মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

ধর্মাধর্ম - ৩/১

 


["ধর্মাধর্ম"-এর দ্বিতীয় পর্বের শেষাংশ পড়ে নিতে পারেন এই সূত্র থেকে ধর্মাধর্ম - ২/৬ (শেষাংশ)


তৃতীয় পর্ব - প্রথম পর্বাংশ

(৬০০ বিসিই থেকে ০ বিসিই)

 

প্রাককথা

৬০০ থেকে ০ বিসিই সময়কালটা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। অনেক ঐতিহাসিক অন্য বেশ কিছু যুগকে “সুবর্ণ যুগ” বলে সনাক্ত করেছেন, কিন্তু আমার মনে হয় (আমি ঐতিহাসিক নই) এই যুগটিই ভারতের সুবর্ণ যুগ। অন্ততঃ প্রথম সুবর্ণ যুগ তো বটেই। এই সময় কালেই আমাদের দেশ সামগ্রিক ভাবে ভারত হয়ে উঠেছিল এবং ভারতের অথবা ভারতবাসীর স্বকীয়তা - তাকে যদি ভারতীয়ত্ব (Indianism) নাম দিই - সুস্পষ্ট রূপ নিতে শুরু করেছিল এবং অচিরেই নিজেকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল। শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, বহির্বিশ্বেও! এই ভারতীয়ত্বের জন্যেই তো আমরা আজও গর্ব অনুভব করি – যাঁরা করেন না তাঁরা বেচারা।

কেন আমি এই সময়কালকে আমাদের সুবর্ণযুগ বলছি – সে আলোচনায় বিশদে যাওয়ার আগে, খুব সংক্ষেপে মানুষের মস্তিষ্কের বিচিত্র চিন্তাভাবনার জগৎটার দিকে একটু নজর দেওয়া যাক।

মানুষের তুলনায় যে কোন প্রাণীর অসহায় শৈশবকাল স্বল্পস্থায়ী হয়। কোন কোন অণ্ডজ শিশুপ্রাণী কয়েকঘন্টার মধ্যে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শিশুরাও জন্মানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই দাঁড়াতে এবং নড়বড়ে পায়ে হেঁটে চলে বেড়াতে পারে। তবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে সময় লাগে দেড় থেকে দুবছর পর্যন্ত। সেখানে মানুষ-শিশুদের দাঁড়াতে এবং হেঁটে চলে বেড়াতেই সময় লাগে প্রায় বছর দেড়েক। স্পষ্ট কথা বলতে দুই থেকে তিন বছর। আর স্বাবলম্বী হতে লাগে কমপক্ষে ষোলো থেকে কুড়ি বছর!

মানুষের শিশুর এই বেড়ে ওঠার বয়েসগুলি তার ভবিষ্যৎ জীবনের ভাবনাচিন্তা এবং কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দেয়। অন্য স্তন্যপায়ী শিশুদের এই ভাবনা চিন্তার জগৎটা অত্যন্ত সীমিত এবং প্রাকৃতিক বোধ নিয়েই তাদের ভবিষ্যৎ জীবন দিব্যি চলে যায়। স্বাভাবিক এই বোধ সকল প্রাণীর ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেগুলি হল, বেঁচে থাকতে হলে খাদ্য চাই, খাদ্য সংগ্রহের জন্যে প্রচেষ্টা চাই, আত্মরক্ষার জন্যে সচেতন হওয়া চাই, বিশ্রামের জন্যে কোথাও একটু আশ্রয় চাই, নিজের জিনকে অমর রাখতে পরবর্তী প্রজন্ম সৃষ্টি করা চাই, ইত্যাদি। সাধারণ এই বোধসমূহ ছাড়াও মানুষের শিশুকে আরও যে বিচিত্র এবং সীমাহীন বোধ আয়ত্ব করতে হয়, তার পিছনে প্রকৃতির কোন হাত নেই। সেই বোধ মানুষের নিজেরই সৃষ্টি এবং অসাধারণ সেই বোধ মোটামুটি আয়ত্ব না হওয়া পর্যন্ত সে নাবালক থাকে। সাবালক হওয়ার পথে তাকে পরিবার, পরিজন, প্রতিবেশী এবং সমাজ থেকে শিক্ষা নিয়ে যেতে হয় অহরহ। সেই শিক্ষা গ্রহণ করতেই তার জীবনের আয়ু থেকে প্রায় বছর কুড়ি ব্যয় করতে হয়।

মানুষের শৈশব ও বাল্য চেতনায় যে শিক্ষার বীজ রোপিত হয় – কৈশোর ও তারুণ্যে নিজের মস্তিষ্কের রসায়নে সেই শিক্ষাতেই সে তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ খুঁজতে থাকে। কেউ হয় অত্যাচারী এবং বিলাসী রাজা, কেউ মানবদরদী সমাজ-সংগঠক, কেউ দার্শনিক, কেউ দারুণ যুদ্ধবাজ, আর অধিকাংশ হয়, আমাদের মতো থোড়-বড়ি-খাড়া জীবনের অধিকারী। মস্তিষ্কের এই বিশেষ রসায়নের ফর্মুলাটি আজও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।  

আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, বৃহত্তর সমাজে যখনই ভীষণ বিশৃঙ্খলা, মাৎস্যন্যায় এবং অবক্ষয়ে সাধারণ মানুষ জেরবার হতে থাকে, ঠিক সেই সময়েই অদ্ভূত চেতনাসম্পন্ন কোন না কোন মানুষের আবির্ভাব ঘটে। তাঁদের স্বচ্ছ ভাবনা-চিন্তায় এবং প্রত্যয়ী আচরণে তাপিত সমাজ স্থিতাবস্থা পায়। এমন ঘটনা শুধু আমাদের দেশের ইতিহাসেই বারবার ঘটেছে এমন নয়, ঘটেছে এই বিশ্বের অন্য সমাজে, অন্য দেশেও। আজকের বিশ্ব জুড়ে, আমাদের এই দেশ জুড়ে, আমাদের এই রাজ্য জুড়ে সামাজিক অবক্ষয়ের যে সার্বিক রূপটি আমরা প্রত্যহ প্রত্যক্ষ করছি। যা দেখে দিনে দিনে আমরা হতাশ হচ্ছি, নৈরাশ্যে ভুগছি। সেই সমাজেও, আমার বিশ্বাস, এমন ঘটনা আবার ঘটবে। কোন পুরাণ-পুরুষ বা অবতার নয় – আমাদের মধ্যে থেকেই এমন এক অসাধারণ মানুষ আসবেন, যিনি আমাদের অন্ধকার থেকে আলোয় যাওয়ার রাস্তা চেনাবেন। যদিও তাঁকে আমরা কয়েকশ বছরের ব্যবধানে অবতার বা দেবাংশ ভেবে আবার অন্ধকারের জগতে ডুব দিয়ে সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে নেমে যেতে থাকব।

ইতিহাসে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি, অন্ততঃ আমাদের দেশে, বহুবার ঘটেছে। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতেও ঘটবে। নচেৎ ইতিহাসচর্চার কোন মানে হয় না।

প্রাককথায় আমার এই প্রসঙ্গ টেনে আনার একটাই উদ্দেশ্য, আমরা যে সময়ের কথা আলোচনা করতে চলেছি, সেই সময়েও আমাদের সমাজে এমনই অবক্ষয় ঘটেছিল এবং ভয়ংকর এক সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছিল। 

   

৩.১.১ নতুন ধর্মমত

অনার্য ভারতে এতদিন কোন নির্দিষ্ট ধর্মমত ছিল না, ছিল না কোন ধর্মীয় তত্ত্বকথা এবং দর্শন। এতদিন ধর্ম বলতে ভারতীয় অনার্য সমাজে যা কিছু চলছিল সবই সাধারণ জীবন থেকে স্বতঃস্ফূর্ত উঠে আসা বিশ্বাস আর আস্থা। সমাজ ব্যবস্থাও গড়ে উঠছিল সেই স্বাভাবিক জীবন-ধর্মের স্ব-ভাবে। অর্থনৈতিক দিক থেকে সমাজে শ্রেণী বিভাগ ছিল – কেউ ছিল অতি সম্পন্ন, কেউ মধ্যবিত্ত আর অধিকাংশই ছিল দরিদ্র। কিন্তু ব্রাহ্মণ্য ধর্মের চাপিয়ে দেওয়া চতুর্বর্ণাশ্রম এবং তার অভূতপূর্ব সৃষ্টিতত্ত্ব, সামাজিক স্থিতাবস্থাকেই নাড়িয়ে দিল। অনার্য মানুষের সম্পূর্ণ সমাজটাই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে লাগল ধীরে ধীরে। এ সময় কয়েকজন আর্য পণ্ডিতও অন্যায্য এই ব্যবস্থাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি, অনেকেরই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর শোনা গেছে বারবার।      

দ্বিতীয় পর্বের শেষ ভাগের ২.৬.২ অধ্যায়ে বলেছি সামাজিক বৈষম্যের উৎকট চিত্র গণসঙ্ঘ পরিচালিত মহাজনপদ এবং জনপদগুলিতে ছিল না। সেখানে ব্রাহ্মণদের প্রতিপত্তি ছিল গৌণ। সেখানে যজ্ঞের এমন বিপুল আয়োজন এবং বাহুল্য ছিল না। আরও বলেছি এই গণসঙ্ঘগুলি আর্যদের অন্যান্য রাজ্য বা মহাজনপদগুলির তুলনায় সব দিক থেকেই অনেকটা দুর্বল ছিল। সেখানকার মানুষদের মনে হয়তো এমন উদ্বেগও ছিল, তাদের দুর্বল জনপদগুলি প্রতিবেশী আগ্রাসী আর্যরাজ্য যে কোনদিন গ্রাস করে নিতে পারে এবং সেক্ষেত্রে তাদের জনপদগুলিও ব্রাহ্মণ্য সমাজের কুক্ষিগত হয়ে যাবে। অতএব তারা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধ ধর্মমতগুলিকেও পরোক্ষ প্রশ্রয় দিতে লাগল এবং হয়তো গোপনে পৃষ্ঠপোষকতাও করছিল।

সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে কিছু সন্ন্যাসী এবং যুক্তিবাদী মানুষ ঘুরে ঘুরে প্রচারে বেরোতেন নগরের হাটে বাজারে, কখনো বা নগর সীমার বাইরে। এই সব জায়গায় তাঁরা ছোট ছোট সভা আহ্বান করতেন, সে সভাস্থলকে বলা হত “কুতূহল-স্থল”। “কুতূহল” হল কৌতূহলের প্রাকৃত, যেখানে কৌতূহল নিরসন হতে পারে, তারই নাম “কুতূহল-স্থল”। সেখানেই তাঁরা তাঁদের মতাদর্শ উপস্থিত সাধারণ মানুষদের সামনে রাখতেন। তাঁদের সকলেরই ভাষা ছিল, সাধারণের সহজবোধ্য প্রাকৃত ভাষা। তাঁরা ব্রাহ্মণ্যধর্মের অবাস্তবতার বিরুদ্ধে তাঁদের দর্শনের বস্তুভিত্তিক চিন্তাভাবনার কথাগুলি সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করতেন[1] 

উল্টোদিকে ব্রাহ্মণ্যবাদ শুধুমাত্র রাজসভা কিংবা পণ্ডিতসভার আলোচ্য বিষয় হতে পারত, কিন্তু সাধারণ জনগণের সামনে কখনও নয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ব্রাহ্মণ্যধর্ম ছিল শুধুমাত্র উচ্চবর্ণীয় মানুষদের জন্য – অগণ্য সাধারণ মূঢ় মানুষের থেকে এই ধর্ম প্রথম থেকেই বিচ্ছিন্ন ছিল। আম জনগণের সামনে “কুতূহল স্থলে” ব্রাহ্মণ্য ধর্মের ব্যাখা করার প্রয়োজনীয়তা উদ্ধত ব্রাহ্মণ্যধর্ম কোনদিন অনুভবই করেনি। 

সে সময়ে ব্রাহ্মণ্য-বিরোধী অনেক মতবাদ এবং তার সমর্থকদের বহু দল গড়ে উঠেছিল। সে দলগুলি কখনো কখনো একজোট হয়েছে, কখনো কখনো ভেঙেও গেছে। কোনো দল বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করে যখন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, তখন অন্যান্য ছোট দলগুলিও সেই দলের আশ্রয় পেয়েছে। এরকমই এক শক্তিশালী দল বা গোষ্ঠীর কথা আগেই বলেছি (২.৬.৫), চার্বাক গোষ্ঠী - যাঁরা লোকায়ত দর্শনের প্রণেতা ও প্রচারক।

চার্বাক গোষ্ঠী ছাড়াও অন্য আরেকটি গোষ্ঠীও তখন সাধারণ জনসমাজে বেশ সমর্থন লাভ করতে পেরেছিল, সেটি আজীবিক গোষ্ঠী। আজীবিক শব্দের অর্থ মনে করা হয় সন্ন্যাস-জীবন, এই সম্প্রদায়ের সকলেই সন্ন্যাসী ছিলেন। জীব কথার অর্থ যার প্রাণ আছে, আর অজীব মানে জড়। জীবদেহ সৃষ্টি হয় অজীব অর্থাৎ জড় বস্তু থেকেই এবং মৃত্যুর পর সেই দেহ আবার জড় হয়ে, জড়ের সঙ্গেই মিশে যায়। এটাই ছিল আজীবিকদের মূল তত্ত্ব। এই গোষ্ঠীর প্রবর্তক ছিলেন গোশালা মক্ষরিপুত্র, যিনি জৈন চব্বিশতম তীর্থংকর ভগবান মহাবীরের শিষ্য বা অন্যমতে বন্ধু ছিলেন। পরবর্তী কালে গোশালা মক্ষরিপুত্র-র সঙ্গে ভগবান মহাবীরের তীব্র মতবিরোধ উপস্থিত হওয়ায় দুজনের মৈত্রী নষ্ট হয়েছিল। শোনা যায় ভগবান বুদ্ধের মৃত্যুর কয়েক বছর আগেই গোশালার মৃত্যু হয়। এই গোষ্ঠীরও নিজস্ব কোন গ্রন্থ বা পুঁথি পাওয়া যায় না, এঁদের সম্পর্কে যা কিছু জানা যায় বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থ বা তাদের সাহিত্যে উল্লেখ থেকে।

আজীবিক সন্ন্যাসীরা “নিয়তি”তে বিশ্বাস করতেন। তাঁরা মনে করতেন, মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু সব কিছুই পূর্বনির্ধারিত এবং নির্দিষ্ট। যেহেতু সব কিছুই পূর্বনির্ধারিত, অতএব একজন মানুষের জীবনে যা যা হবার তা হবেই – সে যদি রাজা হয় কিংবা কপর্দকহীন হয়, তাতে তার ব্যক্তিগত সাফল্য বা ব্যর্থতার কোন স্থান নেই। সবই ভবিতব্য, তার ভাগ্যে এমনই হবার ছিল, তাই হয়েছে। আজীবিক সন্ন্যাসীরা জন্মান্তরে বিশ্বাস করতেন এবং এও বিশ্বাস করতেন, আত্মা তার নির্দিষ্ট ভাগ্য নিয়ে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে থাকে। এই সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা কোন কিছু পাওয়ার আশা – যেমন স্বর্গ বা মুক্তি - নিয়ে তপশ্চর্যা করতেন না। শোনা যায়, চরম নৈরাশ্যবাদী এই দর্শন মৌর্যযুগে (মোটামুটি তৃতীয় শতাব্দী বি.সি.ই) বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল এবং সম্রাট বিন্দুসার এই দর্শনে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু তারপরেই এই গোষ্ঠীর মধ্যে ভাঙন ধরে এবং দুর্বল হয়ে যায়, কিন্তু তাও চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত আধুনিক মহীশূর রাজ্যে এদের অস্তিত্ব ছিল।                  

অতএব ভারতবর্ষে পদার্পণের পরবর্তী হাজার বছরে আর্যরা আর্যাবর্তে তাদের ব্রাহ্মণ্যবাদ যথেষ্ট আধিপত্য নিয়ে জাঁকিয়ে বসতে পেরেছিল ঠিকই। কিন্তু শুরুর থেকেই তাদের নিরন্তর প্রতিবাদ এবং বিরোধের মধ্যে দিয়েও চলতে হচ্ছিল - একথা স্পষ্ট ধারণা করা যায়। ছোট ছোট অসংগঠিত বিরোধ এবং ক্ষোভ একসময় দানা বাঁধতে লাগল এবং বৃহত্তর এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল মোটামুটি পঞ্চম শতাব্দী বি.সি.ই-র শেষদিকে। এই সময়ে দুই মহাপুরুষ - ভগবান মহাবীর এবং ভগবান বুদ্ধের আবির্ভাব হল।

 

৩.১.২ ভগবান মহাবীর এবং জৈন দর্শন

ভগবান মহাবীরের জন্ম গণসঙ্ঘী বৃজি মহাজনপদে। এই গণসঙ্ঘের অনেকগুলি গোষ্ঠীর মধ্যে তিনি ছিলেন জ্ঞাতৃকা গোষ্ঠীর আর্য। ভগবান মহাবীরকে চব্বিশতম তীর্থংকর বলা হয় এবং তিনি যে দর্শনের প্রচার করেছিলেন, তা আজও প্রচলিত। ভগবান মহাবীরের সময়কাল নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বহুদিন ধরে বহু বিতর্ক চলে আসছে। তবে এটা নিশ্চিত যে, ভগবান বুদ্ধ এবং তিনি সমসাময়িক এবং বয়সে ভগবান মহাবীর সামান্য বড়ো ছিলেন। আগে পণ্ডিতেরা অনুমান করতেন, ভগবান মহাবীরের জীবনকাল ৫৯৯ থেকে ৫২৭ বি.সি.ই। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় ভগবান বুদ্ধের জন্মকাল স্থির হয়েছে ৫৬৩ বি.সি.ই-র কাছাকাছি কোন সময়ে এবং তাঁর নির্বাণ হয় ৪৮৩ বি.সি.ই-তে। সেই প্রেক্ষীতে ভগবান মহাবীরের জন্মসাল অনুমান করা হয় ৫৭০ বি.সি.ই-র কাছাকাছি এবং দেহরক্ষা করেন ৪৯০ বি.সি.ই-তে।

তীর্থংকর মহাবীরের পিতা ছিলেন সিদ্ধার্থ এবং মাতা ছিলেন রাজা চেতকের বোন ত্রিশলা। বর্ণে তাঁরা ছিলেন ক্ষত্রিয়। তাঁর যে জ্ঞাতৃকা গোষ্ঠীতে জন্ম হয়েছিল, সেই গোষ্ঠীকে “নাত”ও বলা হত, সেই কারণে মহাবীরকে “নির্গ্রন্থ নাতপুত্র”ও বলা হয়। নির্গ্রন্থ শব্দের অর্থ যাঁর কোন গ্রন্থি অর্থাৎ কোন জাগতিক বন্ধন নেই।

শোনা যায়, মহাবীরের জন্মের পরেই তাঁর পিতা সিদ্ধার্থের প্রভূত সম্পদ ও  প্রতিপত্তি বেড়ে ওঠায়, পিতা পুত্রের নাম রেখেছিলেন, বর্ধমান। শৈশব থেকে যৌবনে বর্ধমানের সাহসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তার অনেক ঘটনার কথা প্রচলিত আছে। সেই কারণেই জনশ্রুতি আছে, দেবতারা তাঁর সাহস, অধ্যবসায় এবং আত্মসংযম দেখে “মহাবীর” নাম দিয়েছিলেন। তাঁর বিবাহ নিয়ে জৈনদের দুই সম্প্রদায়ের মতে অনৈক্য আছে। শ্বেতাম্বর মতে তিনি সংসার ত্যাগের আগে কিছুদিন বিবাহিত জীবন কাটিয়েছিলেন, কিন্তু দিগম্বর সম্প্রদায়ের মতে তিনি বিয়েই করেননি। ত্রিশ বছর বয়সে, তাঁর পিতা-মাতার মৃত্যুর পর, বড়ো ভাই নন্দীবর্ধনের অনুমতি নিয়ে তিনি সংসারত্যাগ করেন এবং সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করেন। দীর্ঘ বারো বছর কঠোর সাধনা করে তিনি পরমজ্ঞান বা “কৈবল্য” লাভ করেন এবং তারপর ধর্ম প্রচার শুরু করেন।

জৈন শব্দের উৎপত্তি জিন থেকে, জিন শব্দের অর্থ জয়ী অর্থাৎ যিনি লোভ, হিংসা, মায়া, মোহকে জয় করেছেন। জৈন ধর্মের শিক্ষকেরা সকলেই জিন, অতএব তাঁদের দর্শন বা ধর্মের নাম জৈন। এঁদের তীর্থংকরও বলা হয় – তীর্থংকর হলেন সর্বজ্ঞ শিক্ষক বা আচার্য। জৈন ধর্মে তীর্থ অর্থে অনন্ত জন্ম ও মৃত্যুর দুস্তর সাগরকে বোঝায়, যে শিক্ষক মানুষকে এই তীর্থ পার করিয়ে দেন, তিনিই তীর্থংকর। ভগবান মহাবীর ছিলেন চব্বিশতম তীর্থংকর। প্রথম তীর্থংকর ছিলেন ঋষভদেব, তাঁর জন্মস্থান অযোধ্যার বিনীতায়। ঋষভদেবই প্রথম জৈনধর্ম প্রচার করেছিলেন বলে, তাঁকে আদিনাথও বলা হয়। অতএব ভগবান মহাবীরের আগে যে তেইশ জন তীর্থংকর ছিলেন – তাঁদের প্রত্যেকের ধর্মচর্চার সময়কাল যদি গড়ে পঁচিশ বছর ধরা যায়, তাহলে প্রথম তীর্থংকর ঋষভদেব ছিলেন, ২৩ x ২৫ = ৫৭৫ বছর আগের তীর্থংকর। সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় ভারতবর্ষে আর্যদের উপনিবেশ গড়ার প্রায় শুরুর দিকেই তিনি জৈন ধর্মের প্রবর্তন করেছিলেন।    

জৈনধর্ম প্রধানতঃ শ্রমণ ধর্ম। শ্রম অর্থাৎ তপস্যা দিয়ে যাঁরা জগতকে জয় করেন তাঁরাই শ্রমণ এবং শ্রমণা। জৈন ধর্মে স্ত্রী-পুরুষ, অথবা উচ্চ-নীচ, ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্রের কোন ভেদাভেদ ছিল না। শ্রমণ এবং শ্রমণা ছাড়াও জৈন ধর্মে আরও দুই শ্রেণী ছিল শ্রাবক এবং শ্রাবিকা। যাঁরা শ্রমণদের উপদেশ বা কথা শুনে শিষ্যত্ব গ্রহণ করতেন তাঁদের বলা হত শ্রাবক ও শ্রাবিকা। শ্রাবক ও শ্রাবিকারা সন্ন্যাসী নন, তাঁরা হলেন জৈনধর্মে বিশ্বাসী গৃহস্থ জনগণ। এই শ্রমণ, শ্রমণা, শ্রাবক ও শ্রাবিকা নিয়েই জৈনধর্মের চার তীর্থ – আর এই চার তীর্থ-মানুষদের যিনি সংসারের দুঃখসঙ্কুল পারাবার থেকে উদ্ধার করতে পারেন, তিনিই তীর্থংকর।

অতএব মহাবীর জৈনধর্মের প্রবর্তক নন, তিনি জৈনধর্মের সংস্কার করেছিলেন এবং বহুল প্রচার করে জৈনধর্মকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। তাঁর পূর্ববর্তী তীর্থংকরদের বিশেষ করে তেইশতম তীর্থংকর পার্শ্বনাথের মতামত এবং উপদেশগুলি তিনি সংকলন এবং পরিমার্জন করে, সুবিন্যস্ত একটা রূপ দিয়েছিলেন। পার্শ্বনাথ জৈনধর্মে চতুর্যাম আচরণ প্রবর্তন করেছিলেন, মহাবীর সেটিকে বদলে পঞ্চমহাব্রত প্রবর্তন করলেন। এই পঞ্চমহাব্রত হল, অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য এবং অপরিগ্রহ। অস্তেয় ব্রত হল অন্যের দ্রব্য, সম্পদ চুরি না করা। এই মতে পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষেরই সমান অধিকার আছে। একজনের কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকার অর্থ বহু মানুষকে বঞ্চিত করা – সেও একরকমের চুরিই। অপরিগ্রহ হল জীবনধারণের অতিরিক্ত ভোগ বা বিলাস ত্যাগ করা। কারণ ভোগ বা বিলাস থেকেই আসে লোভ, মোহ, তার থেকে আসে হিংসা এবং চুরির প্রবণতা, মিথ্যাচার ও কামনা। অপরিগ্রহ ব্রত সম্যক পালন না করলে, অন্য চারটি ব্রতর কোন অর্থ হয় না।

মহাবীরের আগে জৈনদের মধ্যে নগ্নতার প্রচলন ছিল না, তাঁরা সকলেই সাদা বস্ত্র পরতেন, তাই তাঁদের শ্বেতাম্বর বলা হত। মহাবীর ব্রহ্মচর্যের কঠোরতা আনতে নগ্নতা আনলেন, তাঁর মতাবলম্বীরা হলেন দিগম্বর। মহাবীর অহিংসা ব্রতেও কঠোরতা এনেছিলেন, শুধুমাত্র পশুহত্যা নয়, যে কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ হত্যাও তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন। এর ফলে পরবর্তী কালে অহিংসা এবং জৈনধর্ম প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিল। মহাবীর আরও একটি নতুন ব্রতের সূচনা করেছিলেন, প্রতিক্রমণ – অপরাধ স্বীকার। জৈন সন্ন্যাসীরা নিজেদের কোন দোষ-ত্রুটি বা অপরাধের কথা নিজমুখে সকলের সামনে স্বীকার করবেন এবং অনুশোচনা করবেন।

জৈনদের পরমজ্ঞানকে বলা হয় কৈবল্য। কৈবল্য লাভের পর মহাবীরের প্রথম ধর্মপ্রচারে এগারোজন ব্রাহ্মণ তাঁর শিষ্য হয়েছিলেন। তাঁদের মহাবীরের মুখ্যশিষ্য বা গণধর বলা হয়। শোনা যায় এই এগারো জন ব্রাহ্মণ মহাপণ্ডিত ছিলেন এবং শিষ্যত্ব গ্রহণের আগে তাঁরা মহাবীরের রীতিমত পরীক্ষা নিয়েছিলেন। তাঁদের জিজ্ঞাসার বা সংশয়ের বিষয় ছিল, আত্মার অস্তিত্ব, জীবদেহ এবং জীবাত্মা অভিন্ন না আলাদা? পরজন্ম কী, পরজন্মে মানুষ কী একই মানুষ হয়ে জন্ম নেয়, নাকি অন্য জীবে পতিত হয়? কর্ম কী এবং কোন কর্মের কারণে পরজন্মে জীবের উন্নতি বা অবনতি হয়? তাছাড়া পাপ-পুণ্য, সৎ-অসৎ, ইহলোক-পরলোক, স্বর্গ-নরক বিষয়ে সংশয় তো ছিলই। তাঁদের মনের সকল সংশয় দূর করতে পেরেছিলেন বলেই, তাঁরা মহাবীরের শিষ্যত্ব স্বীকার করেছিলেন, একথা বলাই বাহুল্য।

জৈন দর্শনের আলোচনায় ডঃ রাধাকৃষ্ণন, জৈনরা যে ব্রাহ্মণ্য বিরোধী একথা মনে করেননি। তাঁর মতে জৈন এবং ব্রাহ্মণ্য দর্শন বহু আগে থেকেই সমান্তরাল পথেই চলছিল। ব্রাহ্মণ্য গ্রন্থ এবং শাস্ত্রে বেশ কয়েকজন জৈন তীর্থংকরের উল্লেখ করা হয়েছে যথেষ্ট শ্রদ্ধা এবং গুরুত্বের সঙ্গে। যেমন যজুর্বেদে ঋষভ বা আদিনাথ, অজিতনাথ এবং অরিষ্টনেমির উল্লেখ পাওয়া যায়। ভাগবত পুরাণেও ঋষভ যে জৈনধর্মের প্রবর্তক সে কথার উল্লেখ আছে এবং সেখানে কোথাও জৈনধর্মীদের বিষয়ে কোন বিদ্বেষের লক্ষণ দেখা যায় না।  

সরাসরি বিরুদ্ধ-বিদ্বেষ না থাকলেও দুই ধর্মদর্শনের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক ছিল সে কথা অস্বীকারের কোন জায়গা নেই। জৈনধর্মে পুরোহিত নেই, যজ্ঞ নেই, স্ত্রী-পুরুষ, বর্ণভেদ নেই। যজ্ঞ নেই, তাই পুরোহিতের বিপুল দক্ষিণা, সম্পদ এবং অর্থ লাভ নেই। যজ্ঞের বলিদান নেই – পশুহত্যা নেই, হিংসা নেই। বিশেষতঃ যাঁরা তীর্থংকর, শ্রমণ বা শ্রমণা তাঁরা সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী ছিলেন, জীবনধারণের প্রয়োজনটুকু ছাড়া তাঁদের আর কোন চাহিদাই ছিল না, এমন কি একসময় তাঁরা লজ্জা নিবারণের বসনটুকুও ত্যাগ করেছিলেন। অতএব জৈন দর্শনের অবস্থান যে ব্রাহ্মণ্য দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে সেকথা বলাই বাহুল্য। স্পষ্ট উল্লেখ না মিললেও কোথাও কোনদিন যে বিদ্বেষের ঘটনা একেবারেই ঘটেনি – সে কথা নিশ্চিতভাবে বলা আজ আর হয়তো সম্ভব নয়।  

 ৩.১.২.১ জৈনধর্মের প্রসার

মহাবীরের জন্মস্থান গণসঙ্ঘী বৃজির অবস্থান ছিল পূর্ব ভারতে বৈশালীর কাছাকাছি। অতএব প্রাথমিকভাবে তাঁর প্রভাব পূর্ব ভারতেই বিস্তৃত হয়েছিল। জৈনশাস্ত্র কল্পসূত্রে বলা আছে, কৈবল্য লাভের পর ভগবান মহাবীর বর্ষা[2]-র সময় ছাড়া পূর্বভারতের বিহার, অঙ্গ, বঙ্গদেশে ধর্মপ্রচার করে বেড়াতেন। আর বর্ষার সময় থাকতেন প্রধানতঃ বিহারের নানান অঞ্চলে। যেমন কৈবল্য লাভের পর প্রথম বর্ষা কাটিয়েছিলেন অস্থিকাগ্রামে, তিনটি বর্ষা চম্পায়, বারোটি বর্ষা বৈশালীতে, চোদ্দটি বর্ষা রাজগৃহ ও নালন্দায়, ছটি বর্ষা মিথিলায়, দুটি ভদ্রিকায়, একটি করে বর্ষা আলাবিকা, পণিতভূমি, শ্রাবস্তীতে এবং শেষ বর্ষাটি পাওয়াও বা পাওয়াপুরীতে – সেখানেই তাঁর মহানির্বাণ হয়।

এই হিসাবে কোথাও একটু গরমিল রয়েছে, কারণ তিনি সন্ন্যাস নিয়েছিলেন তিরিশ বছরে, বারো বছর তপস্যা করে কৈবল্য লাভ করেন বিয়াল্লিশে, তারপরেও বিয়াল্লিশটি বর্ষা মানে তাঁর আয়ুষ্কাল হওয়া উচিৎ চুরাশি বছর। অথচ সাধারণতঃ তাঁর আয়ুষ্কাল বলা হয় আশি বছর। যদিও আজ প্রায় আড়াই হাজার বছরের ব্যবধানে এসে, এটুকু গরমিল মেনে নেওয়াই যায়। সে যাই হোক, উপরের যতগুলি জায়গার নাম পাওয়া যায়, একটি ছাড়া সেগুলির সবই আধুনিক বিহারের মধ্যে। একমাত্র পণিতভূমি বলা হয় বঙ্গের বজ্রভূমিকে। পণ্ডিতেরা অনুমান করেন এই বজ্রভূমি বাংলার রাঢ় অঞ্চলের উত্তরাংশ, সেক্ষেত্রে বর্ধমান হওয়া বিচিত্র নয়, হয়তো এই নামের মধ্যে ভগবান মহাবীরের বাল্যনামের স্মৃতি রয়ে গেছে।

 মহাবীরের আবির্ভাব সময়ে, এতটা পূর্বে আর্য এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রসার তত প্রকট হয়নি, সবে মাত্র তার গায়ে আঁচ লাগতে শুরু করেছে। তার ওপর তিনি নিজে ক্ষত্রিয় হওয়ায়, ওই সব অঞ্চলের জনপদগুলির প্রধান এবং রাজাদের তাঁর উপদেশ এবং বাণী মেনে নিতেও অসুবিধে হয়নি। তাঁর অনাড়ম্বর সন্ন্যাসী জীবনযাত্রা স্থানীয় মানুষদের মুগ্ধ করেছিল। উপরন্তু প্রাকৃতভাষায় তাঁর সহজ সরল বাণী ও উপদেশগুলিও স্থানীয় মানুষদের সহজেই বোধগম্য হত। অতএব তাঁর জীবদ্দশাতেই তিনি প্রায় অর্ধলক্ষাধিক শিষ্য ও শিষ্যা করে তুলতে পেরেছিলেন। জৈনশাস্ত্র “কল্পসূত্র” অনুসারে, সে সময় তাঁর অনুগামী চোদ্দ হাজার শ্রমণ এবং ছত্রিশ হাজার শ্রমণা ছিল। আর এক লক্ষ ঊণষাট হাজার শ্রাবক এবং তিন লক্ষ আঠারো হাজার শ্রাবিকা ছিল।

পরবর্তী খ্রীপূ শতাব্দীগুলিতে জৈনধর্ম আধুনিক বিহার অঞ্চলের যে যে রাজার আনুকূল্য পেয়েছিল, তাঁরা হলেন, বিম্বিসার, অজাতশত্রু, উদায়ী, নন্দ, মৌর্য এবং মৈত্র বংশের রাজারা। মৌর্য সম্রাট অশোকের শিলালিপি থেকে জানা যায় জৈন ধর্ম উত্তরে কাশ্মীর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল, এবং অশোকের পরবর্তী রাজা সম্প্রতি পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতেও জৈনধর্ম প্রচারকদের পাঠিয়েছিলেন। মোটামুটি পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত বিহার ও কলিঙ্গে এবং সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত সমগ্র বঙ্গে জৈন ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। একথা জানা যায় চীনা পর্যটক হুয়েন সাঙের বিবরণী থেকে।

রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও সাধারণের মধ্যে জৈন ধর্ম প্রসারের আরও দুটি কারণ বণিক সম্প্রদায় এবং সাধারণ সমাজের মহিলারা। শুরুর থেকেই মহিলাদের সমর্থন জৈন ধর্মের অন্যতম সহায় হয়েছিল। প্রাক-আর্য এবং আর্য সমাজে মহিলারা অনেকটাই অবদমিত ছিলেন সেকথা আগেই বলেছি। জৈন ধর্ম মহিলা-পুরুষে কোন ভেদাভেদ করেনি, সমান মর্যাদা দিয়েছে। একইভাবে ব্রাহ্মণ্য সমাজে বণিকরা তৃতীয় শ্রেণীর বৈশ্য হয়ে যাওয়াতে তাঁদের সামাজিক প্রতিপত্তি প্রায় কিছুই ছিল না। যদিচ যে কোন সমাজের সমৃদ্ধিতে বণিকদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী সময়েও আমরা দেখব, জৈনধর্মের প্রসারে এই বণিক সম্প্রদায় ও মহিলাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

সম্রাট অশোকের পৌত্র মহারাজা সম্প্রতির সময়েই পশ্চিমের গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে জৈনধর্মের ব্যাপক আধিপত্য ছিল। পরবর্তীকালেও ওই দুই অঞ্চলের অধিকাংশ রাজাই জৈনধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। গুজরাটে জৈনধর্ম প্রচারে তীর্থঙ্কর নেমিনাথ এবং আরো অনেক প্রসিদ্ধ জৈন সন্ন্যাসী, যেমন দিগম্বর শ্রমণ ধরসেন এবং শ্বেতাম্বর শ্রমণ হেমচন্দ্রের অনেক অবদান আছে। গুজরাটের বল্লভীতে জৈনদের দুবার ধর্ম সম্মেলন হয়েছিল এবং জৈনদের বিখ্যাত দুটি তীর্থ স্থান গিরনার এবং সত্রুঞ্জয়, গুজরাটেই অবস্থিত।

দক্ষিণ ভারতে জৈনধর্ম বহুল প্রচার করেছিলেন জৈন সন্ন্যাসী আচার্য ভদ্রবাহু ও স্বয়ং চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং সম্রাট অশোকের পরবর্তী মৌর্য রাজা সম্প্রতি। পুণ্ড্রবর্ধন (এখন বাংলাদেশে) অঞ্চলের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম ভদ্রবাহুর, তিনি সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের গুরু ছিলেন। কোন একবার দুর্ভিক্ষের সময় তিনি বারো হাজার সন্ন্যাসী শিষ্যদের নিয়ে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক প্রদেশে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত। তিনি সিংহাসন ছেড়ে তখন নাকি দিগম্বর সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই দক্ষিণভারতে জৈনধর্মের প্রবল প্রচার শুরু হয়েছিল এবং সেই আধিপত্য ছিল বহুদিন পর্যন্ত। শোনা যায় আচার্য ভদ্রবাহু শ্রবণ বেলগোলাতে, এবং শ্রমণ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, তার কাছাকাছি কোন এক গ্রামে দেহরক্ষা করেছিলেন।

উত্তরভারতেও জৈনধর্মের স্বাভাবিক প্রভাব ছিল, তার কারণ অনেক তীর্থংকরেরই জন্মস্থান ছিল উত্তরভারতে। তীর্থংকর পার্শ্বনাথের জন্ম হয়েছিল বারাণসীতে। মথুরা এবং উজ্জয়িনী বহু শতাব্দী ধরে জৈনধর্মের কেন্দ্র ছিল।

৩.১.২.২ জৈনধর্মের বৈশিষ্ট্য

প্রবল ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিরুদ্ধে জৈনধর্মের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ হল তার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য, যেমন, 

১) সংসারত্যাগী তপস্বী শ্রমণ ও গৃহস্থী শ্রাবকদের প্রায় একই ব্রত পালনের নির্দেশ থাকায় – জৈন শ্রমণরা নিজেদের শিষ্যদের তুলনায় কখনোই অনেক উচ্চমার্গের দূরত্বে তুলে রাখেননি। যার ফলে শ্রমণ এবং শিষ্যদের মধ্যে সর্বদাই আন্তরিক যোগাযোগ ছিল।  

২) কোন রকম, জাতি, লিঙ্গ বা বর্ণভেদ ছিল না।

৩) অহিংসা এবং শান্তি ছিল জৈনদের প্রধান নীতি, যার ফলে তারা পরধর্ম বা পরমতের সঙ্গে কোনদিনই ঝগড়াবিবাদে যেত না। তারা সরাসরি ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরোধিতা করেনি বলেই, ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পাশাপাশিই ছিল তাদের সুদীর্ঘ অবস্থিতি। এমনকি বেশ কয়েকজন তীর্থংকর ব্রাহ্মণ্যধর্মের কাছেও শ্রদ্ধেয় হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। 

৪) জৈন তীর্থংকর এবং শ্রমণেরা কথা বলতেন আঞ্চলিক প্রাকৃত ভাষাতে এবং পরবর্তী কালেও ধর্ম শাস্ত্র লিখেছেন বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায়।

৫) তাঁদের সততা, সত্যবাদীতা এবং অনাড়ম্বর সরল জীবনযাত্রা।

৬) সাধারণ মানুষের বিপদের সময় জৈন শ্রমণরা নানান সেবামূলক কাজেও সর্বদা নিরত থাকতেন।

৭) তাঁদের সহজ সরল উপদেশ এবং তত্ত্বকথা সাধারণ মানুষ থেকে, ধনী বণিক এমনকি রাজন্যবর্গের কাছেও সহজবোধ্য ছিল। ভারতবর্ষের সম্পন্ন বণিক-সম্প্রদায়ের একটি বড়ো অংশই আজও জৈনধর্মে বিশ্বাসী এবং তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।   

 

৩.১.৩ ভগবান গৌতমবুদ্ধ

এতক্ষণ পর্যন্ত অনেক বিষয়েই আমরা আলোচনা করেছি, স্থানাভাবে সেগুলির অধিকাংশই অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। সেগুলির তুলনায় গৌতমবুদ্ধের প্রসঙ্গ আমি একটু বিস্তারিত আলোচনা করব। গৌতমবুদ্ধের ক্ষেত্রে আমার কেন এই পক্ষপাতিত্ব? এ প্রশ্ন আপনাদের মনে আসতে পারে জেনেই, ভারতীয় ধর্ম এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে কেন আমি গৌতমবুদ্ধকে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছি, তার অনেকগুলি কারণের মধ্যে প্রধান কয়েকটি কারণ হল-

১. বৌদ্ধধর্ম ভারতীয় সমাজে এবং জীবনযাত্রাতে দীর্ঘস্থায়ী এক পরিবর্তন আনতে সফল হয়েছিল। এই ধর্ম নিজেদের গোষ্ঠী, অঞ্চল, কিংবা রাজ্যের মধ্যে সীমিত না থেকে – সমসাময়িক বিশ্বে –ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, পশ্চিম এশিয়া, চিন, শ্রীলংকা এবং পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ভারতের জ্ঞান, দর্শন, জীবনবোধ, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বেড়ে উঠেছিল বহুগুণ। তাতে উপকৃত হয়েছিল, শুধু ভারতীয়রা নয়, সমগ্র বিশ্ববাসী। 

২. সহজ বুদ্ধনীতি থেকে বহু যোজন সরে গিয়ে, পরবর্তী কালে যে জটিল ধর্মতত্ত্ব রচনা করেছিলেন বৌদ্ধ পণ্ডিতেরা, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রচিত হয়েছিল হিন্দু দর্শন ও হিন্দু ধর্মতত্ত্ব। যার ফলে বিস্তর ঋদ্ধ হয়েছিল হিন্দু ধর্মতত্ত্ব তথা ভারতীয় দর্শন। যদিচ, পরবর্তী কালে, এই তত্ত্বকথার জটিল ধাঁধায় বাঁধা পড়ে বৌদ্ধধর্ম ভারতবর্ষেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল, এবং আজ আমরাও, হিন্দুধর্মে বিশ্বাসীরা, সেই জটিলতার জালে আবদ্ধ হয়ে দৌড়ে চলেছি চিন্তাহীন অন্ধ অবক্ষয়ের পথে।

৩. এই সব গুরু-গম্ভীর কারণ ছাড়াও গৌতমবুদ্ধের যে বিষয়টি আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করে, সেটি হল তাঁর তপস্যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ। আমরা হিন্দু শাস্ত্রে অজস্র মুনি, ঋষি, মানুষ, রাক্ষস, দানব, দৈত্যদের ভয়ংকর ভয়ংকর তপস্যার বিবিধ উল্লেখ পাই। কেউ করেছেন শত বছর, কেউ কেউ আবার সহস্র বছর, কেউ আবার দশ সহস্র বছর! তাদের তপশ্চর্যায় দেবতারা, বিশেষ করে দেবরাজ ইন্দ্র, বহুবার ভয় পেয়েছেন। তিনি বারবার স্বর্গ থেকে অপ্সরাদের পাঠাতেন তাদের তপস্যা ভঙ্গ করার জন্যে। আবার বহু জন এরকম তপস্যায় সিদ্ধ হয়ে মনোমত বর লাভ করেছেন – কেউ শর্তসাপেক্ষ দীর্ঘায়ু, কেউ প্রচুর সন্তানাদি, কেউ হারানো রাজ্যপাট, কেউ বা ক্ষত্রিয় থেকে হয়েছেন ব্রাহ্মণ। খুব সামান্য কয়েকজন ঈশ্বর দর্শনে কৃতার্থ হয়েছেন।

বুদ্ধদেবের তপস্যাকাল সে তুলনায় সামান্য, মাত্র ছয় বছর।  তিনি ২৯ বছর বয়সে  সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, 'বছরের তপস্যা ও সাধনায় ৩৫ বছর বয়সে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। এই স্বল্প মেয়াদি তপশ্চারণের সময় তাঁর শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির এবং ওই পর্যায়ে তাঁর ভাবনাচিন্তার সঙ্গেও আমরা নিবিড়ভাবে পরিচিত হই। পরিশেষে তিনি যখন অন্তরে গভীর উপলব্ধিতে আলোকিত হলেন, তখন তপস্যার সমাপ্তিও করেছেন তিনি নিজেই – কোন দেবতার বরদান নামক অনুগ্রহে নয়।

অনেকেই বলবেন, এসব তো গৌতমবুদ্ধ নিজে লেখেননি, পরবর্তী সময়ে কোন পণ্ডিত লিখে গেছেন। হক কথা। কিন্তু আমার পরবর্তী অধ্যায়গুলি ধৈর্য নিয়ে পড়লে বুঝতে পারবেন, এই বর্ণনাগুলিতে আহামরি কিছু অতিরঞ্জন নেই। খুব স্পষ্ট বোঝা যায়, এসব কথা গৌতমবুদ্ধ নিজেই বলেছিলেন তাঁর নিকট শিষ্যদের কাছে। সেই শিষ্য-পরম্পরায় যেমন শুনেছেন, সেই কথাই লিখে রেখেছিলেন কোন ভক্ত পণ্ডিত, অবিশ্বাস্য কোন অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃত অতিরঞ্জন ছাড়াই!

৪. সাধারণতঃ, মহাভারত বা পুরাণগুলিতে – সর্ব যুগেই (সত্য, ত্রেতা কিংবা দ্বাপর) বেশ কিছু মুনি বা ঋষির আমরা বারবার পরিচয় পাই। যেমন সপ্তর্ষি ছাড়াও বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ, ভৃগু, অগস্ত্য, নারদ, উদ্দালক, আরুণি, মার্কণ্ডেয়, গৌতম প্রমুখ। এই মুনি-ঋষিদের অধিকাংশই তিনটি যুগেই অবলীলাক্রমে অবস্থান করতে পারতেন! কিন্তু বৌদ্ধ এই কাহিনীগুলিতে কিছু সমসাময়িক মুনি, ঋষি এবং আচার্যের পরিচয় আমরা পাই, যাঁদের কথা অন্য কোন শাস্ত্রে আমি অন্ততঃ পাইনি। গৌতমবুদ্ধের জীবনচরিতে এটিও আমার আরেকটি আগ্রহের বিষয়। প্রসঙ্গতঃ ব্রাহ্মণ্য বা হিন্দু শাস্ত্র মতে, গৌতমবুদ্ধের সময় হল কলিযুগ। কলিযুগের কোন মুনি-ঋষির নাম হিন্দুশাস্ত্রে এমনিতেও দুষ্প্রাপ্য। অর্থাৎ আগের তিন যুগের মুনি-ঋষিদের আর কলিযুগে পা ফেলার প্রবৃত্তি হয়নি।

এই প্রসঙ্গে মহাভারত ও পৌরাণিক মতে চারটি যুগের সংক্ষিপ্ত পরিচয় সেরে নেওয়া যাক। মহাভারতে বনপর্বের ১৮৮-তম অধ্যায়ে ঋষি মার্কণ্ডেয় রাজা যুধিষ্ঠিরকে বলছেন, “প্রলয়কালে সমস্ত জগৎ বিনষ্ট হলে অবাঙ্মনসগোচর পরমাত্মার থেকে এই আশ্চর্য পরিপূর্ণ সমস্ত জগৎ আবার সৃষ্ট হয়। তার প্রথম হল সত্যযুগ, সেই সত্যযুগের পরিমাণ চার হাজার বছর। ওই যুগের সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ হয় চারশ বছর। ত্রেতা যুগের পরিমাণ তিন হাজার বছর, তার সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ হয় তিনশ বছর। দ্বাপর যুগের পরিমাণ দু হাজার বছর, তার সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ হয় দুশ বছর। কলি যুগের পরিমাণ এক হাজার বছর, তার সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ হয় একশ বছর”। কোন যুগের প্রথম ভাগকে সন্ধ্যা এবং শেষ ভাগকে সন্ধ্যাংশ বলে। অর্থাৎ এই দুটি পর্যায়কে Transition period বলা চলে – তার জন্যে বরাদ্দ হল সমগ্র যুগ-পরিমাণের ১০% বছর। কলিযুগের অবসানে অর্থাৎ প্রতি বারো হাজার বছর পর আবার প্রলয় এবং সৃষ্টির পর্যায় ঘুরে আসে।

যাই হোক, এবার আমরা ইতিহাসের মূল প্রবাহে এবং প্রসঙ্গে ফিরে আসি ।


চলবে...



[1] ষাটের দশকের শেষদিকে, কলকাতা শহরে এবং গ্রামাঞ্চলের হাটে-মাঠে এমন ছোট ছোট সভা পরিচালনা করতেন কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যরা – তাঁরাও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের সামাজিক দায়িত্ব ও অধিকার বিষয়ে উজ্জীবিত করতেন। কলকাতায় এই সভাগুলিকে বলা হত পথসভা। “কুতূহল স্থল”-এর কথা পড়ে ছোটবেলায় দেখা সেই স্মৃতিগুলি ফিরে আসে। ছোট ছোট সভা করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তোলা ব্যাপারটা তার মানে কমিউনিষ্টদের আবিষ্কার করা কোন পদ্ধতি নয়। এমন পদ্ধতি আমাদের দেশে ঘটে গেছে আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর আগে, সমসাময়িক গ্রীসেও এমন আলোচনা সভার প্রচলন ছিল।          

[2] সন্ন্যাসীরা বর্ষাকালের চারমাস পরিব্রাজন স্থগিত করে কোন জনপদে বা গ্রামে বাস করতেন। এবং সেখানেই তপস্যা, তত্ত্ব আলোচনার ব্রত পালন করতে করতে বিশ্রাম করতেন। এই ব্রতের নাম ছিল “চাতুর্মাস্য ব্রত” – এই ব্রতের শুরু হত আষাঢ়ের শুক্লা দ্বাদশীতে এবং সমাপ্তি হত কার্তিকের শুক্লা দ্বাদশী তিথিতে। সন্ন্যাসীদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম পরবর্তী কালেও অবশ্য পালনীয় ছিল। এই চারমাস ভারতবর্ষের প্রায় সর্বত্রই বর্ষার কাল - বৃষ্টি, ঝড়, ঝঞ্ঝা, দুর্যোগের সময়। অতএব পথঘাট পদব্রজের উপযুক্ত নয় এবং বর্ষায় ভরা নদীগুলিও পার হওয়ার পক্ষে প্রতিকূল হয়ে উঠত।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন পোস্টগুলি

ধর্মাধর্ম - ৩/২

  ["ধর্মাধর্ম"-এর তৃতীয় পর্বের প্রথম পর্বাংশ  পড়ে নিতে পারেন এই সূত্র থেকে " ধর্মাধর্ম - ৩/১ " তৃতীয় পর্ব - দ্বিতীয়  পর্...