিছু স্থাণু হয়ে থাকছে না? যাতে এই ভিড়ের মধ্যেও সে খুঁজে নিতে পারে
তার তিতিরকে। যেখানে তিতির দাঁড়িয়েছিল, ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে সাগর তার মোবাইলটা
আবার চালু করল। ডায়াল করল তিতিরের নম্বর, রিং হচ্ছে...রিং হচ্ছে। রিং হতে হতে...শেষ,
তিতির ফোন ধরল না। কেটে দিয়ে আবার ডায়াল করল সাগর...এবার সুইচড অফ...। সাগর বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে
রইল যদি তিতির এদিক সেদিক কোথাও গিয়ে থাকে জল বা কোল্ড ড্রিঙ্কস নিতে, আবার যদি
ফিরে আসে। তিতির ফিরে আয়। ফিরে আয়। বিশ্বাস কর, আমি ভীষণ সরি, রে। তুই সত্যি সত্যি
চলে গেলি - আমাকে ফেলে রেখে? প্লিজ ফিরে আয়। সাগর আশে পাশে চারদিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল তিতিরকে।
২
প্রায় মিনিট পনের একই জায়গায়
দাঁড়িয়ে থাকল সাগর তিতিরের আশায়। কিন্তু তিতির ফিরল না। তবুও তার অবুঝ মন কিছুতেই
ছেড়ে যেতে চাইছে না এই জায়গাটা – যেখানে এই একটু আগেও সাগরের জন্যেই তিতির দাঁড়িয়ে
ছিল। সাগর ছোট্ট একটা ছেলেমানুষী মজার জন্যে চলে যেতে দিল তিতিরকে! কত কথাই
যে তার বলার ছিল এবং সে প্রস্তুত হয়ে এসেছিল, তিতিরের অনেক - অনেক কথা শোনার
জন্যে। অনুশোচনায় আর নিজের ওপর ধিক্কারে সাগর বিমূঢ়ের মতো দাঁড়িয়ে রইল একই জায়গায়।
সাগর কি করবে এই মুহূর্তে? কি করছে
এখন তিতির - কোনদিকে গেছে? তিতির নিজের মোবাইল সুইচ অফ করে দিয়েছে – নিশ্চই রাগে
এবং হতাশায়। ওকি এখন তিতিরের বাড়িতে ফোন করবে? এই অসময়ে তিতির কি বাড়ি ফিরে যাবে?
ওর পরীক্ষা শেষ হয়েছে বেশ কিছু দিন। যাদবপুর যেতে পারে – ওর ইউনিভার্সিটিতে? নাকি
কোন বন্ধুর বাড়ি? আজ তাদের দুজনের সারাদিনের প্রোগ্রাম ছিল - এদিক সেদিক একসাথে ঘুরে
বেড়াবে। কাজেই কোন বন্ধুর বাড়ি হুট করে যাওয়ার সম্ভবনা কম। অনেক
ভেবে সাগর যাদবপুর যাবার সিদ্ধান্ত নিল। আবার রাস্তা পার হয়ে এল সাগর। বাসে ওঠার
আগে পর্যন্ত অধীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিল, যদি তিতির বাই চান্স ফিরে আসে! নাঃ, এল
না।
সাগর তার স্কুললাইফের পর থেকেই
কলকাতার বাইরে থাকে। কলেজে পড়ত কলকাতা থেকে বাইরে হস্টেলে থেকে। এখন বছর দুয়েক
চাকরি করছে বাংলা থেকে অনেকদূরের দক্ষিণের এক মাঝারি শহরে। এর আগে যাদবপুর
ক্যাম্পাসে সে দু একবার এসেছে তিতিরের জন্যেই। শুধু ক্যান্টিনটাই তার চেনা, এছাড়াও
অচেনা ক্যাম্পাসের এদিক সেদিক এলোমেলো ঘুরে ফিরে তিতিরের কোন হদিস করতে পারল না।
খুব আশা করে যে সে এখানে এসেছিল তা হয়তো নয় – কিন্তু মনের কোণে যে ক্ষীণ
সম্ভাবনাটুকু এতক্ষণ উঁকি দিচ্ছিল সেটাও হারিয়ে যেতে সাগর ভেঙে পড়ল।
সাগর এর মধ্যে অন্ততঃ পনের বার
ডায়াল করেছে তিতিরের নম্বরে। কিন্তু সুইচড অফ ছাড়া কোন উত্তর
মেলে নি। মরিয়া সাগরের হঠাৎ মনে হল, তিতির নিশ্চই এতক্ষণে বাড়ি ফিরে গেছে। এতক্ষণ
তিতিরের বাড়িতে ফোন না করাটা, তার চূড়ান্ত বোকামি বলে মনে হল। এইজন্যেই তিতির তাকে
“হাঁদা গঙ্গারাম” বলে – এই সহজ কথাটা তার একবারের জন্যেও মনে এল না, যে এতক্ষণ
তিতির নিশ্চিত বাড়ির বাইরে নেই? বুকভরা আশা নিয়ে সাগর ডায়াল করল তিতিরের
ল্যান্ডলাইনে – রিং হচ্ছে...মনে মনে সে চিন্তা করে নিতে লাগল তিতির ফোন ওঠালে সে
কি উত্তর দেবে। উত্তর এলো, তবে তিতিরের নয়- তিতিরের মা ফোন ধরেছেন, “হ্যালো”।
“মাসিমা, আমি সাগর বলছি, তিতিরকে
একটু দিন না কাইন্ডলি”।
“সাগর বলছ? তিতির তো বাড়িতে নেই। ও
তো সেই কোন সকালে বেরিয়ে গেল, তোমার সঙ্গে কী কাজ আছে বলে...এখনো ফেরে নি। তিতির
তোমার সঙ্গে নেই? তোমাদের দেখা হয়নি?”
“না, ইয়ে, মানে আমার একটু দেরি
হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে...। মাসিমা, আপনি ভাববেন না,
আমি দেখছি...”। আচমকাই ফোনটা কেটে দিল সাগর। কী জবাব দেবে সে মাসিমাকে? যদি জিজ্ঞেস
করেন, আমার মেয়েটাকে তুমি কোথায় হারিয়ে ফেললে, সাগর?
এতক্ষণ মনে হচ্ছিল তিতির তার ওপর
রাগ বা অভিমান করে কোথাও যেন লুকিয়ে আছে। তিতিরের যে কোন বিপদও ঘটে যেতে পারে তার
একবারও মনে হয়নি। কিন্তু তিতিরের বাড়িতে না ফেরাটা সাগরের মনে এক অশুভ সংকেত এনে
দিল।
এমনকি হতে পারে না, তিতিরকে কেউ
কিডন্যাপ করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে? রাস্তার ধারেই তো দাঁড়িয়েছিল তিতির – একলা তরুণী –
যথেষ্ট সুন্দরীও। জ্যামে জমে থাকা কোন গাড়ি থেকে দুর্বৃত্তরা লক্ষ্য করেছে
তাকে, নিমেষের মধ্যে অসহায় তিতিরকে তুলে নিয়েছে চার-পাঁচজন ষণ্ডাগুণ্ডা শয়তান। আশে পাশের লোকজন টের
পাওয়ার আগেই গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। এমনকি হয় না? খবরে কতই তো শোনা যায়!
এমনটা ঘটা মোটেও অসম্ভব মনে হচ্ছে
না এখন সাগরের। আতঙ্কে সাগর চিন্তাহীন জড় পদার্থের মতো ফুটপাথের ধারের রেলিং ধরে
দাঁড়াল। এইটবি বাসস্ট্যান্ডের বিকেল সোয়াচারটের তীব্র ব্যস্ততার
মধ্যে দাঁড়িয়ে তার মনে হল – সে এক জনহীন প্রান্তরে একলা দাঁড়িয়ে। তাকে ঘিরে অজস্র
ক্ষুধার্ত হায়নার এক বিরাট বৃত্ত ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসছে – অদূরে পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন
শালোয়ার কামিজ – যার রং হাল্কা গোলাপি, তাতে ছোট্ট ছোট্ট সাদা টিপ। পড়ে আছে মাখন রংয়ের
কার্ডিগান। আর সেই লেদার পার্স।
সাগর যখন খুব নিবিষ্ট চোখে চোখ
রেখে হায়নাগুলোর অপেক্ষা করছিল - কোথা থেকে খুব চেনা একটা সুর ভেসে এল তার কানে –
খুব চেনা। তারই মোবাইলের রিংটোন – তিতির ডাকলে এই সুরটিই বেজে ওঠে। পকেট থেকে
ফোন বের করে দেখল – তিতির কলিং – খুব ভয়ে – খুব সন্দেহে – কানেক্ট করল সাগর, খুব
সন্তর্পণে বলল, “হ্যালো”।
“তুমি এখন কোথায়? শুনছো, আমি
তোমাদেরই বাড়িতে আছি – তাড়াতাড়ি চলে এসো। তাড়াতাড়ি। রাখছি এখন”। সাগর কিছু বলার
আগেই ফোনটা কেটে দিল তিতির। সাগর নিশ্চিন্ত যেমন হল, তেমনি হতচকিত। তিতির ভাল আছে। তিতির ঠিক
আছে। কিন্তু, তিতির তার বাড়িতে গেল কেন? এবং গেলেও কখন গেল?
তিতিরের ফোনটা পেয়ে সাগর নতুন করে
ভাবার অবকাশ পেল। বাড়ি তাকে তাড়াতাড়ি যেতেই হবে। এতবড়ো জটিল রহস্যটা কিভাবে ঘটে
গেল তার কোন হদিশ তার মাথায় আসছিল না। সে সময় নষ্ট না করে একটা বাসে উঠে বাড়ির
দিকে রওনা হয়ে পড়ল। বাসস্ট্যান্ডের বাস বলে বসার সিটও জুটে গেল সৌভাগ্যক্রমে।
সারাটাদিন নাহক ছোটাছুটির পর বাসের সিটটা পেয়ে বড়ো আরাম বোধ করল সাগর এবং এই প্রথম
অনুভব করল তার প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। সকালে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় দুপিস টোস্ট,
একটা বয়েল্ড ডিম আর মহম্মদ আলি পার্কের সেই এক ভাঁড় চা। এরপর থেকে তার খাওয়ার কথা
মনেও হয়নি।
বাসে বসে সাগর তিতিরের নাম্বারে
ডায়াল করল। আর ভীষণ - ভীষণ আশ্চর্য হয়ে গেল আবার সুইচড অফ রিপ্লাই পেয়ে। কি এমন
ঘটল যে তিতির তারই বাড়িতে বসে মাত্র একবারের জন্যে তাড়াহুড়ো ফোন করে আবার সুইচড অফ
করে দিল! এইবার বেশ বিরক্তি অনুভব করল সাগর। সে মানছে তার বোকা বোকা আইডিয়া খাটাতে
গিয়ে সে তিতিরকে হয়রান করেছে – বিপন্ন করেছে। কিন্তু সেও তো সারাটা দিন কম হয়রান
হয়নি, তারও ভোগান্তি কিছু কম হল না। সেটা তিতির বুঝল না কেন? সাগর ডায়াল করল তার নিজের
বাড়ির ল্যান্ডলাইনে। সাড়ে চারটে বাজে, তার মানে বাবা বাড়ি আছেন এখনো – সাড়ে পাঁচটা
নাগাদ বাবা চেম্বারে বেড়িয়ে যান। দেখা যাক - মা যদি ফোন ধরেন তাহলে হয়তো রহস্যের
কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে। ফোন বাজছে – অনেকক্ষণ রিং হবার পর যে মেয়েলি কণ্ঠ ফোনে
সাড়া দিল - সে স্বর সাগর চট করে চিনতে পারল না।
“হ্যালো”।
“কে বলছেন”? সাগর জিজ্ঞেস করল।
“ওমা, সাগরদাদাবাবু, আমারে চিনতে
পারলে নি, আমি পতিমা গো”।
“ও প্রতিমাদি? মা নেই? মাকে দাও
না”।
“মামা, মামী তো ওপরে। বৌদিমণির
সঙ্গে গল্প কর্তেসে...”
“বৌদিমণি? বৌদি আবার কে এল”?
“ও মা, তোমার সঙ্গে বে হবে সব
ঠিকঠাক। কি সোন্দর গো...”
“আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে...”
“যাই বলো, তোমার সঙ্গেরে রাজযোটক
ম্যাচিন...মামীরে ডেকে দিই, তুমি ধরো...”
“না, না। থাক, ডাকতে হবে না। আমি
রাখছি”।
সাগর ফোন কেটে দিল। সাগরের
বিরক্তি আরো বাড়ল - তিতিরের ওপর এবং মায়ের ওপর। প্রতিমাদি সকাল সন্ধ্যে মায়ের
হাতনুরকুত হয়ে ঘরের কাজে সামাল দেয়। দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে সে এখন তাদের ঘরেরই
একজন বলা যায়। তাই বলে প্রতিমাদির থেকে এইসব আবোল তাবোল বকওয়াস তার একদমই পছন্দ হল
না। সাগর বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইল বাইরে। একটা নষ্ট দিনকে পিছনে রেখে দৌড়ে
চলেছে তার বাস। শহরের বুকে ধূসর বিকেল বিছিয়ে পাটে নামছেন সূর্য। বাসের
জানালার বাইরে একটাও হায়না আর সে দেখতে পেল না। নীড়মুখো মানুষের ব্যস্ত ভিড় দেখতে
দেখতে সাগর সব ভাবনা চিন্তা বন্ধ করে দিল – যা হবার হবে বাড়ি গিয়ে। দেখাই যাক না, তার
জন্যে কী রহস্য অপেক্ষা করছে তার বাড়িতে।
৩
বাড়ির দরজায় কলিং বেল টিপতেই
মায়ের গলা পেল সাগর।
“দ্যাখ তো প্রতিমা, কে এলো। না
থাক আমিই খুলছি, মনে হয় সাগর এল”। মা দরজা খুলে দিলেন। বসার ঘরে মায়ের পিছন পিছন
ঢুকতে ঢুকতে সাগর মাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমাদের ব্যাপারটা কি বলো তো?
“সে অনেক ব্যাপার, তার আগে তুই
মুখ হাত ধুয়ে খেতে বোস দেখি। সারাদিন পেটে তো কিছু পড়েনি – মুখখানা তো শুকিয়ে আমসি
করে এসেছিস। আর সে মেয়েটাও কিচছু খেলে না, সারাটাদিন। তোরা দুজনে বসে পড়, প্রতিমা
লুচি ভাজছে, গরম গরম খেয়ে নে। তিতির, ও তিতির, নীচে চলে আয়, মা। সাগর এসে গেছে”।
সাগর অনেক কিছু বলার জন্যে ছটফট
করছিল, কিন্তু মায়ের এই আচরণে সে অন্য কথা বলার সাহস পেল না। তিতিরকে মা আগে থেকেই
চেনেন, কিন্তু “তুমি” বলে ডাকতেন, আজ “তুই” বলে ডাকছেন। কাজেই এই কয়েকঘন্টায় মা আর
তিতিরের কেমিস্ট্রিটা যে পাল্টে গেছে সাগর সেটা অনুভব করল। তাছাড়া মা এখন তাদের
অভুক্তি মেটানোর কাজে পূর্ণ ফোকাসড, অন্য কথায় মা রেগে যেতে পারেন। কাজেই বাধ্য
ছেলের মতো সাগর বেসিনে গেল হাত মুখ ধুতে। ফিরে এসে দেখল তিতির চেয়ারের পিঠে হাতের
ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে খাবার টেবিলের সামনে। তিতিরের সঙ্গে সাগরের চোখাচোখি হল
কিন্তু কেউ কোন কথা বলল না। মা রান্নাঘর থেকে দুহাতে দুটি রেকাবিতে লুচি আর আলু
চচ্চড়ি নিয়ে এলেন, খাবার টেবিলে নামিয়ে রেখে বললেন, “বসে পড়, বসে পড়। দুজনে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস কি”? প্রথমে সাগর বসল, তার দেখাদেখি তিতিরও বসল পাশের
চেয়ারে। ক্ষুধার্ত সাগর বিনা বাক্যব্যয়ে আধখানা লুচি ছিঁড়ে আলু চচ্চড়ি সমেত মুখে
পুরে নিল। পাশে দেখল, তিতির খাচ্ছে না, চুপ করে হাত জড়ো করে বসে আছে।
“কি রে খাবি না”? সাগর জিজ্ঞেস
করল তিতিরকে।
“খাচ্ছি, তুমি খাও না”। খুব শান্ত
জবাব তিতিরের। তিতিরের উত্তর শুনে, সাগরের খটকা লাগল, মুখভরা লুচি চিবোনো থামিয়ে
একটু ঝাঁজের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল, “ওয়েট, ওয়েট, সেই তখন ফোনে একবার, এখন আবার – আমায়
“তুমি” “তুমি” করছিস কেন বলতো? কি ব্যাপারটা কি”? তিতির কোন উত্তর দিল না, মুখ
নামিয়ে মুচকি হাসল, সাগর আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, পারল না – কারণ মা আরো লুচি নিয়ে
ঘরে ঢুকলেন তাদের দেবেন বলে। মা তিতিরের প্লেট দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি
হল, তিতির, তুই হাত গুটিয়ে বসে কেন”?
“খাচ্ছি। তার আগে তুমিও বসো,
আমাদের সঙ্গে। দুপুরে তুমিওতো কিছুই খাওনি”। মা চট করে কোন উত্তর দিতে পারলেন না। তাঁর
দুচোখে নরম স্নেহ। একটু পরে বললেন, “আচ্ছা, আমি বসছি, তুই শুরু তো কর”। মা বসলেন।
তিতির কিছু বলল না, উঠে রান্নাঘরে গেল। মা
বললেন, “আবার চললি কোথায়, ও তিতির”।
“আসছি”। রান্নাঘর থেকে উত্তর দিল
তিতির। সাগর কিছু বলছিল না, খাচ্ছিল আর দেখছিল মা আর তিতিরকে। তিতির তার মাকে “তুমি”
বলছে, আগে কোনদিন শোনেনি, আগে “আপনি” বলত। তিতির এ ঘরে এল আরেকটা প্লেটে দুটো
সদ্যভাজা লুচি আর আলুচচ্চড়ি নিয়ে। মায়ের সামনে প্লেট রেখে বলল, “শুরু
করো না, মা, প্লিজ। আমার কিন্তু ভীষণ খিদে পেয়েছে”। তিতির ঘুরে এসে নিজের চেয়ারে
বসল। মা ছোট্ট মেয়ের মতো, মুখে লাজুক হাসি নিয়ে লুচি ছিঁড়তে শুরু করলেন। দেখাদেখি তিতিরও খাওয়া
শুরু করল।
এইসময়েই বাবা নেমে এলেন ওপর থেকে। তিনি চেম্বারে বেরোনোর জন্যে প্রস্তুত। টেবিলে খেতে বসা তিনজনকেই তিনি খুব মন দিয়ে দেখলেন, বললেন, “বাঃ, তুমিও বসে গেছ, আদরের ছেলেকে কোলে নিয়ে। গুড, ভেরি গুড। তা, সাগরবাবু, কোথায় ডুব মারা হয়েছিল, সকাল-সকাল? তুমি যে অপদার্থ, সে আমার চেয়ে ভাল আর কে জানে – কিন্তু এতটা নিরেট অপদার্থ – সেটা আমারও জানা ছিল না”!
সাগর চিবোনো লুচিটা মুখ থেকে পেটে
ডেসপ্যাচ করে বলল, “কেন? কী করেছি আমি”?
এই প্রশ্নে বাবা অবাক হয়ে তিতির
আর মায়ের মুখের দিকে তাকালেন, বললেন, “লিসন। হি ইজ আস্কিং মি – কেন? সকাল সকাল
একটি ফুটফুটে মেয়েকে, পাক্কা একঘন্টা ধরে পথে বসিয়ে রাখল, এন্ড নাউ, তারপরেও জিজ্ঞেস
করছ – কেন”?
“তিতির মোটেও পথে বসে ছিল না। আর একঘন্টাও মোটেই নয়”।
“ইয়েস, আমি এক্সপেক্ট করেছিলাম,
তুমি এটাই বলবে। দশটার সময় একজনকে টাইম দিয়ে শেষমেশ তুমি গেলেই না – এটাকে
বাংলাভাষায় পথে-বসানোই বলে – সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলেও। আর একঘন্টা কিনা, হাউ ডু
ইউ নো? তুমি তো সেখানে গেলেই না, কি করে জানলে, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল”?
“আমি জানি। তিতির এসেছিল দশটা
আঠারোয়, চলে গেছে দশটা বাহান্নয়”। বাবা হতবাক, মাও খাওয়া থামিয়ে এবার চেঁচিয়ে
উঠলেন, “মানে? তুই কি করে জানলি”? তিতিরও খাওয়া থামিয়ে তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে
রইল। সাগর মা আর তিতিরের দিকে তাকিয়ে একটু অস্বস্তির হাসি হাসল। বাবা কিছু বললেন
না। উলটোদিকের চেয়ার টেনে মায়ের পাশে বসলেন, বললেন, “বাবা। এ যে, শেয়ালদা-নৈহাটি
লোকালের শিডিউল বলে দিলি! টাইম ঠিক বলছে, তিতির”? তিতির মুচকি হেসে সায় দিল।
তাই দেখে বাবা বললেন, “তুই কি সি
সি টিভি লাগিয়েছিলি ওখানে? নাকি কোন প্রাইভেট টিকটিকি লাগিয়েছিলি তিতিরের পিছনে -
তিতির কি করে, না করে, ওয়াচ করার জন্যে? কি সাংঘাতিক। আমি তো তোকে চিনতেই পারিনি,
বাবা! তুমি তো আদৌ অপদার্থ নও, তুমি তো একটি পাক্কা হার্ডকোর ক্রিমিনাল”!
মা এবার অধৈর্য হয়ে উঠলেন, “আঃ।
দাঁড়াও না। ওকে বলতে দাও না – কি করে জানল”।
“ইয়েস। কোয়েশ্চেন দি...সরি, অ্যান্সার দি কোয়েশ্চেন... কি করে জানলি”?
সাগর একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “আমি তিতিরের চেয়ে অনেক আগেই পৌঁছেছিলাম ওখানে। দশটারও কিছুটা আগেই। হঠাৎ কী খেয়াল হল – ঠিক করলাম আজ তিতিরকে খুব বোর করব... জানি না, কেন এমন মনে হল। তিতির খুব চটেমটে যাবে, খুব ঝগড়া করবে আমার সঙ্গে! তাই আমি দাঁড়িয়েছিলাম রাস্তার উল্টোদিকে। তিতির এল। অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে উঠল – শেষে আমি যখন তিতিরের সঙ্গে দেখা করার জন্যে ওপারে গেলাম – দেখি তিতির নেই, কয়েক মিনিটের মধ্যে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল – কোথায় গিয়েছিলি তুই, তিতির”?
সকলেই বিস্ফারিত নেত্রে সাগরের কথা
শুনছিল। বলে কী? এমন মতিভ্রমও কারোর হতে পারে? তিতির কিছু বলতে যাচ্ছিল। বাবা
হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলেন তিতিরকে, তারপর বললেন, “বিং এ রেসপন্সিবল ডক্টর, আমি
ডিক্লেয়ার করছি, হি ইজ নট অ্যাট অল ফিট, র্যাদার সাইকোলজিক্যালি সিক। হি ডিজার্ভস এ ভেরি লং
টার্ম ট্রিটমেন্ট, ইন মাই ওপিনিয়ন। এনি ওয়ে – চিন্তার কিছু নেই, আমার ক্লাস
ফ্রেন্ড ডক্টর সান্যাল আছে – হি ক্যান ম্যানেজ দিস টাইপ অব কেসেস ভেরি ডেলিকেটলি”।
মা কপালে হাত রেখে এতক্ষণ
শুনছিলেন, বাবা কথায় কিঞ্চিৎ বিরতি দিতেই মা বললেন, “হয়েছে, তোমার ডাক্তারি ফলানো?
আজ চেম্বারে যাবে না? চেম্বারে পেশেন্টগুলো খাতায় নাম লিখিয়ে হত্যে দিয়ে বসে আছে। যাও
না, তোমার ধন্বন্তরি চিকিচ্ছে করে তাদের উদ্ধার করে এসো”।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বাবা আঁতকে
উঠলেন প্রায়, “ইস। তাইতো সোয়া ছটা বেজে গেছে! ইটস টু লেট। তিতির তোমার খাওয়া হয়ে
গেছে, মা? চট করে রেডি হয়ে নাও, আমাকে চেম্বারে ড্রপ করে, বলাই তোমাকে বাড়ি পৌঁছে
দেবে”।
“সাগর, তুইও সঙ্গে যা। তিতিরকে
বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয়”। মা বললেন।
“নো। আই কান্ট অ্যালাউ একলা তিতির উইথ ইয়োর সান, বিভু”। বাবা ঘোরতর আপত্তি তুললেন। সাগরের মায়ের নাম বিভাবতী, সংক্ষেপে বিভু।
মাও খুব শক্তভাবে জিদ ধরে বললেন, “না।
সাগর যাবে। একলা আমি যদি তোমাদের দুজনকে আজীবন সামলাতে পেরে থাকি – তিতিরও পারবে। সাগর, তাড়াতাড়ি কর,
তিতিরের সঙ্গে যা”।
তিতির আর সাগর দুজনেই উঠে ওয়াস
বেসিনের দিকে গেল। তাদের কানে এল বাবা চাপা গলায় মাকে বলছেন, “বাট, বিভু, তুমি
কিন্তু আননেসাসারি রিস্ক নিচ্ছ, আই মাস্ট টেল। আফটার অল শী ইজ এ পরের
মেয়ে”!
“হ্যাঁ, আমিও পরের মেয়েই ছিলাম, আমার
বাবাও মারাত্মক রিস্ক নিয়েছিলেন। কিন্তু সে আর কী করা যাবে? আর দেরি কোর না, ওই
দেখ, ওরাও রেডি”। মার ঠোঁটে আর চোখে চাপা হাসির ঝিলিক।
বাবা ভীষণ ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে
তাকিয়ে বললেন, “অ্যাকচুয়ালি, হোয়াট ডু ইউ মিন টু সে – নো, নো, নট নাউ – ইটস টু মাচ
লেট, নাউ। বাট, লেট মি রিটার্ন অ্যান্ড সি...”। বলতে বলতে বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে উঠে পড়লেন এবং সবেগে দরজার দিকে এগোলেন।
হাত মুখ ধুয়ে সাগর পাশে দাঁড়ানো তিতিরের দিকে তাকালো, তিতির মুখ নীচু করে আছে – তার অধরে চাপা হাসির রেশ। সাগর মায়ের দিকে তাকাল, মা ইশারায় বললেন তিতিরের সঙ্গে যাবার জন্যে। তিতির ও সাগর বাবার পিছনে পিছনে বেরিয়ে এল। সাগর বাইরে এসে দাঁড়াল। গাড়ির পিছনের দরজা খুলে বাবা ঢুকে গেলেন, ওপাশের দরজার দিকে সরে যেতে যেতে তিতিরকে ডাকলেন, “তিতির উঠে পড়ো, মা। তোমার মাসিমার আবোল তাবোল শুনতে বসলে রাত ভোর হয়ে যাবে”। তিতির পিছনের সিটে বসল। সাগর উঠে বসল বলাইদার পাশে সামনের সিটে। দরজা বন্ধ করতেই বলাইদা গাড়ি স্টার্ট করল। মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে বললেন, “বাব্বাঃ। দুগগা, দুগগা”। মায়ের পিছনে প্রতিমাদি দাঁড়িয়েছিল, শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে হাসছিল।
তিতির জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল,
“আসছি, মাসিমা। প্রতিমাদি, আসি গো...”।
“এখন এসো, কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরে
এসো গো, দিদিমণি। বেশ মজা হবে...।” বলাইদা বাড়ি থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায়
পড়েই স্পীড তুলে দিল গাড়িতে।
৪
“নাউ, হোয়াট ইজ ইয়োর প্ল্যান,
তিতির”। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বাবা তিতিরকে জিজ্ঞেস করলেন। তিতির আনমনে
জানালার দিকে তাকিয়েছিল, বাবার হঠাৎ প্রশ্নের উত্তরে বলল, “বাড়ি গিয়ে, চান টান করে
আগে একটু শোবো, সারাটাদিন যা গেল...”।
“আঃহাঃ...ওই প্ল্যান বলছি না। গ্র্যাজুয়েশনতো
শেষ হতে চলল, এরপর কি প্ল্যান...”?
“ওঃ, বুঝতে পারিনি - দেখি,
যদি রেজাল্ট ঠিকঠাক হয়, তাহলে মাস্টার ডিগ্রি করার ইচ্ছে আছে”।
“দ্যাটস গুড। রেজাল্ট ঠিকই থাকবে
ও নিয়ে ডোন্ট ওরি। বিকজ আমি জানি ইউ আর ব্রিলিয়ান্ট...দ্যাখো, চাকরি তো রইলই,
কিন্তু লেখাপড়ার লাইনটা একবার ছাড়লে আবার ফিরে আসা খুব মুশকিল...জানো তো? অ্যান্ড
অ্যাট লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট – মাই ভেরি ওয়াইজ সাজেসন ইজ - ডোন্ট গো ফর বিয়ে...ওই
ভুলটা করেছ কি মরেছ...তোমার গোটা লাইফটা উইল বি আ ওয়েস্ট বিন...”।
বাবার চেম্বার চলে এসেছে।
ফুটপাথের ধারে বলাইদা গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাবা কথা বলতে বলতে লক্ষ্য করেননি।
বলাইদাকে বাবা জোর ধমকে উঠল, “আবার গাড়ি থামালি কেন, বলাই? বললাম না দেরি হয়ে গেছে”!
তারপরেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিজের
ভুল বুঝতে পেরে বাবা আবার বলাইদাকে ধমকে উঠলেন, “বলবি তো, যে এসে গেছি, হাঁ করে
দাঁড়িয়ে আছে, বোকার মতো। ও কে, আমি তবে আসি মা, আবার আসবে কিন্তু বাড়িতে। বলাই,
দিদিমণিকে ছেড়ে আয় – খুব সাবধানে যাবি কিন্তু”। বাবা দরজা খুলে নেমে তিতিরকে হাত
নেড়ে চেম্বারের গেটের দিকে এগিয়ে গেলেন। বাবাকে যতক্ষণ দেখা গেল ওরা
তিনজনেই কেউ কোনো কথা বলল না।
বাবা চেম্বারে ঢুকে যেতেই বলাইদা
বলল, “সাগরদা, তুমি পিছনে চলে যাও”। সাগর ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তিতিরের দিকে তাকাল।
তিতির খুব গম্ভীরভাবে বাইরের দিকে দেখছে। বলাইদার কথাটা শুনতে পেয়েছে বলে মনে হল
না। সাগর একটু জোরেই বলল, “কেন”?
“কেন আবার কি। সামনে কেউ বসলে
আমার গাড়ি চালাতে অসুবিদে হয়, ব্যস”। সাগর জানে এটা ডাঁহা মিথ্যে, কারণ সাগর একলা
গাড়িতে চড়লে, সর্বদাই সামনের সিটে বসে – বলাইদার পাশে। সাগর তর্ক করল না – কারণ
তারও খুব ইচ্ছে করছিল তিতিরের সঙ্গে পিছনের সিটে পাশাপাশি বসতে। সে নেমে পিছনের
সিটে বাবার ছেড়ে যাওয়া জায়গাতে বসল। বলাইদাও গাড়ি স্টার্ট করে বলল, “দিদিমণি,
আপনার বাড়িটা, প্রিয়া সিনেমা দিয়ে ঢুকলে সুবিধে হবে, না মনোহর পুকুর দিয়ে...”
“আপনি চলুন না, আমি ঠিক বলে দেব”।
গাড়ি চলছে। তিতির বলাইদার কথার
উত্তর দিয়েই আবার মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল - যেন সান্ধ্য কলকাতা সে
কোনদিন দেখেনি। সাগর যে তার পাশটিতে এসে বসল, সেদিকে তার কোন ভ্রূক্ষেপই নেই।
আয়নায় সাগরের সঙ্গে বলাইদার চোখাচোখি হল। বলাইদার ঠোঁটে মুচকি হাসি। কিন্তু
সাগর কিভাবে কথা শুরু করবে কিছুতেই ভেবে উঠতে পারল না। এদিকে গাড়ি যেন দৌড়ে চলেছে –
কি আর এমন দূর - এখান থেকে তিতিরদের বাড়ি। তিতির ডান হাতটা সিটে এলিয়ে রেখেছিল।
সাগরের ভীষণ লোভ হল তিতিরের হাতটি মুঠিতে নিতে। সাগর সাহস করে তুলে নিল, ধরে রাখল
নিজের দুহাতের মধ্যে। তিতির মুখ ফেরাল। তাকাল তার চোখের দিকে, আর একবার নিজের
হাতের দিকে। কিছু বলল না। হাত সরিয়েও নিল না। আবার মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরে
তাকিয়ে রইল।
রাসবিহারি-শরৎবোস রোড ক্রসিংয়ের
রেড সিগন্যালে গাড়িটা দাঁড়িয়ে পড়তে তিতির হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠল, সাগরের হাত থেকে হাত
টেনে নিয়ে বলল, “চলো আমরা এখানেই নেমে যাই, এটুকু আমরা হেঁটেই চলে যাবো। আর
বলাইদাদা গাড়ি নিয়ে ফিরে যাক”।
“কেন? তোর বাড়ি তো এখান থেকে
অনেকটাই – খামোকা হাঁটবি কেন”? সাগর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
বলাইও পিছন ফিরে বলল, “দিদিভাই,
স্যার জানতে পারলে আমাকে মেরে ফেলবে”।
“স্যারকে বলে দেবেন, বাড়ি অব্দিই
আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন, এটুকু মিথ্যে আমার জন্যে বলতে পারবেন না”? তিতির মিষ্টি হেসে
গাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে ফুটপাথে উঠে অপেক্ষা করতে লাগল সাগরের। সাগরও অগত্যা বাধ্য
হয়ে নেমে এল গাড়ি থেকে। সারাটাদিন দৌড়োদৌড়ির পর গাড়িতে বেশ বসেছিল তিতিরের
হাত কোলে নিয়ে - বেচারা খুব খুশি হল না । সিগন্যালে ছাড়া পেয়ে গাড়ি নিয়ে বলাইদা বেরিয়ে যেতে তিতির হাত নেড়ে
বলাইদাকে টা টা করল। তারপর দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।
একটু পরে সাগরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস
করল, “তুমি, এত হাঁদা গঙ্গারাম কেন বলো তো। গাড়িতে তুমি আমার হাত ধরে বসেছিলে আর
বলাইদা সারাক্ষণ দেখছিল, জানো? আর তাছাড়াও আমার অনেক কথা আছে তোমার সঙ্গে – বাড়ি
অব্দি গাড়িতে গেলে সেটা বলা হত”?
“ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি হাঁদা আর
তুই খুব স্মার্ট – নে। আমারও অনেক কিছু বলবার আছে – তুই আমাকে সেই থেকে “তুমি” “তুমি”
করছিস কেন বল তো? কী হয়েছে কি তোর - এরপর আবার “আপনি” বলতে না শুরু করিস, সেই আমার
ভয়”।
“সময় হলেই সব বলব। তার আগে তুমি
বলো তো, সকালে আমাকে কেন অমন বোর করলে? আমার আগে পৌঁছেও কেন ঘাপটি মেরে রইলে”? সাগর
একটু লজ্জা পেল।
মাথা চুলকে বলল, “বাঃ রে, বললাম তো
তখন। ওটা একটা কেলো হয়ে গেছিল, জানিস। বললে আবার তুই খেপে যাবি না তো”?
তিতির এবার নিজেই সাগরের হাতটা
ধরল, বলল, “বললেও খেপব – না বললেও খেপব, কাজেই বলে ফেলো, শুনি”।
“কেসটা কি হয়েছে – ইয়ে, মানে -
মাথায় তখন কি যে হঠাৎ চাপল – তোকে অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে – যখন তুই মোটামুটি
হেজে হাঁপিয়ে উঠবি, তোর কাছে যাব – আর তুই বেশ রেগে মেগে একসা হয়ে আমাকে খুব ঝাড়বি
– আর আমি তোকে দেখব – দেখব আর দেখব – ব্যস। এই আমার মতলব ছিল – কিন্তু পুরো
ব্যাপারটা এমন কেঁচে গেল – যে আমিই নিজেই....। সরি রে, তিতির, এক্সট্রিমলি সরি”।
তিতির কোন কথা বলল না। সাগরের হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরল। মাথা নীচু করে
কিছুক্ষণ চলার পর মুখ তুলে তাকাল সাগরের দিকে – সাগর দেখল তিতিরের দুচোখে জল টলটল
করছে। সাগর থমকে দাঁড়াল, তিতিরও।
সাগর বলল, “এ বাবা, তুই কাঁদছিস,
তিতির? বললাম তো সরি, আমি রিয়েলি সরি, রে”।
“কাঁদছি কোথায়? চোখে জল এলেই বুঝি
কান্না হয়”?
“যা বাব্বা, তোর চোখে জল – আর
তুই কাঁদছিস না? ও বুঝেছি, ফিফটিজের বাংলা সিনেমার নায়িকারা চোখে জল এলে বলতো
“কাঁদিনিতো – চোখে কী যেন পড়ল” – তোরও কি সেই কেস”?
“আমি নায়িকা নই, সাগর। আর তোমার
হাঁদা মাথায় ঢুকবে না - কান্না ছাড়াও কেন কখনো কখনো চোখে জল চলে আসে। দাঁড়িয়ে পড়লে
কেন, চলো - আশেপাশের লোকজন দেখছে – জলজ্যান্ত সিনেমা”। দুজনে আবার চলতে শুরু করল
হাতে হাত রেখেই।
“তিতির, আমি ভেবেছিলাম তুই রেগে
যাবি। ঠিক আছে তুই কাঁদিসনি কিন্তু তোর চোখে জল কেন চলে এল”?
“বললাম না। তুমি ওসব বুঝবে না? ও
কথা থাক। বরং...” ছোট্ট রুমাল নিয়ে তিতির হাল্কা করে চোখ মুছে নিল। “...বরং তোমার ওই মতলবের
জন্যে আমার কি দশা হল সেটা শোনো। তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকে থেকে যখন আমি তোমার
আসার আশা ছেড়ে দিয়েছি এবং ভাবছি কি করব – হঠাৎ সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল –
তোমাদের এই গাড়িটা – জানালা দিয়ে মাসিমা ডাকছিলেন...”।
“মা, ওই সময়ে, ওখানে”? সাগর অবাক
হয়ে যায়।
“শোনো না...আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
ওখানে দাঁড়িয়ে কেন। কোথায় যাব। বলতে বলতে গাড়ির দরজাও খুলে দিলেন, বললেন – উঠে
এসো, উঠে এসো...”।
“আর তুইও ওমনি সোনা মেয়ের মতো উঠে
পড়লি”?
“বেশ করেছি। আমি কি করে জানবো যে
তুমি এসেছ, এবং মেঘনাদ হয়ে বসে আছো? তার ওপর আবার ফোন আউট অফ রিচ...। কতবার ফোন করেছি
তোমায় জান? আমার তখন পাগল হতে বাকি, ওই সময়ে কোথায় যাব, কী করব? তোমার কী হল –
বিপদ আপদ হলো কিনা সেই চিন্তায় মরছি। তখন মাসিমা এসে যেতে, সত্যি আমার যেন ধড়ে
প্রাণ এল। কাজেই উঠে পড়লাম তোমাদের গাড়িতে...”। সাগর মাথা নীচু করে হাঁটতে থাকল।
সারাদিন নিজের চিন্তা-ভাবনা নিয়েই সে ব্যস্ত ছিল,
তিতিরের মনের অবস্থাটা মোটেই আঁচ করতে পারেনি, এবার বুঝতে পেরে সে সত্যি
খুব অনুতপ্ত হল। তিতিরের হাতে হাল্কা চাপ দিয়ে বলল, “সরি রে, তিতির”।
“ওকে সাগর, আই নো। ইউ আর সিরিয়াস।
তারপর শোনো না...আমি উঠতেই গাড়ি তো ছেড়ে দিল...আর দেখি, ওপাশে মেসোমশাই। ব্যস শুরু
হয়ে গেল তোমার বাবার জেরা। এখানে কেন? কোথায়? এর মধ্যে তোমার ফোন এল একবার –
মেসোমশাই জিজ্ঞেস করলেন, কার? বললাম তোমার – ব্যস স্ট্রিক্ট অর্ডার দিলেন - ফোন
ধরবে না - ফোন সুইচড অফ করে দাও। মাসিমা অনেক চেষ্টা করলেন – কিন্তু তোমার বাবা
বুঝলে তো”?
সাগর অবাক হয়ে নিজের মনেই বলে, “কিন্তু
ওই সময়ে মা-বাবা একসঙ্গে ওইপাড়ায় গেল কেন”?
“মাসিমা বললেন তোমার বাবার কোনো
সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস কেনার ছিল – সে সব নাকি ওই মেডিকেল কলেজের পাড়াতেই
পাওয়া যায় – তারপর মাসিমার কিছু কেনা কাটার ছিল হাতিবাগানে...।”
“বোঝো কান্ড। এত জায়গা থাকতে তুই আর আমি বেছে বেছে ওই জায়গাটা ঠিক করেছিলাম – যেখানে চেনা লোকজনের সঙ্গে দেখা হবার মিনিমাম চান্স – আর সেখানেই একেবারে মা-বাবা”?
সাগরের কথায় তিতির আজ এই প্রথম মন
খুলে জোরে হেসে ফেলল, তারপর বলল, “যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধে হয় ...
হাতিবাগানে কেনাকাটা সেরে তোমাদের বাড়ি গেলাম। তোমাদের ল্যান্ডলাইন থেকে আমার মাকে
ফোন করলেন মাসিমা, সেখানেও তোমার বাবার কড়া নির্দেশ – তুমি আমাদের বাড়িতে ফোন করলে
আমি কোথায়, যেন না বলা হয়। তুমি মাকে ফোন করেছিলে বোধহয়
চারটে নাগাদ। তার পরেই মা আমাকে ল্যান্ডফোনে বললেন – “কেন বেচারাকে হয়রানি করছিস
সবাই মিলে”? মাসিমা আর আমি তোমাদের ছাদে গিয়ে চুপিচুপি তোমাকে ফোন করেছিলাম। তোমার
বাবা জানতে পারেননি। জানতে পারলে বোধহয় কুরুক্ষেত্র হতো। নেমে এসে তোমার মা
প্রতিমাদিকে বললেন মেসোমশাইয়ের জন্যে আর আমাদের জন্যেও জলখাবার বানানোর কথা। এবার
বুঝতে পারছ – তোমার ওই ছেলেমানুষির জন্যে আমাদের সবার কি হয়রানি হল? তবে হ্যাঁ,
তোমার বাড়ির সব্বাইকে বেশ চেনা হয়ে গেল - এই ফাঁকে”। এই বলে মুখ টিপে হাসল তিতির
আর কটাক্ষে ছেঁদা করে দিল সাগরের বুক – একদম এফোঁড়-ওফোঁড়।
কথা বলতে বলতে ওরা দুজনে বাড়ির
কাছাকাছি চলে এসেছিল। তিতির ও সাগর পরষ্পরের হাত ছেড়ে দিল। এতক্ষণ তিতির একটানা
কথা বলছিল, তার কথা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাগর খুব শূণ্যতা অনুভব করল। তার মনে হচ্ছিল
তিতিরের এই আলাপ কেন আরো অনেকক্ষণ চলল না – তিতিরের বাড়িটা যদি আরো অনেকটা দূরে
হতো কি ক্ষতি হতো। অথচ তিতির যখন তাকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে আসার প্রস্তাব দিয়েছিল
সে প্রথমে রাজি হয়নি। এই কারণেই তিতির যে তাকে হাঁদা বলে, তাতে সে একটুও রাগ করতে
পারে না।
আজ যে কথাটা সে বলবেই বলে পণ
করেছিল, তার সে কথাও এখনো বলা হলো না তিতিরকে। তবে এখনো সময় আছে। তিতিরদের বাড়ির
গেট ওই দেখা যাচ্ছে ঠিকই – কিন্তু তার ওই কথাটুকু বলতেও কিছু অনন্তকাল সময় লাগবে
না। সাগর খুব অস্পষ্ট স্বরে ডাকল, “তিতির...”
“উঁ”?
“তিতির, আই লাভ ইউ, তিতির”।
“আই নো, সাগর...”।
“তিতির...”
“হুঁউ”?
“তুই – তুই – মানে - তুই আমাকে বিয়ে
করবি, তিতির”? তিতির তাদের বাড়ির দরজায় ঢোকার ঠিক আগে ফিরে দাঁড়াল, আলো আঁধারিতে
স্পষ্ট না হলেও, তার চোখের হাসিটা চিনে নিতে অসুবিধে হল না সাগরের। একটু তাকিয়ে
থেকে তিতির বলল, “আজ আর ভেতরে আসতে বলবো না, সাগর, সারাটা দিন তোর যা গেছে! বাড়ি
গিয়ে রেস্ট নে। পৌঁছেই একটা এসএমএস করিস, প্লিজ। আরেকটা কথা – সারা জীবন
এমনই পাগলামি করবি প্রমিস কর, বিয়ের পর যেন পানসে মেরে যাস না, লক্ষ্মীটি”।
-০০-
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন