|
১
|
|
শ্রীভগবানুবাচ
ময্যাসক্তমনাঃ
পার্থ যোগং যুঞ্জন্মদাশ্রয়ঃ।
অসংশয়ং
সমগ্রং মাং যথা জ্ঞাস্যসি তচ্ছৃণু।।
|
শ্রীভগবান
উবাচ
ময়ি
আসক্তমনাঃ পার্থ যোগং যুঞ্জন্ মৎ আশ্রয়ঃ।
অসংশয়ং
সমগ্রং মাং যথা জ্ঞাস্যসি তৎ শৃণু।।
|
শ্রীভগবান বললেন – হে পার্থ,
আমার প্রতি পূর্ণ অনুরাগে, আমার একান্ত শরণাপন্ন হয়ে, যোগ সাধনার যে প্রক্রিয়ায়,
আমার আত্মাকে পূর্ণস্বরূপে সন্দেহাতীত উপলব্ধি করা সম্ভব, এখন সেটাই শোনো।
|
|
২
|
|
জ্ঞানং
তেঽহং সবিজ্ঞানমিদং বক্ষ্যাম্যশেষতঃ।
যজ্জ্ঞাত্বা
নেহ ভূয়োঽন্যজ্ জ্ঞাতব্যমবশিষ্যতে।।
|
জ্ঞানং
তে অহং সবিজ্ঞানম্ ইদং বক্ষ্যামি অশেষতঃ।
যৎ
জ্ঞাত্বা ন ইহ ভূয়ঃ অন্যৎ জ্ঞাতব্যম্ অবশিষ্যতে।।
|
আমি তোমাকে আমার এই পরমব্রহ্ম
অনুভবের বিশেষ জ্ঞানের কথা সম্পূর্ণ বর্ণনা করব। যে জ্ঞানের কথা উপলব্ধি করতে
পারলে, এই জগতে অন্য আর কিছুই জানার বাকি থাকে না।
|
|
৩
|
|
মনুষ্যাণাং
সহস্রেষু কশ্চিদ্ যততি সিদ্ধয়ে।
যততামপি
সিদ্ধানাং কশ্চিন্মাং বেত্তি তত্ত্বতঃ।।
|
মনুষ্যাণাং
সহস্রেষু কশ্চিৎ যততি সিদ্ধয়ে।
যততাম্
অপি সিদ্ধানাং কশ্চিৎ মাং বেত্তি তত্ত্বতঃ।।
|
হাজার মানুষের মধ্যে
খুব অল্প লোকই আত্মজ্ঞানের জন্যে চেষ্টা করে থাকেন। আবার সেই অল্প লোকের মধ্যেও
ক্বচিৎ কেউ আমার আত্মার স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন।
|
|
৪
|
|
ভূমিরাপোঽনলো
বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ।
অহংকার
ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা।।
|
ভূমিঃ
আপঃ অনলঃ বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিঃ এব চ।
অহংকার
ইতি ইয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিঃ অষ্টধা।।
|
ভূমি, জল, অগ্নি,
বাতাস, আকাশ, মন, বুদ্ধি এবং অহংকার – এই আটভাগে আমার ঐশ্বরী প্রকৃতি বিভক্ত।
|
|
৫
|
|
অপরেয়মিতস্ত্বন্যাং
প্রকৃতিং বিদ্ধি মে পরাম্।
জীবভূতাং
মহাবাহো যয়েদং ধার্যতে জগৎ।।
|
অপরা
ইয়ম ইতঃ তু অন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধি মে পরাম্।
জীবভূতাং
মহাবাহো যয়া ইদং ধার্যতে জগৎ।।
|
এই যে আটটি প্রকৃতির
কথা বললাম, এগুলি আমার নিকৃষ্ট স্বরূপ। এর বাইরে সমস্ত জীবের চেতনা স্বরূপ আমার
যে উত্তম প্রকৃতি, হে মহাবীর, তার কথা শোনো। আমার এই প্রকৃতিই জগৎকে ধারণ করে
আছে।
|
|
৬
|
|
এতদ্যোনীনি
ভূতানি সর্বাণীত্যুপধারয়।
অহং
কৃৎস্নস্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয়স্তথা।।
|
এতৎ-যোনীনি
ভূতানি সর্বাণী তু উপধারয়।
অহং
কৃৎস্নস্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয়ঃ তথা।।
|
ধারণা করো যে, আমার এই
উভয় প্রকৃতি থেকেই জগতের সমস্ত জড় ও জীবের সৃষ্টি হয়েছে। অতএব আমিই এই জগতের
স্রষ্টা এবং আমিই এই জগতের প্রলয়।
|
|
৭
|
|
মত্তঃ
পরতরং নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয়।
ময়ি
সর্বমিদং প্রোতং সূত্রে মণিগণা ইব।।
|
মত্তঃ
পরতরং না অন্যৎ কিঞ্চিৎ অস্তি ধনঞ্জয়।
ময়ি
সর্বম্ ইদং প্রোতং সূত্রে মণিগণা ইব।।
|
হে
ধনঞ্জয়, আমার থেকে শ্রেষ্ঠ অন্য আর কিছুই হতে পারে না। সুতোয় গাঁথা মণির মতো, এই
জগতের সবকিছু আমার স্বরূপেই বাঁধা আছে।
|
|
৮
|
|
রসোঽহমপ্সু
কৌন্তেয়ঃ প্রভাস্মি শশিসূর্যয়োঃ।
প্রণবঃ
সর্ববেদেষু শব্দঃ খে পৌরুষং নৃষু।।
|
রসঃ
অহম্ অপ্সু কৌন্তেয়ঃ প্রভাস্মি শশিসূর্যয়োঃ।
প্রণবঃ
সর্ববেদেষু শব্দঃ খে পৌরুষং নৃষু।।
|
হে
কুন্তীপুত্র, আমিই জলের তারল্য, আমিই সূর্য ও চন্দ্রের জ্যোতি, চারবেদে আমিই
ওঁকার, আকাশে আমিই শব্দ এবং মানুষের মধ্যে আমিই পৌরুষ।
|
|
৯
|
|
পুণ্যো
গন্ধঃ পৃথিব্যাঞ্চ তেজশ্চাস্মি বিভাবসৌ।
জীবনং
সর্বভূতেষু তপশ্চাস্মি তপস্বষু।।
|
পুণ্য
গন্ধঃ পৃথিব্যাঞ্চ তেজঃ চ অস্মি বিভাবসৌ।
জীবনং
সর্বভূতেষু তপঃ চ অস্মি তপস্বষু।।
|
পৃথিবীতে
আমি পবিত্র গন্ধ, আমিই অগ্নির দাহিকা শক্তি, সমস্ত জীবের আমিই প্রাণস্বরূপ এবং
আমিই তপস্বীগণের তপস্যা।
|
|
১০
|
|
বীজং
মাং সর্বভূতানাং বিদ্ধি পার্থ সনাতনম্।
বুদ্ধির্বুদ্ধিমতামস্মি
তেজস্তেজস্বিনামহম্।।
|
বীজং
মাং সর্বভূতানাং বিদ্ধি পার্থ সনাতনম্।
বুদ্ধিঃ
বুদ্ধিমতাম্ অস্মি তেজঃ তেজস্বিনাম্ অহম্।।
|
হে
পার্থ, জেনে রাখো, স্থাবর ও জঙ্গমের আমিই চিরন্তন কারণ, আমিই জ্ঞানীব্যক্তিদের
জ্ঞান এবং তেজস্বীব্যক্তিদের তেজ।
|
|
১১
|
|
বলং
বলবতাং চাহং কামরাগবিবর্জিতম্।
ধর্মাবিরুদ্ধো
ভূতেষু কামোঽস্মি ভররর্ষভ।।
|
বলং
বলবতাং চ অহং কামরাগবিবর্জিতম্।
ধর্ম
অবিরুদ্ধঃ ভূতেষু কামঃ অস্মি ভরতর্ষভ।।
|
হে
ভরতকুলশ্রেষ্ঠ, আমিই বলবান ব্যক্তির কামরাগহীন শক্তি, আবার আমিই সর্বজীবের
জীবধর্ম পালনের কামনা।
[না
পাওয়া জিনিষ পাওয়ার ইচ্ছাকে বলে কাম, আর পাওয়া বস্তু অস্থায়ী জেনেও, তার প্রতি
আগ্রহের নাম রাগ। দেহধারণ ও বংশরক্ষার জন্যে যে কামনা, সে কামনা ধর্মবিরুদ্ধ নয়,
সেটা জীবধর্ম, জীবধর্ম না থাকলে জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যায়।]
|
|
১২
|
|
যে
চৈব সাত্ত্বিকা ভাবা রাজসাস্তামসাশ্চ যে।
মত্ত
এবেতি তান্ বিদ্ধি ন ত্বহং তেষু তে ময়ি।।
|
যে
চ এব সাত্ত্বিকা ভাবা রাজসাঃ তামসাঃ চ যে।
মত্ত
এব ইতি তান্ বিদ্ধি ন ত্বহং তেষু তে ময়ি।।
|
জেনে
রাখো, আমার থেকেই জীবের সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক ভাবের উৎপত্তি হয়। আমি এদের বশীভূত না হলেও, এই
সমস্তভাব আমার অধীন।
|
|
১৩
|
|
ত্রিভির্গুণময়ৈর্ভাবৈরিভিঃ
সর্বমিদং জগৎ।
মোহিতং
নাভিজানাতি মামেভ্যঃ পরমব্যয়ম্।।
|
ত্রিভিঃ
গুণময়ৈঃ ভাবৈঃ এভিঃ সর্বম্ ইদং জগৎ।
মোহিতং
না অভিজানাতি মামেভ্যঃ পরম্ অব্যয়ম্।।
|
এই
তিনগুণের মায়ায় সমস্ত জীব মুগ্ধ ও বিভ্রান্ত হয়, এবং তার ফলে এই তিনগুণের অতীত
আমার পরম নির্বিকার স্বরূপ তারা উপলব্ধি করতে পারে না। [ত্রিগুণ অর্থাৎ সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃগুণ - এই গুণের কথা সবিস্তারে পড়া যাবে গীতার সপ্তদশ অধ্যায়ঃ শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগ যোগে।]
|
|
১৪
|
|
দৈবী
হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া।
মামেব
যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে।।
|
দৈবী
হি এষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া।
মাম্
এব যে প্রপদ্যন্তে মায়াম্ এতাং তরন্তি তে।।
|
সত্ত্ব,
রজ ও তম, এই তিনগুণের প্রভাবে, আমারই সৃষ্টি করা অলৌকিক মায়াকে অতিক্রম করা
দুঃসাধ্য। যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আমার শরণাপন্ন হয়, তার পক্ষেই এই মায়া অতিক্রম
করা সম্ভব।
|
|
১৫
|
|
ন
মাং দুষ্কৃতিনো মূঢ়াঃ প্রপদ্যন্তে নরাধমাঃ
মায়য়াপহৃতজ্ঞানা
আসুরং ভাবমাশ্রিতাঃ।।
|
ন
মাং দুষ্কৃতিনো মূঢ়াঃ প্রপদ্যন্তে নরাধমাঃ
মায়য়া
অপহৃতজ্ঞানা আসুরং ভাবম্ আশ্রিতাঃ।।
|
এই মায়ার
প্রভাবে, দুর্জন ও মোহগ্রস্ত ইতর জনেরা বিবেকবুদ্ধি হারিয়ে অসুরের মতো ব্যবহার
করে, কিন্তু তারা আমার ভজনা করে
না।
|
|
১৬
|
|
চতুর্বিধা
ভজন্তে মাং জনাঃ সুকৃতিনোঽর্জুন।
আর্তো
জিজ্ঞাসুরর্থার্থী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ।।
|
চতুর্বিধাঃ
ভজন্তে মাং জনাঃ সুকৃতিনঃ অর্জুন।
আর্তঃ
জিজ্ঞাসুঃ অর্থ-অর্থী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ।।
|
হে
ভরতকুলশ্রেষ্ঠ অর্জুন, রোগশোকে অভিভূত আর্তজন, আত্মজ্ঞানের জন্য উৎসুক, সম্পদের
প্রত্যাশী ও ব্রহ্মজ্ঞ – এই চার প্রকৃতির ব্যক্তি আমাকে ভজনা ক’রে সুকৃতি করেন।
|
|
১৭
|
|
তেষাং
জ্ঞানী নিত্যযুক্ত একভক্তির্বিশিষ্যতে।
প্রিয়ো
হি জ্ঞানিনোঽত্যর্থমহং স চ মম প্রিয়ঃ।।
|
তেষাং
জ্ঞানী নিত্যযুক্তঃ একভক্তিঃ বিশিষ্যতে।
প্রিয়ঃ
হি জ্ঞানিনঃ অত্যর্থম্ অহং স চ মম প্রিয়ঃ।।
|
এই চার প্রকৃতির
ব্যাক্তিদের মধ্যে আমাতে একনিষ্ঠ এবং সর্বদা আমাতে ভক্তিযুক্ত জ্ঞানীই
সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ আমি জ্ঞানীব্যক্তির অত্যন্ত প্রিয় এবং তিনিও আমার প্রিয়।
|
|
১৮
|
|
উদারাঃ
সর্ব এবৈতে জ্ঞানী ত্বাত্মৈব মে মতম্।
আস্থিতঃ
স হি যুক্তাত্মা মামেবানুত্তমাং গতিম্।
|
উদারাঃ
সর্ব এব এতে জ্ঞানী তু আত্মা এব মে মতম্।
আস্থিতঃ
স হি যুক্তা আত্মা মাম্ এব অনুত্তমাং গতিম্।
|
এঁদের
সকলেই মহান ও আমার প্রিয়, কিন্তু জ্ঞানী আমার আত্মা স্বরূপ এবং আমার সঙ্গে তাঁর
কোন প্রভেদ নেই, কারণ শ্রেষ্ঠ সাধনায়, জ্ঞানী আমাতেই তাঁর সবকিছু সমর্পণ করে
থাকেন।
|
|
১৯
|
|
বহূনাং
জন্মনামন্তে জ্ঞানবান্ মাং প্রপদ্যতে।
বাসুদেবঃ
সর্বমিতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ।।
|
বহূনাং
জন্মনাম্ অন্তে জ্ঞানবান্ মাং প্রপদ্যতে।
বাসুদেবঃ
সর্বম ইতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ।।
|
জ্ঞানী
আমার অত্যন্ত প্রিয়, তার কারণ বহুজন্মের একাগ্র সাধনায় জ্ঞানী ব্যক্তি ‘এই নিখিল
বিশ্বই বাসুদেব’ এই অনুভবে আমার ভজনা
করেন। এই প্রকৃতির মহাপুরুষ খুবই দুর্লভ।
|
|
২০
|
|
কামৈস্তৈস্তৈর্হৃতজ্ঞানাঃ
প্রপদ্যন্তেঽন্যদেবতা।
তং
তং নিয়মমাস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া।।
|
কামৈঃ
তৈঃ তৈঃ হৃতজ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তে অন্যদেবতা।
তং
তং নিয়মম্ আস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া।।
|
অনেক
বিবেক বুদ্ধিহীন ব্যক্তি পুত্র, বিত্ত এবং বিষয়ের কামনায়, নানান জপ ও উপবাসের
নিয়ম পালন করেন এবং নিজের স্বভাব অনুসারে অন্য অনেক দেবতার পুজা করেন।
|
|
২১
|
|
যো
যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।
তস্য
তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্।।
|
যঃ
যঃ যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়া অর্চিতুম্ ইচ্ছতি।
তস্য
তস্য অচলাং শ্রদ্ধাং তাম্ এব বিদধামি অহম্।।
|
যে যে
ভক্ত যে যে প্রতিমায় শ্রদ্ধার সঙ্গে পুজা অর্চনা করেন, আমি সেই সেই ভক্তদের সেই
সেই প্রতিমার প্রতি অচলা ভক্তি প্রদান করে থাকি।
|
|
২২
|
|
স
তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।
লভতে
চ ততঃ কামান্ ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্।।
|
স
তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তঃ তস্য আরাধনম্ ঈহতে।
লভতে
চ ততঃ কামান্ ময়া এব বিহিতান্ হি তান্।।
|
সেই ভক্ত
পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর প্রিয় যে দেবতার আরাধনা করেন, আমারই বিধানে সেই ভক্ত
তাঁর প্রিয় দেবতার থেকে কাম্য বস্তু লাভ করে থাকেন।
|
|
২৩
|
|
অন্তবত্তু
ফলং তেষাং তদ্ভবত্যল্পমেধসাম্।
দেবান্
দেবযজো যান্তি মদ্ভক্তা যান্তি মামপি।।
|
অন্তবৎ
তু ফলং তেষাং তৎ ভবতি অল্পমেধসাম্।
দেবান্
দেবযজঃ যান্তি মৎ ভক্তা যান্তি মামপি।।
|
কিন্তু
অল্পবুদ্ধি ভক্তদের এই যে ফল লাভ, তা অস্থায়ী হয়। দেবতার উপাসক ভক্তেরা দেবতাকেই
পেয়ে থাকেন। কিন্তু একই প্রচেষ্টায় আমার ভক্তগণ আমাতেই মিলিত হয়ে থাকেন।
|
|
২৪
|
|
অব্যক্তং
ব্যক্তিমাপন্নং মন্যন্তে মামবুদ্ধয়ঃ।
পরং
ভাবমজানন্তো মমাব্যয়মনুত্তমম্।।
|
অব্যক্তং
ব্যক্তিম্ আপন্নং মন্যন্তে মাম্ অবুদ্ধয়ঃ।
পরং
ভাবম্ অজানন্তঃ মম অব্যয়ম্ অনুত্তমম্।।
|
অল্পবুদ্ধি
ব্যক্তিগণ আমার অপূর্ব ও অক্ষয় পরমাত্মস্বরূপ উপলব্ধি করতে না পেরে, আমাকে
ব্যক্তিভাব স্বরূপ দেহধারী মনে করে।
|
|
২৫
|
|
নাহং
প্রকাশঃ সর্বস্য যোগমায়াসমাবৃতাঃ।
মূঢ়োঽয়ং
নাভিজানাতি লোকো মামজমব্যয়ম্।
|
না
অহং প্রকাশঃ সর্বস্য যোগমায়া-সমাবৃতাঃ।
মূঢ়ঃ
অয়ং না অভিজানাতি লোকঃ মাম্ অজম্ অব্যয়ম্।
|
আমি
যোগমায়ার আড়ালে থাকি, সকলের কাছে প্রকাশ হই না। সেই কারণে, মায়ায় মুগ্ধ এই জগতের
লোক জন্মমৃত্যুর অতীত আমার এই অক্ষয় স্বরূপও জানতেও পারে না।
|
|
২৬
|
|
বেদাহং
সমতীতানি বর্তমানানি চার্জুন।
ভবিষ্যাণি
চ ভূতানি মাং তু বেদ ন কশ্চন।।
|
বেদ
অহং সমতীতানি বর্তমানানি চ অর্জুন।
ভবিষ্যাণি
চ ভূতানি মাং তু বেদ ন কঃ চন।।
|
হে
অর্জুন, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এই তিন কালের সমস্ত ভূত অর্থাৎ জীবের বিষয় আমার
জানা আছে, কিন্তু আমার স্বরূপ কেউ জানতে পারে না।
|
|
২৭
|
|
ইচ্ছাদ্বেষসমুত্থেন
দ্বন্দ্বমোহেন ভারত।
সর্বভূতানি
সম্মোহং সর্গে যান্তি পরন্তপ।।
|
ইচ্ছা-দ্বেষ-সমুত্থেন
দ্বন্দ্ব-মোহেন ভারত।
সর্বভূতানি
সম্মোহং সর্গে যান্তি পরন্তপ।।
|
হে
শত্রুদমন অর্জুন, আসক্তি আর বিদ্বেষের দ্বিধায় জন্মকাল থেকেই সমস্ত জীব
মোহগ্রস্ত হয়ে থাকে।
[প্রিয়
বিষয় পাওয়ার ইচ্ছে থেকে আসে আসক্তি, আর অপ্রিয় বিষয়ে আসে বিদ্বেষ। এই দ্বিধা
থেকেই মানুষ সুখ-দুঃখ, আনন্দ-শোকের মোহে বাঁধা পড়ে।]
|
|
২৮
|
|
যেষাং
ত্বন্তগতং পাপং জনানাং পুণ্যকর্মণাম্।
তে
দ্বন্দ্বমোহনির্মুক্তা ভজন্তে মাং দৃঢ়ব্রতা।।
|
যেষাং
তু অন্তগতং পাপং জনানাং পুণ্যকর্মণাম্।
তে
দ্বন্দ্ব-মোহ-নির্মুক্তাঃ ভজন্তে মাং দৃঢ়ব্রতা।।
|
কিন্তু
যে সকল পুণ্যকর্মা ব্যক্তির পাপ আর অবশিষ্ট নেই, চিত্ত থেকে দ্বন্দ্ব এবং এই মোহ
দূর হয়ে গিয়েছে, তাঁরা একনিষ্ঠ কঠিন ব্রতে আমার ভজনা করেন।
|
|
২৯
|
|
জরামরণমোক্ষায়
মামাশ্রিত্য যতন্তি যে।
তে
ব্রহ্ম তদ্ বিদুঃ কৃৎস্নমধ্যাত্মং কর্ম চাখিলম্।।
|
জরা-মরণ-মোক্ষায়
মাম্ আশ্রিত্য যতন্তি যে।
তে
ব্রহ্ম তদ্ বিদুঃ কৃৎস্নম্ অধ্যাত্মম্ কর্ম চ অখিলম্।।
|
যাঁরা
জরা ও মৃত্যু থেকে মুক্তির ইচ্ছায়, আমার শরণাগত হয়ে সাধনা করেন, তিনি পরম
ব্রহ্ম, সমগ্র অধ্যাত্ম এবং নিখিল কর্মের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন।
|
|
৩০
|
|
সাধিভূতাধিদৈবং
মাং সাধিযজ্ঞং চ যে বিদুঃ।
প্রয়াণকালেঽপি
চ মাং তে বিদুর্যুক্তচেতসঃ।।
|
স-অধিভূত-অধিদৈবং
মাং স-অধিযজ্ঞং চ যে বিদুঃ।
প্রয়াণকালে
অপি চ মাং তে বিদুঃ যুক্ত-চেতসঃ।।
|
যাঁরা
অধিভূত, অধিদৈব এবং অধিযজ্ঞের সহিত আমাকে উপলব্ধি করতে পারেন, সেই সব
সমাহিতচিত্ত ব্যক্তি মৃত্যুর সময়েও আমায় ভুলতে পারেন না। [অধিভূত - আমাদের এই নশ্বর শরীর যে পঞ্চভূতের অধিষ্ঠান, সেই পঞ্চভূতও প্রকৃতপক্ষে পরম ব্রহ্মাই। অধিদৈব - অধিষ্ঠাতা দেবতা, দেবতাত্মা ব্রহ্ম - হিরণ্যগর্ভ, অর্থাৎ আমরা যে যে দেব-দেবী প্রতিমার ধ্যান বা পূজা করি, তাঁদের সকলেরই আত্মা পরমব্রহ্ম। অধিযজ্ঞ - যে দেবতার উদ্দেশ্যেই আমরা যজ্ঞ সংকল্প করি না কেন, পরম ব্রহ্মই সেই যজ্ঞের প্রবর্তক ও ফলদাতা।]
|