শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

কঠোপনিষদ - ২/৩ (শেষ পর্ব)

  দ্বিতীয় অধ্যায়

তৃতীয় বল্লী

 

ঊর্ধ্বমূলোঽবাক্‌শাখ এষোঽশ্বত্থঃ সনাতনঃ।

তদেব শুক্রং তদ্‌ব্রহ্ম তদেবামৃতমুচ্যতে।

তস্মিঁল্লোকাঃ শ্রিতাঃ সর্বে তদু নাত্যেতি কশ্চন।

এতদ্বৈ তৎ।। ২/৩/১

ঊর্ধ্বমূলঃ অবাক্‌শাখ এষঃ অশ্বত্থঃ সনাতনঃ।

তৎ এব শুক্রম্‌ তৎ-ব্রহ্ম তৎ এব অমৃতম্‌ উচ্যতে।

তস্মিন্‌ লোকাঃ শ্রিতাঃ সর্বে তৎ উ ন অত্যেতি কঃ চন। এতৎ বৈ তৎ।।

এই সংসার সনাতন এক অশ্বত্থ বৃক্ষের মতো, যার মূল ঊর্ধে (বিষ্ণুপদ) এবং শাখাসমূহ নিম্নমুখী। সেই মূলই শুদ্ধ, সেই মূলই ব্রহ্ম, সেই মূলকেই অমৃত বলা হয়। সর্বলোক তাঁর পদমূলেই আশ্রিত, তাঁকে কেউই অতিক্রম করতে পারে না। ইনিই সেই ব্রহ্ম।   

[গীতার পঞ্চদশ অধ্যায় – পুরুষোত্তমযোগের প্রথম চারটি শ্লোকে কঠোপনিষদের এই শ্লোকটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে - তাঁর সেই ব্যাখ্যার চারটি শ্লোকের সারাংশ এইরকমঃ-  

"শ্রীভগবান বললেন- জ্ঞানীজনেরা বলেন এই সংসার যেন একটি অক্ষয় অশ্বত্থ বৃক্ষ, যার ঊর্ধে শিকড় আর নিচেয় শাখা প্রশাখা, চারবেদ যেন এই বৃক্ষের পাতা। এই বৃক্ষটির স্বরূপ যিনি বোঝেন, তিনিই বেদজ্ঞ। এই বৃক্ষের শাখা প্রশাখা ত্রিগুণের প্রভাবে বেড়ে উঠে বিষয়রূপ পল্লব হয়ে নীচের থেকে উপর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আবার ঊর্ধের মূলসমূহ মানুষের সুকর্ম এবং কুকর্মের ফলস্বরূপ নীচের দিকেও প্রসারিত হয়ে থাকে। ইহলোকে সংসাররূপ এই অশ্বত্থের রূপ সঠিক উপলব্ধি করা যায় না, কারণ এই বৃক্ষের শেষ নেই, শুরু নেই, এমনকি মধ্যবর্তী স্থিতাবস্থাও নেই। এই বদ্ধমূল অশ্বত্থবৃক্ষকে বৈরাগ্যরূপ অস্ত্রে কেটে ফেলার পর, যে ব্রহ্মপদ লাভ করলে সংসারে আর ফিরে আসতে হয় না, সেই পরম ব্রহ্মপদের অন্বেষণ করা উচিৎ। আমি সেই আদি পরমব্রহ্মপুরুষেরই শরণাপন্ন হই, যাঁর থেকে এই চিরন্তনী সংসার-প্রবৃত্তি প্রবাহিত হয়ে চলেছে।"]

 

যদিদং কিঞ্চ জগৎ সর্বং প্রাণ এজতি নিঃসৃতম্‌।

মহদ্ভয়ং বজ্রমুদ্যতং য এতদ্বিদুরমৃতাস্তে ভবন্তি।। ২/৩/২

যৎ ইদম্‌ কিম্‌ চ জগৎ সর্বম্‌ প্রাণঃ এজতি নিঃসৃতম্‌।

মহৎ ভয়ম্‌ বজ্রম্‌ উদ্যতং যঃ এতৎ বিদুঃ অমৃতাঃ তে ভবন্তি।

এই যা কিছু চরাচর জগৎসকল, তাঁর প্রাণরূপ থেকেই নিঃসৃত হয়ে স্পন্দিত হচ্ছে। তিনি উদ্যতবজ্র পুরুষের মতো মহা ভয়ংকর, এই ব্রহ্মকে যিনি জানতে পারেন, তিনিই অমৃতত্ব লাভ করেন।    

 

ভয়াদস্যাগ্নিস্তপতি ভয়াত্তপতি সূর্যঃ।

ভয়াদিন্দ্রশ্চ বায়ুশ্চ মৃত্যুর্ধাবতি পঞ্চমঃ।। ২/৩/৩

ভয়াৎ অস্য অগ্নিঃ তপতি ভয়াৎ তপতি সূর্যঃ।

ভয়াৎ ইন্দ্রঃ চ বায়ুঃ চ মৃত্যুঃ ধাবতি পঞ্চমঃ।।

তাঁর ভয়েই অগ্নি তাপ দেয়, তাঁর ভয়েই সূর্য কিরণ দেয়, তাঁর ভয়েই ইন্দ্র, বায়ু এবং পঞ্চমস্থানীয় মৃত্যু নিজ নিজ কাজে ব্যাপৃত থাকেন। 

 

ইহ চেদশকদ্‌ বোদ্ধুং প্রাক্‌ শরীরস্য বিস্রসঃ।

ততঃ সর্গেষু লোকেষু শরীরত্বায় কল্পতে।। ২/৩/৪

ইহ চেৎ শকৎ বোদ্ধুং প্রাক্‌ শরীরস্য বিস্রসঃ।

ততঃ সর্গেষু লোকেষু শরীরত্বায় কল্পতে।।

এই দেহ বিনাশের আগেই যদি কেউ তাঁকে জানতে সক্ষম হন (তিনি বিমুক্ত হন), তা না হলে সেই অজ্ঞানতার কারণে এই পৃথিবীতে অথবা অন্যান্য লোকে বার বার জন্মাতে হয়।  

 

যথাদর্শে তথাত্মনি যথা স্বপ্নে তথা পিতৃলোকে।

যথাপ্সু পরীব দদৃশে তথা গন্ধর্বলোকে

ছায়া তপয়োরিব ব্রহ্মলোকে।। ২/৩/৫

যথা আদর্শে তথা আত্মনি যথা স্বপ্নে তথা পিতৃলোকে।

যথা অপ্সু পরি ইব দদৃশে তথা গন্ধর্বলোকে

ছায়া আতপয়ঃ ইব ব্রহ্মলোকে।।

আত্মা জীবের নির্মল চিত্তে, আয়নায় দেখা মুখের মতো প্রতিবিম্বিত হয়, পিতৃলোকে স্বপ্নে দেখার মতো অস্পষ্ট, গন্ধর্বলোকেও জলে দেখা ছায়ার মতো। শুধু ব্রহ্মলোকেই আত্মা ছায়া ও রৌদ্রের মতো সুস্পষ্ট।    

 

ইন্দ্রিয়াণাং পৃথগ্‌ভাবমুদয়াস্তময়ৌ চ যৎ।

পৃথগুৎপদ্যমানানাং মত্বা ধীরো ন শোচতি।। ২/৩/৬

ইন্দ্রিয়াণাম্‌ পৃথক্‌ ভাবম্‌ উদয়-অস্তময়ৌ চ যৎ।

পৃথক্‌ উৎপদ্যমানানাং মত্বা ধীরঃ ন শোচতি।।

জীবের ইন্দ্রিয়সমূহ পঞ্চভূত থেকে উৎপন্ন হয়েছে, তাদের ভাব আত্মার থেকে পৃথক, এই তত্ত্ব জেনে ব্রহ্মনিষ্ঠ জ্ঞানীরা তাদের সৃষ্টি অথবা লয় নিয়ে শোক করেন না।

[পঞ্চইন্দ্রিয় অর্থাৎ কর্ণ, ত্বক, চক্ষু, জিহ্বা ও নাক, পঞ্চভূত অর্থাৎ আকাশ, বায়ু, তেজ, জল ও ক্ষিতি থেকে যথাক্রমে সৃষ্টি হয়। অতএব পঞ্চভূতের সঙ্গে পঞ্চইন্দ্রিয়েরও সৃষ্টি ও বিনাশ আছে।]

 

ইন্দ্রিয়েভ্যঃ পরং মনঃ মনসঃ সত্ত্বমুত্তমম্‌।

সত্ত্বাদধি মহানাত্মা মহতোঽব্যক্তমুত্তমম্‌।। ২/৩/৭

ইন্দ্রিয়েভ্যঃ পরম্‌ মনঃ মনসঃ সত্ত্ব্ম্‌ উত্তমম্‌।

সত্ত্বাৎ অধি মহান্‌-আত্মা মহতঃ অব্যক্তম্‌ উত্তমম্‌।।

ইন্দ্রিয়সমূহের থেকে মন শ্রেষ্ঠ, মনের থেকে সত্ত্বা অর্থাৎ বুদ্ধি উত্তম, সত্ত্বার থেকে আত্মা মহান, কিন্তু আত্মার থেকেও অব্যক্ত অর্থাৎ মায়া উত্তম।

 

অব্যক্তাত্তু পরঃ পুরুষো ব্যাপকোঽলিঙ্গ এব চ।

যং জ্ঞাত্বা মুচ্যতে জন্তুরমৃতত্বং চ গচ্ছতি।। ২/৩/৮

অব্যক্তাৎ তু পরঃ পুরুষঃ ব্যাপকঃ অলিঙ্গঃ এব চ।

যম্‌ জ্ঞাত্বা মুচ্যতে জন্তুঃ অমৃতত্বম্‌ চ গচ্ছতি।।

সর্বব্যাপ্ত অথচ নির্গুণ যে পরমাত্মাকে জানলে জীব সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হয় ও অমৃতত্ব লাভ করে, সেই পরমপুরুষ অব্যক্তের থেকেও উত্তম।

[আমরা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে নানান লক্ষণ বিচার করে, সকল বিষয়কে চিহ্নিত করতে পারি, আত্মার কোন লক্ষণ নেই, তাঁর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোন গুণ নেই, তিনি নির্গুণ, তিনি অলিঙ্গঃ।]

 

 

ন সন্দৃশে তিষ্ঠতি রূপমস্য, ন চক্ষুষা পশ্যতি কশ্চনৈনম্‌।

হৃদা মনীষা মনসাভিক্লৃপ্তো য এতদ্বিদুরমৃতাস্তে ভবন্তি।। ২/৩/৯

ন সন্দৃশে তিষ্ঠতি রূপম্‌ অস্য, ন চক্ষুষা পশ্যতি কঃ চন এনম্‌।

হৃদা মনীষা মনসা অভিক্লৃপ্তো য এতৎ বিদুঃ অমৃতাঃ তে ভবন্তি।।

তাঁর প্রকৃত স্বরূপ আমাদের প্রত্যক্ষ দৃষ্টির বিষয় নয়, চোখ দিয়ে আমরা তাঁকে দেখতে পাই না। আমাদের নির্মল হৃদয়ের অনুভূতিতে, নিঃসন্দিগ্ধ জ্ঞানে, শুদ্ধ মনে তিনি প্রকাশিত হন। তাঁকে যিনি জানতে পারেন, তিনি অমৃতত্ব লাভ করেন।     

 

যদা পঞ্চাবতিষ্ঠন্তে জ্ঞানানি মনসা সহ।

বুদ্ধিশ্চ ন বিচেষ্টতি তামাহুঃ পরমাং গতিম্‌।। ২/৩/১০

যদা পঞ্চ অবতিষ্ঠন্তে জ্ঞানানি মনসা সহ।

বুদ্ধিঃ চ ন বিচেষ্টতি তাম্‌ আহুঃ পরমাম্‌ গতিম্‌।। ২/৩/১০

যে অবস্থায় মনের সঙ্গে পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় নিশ্চল অবস্থান করে, বুদ্ধিও স্বতন্ত্র বিষয়ে প্রবৃত্ত হয় না, সেই অবস্থাকে পণ্ডিতগণ পরমাগতি বলেন। 

 

তাং যোগমিতি মন্যন্তে স্থিরামিন্দ্রিয়ধারণাম্‌।

অপ্রমত্তস্তদা ভবতি যোগো হি প্রভবাপ্যয়ৌ।। ২/৩/১১

তাম্‌ যোগম্‌ ইতি মন্যন্তে স্থিরাম্‌ ইন্দ্রিয়ধারণাম্‌।

অপ্রমত্তঃ তদা ভবতি যোগঃ হি প্রভবাপ্যয়ৌ।।

এই অচঞ্চল ইন্দ্রিয়ধারণাকে যোগীগণ যোগ মনে করেন, সেই সময় সমাহিত ভাব উপস্থিত হয়। (কিন্তু সর্বদা নয়, কারণ) যোগভাবেরও বিকাশ ও বিনাশ আছে।  

 

নৈব বাচা ন মনসা প্রাপ্তুং শক্যো ন চক্ষুষা।

অস্তীতি ব্রুবতোঽন্যত্র কথং তদুপলভ্যতে।। ২/৩/১২

ন এব বাচা ন মনসা প্রাপ্তুং শক্যো ন চক্ষুষা।

অস্তি ইতি ব্রুবতঃ অন্যত্র কথম্‌ তৎ উপলভ্যতে।।

পরমাত্মাকে কথায় জানা যায় না, মন দিয়ে কিংবা চোখ দিয়েও জানতে পারা যায় না। “তিনি আছেন” এই কথা যাঁরা বলেন, তাঁরা ছাড়া অন্য লোক তাঁকে কী ভাবে উপলব্ধি করবে?

 

অস্তীত্যেবোপলব্‌ধব্যস্তত্ত্বভাবেন চোভয়োঃ ।

অস্তীত্যেবোপলব্‌ধস্য তত্ত্বভাবঃ প্রসীদতি।। ২/৩/১৩

অস্তি ইতি এব উপলব্ধব্যঃ তত্ত্বভাবেন চ উভয়োঃ ।

অস্তি ইতি এব উপলব্ধস্য তত্ত্বভাবঃ প্রসীদতি।।

তিনি আছেন” এই ভাবে তাঁকে উপলব্ধি করতে হবে, তত্ত্বভাবেও তাঁকে উপলব্ধি করতে হবে। এই উভয় ভাবেই “তিনি আছেন” এই তত্ত্বটি যিনি উপলব্ধি করেছেন, তাঁর কাছে ব্রহ্মের স্বরূপ প্রকাশিত হয়।

[আত্মাকে প্রথমে “সৎ” অর্থাৎ বুদ্ধি ও মনের উপাধিযুক্ত ভাবেই উপলব্ধি করতে হবে, এই ভাবকে আত্মার সোপাধিক ভাব বলা হয়। আত্মার উপাধিহীন বিকারহীন যে ভাব, তাকেই তত্ত্বভাব অথবা নিরুপাধিক ভাব বলা হয়। এই উভয় ভাবের মধ্যে প্রথমতঃ সোপাধিক ভাবে আত্মার অস্তিত্ব উপলব্ধি করার পর, তাঁর নিরুপাধিক তত্ত্বভাবের উপলব্ধি আসে। (শংকরভাষ্য)]      

 

 

যদা সর্বে প্রমুচ্যন্তে কামা যেঽস্য হৃদি শ্রিতাঃ।

অথ মর্ত্যোঽমৃতো ভবত্যত্র ব্রহ্ম সমশ্নুতে।। ২/৩/১৪

যদা সর্বে প্রমুচ্যন্তে কামা যে অস্য হৃদি শ্রিতাঃ।

অথ মর্ত্যঃ অমৃতঃ ভবতি অত্র ব্রহ্ম সমশ্নুতে।।

মানুষের মনে আশ্রিত যত কামনা যখন মন থেকে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়, তখনই মরণশীল মানুষের অমৃতলাভ হয়, তখন এই দেহেই ব্রহ্মের উপলব্ধি আসে। 

 

যদা সর্বে প্রভিদ্যন্তে হৃদয়েস্যেহ গ্রন্থয়ঃ।

অথ মর্ত্যোঽমৃতো ভবত্যেতাবদ্ধ্যনুশাসনম্‌।। ২/৩/১৫

যদা সর্বে প্রভিদ্যন্তে হৃদয়েস্য ইহ গ্রন্থয়ঃ।

অথ মর্ত্যঃ অমৃতঃ ভবতি এতাবৎ হি অনুশাসনম্‌।।

এই জীবনেই মনের সকল বন্ধন যখন নিঃশেষে ছিন্ন হয়, তখন মরণশীল মানুষ অমৃতলাভ করে, সকল বেদান্তের এই উপদেশ।

 

শতঞ্চৈকা চ হৃদয়স্য নাড্যস্তাসাং মূর্ধানমভিনিঃসৃতৈকা

তয়োর্ধ্বমায়ন্নমৃতত্বমেতি বিষ্বঙ্‌ঙন্যা উৎক্রমণে ভবন্তি।।

২/৩/১৬

শতম্‌ চ একা চ হৃদয়স্য নাড্যঃ তাসান্‌  মূর্ধানম্‌ অভিনিঃসৃতা একা।

তয়া ঊর্ধ্বম্‌ আয়ন্‌ অমৃ্তত্বম্‌ এতি বিষ্বক্‌ অন্যাঃ উৎক্রমণে ভবন্তি।।

মানুষের হৃদয় থেকে নিঃসৃত একশত এক নাড়ি আছে। তার মধ্যে একটি নাড়ি (সুষুম্না) মূর্ধা (ব্রহ্মরন্ধ্র) ভেদ করে বের হয়েছে। মৃত্যুকালে সাধক এই নাড়িপথে ঊর্ধে উঠে অমৃতত্ত্ব লাভ করে, কিন্তু অন্যান্য নাড়ি পথে সংসার-গতি পায়।    

 

অঙ্গুষ্ঠমাত্রঃ  পুরুষোঽন্তরাত্মা সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ।

তং স্বাচ্ছরীরাৎ প্রবৃহেন্মুঞ্জাদিবেষীকাং ধৈর্যেণ।

তং বিদ্যাচ্ছুক্রমমৃতং তং বিদ্যাচ্ছুক্রমমৃতমিতি।। ২/৩/১৭

অঙ্গুষ্ঠমাত্রঃ  পুরুষঃ অন্তরাত্মা সদা জনানাম্‌ হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ।

তম্‌  স্বাৎ শরীরাৎ প্রবৃহেৎ মুঞ্জাৎ ইব ইষীকাং ধৈর্যেণ।

তম্‌ বিদ্যাৎ শুক্রম্‌ অমৃতম্‌ তম্‌ বিদ্যাৎ শুক্রম্‌ অমৃতম্‌ ইতি।।

অঙ্গুষ্ঠপরিমাণ অন্তরাত্মা পুরুষ সকলের হৃদয়ে সর্বদা অবস্থান করছেন। মুঞ্জ ঘাসের মধ্যে একটি শীষের মতো তাঁকে নিজের শরীর থেকে সংযত হয়ে পৃথক করবে। এইভাবেই তাঁকে শুদ্ধ অমৃতব্রহ্ম  জানবে, ইনিই সেই শুদ্ধ অমৃত ব্রহ্ম।

 

মৃত্যুপ্রোক্তাং নচিকেতোঽথ লব্‌ধ্বা

বিদ্যামেতাং যোগবিধিং চ কৃৎস্নম্‌।

ব্রহ্মপ্রাপ্তো বিরজোঽভূদ্বিমৃত্যুরন্যোঽপ্যেবং

যো বিদধ্যাত্মমেব।। ২/৩/১৮

মৃত্যুপ্রোক্তাং নচিকেতঃ অথ লব্‌ধ্বা

বিদ্যাম্‌ এতাম্‌ যোগবিধিম্‌ চ কৃৎস্নম্‌।

ব্রহ্মপ্রাপ্তঃ বিরজঃ অভূৎ বিমৃত্যুঃ অন্যঃ অপি এবং

যঃ বিৎ অধ্যাত্মম্‌ এব।।

এরপর যমরাজের বলা এই ব্রহ্মবিদ্যা এবং সম্পূর্ণ যোগবিধি জেনে, নচিকেতা ব্রহ্মকে লাভ করলেন এবং নির্মল চিত্ত হয়ে অমৃতত্ব লাভ করলেন। অন্য যে কেউ যদি এইভাবে আত্মতত্ত্ব উপলব্ধি করেন, তিনিও একই ফল লাভ করেন। 

 

সমাপ্ত দ্বিতীয় অধ্যায় – তৃতীয় বল্লী

 

ওঁ সহ নাববতু, সহ নৌ ভুনক্তু, সহ বীর্যং করবাবহৈ তেজস্বি নাবধীতমস্তু,

মা বিদ্বিষাবহৈ।।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।

ওঁ সহ নৌ অবতু, সহ নৌ ভুনক্তু, সহ বীর্যং করবাবহৈ তেজস্বি নৌ অধীতম্‌ অস্তু,

মা বিদ্বিষাবহৈ।।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।

আমাদের দুজনকে তিনি সমভাবে রক্ষা করুন, দুজনকেই সমভাবে (জ্ঞান) লাভ করান, আমাদের উভয়কেই (জ্ঞানলাভের) উপযুক্ত করে তুলুন। আমাদের উভয়ের কাছেই লব্ধজ্ঞান যেন তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। (আমরা যেন পরষ্পরের প্রতি) বিদ্বেষ না করি।  ওঁ শান্তি, সকল বিঘ্নের শান্তি হোক।


  সমাপ্ত কঠোপনিষদ 

..০০..

কৃতজ্ঞতাঃ 

উপনিষদঃ শ্রীযুক্ত অতুলচন্দ্র সেন 

উপনিষদ গ্রন্থাবলীঃ স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত  


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন পোস্টগুলি

সুরক্ষিতা - পর্ব ১৪

  ১৪   ছবি রান্নাঘরে চলে যেতে শুভময়ীদেবী আরাম করে কফির মাগে চুমুক দিলেন। পাটা ছড়িয়ে দিলেন, বারান্দার রেলিংয়ের ধাপিতে। বারান্দার বাইরে একটা...