বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

গীতা - ২য় পর্ব

 

গীতার প্রথম অধ্যায় পড়া যাবে এই সূত্রে "গীতা - ১ম পর্ব"


দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ সাংখ্যযোগ

 

সঞ্জয় উবাচ

তং তথা কৃপয়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম্‌।

বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদনঃ।।

সঞ্জয় উবাচ

তং তথা কৃপয়া আবিষ্টম্‌ অশ্রুপূর্ণ-আকুল-ঈক্ষণম্‌।

বিষীদন্তম্‌ ইদং বাক্যম্‌ উবাচ মধুসূদনঃ।।

সঞ্জয় বললেন- অর্জুনের অশ্রুভরা চোখ, বিষণ্ণ মুখ ও মানসিক অবসাদ দেখে, শ্রীমধুসূদন এই কথা বললেন,


 

শ্রীভগবানুবাচ

কুতস্ত্বা কশ্মলমিদং বিষমে সমুপস্থিতম্‌।

অনার্যজুষ্টমস্বর্গ্যমকীর্তিকরমর্জুন।।

 

শ্রীভগবান্‌ উবাচ

কুতঃ ত্বা কশ্মলম্‌ ইদং বিষমে সমুপস্থিতম্‌।

অনার্যজুষ্টম্‌ অস্বর্গ্যম্‌ অকীর্তিকরম্‌ অর্জুন।।

 

শ্রী ভগবান বললেন- হে অর্জুন, এই সংকটের সময় তোমার মধ্যে এমন অবিবেচক, এমন অধর্মজনক এবং নিজের সুনামের প্রতি অবিচারকারী অদ্ভূত মোহ কোথা থেকে উদয় হল?

 

 

ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ নৈতৎ ত্বয্যুপপদ্যতে।

ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।

ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ ন এতৎ ত্বয়ি উপপদ্যতে।

ক্ষুদ্রং হৃদয়-দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বা উত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।

হে পার্থ, পঙ্গুর মতো আচরণ করো না, এই আচরণ তোমাকে শোভা পায় না। তোমার মনের এই তুচ্ছ দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে, যুদ্ধের জন্যে উন্মুখ হয়ে ওঠো, হে অরিজিৎ।

        

 

অর্জুন উবাচ

কথং ভীষ্মমহং সংখ্যে দ্রোণঞ্চ মধুসূদন।

ইষুভিঃ প্রতিযোৎস্যামি পূজার্হাবরিসূদন।।

অর্জুন উবাচ

কথং ভীষ্মম্‌ অহং সংখ্যে দ্রোণং চ মধুসূদন।

ইষুভিঃ প্রতিযোৎস্যামি পূজা-অর্হৌ অরিসূদন।।

অর্জুন বললেন- হে শত্রুবিনাশক মধুসূদন, ভীষ্ম, দ্রোণ, এঁদেরকে আমি এতদিন পুষ্প-চন্দনে পুজো করে এসেছি, আজ কিভাবে এঁদের শরীরে আমি তিরের আঘাত করব, কিভাবেই বা যুদ্ধ করব?

        

 

গুরূনহত্বা হি মহানুভাবান্‌

শ্রেয়ো ভোক্তুং ভৈক্ষ্যমপীহলোকে।

হত্বার্থকামাংস্তু গুরূনিহৈব

ভুঞ্জীয় ভোগান্‌ রুধিরপ্রদিগ্ধান্‌।।

গুরূন্‌ অহত্বা হি মহানুভাবান্‌

শ্রেয়ঃ ভোক্তুং ভৈক্ষ্যম্‌ অপি ইহলোকে।

হত্বা-অর্থ-কামাং তু গুরূন্‌ ইহ এব

 ভুঞ্জীয় ভোগান্‌ রুধির-প্রদিগ্ধান্‌।।

ইহলোকে মহানুভব গুরুজনদের বধ না করে, ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করাও আমার পক্ষে কল্যাণকরকারণ এই গুরুজনদের হত্যা করে, তাঁদের রক্তমাখা ধনসম্পদ ও অন্যন্য বিষয়, আমাকে এই জীবনেই ভোগ করতে হবে।

 

 

ন চৈতদ্‌বিদ্মঃ কতরন্নো গরীয়ো

যদ্বা জয়েম যদি বা নো জয়েয়ুঃ।

যানেব হত্বা ন জিজীবিষামস্তেঽবস্থিতাঃ

প্রমুখে ধার্তরাষ্ট্রাঃ।।

ন চ এতৎ বিদ্মঃ কতরৎ নঃ গরীয়ঃ

যৎ বা জয়েম যদি বা নঃ জয়েয়ুঃ।

যান্‌ এব হত্বা ন জিজীবিষামঃ তে অবস্থিতাঃ

প্রমুখে ধার্তরাষ্ট্রাঃ।।

এই অধর্মের যুদ্ধে হয় আমরা জয়ী হব, অথবা ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা আমাদের জয় করবে, কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে কোনটি আমাদের পক্ষে মঙ্গলকর হবে? যাঁদের হত্যা করে আমরা বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করি না, ধৃতরাষ্ট্রের পক্ষে সেই লোকজন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

 

 

কার্পণ্যদোষোপহতস্বভাবঃ

পৃচ্ছামি ত্বাং ধর্মসংমূঢ়চেতাঃ।

যচ্ছ্রেয় স্যান্নিশ্চিতং ব্রূহি তন্মে

শিষ্যস্তেঽহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্‌।।

 

কার্পণ্য-দোষ-উপহত-স্বভাবঃ

পৃচ্ছামি ত্বাং ধর্ম-সংমূঢ়-চেতাঃ।

যৎ শ্রেয় স্যাৎ নিশ্চিতং ব্রূহি তৎ মে

শিষ্যঃ তে অহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্‌।।

 

গুরুজন ও বান্ধবদের হত্যা করে কিভাবে বেঁচে থাকব, সেই চিন্তায় আমি ব্যাকুল, আমার মন অবসন্ন। আমি তোমার শিষ্য এবং তোমার শরণাগত আমার পক্ষে যা নিশ্চিত মঙ্গলকর হবে, তুমি আমায় সেই উপদেশ দাও। 

       

 

ন হি প্রপশ্যামি মমাপনুদ্যাদ্‌

 যচ্ছোকমুচ্ছোষণমিন্দ্রিয়াণাম্‌।

অবাপ্য ভূমাবসপত্নমৃদ্ধং

রাজ্যং সুরাণামপি চাধিপত্যম্‌।।

ন হি প্রপশ্যামি মম অপনুদ্যাৎ

 যৎ শোকম্‌ উৎশোষণম্‌ ইন্দ্রিয়াণাম্‌।

অবাপ্য ভূমৌ অসপত্নম্‌ ঋদ্ধং

রাজ্যং সুরাণাম্‌ অপি চ আধিপত্যম্‌।।

এই পৃথিবীতে শত্রুহীন সমৃদ্ধ রাজ্য, এমনকি স্বর্গের আধিপত্য পেলেও, জ্ঞাতিবধের মতো ভয়ানক শোকের কোন প্রতিকার আমি দেখতে পাচ্ছি না।

 

 

 

সঞ্জয় উবাচ

এবমুক্ত্বা হৃষীকেশং গুড়াকেশঃ পরন্তপঃ।

ন যোৎস্য ইতি গোবিন্দমুক্ত্বা তূষ্ণীং বভূব হ।।

সঞ্জয় উবাচ

এবম্‌ উক্ত্বা হৃষীকেশং গুড়াকেশঃ পরন্তপঃ।

ন যোৎস্য ইতি গোবিন্দম্‌ উক্ত্বা তূষ্ণীং বভূব হ।।

সঞ্জয় বললেন - এই কথা বলে, জিতনিদ্র শত্রুতাপন অর্জুন, হৃষীকেশ গোবিন্দকে বললেন “আমি কিছুতেই যুদ্ধ করতে পারব না”, তারপর আর কোন কথা না বলে, গম্ভীরমুখে বসে রইলেন।

 

 

১০

তমুবাচ হৃষীকেশঃ প্রহসন্নিব ভারত।

সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে বিষীদন্তমিদং বচঃ।।

তম্‌ উবাচ হৃষীকেশঃ প্রহসন্‌ ইব ভারত।

সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে বিষীদন্তম্‌ ইদং বচঃ।।

হে মহারাজ, হৃষীকেশ এতটুকু বিচলিত না হয়ে, উভয় সৈন্য সমাবেশের মধ্যে রথে বসে থাকা বিষণ্ণ অর্জুনকে স্মিত মুখে বললেন,

                

 

১১

শ্রীভগবানুবাচ

অশোচ্যানন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে।

গতাসূনগতাসূংশ্চ নানুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ।।

শ্রীভগবান্‌ উবাচ

অশোচ্যান্‌ অনুশোচঃ ত্বং প্রজ্ঞাবাদাং চ ভাষসে।

গত-অসূন্‌ অগত-অসূন্‌ চ ন অনুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ।।

শ্রী ভগবান বললেন – তুমি পণ্ডিতের মতো কথা বলছ, অথচ যা আদৌ শোকের বিষয় নয়, তার জন্যে তুমি শোকও করছ। যাঁরা প্রকৃত পণ্ডিত তাঁরা কিন্তু জীবিত কিংবা মৃত কারোর জন্যেই শোক করেন না।

 

 

১২

ন ত্বেবাহং জাতু নাসং ত্বং নেমে জনাধিপাঃ।

ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়মতঃপরম্‌।।

ন তু এব অহং জাতু ন আসং ত্বং ন ইমে জন-অধিপাঃ।

ন চ এব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়ম্‌ অতঃপরম্‌।।

এই জীবনের আগে, আমি কোনদিন ছিলাম না, এমন নয়। তুমি কিংবা উপস্থিত এই রাজন্যবর্গ কেউ ছিলে না, তাও নয়। এই দেহ ধারণের আগেও আমরা সকলে ছিলাম, ভবিষ্যতে দেহত্যাগের পরেও আমরা সকলেই থাকব।

 

 

১৩

দেহিনোঽস্মিন্‌ যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা।

তথা দেহান্তরপ্রাপ্তির্ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি।।

দেহিনঃ অস্মিন্‌ যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা।

তথা দেহান্তর-প্রাপ্তিঃ ধীরঃ তত্র ন মুহ্যতি।।

আমাদের এই দেহে কৌমার, যৌবন ও জরা উপস্থিত হয়, কিন্তু আত্মার কোন পরিবর্তন হয় না। মৃত্যুর পরেও আত্মা অবিকৃত থাকে। তাই যাঁরা প্রকৃত জ্ঞানী, তাঁরা মৃত্যুতে বিচলিত হন না।

 

 

১৪

মাত্রাস্পর্শাস্তু কৌন্তেয় শীতোষ্ণসুখদুঃখদা।

আগমাপায়িনোঽনিত্যাস্তাংস্তিতিক্ষস্ব ভারত।।

মাত্রাস্পর্শাঃ তু কৌন্তেয় শীত-উষ্ণ-সুখ-দুঃখদা।

আগম-অপায়িনঃ অনিত্যাঃ তান্‌ তিতিক্ষস্ব ভারত।।

হে কুন্তীপুত্র, বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সংযোগে শীত-গ্রীষ্ম, সুখ-দুঃখ ইত্যাদির অনুভব হয়, কিন্তু এই দ্বন্দ্ব মাঝে মাঝে আসে, আবার চলেও যায়, অর্থাৎ অনিত্য। অতএব, হে অর্জুন, এই অনুভব সহ্য করো।

 

 

১৫

যং হি ন ব্যথয়ন্ত্যেতে পুরুষং পুরুষর্ষভ।

সমদুঃখসুখং ধীরং সোঽমৃতত্বায় কল্পতে।।

যং হি ন ব্যথয়ন্তি এতে পুরুষং পুরুষ-ঋষভ।

সমদুঃখসুখং ধীরং সঃ অমৃতত্বায় কল্পতে।।

হে বীরশ্রেষ্ঠ পুরুষ, সুখ দুঃখে যাঁর সমান অনুভব, যিনি সুখে আনন্দিত কিংবা দুঃখে বিষণ্ণ হন না, তিনিই প্রকৃত জ্ঞানী এবং তিনিই পরম মোক্ষের অধিকারী।

 

 

১৬

নাসতো বিদ্যতে ভাবো নাভাবো বিদ্যতে সতঃ।

উভয়োরপি দৃষ্টোঽন্তস্ত্বনয়োস্তত্ত্বদর্শিভিঃ।।

না অসতঃ বিদ্যতে ভাবঃ ন অভাবঃ বিদ্যতে সতঃ।

উভয়োঃ অপি দৃষ্টঃ অন্তঃ তু অনয়ঃ তত্ত্ব-দর্শিভিঃ।।

আমাদের এই দেহ উৎপত্তি ও বিনাশশীল অর্থাৎ অনিত্য। কিন্তু আমাদের আত্মা সৃষ্টি ও বিনাশহীন, অর্থাৎ নিত্য। যাঁরা প্রকৃত জ্ঞানী তাঁরা এই দুই তত্ত্বই সম্যক উপলব্ধি করেছেন।

 

 

১৭

অবিনাশি তু তদ্বিদ্ধি যেন সর্বমিদং ততম্‌।

বিনাশমব্যয়স্যাস্য ন কশ্চিৎ কর্তুমর্হতি।।

অবিনাশি তু তৎ বিদ্ধি যেন সর্বম্‌ ইদং ততম্‌।

বিনাশম্‌ অব্যয়স্য অস্য ন কঃ চিৎ কর্তুম্‌ অর্হতি।।

 

এই অবিনাশী আত্মা, যা কিছু চোখে দেখা যায়, এমন সব বিষয়ে ব্যাপ্ত রয়েছেন। কোন ব্যক্তির পক্ষে এই অবিনাশী আত্মার বিনাশ সাধন সম্ভব নয়।

 

 

১৮

অন্তবন্ত ইমে দেহা নিত্যস্যোক্তাঃ শরীরিণঃ।

অনাশিনোঽপ্রমেয়স্য তস্মাদ্‌ যুধ্যস্ব ভারত।।

অন্ত-বন্তঃ ইমে দেহা নিত্যস্য উক্তাঃ শরীরিণঃ।

অনাশিনঃ অপ্রমেয়স্য তস্মাৎ যুধ্যস্ব ভারত।।

এই অবিনাশী আত্মাকে আমরা কোন ইন্দ্রিয় দিয়েই উপলব্ধি করতে পারি না। এই আত্মা যে দেহে বাস করেন, সেই অনিত্য দেহকে বলে নশ্বর। কাজেই, হে অর্জুন তুমি যুদ্ধ কর।

 

 

১৯

য এনং বেত্তি হন্তারং যশ্চৈনং মন্যতে হতম্‌।

উভৌ তৌ ন বিজানীতো নায়ং হন্তি ন হন্যতে।।

য এনং বেত্তি হন্তারং যঃ চ এনং মন্যতে হতম্‌।

উভৌ তৌ ন বিজানীতঃ ন অয়ং হন্তি ন হন্যতে।।

যে ব্যক্তি এই আত্মাকে হত্যাকারী মনে করেন, অথবা যিনি এই আত্মাকে মৃত বলে মনে করে্ন তাঁরা দুজনেই প্রকৃত এই তত্ত্বটি জানেন না যে, আত্মা কাউকে হত্যা করতে পারেন না, কিংবা নিহতও হন না।

 

 

 ২০

ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিৎ

নায়ং ভূত্বাঽভবিতা বা ন ভূয়ঃ।

অজো নিত্যঃ শাশ্বতোয়ং পুরাণো

ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।

ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিৎ

ন অয়ং ভূত্বা অভবিতা বা ন ভূয়ঃ।

অজঃ নিত্যঃ শাশ্বতঃ অয়ং পুরাণঃ

ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।

এই আত্মা না কখনো জন্ম নেয়, না কখনো মারা যায়। আগে ছিল না, কিন্তু এখন আছে – এই হল জন্ম। এখন আছে কিন্তু পরে থাকবে না – সে হল মৃত্যু। আত্মার জন্ম নেই, মৃত্যুও নেই। আত্মার কোন পরিবর্তন হয় না। আত্মার না ক্ষয় আছে, না আছে বৃদ্ধি। শরীর নষ্ট হলেও, আত্মার কোন বিনাশ ঘটে না।

 

 

২১

বেদাবিনাশিনং নিত্যং য এনমজমব্যয়ম্‌।

কথং স পুরুষঃ পার্থ কং ঘাতয়তি হন্তি কম্‌।।

বেদ অবিনাশিনং নিত্যং য এনম্‌-অজম্‌-অব্যয়ম্‌।

কথং সঃ পুরুষঃ পার্থ কং ঘাতয়তি হন্তি কম্‌।।

হে পার্থ, যে ব্যক্তি এই আত্মাকে নিত্য, অবিনশ্বর, জন্মহীন, ক্ষয়-বৃদ্ধিহীন ও মৃত্যুহীন বলে উপলব্ধি করেন, তিনি কিভাবেই বা কাউকে হত্যা করাতে পারেন, কিংবা হত্যা করতে পারেন?

 

 

২২

বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়

নবানি গৃহ্নাতি নরোঽপরাণি।

তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি

সংযাতি নবানি দেহী।।

বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়

নবানি গৃহ্নাতি নরঃ অপরাণি।

তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণানি অন্যানি

সংযাতি নবানি দেহী।।

মানুষ যেমন পুরোনো বস্ত্র ফেলে দিয়ে নতুন বস্ত্রে অঙ্গ সাজায়, আত্মাও ঠিক সেইভাবেই পুরোনো শরীর ত্যাগ করে, নতুন শরীর গ্রহণ করেন।

        

 

২৩-২৫

নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ।

ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ।।

অচ্ছেদ্যোঽয়মদাহ্যোঽয়মক্লেদ্যোঽশোষ্য এব চ।

নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুরচলোঽয়ং সনাতনঃ।।

অব্যক্ত্যোঽয়মচিন্ত্যোঽয়মবিকার্যোঽয়মুচ্যতে।

তস্মাদেবং বিদিত্বৈনং নানুশোচিতুমর্হসি।।

ন এনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি ন এনং দহতি পাবকঃ।

ন চ এনং ক্লেদয়ন্তি আপঃ ন শোষয়তি মারুতঃ।। অচ্ছেদ্যঃ অয়ম্‌ অদাহ্যঃ অয়ম্‌ অক্লেদ্যঃ অশোষ্যঃ এব চ।

নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুঃ অচলঃ অয়ং সনাতনঃ।।

অব্যক্ত্যঃ অয়ম্‌ অচিন্ত্যঃ অয়ম্‌ অবিকার্যঃ অয়ম্‌ উচ্যতে।

তস্মাৎ এবং বিদিত্বা এনং ন অনুশোচিতুম্‌ অর্হসি।।

এই আত্মাকে অস্ত্র দিয়ে ছিঁড়ে ফেলা যায় না, আগুনে পুড়িয়ে ফেলা যায় না। জল আত্মাকে ভেজাতে পারে না, বাতাস শুষ্ক করতেও পারে না। এই আত্মা নিত্য, সর্বব্যাপী, স্থির, অচল এবং সনাতন।  এই আত্মা সকল ইন্দ্রিয়ের অগোচর, ইনি চিন্তার অতীত, রূপান্তরহীন নির্বিকার – জ্ঞানীগণ এমনই বলে থাকেন। অতএব এতসব জেনেও তোমার এমন অনুতাপ করা উচিৎ নয়।

 

 

২৬

অথ চৈনং নিত্যজাতং নিত্যং বা মন্যসে মৃতম্‌।

তথাপি ত্বং মহাবাহো নৈনং শোচিতুমর্হসি।।

অথ চ এনং নিত্যজাতং নিত্যং বা মন্যসে মৃতম্‌।

তথা অপি ত্বং মহাবাহো ন এনং শোচিতুম্‌ অর্হসি।।

আর যদি এমনও মনে করা যায় যে, দেহের সৃষ্টিতে আত্মার সৃষ্টি, আর দেহের বিনাশেই আত্মার মৃত্যু, তাতেও, হে মহাবীর, তুমি অনুতাপ করতে পারো না।

 

 

২৭

জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।

তস্মাদপরিহার্যেঽর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।

জাতস্য হি ধ্রুবঃ মৃত্যুঃ ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।

তস্মাৎ পরিহার্যে অর্থে ন ত্বং শোচিতুম্‌ অর্হসি।।

কারণ, জাত ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত এবং মৃত ব্যক্তির পুনর্জন্মও নিশ্চিত। অতএব প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে যা অবশ্যম্ভাবী, তা নিয়ে তোমার অনুতাপ করা উচিত নয়।

                

 

২৮

অব্যক্তাদীনি ভূতানি ব্যক্তমধ্যানি ভারত।

অব্যক্তনিধনান্যেব তত্র কা পরিবেদনা।।

অব্যক্ত-আদীনি ভূতানি ব্যক্তমধ্যানি ভারত।

অব্যক্ত-নিধনানি এব তত্র কা পরিবেদনা।।

হে অর্জুন, জীবের শরীর জন্মের আগে ছিল না, মৃত্যুর পরেও থাকবে না। থাকে শুধু মধ্যবর্তী বর্তমানে। তার জন্যে এত শোক করছ কেন?

 

 

২৯

আশ্চর্যবৎ পশ্যতি কশ্চিদেনমাশ্চর্যবদ্‌

বদতি তথৈব চান্যঃ।

আশ্চর্যবচ্চৈনমন্যঃ শৃণোতি।

শ্রুত্বাপ্যেনং বেদ ন চৈব কশ্চিৎ।।

আশ্চর্যবৎ পশ্যতি কশ্চিৎ এনম্‌ আশ্চর্যবৎ

 বদতি তথা এব চ অন্যঃ।

আশ্চর্যবৎ চ এনম্‌ অন্যঃ শৃণোতি।

শ্রুত্বা অপি এনং বেদ ন চ এব কঃ চিৎ।

কেউ কেউ এই আত্মাকে দেখে আশ্চর্য হন। কেউ কেউ এই আত্মাকে আশ্চর্য বর্ণনা করেন। আরও কেউ এই আত্মাকে আশ্চর্যরূপে শুনতে পান। আবার কেউ শুনে, বলে বা দেখেও ঠিক বুঝতে পারেন না।

[যিনি আত্মাকে দেখেছেন তিনি আশ্চর্য। যিনি আত্মতত্ত্ব উপদেশ দেন বা শোনেন তিনিও আশ্চর্য। এই ধরনের আশ্চর্য জ্ঞানী কদাচিৎ দু একজনই হয়। (শাংকরভাষ্য)।]

 

 

৩০

দেহী নিত্যমবধ্যোঽয়ং দেহে সর্বস্য ভারত।

তস্মাৎ সর্বাণি ভূতানি ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।

দেহী নিত্যম্‌ অবধ্যঃ অয়ং দেহে সর্বস্য ভারত।

তস্মাৎ সর্বাণি ভূতানি ন ত্বং শোচিতুম্‌ অর্হসি।।

সমস্ত জীবের দেহে বসতি করেন যে আত্মা তাঁকে হত্যা করা যায় না। কাজেই শুধুমাত্র জীবদেহের জন্য তোমার এই শোক, তোমাকে মানায় না।

   

 

৩১

স্বধর্মমপি চাবেক্ষ্য ন বিকম্পিতুমর্হসি।

ধর্ম্যাদ্ধি যুদ্ধাচ্ছ্রেয়োঽন্যৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে।।

স্বধর্মম্‌ অপি চ অবেক্ষ্য ন বিকম্পিতুম্‌ অর্হসি।

ধর্ম্যাৎ হি যুদ্ধাৎ শ্রেয়ঃ অন্যৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে।।

আর স্বধর্মের কথাই যদি বলো, হে অর্জুন, তাও তোমার বিচলিত হওয়া উচিৎ নয়। কারণ ক্ষত্রিয়ের কাছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ করার চেয়ে মঙ্গলজনক কাজ আর কিছুই হতে পারে না।

 

 

৩২

যদৃচ্ছয়া চোপপন্নং স্বর্গদ্বারমপাবৃতম্‌।

সুখিনঃ ক্ষত্রিয়াঃ পার্থ লভন্তে যুদ্ধমীদৃশম্‌।।

যদৃচ্ছয়া চ উপপন্নং স্বর্গদ্বারম্‌ অপাবৃতম্‌।

সুখিনঃ ক্ষত্রিয়াঃ পার্থ লভন্তে যুদ্ধম্‌ ঈদৃশম্‌।।

হে পার্থ, তুমি একজন ভাগ্যবান ক্ষত্রিয়, কারণ স্বর্গের উন্মুক্ত দরজার মতো এমন ধর্মযুদ্ধ করার সুযোগ, এত সহজেই তুমি পেয়ে গেছ।

 

 

৩৩

অথ চেৎ ত্বমিমং ধর্ম্যং সংগ্রামং ন করিষ্যসি।

ততঃ স্বধর্মং কীর্তিং চ হিত্বা পাপমবাপ্স্যসি।।

অথ চেৎ ত্বম্‌ ইমং ধর্ম্যং সংগ্রামং ন করিষ্যসি।

ততঃ স্বধর্মং কীর্তিং চ হিত্বা পাপম্‌ অবাপ্স্যসি।।

আর তুমি যদি এই ধর্মযুদ্ধ না করো, তাহলে নিজের ধর্ম এবং কীর্তি হারিয়ে, তোমার পাওনা হবে অধর্ম,  আর অকীর্তির নিন্দা।

 

 

৩৪

অকীর্তিং চাপি ভূতানি কথয়িষ্যন্তি তেঽব্যয়াম্‌।

সম্ভাবিতস্য চাকীর্তির্মরণাদতিরিচ্যতে।।

অকীর্তিং চ অপি ভূতানি কথয়িষ্যন্তি তে অব্যয়াম্‌।

সম্ভাবিতস্য চ অকীর্তিঃ মরণাৎ অতিরিচ্যতে।।

তাছাড়াও তোমার এই অকীর্তির কথা চিরকাল সকলে বলতে থাকবে। তোমার মতো সম্মানীয় মানুষের পক্ষে এমন অখ্যাতি, মৃত্যুর থেকে অনেক বেশি ভয়ংকর।

 

 

৩৫

ভয়াদ্‌ রণাদুপরতং মংস্যন্তে ত্বাং মহারথাঃ।

যেষাং চ ত্বং বহুমতো ভূত্বা যাস্যসি লাঘবম্‌।।

ভয়াৎ রণাৎ উপরতং মংস্যন্তে ত্বাং মহারথাঃ।

যেষাং চ ত্বং বহুমতঃ ভূত্বা যাস্যসি লাঘবম্‌।।

রণক্ষেত্রে উপস্থিত মহাবীরগণ মনে করবেন, ভয় পেয়েই তুমি যুদ্ধ করছো না। যাঁরা এতদিন তোমায় সম্মান করে এসেছেন, তাঁরাই এখন তোমায় উপহাস করবেন।

 

 

৩৬

অবাচ্যবাদাংশ্চ বহূন্‌ বদিষ্যন্তি তবাহিতাঃ।

নিন্দন্তস্তব সামর্থ্যং ততো দুঃখতরং নু কিম্‌।।

অবাচ্য-বাদান্‌ চ বহূন্‌ বদিষ্যন্তি তব অহিতাঃ।

নিন্দন্তঃ তব সামর্থ্যং ততঃ দুঃখতরং নু কিম্‌।।

তোমার শত্রুরাও সুযোগ পেয়ে তোমার ক্ষমতার নিন্দা করে অনেক অকথা কুকথা বলবে। এর চেয়ে বেশী দুঃখজনক ব্যাপার আর কি হতে পারে?

 

 

৩৭

হতো বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম্‌।

তস্মাদুত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃতনিশ্চয়ঃ।।

হতঃ বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম্‌।

তস্মাৎ উত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃতনিশ্চয়ঃ।।

এই যুদ্ধে প্রাণ হারালে তোমার স্বর্গলাভ হবে, জয়ী হলে তোমার রাজ্যলাভ হবে। সুতরাং হে কুন্তীপুত্র অর্জুন, যুদ্ধের জন্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে প্রস্তুত হও।

 

 

৩৮

সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ।

ততো যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপমবাপ্স্যসি।।

সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভ-অলাভৌ জয়-অজয়ৌ।

ততঃ যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপম্‌ অবাপ্স্যসি।।

সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জয়-পরাজয়ের মধ্যে কোন ব্যবধান মনের মধ্যে না রেখে ধর্মযুদ্ধে্র জন্য প্রস্তুত হও। তাহলেই স্বজন হত্যার কোন পাপ আর তোমাকে স্পর্শ করবে না।

 

 

৩৯

এষা তেঽভিহিতা সাংখ্যে বুদ্ধির্যোগে ত্বিমাং শৃণু।

বুদ্ধ্যা যুক্তো যয়া পার্থ কর্মবন্ধং প্রহাস্যসি।।

এষা তে অভিহিতা সাংখ্যে বুদ্ধিঃ যোগে তু ইমাং শৃণু।

বুদ্ধ্যা যুক্তঃ যয়া পার্থ কর্মবন্ধং প্রহাস্যসি।।

হে পার্থ, যে জ্ঞান থেকে পরমাত্মাতত্ত্ব সম্যক ভাবে বোঝা যায় তাকে বলে সাংখ্য। এতক্ষণ তোমাকে জন্ম-মৃত্যুর সুখ-দুঃখ শোক-মোহ বিনাশকারী যে আত্মতত্ত্ব বর্ণনা করলাম, এটাই সাংখ্য। এখন তোমাকে কর্মযোগের কথা বলছি, শোনো। ফলের আশা ছেড়ে ধর্ম অনুসারী কাজ করাকেই কর্মযোগ বলে। নিষ্কাম কর্মযোগের এই তত্ত্ব বুঝতে পারলে, তোমার মন থেকে সমস্ত ভেদাভেদ দূর হয়ে যাবে।

       

 

৪০

নেহাভিক্রমনাশোঽস্তি প্রত্যবায়ো ন বিদ্যতে।

স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ।।

ন ইহ অভিক্রম-নাশঃ অস্তি প্রত্যবায়ঃ ন বিদ্যতে।

স্বল্পম্‌ অপি অস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতঃ ভয়াৎ।।

নিষ্কাম কর্মযোগে কোনো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয় না এবং কোন পাপও হয় না। খুব সামান্য নিষ্কাম কর্মযোগেও জন্ম-মৃত্যু, সুখ-দুঃখময় সংসারের মহাভয় থেকে মুক্ত থাকা যায়।

   

 

৪১

ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিরেকেহ কুরুনন্দন।

বহুশাখা হ্যনন্তাশ্চ বুদ্ধয়োঽব্যবসায়িনাম্‌।।

ব্যবসায়-আত্মিকা বুদ্ধিঃ একা ইহ কুরুনন্দন।

বহুশাখা হি অনন্তাঃ চ বুদ্ধয়ঃ অব্যবসায়িনাম্‌।।

হে কুরুনন্দন, নিষ্কাম কর্মযোগে একনিষ্ঠ প্রত্যয়বুদ্ধির উদয় হয়। আর যেহেতু কামনার কোনো সীমা নেই, তাই যারা ফলের আশায় কর্ম করে, তাদের বুদ্ধি বহুদিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে।

 

 

৪২-৪৪

যামিমাং পুষ্পিতাং বাচং প্রবদন্ত্যবিপশ্চিতঃ।

বেদবাদরতাঃ পার্থ নান্যদস্তীতিবাদিনঃ।।

কামাত্মানঃ স্বর্গপরা জন্মকর্মফলপ্রদাম্‌।

ক্রিয়াবিশেষবহুলাং ভোগৈশ্বর্যগতিং প্রতি।।

ভোগৈশ্বর্যপ্রসক্তানাং তয়াপহৃতচেতসাম্‌।

ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিঃ সমাধৌ ন বিধীয়তে।।

যাম্‌ ইমাং পুষ্পিতাং বাচং প্রবদন্তি অবিপশ্চিতঃ।

বেদবাদরতাঃ পার্থ ন অন্যৎ অস্তি ইতিবাদিনঃ।। ৪২

কামাত্মানঃ স্বর্গ-পরাঃ জন্ম-কর্ম-ফল-প্রদাম্‌।

ক্রিয়া-বিশেষ-বহুলাং ভোগ-ঐশ্বর্য-গতিং প্রতি।। ৪৩

ভোগ-ঐশ্বর্য-প্রসক্তানাং তয়া অপহৃত-চেতসাম্‌।

ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিঃ সমাধৌ ন বিধীয়তে।। ৪৪

হে পার্থ, অজ্ঞ লোকেরা বেদের নীতি ছাড়া অন্য কিছুই মানে না, তাদের বিশ্বাস, একমাত্র স্বর্গলাভের জন্যই সকল কর্ম করা উচিৎ। তারা কামনাপরায়ণ ও স্বর্গকামী। এই ধরনের ব্যক্তি জন্মান্তরের কর্মফল থেকে শুরু ক’রে, ভোগ ও ঐশ্বর্যলাভের জন্য নানান কর্মযোগের কথা খুব সুন্দর ব্যাখ্যা ক’রে থাকেন। যে ব্যক্তি ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি লোভী, সে কখনই একনিষ্ঠ হতে পারে না।

 

 

৪৫

ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা নিস্ত্রৈগুণ্যো ভবার্জুন।

নির্দ্বন্দ্বো নিত্যসত্ত্বস্থো নির্যোগক্ষেম আত্মবান্‌।।

ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা নিঃ-ত্রৈগুণ্যঃ ভব অর্জুন।

নির্দ্বন্দ্বঃ নিত্যসত্ত্বস্থঃ নির্যোগক্ষেম আত্মবান্‌।।

হে অর্জুন, বেদ সত্ত্ব, রজঃ আর তমঃ এই তিনগুণের কার্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ বেদ ফলের কামনায় কর্ম করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তুমি জন্ম-মৃত্যু, সুখ-দুঃখের দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হও। তিনগুণের কর্ম অনুসরণ না করে সর্বদা সত্ত্বগুণ অনুসরণ করো। যা তোমার নেই তা পাওয়ার জন্য যোগ এবং পাওয়া বস্তু রক্ষার জন্য যে ক্ষেম – এই দুই কর্মের চিন্তাই তুমি ত্যাগ করে আত্মস্থ হও।

 

 

৪৬

যাবানর্থ উদপানে সর্বতঃ সংপ্লুতোদকে।

তাবান্‌ সর্বেষু বেদেষু ব্রাহ্মণস্য বিজানতঃ।।

যাবান্‌ অর্থঃ উদপানে সর্বতঃ সংপ্লুত-উদকে।

তাবান্‌ সর্বেষু বেদেষু ব্রাহ্মণস্য বিজানতঃ।।

বন্যার জলে সমস্ত এলাকা যখন ভেসে যায়, কূপ এবং ছোটখাটো জলাশয়ও প্রয়োজনীয় জলে ভরে ওঠে। ঠিক তেমনই নিষ্কাম কর্মের চিত্তশুদ্ধিতে যে পরম আনন্দলাভ হয়, তাতে বেদে বর্ণিত সমস্ত কাম্য কর্মের ফলও উপলব্ধি করা যায়।

   

 

৪৭

কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।

মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোঽস্ত্বকর্মণি।।

কর্মণ্যেব অধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।

মা কর্মফলহেতুঃ ভূঃ মা তে সঙ্গঃ অস্তু অকর্মণি।।

তোমার অধিকার শুধুমাত্র কাজ করায়, কর্মফলে তোমার অধিকার নেই। কর্মফলের প্রত্যাশায় যেমন কোন কাজ করা উচিৎ নয়, তেমনই তোমার কর্মত্যাগের মতিও যেন না হয়।

 

 

৪৮

যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি সঙ্গং ত্যক্ত্বা ধনঞ্জয়।

সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোঃ সমো ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে।।

যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি সঙ্গং ত্যক্ত্বা ধনঞ্জয়।

সিদ্ধি-অসিদ্ধ্যোঃ সমঃ ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে।।

হে ধনঞ্জয়, ফলের কামনা ছেড়ে, সাফল্য কিংবা ব্যর্থতাকে একইভাবে গ্রহণ করে, একনিষ্ঠ যোগে সকল কাজ করতে থাক। যে কোন কর্মফলে মনকে নির্বিকার রাখাই হল যোগ।

 

 

 

৪৯

দূরেণ হ্যবরং কর্ম বুদ্ধিযোগাদ্‌ ধনঞ্জয়।

বুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণা ফলহেতবঃ।।

দূরেণ হি অবরং কর্ম বুদ্ধি-যোগাৎ ধনঞ্জয়।

বুদ্ধৌ শরণম্‌ অন্বিচ্ছ কৃপণা ফলহেতবঃ।।

ফলের কামনার জন্য কর্ম, নিষ্কাম কর্মের থেকে অত্যন্ত নিকৃষ্ট। কাজেই তুমি সত্ত্ববুদ্ধিতে কামনা বিহীন কর্ম করোকারণ যারা কিছু পাওয়ার আশায় কাজ করে তারা খুবই কৃপণ।

 

 

৫০

বুদ্ধিযুক্তো জহাতীহ উভে সুকৃতদুষ্কৃতে।

তস্মাদ্‌ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসু কৌশলম্‌।।

বুদ্ধিযুক্তঃ জহাতি ইহ উভে সুকৃত-দুষ্কৃতে।

তস্মাৎ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসু কৌশলম্‌।।

নিষ্কাম কর্মযোগী পুণ্য ও পাপের বোধ থেকে এই জীবনেই মুক্ত হয়ে যান। সুতরাং তুমি নিষ্কাম কর্ম করতে থাক। নিষ্কাম কর্মের কৌশলকেই যোগ বলে। পুণ্য কিংবা পাপ, জন্ম কিংবা মৃত্যুতে মনের সমভাবকেই নিষ্কাম কর্মের কৌশল বলে।

 

 

৫১

কর্মজং বুদ্ধিযুক্তা হি ফলং ত্যক্ত্বা মনীষিণঃ।

জন্মবন্ধবিনির্মুক্তাঃ পদং গচ্ছন্ত্যনাময়ম্‌।।

কর্মজং বুদ্ধিযুক্তা হি ফলং ত্যক্ত্বা মনীষিণঃ।

জন্ম-বন্ধ-বিনির্মুক্তাঃ পদং গচ্ছন্তি অনাময়ম্‌।।

নিষ্কাম কর্মযোগী মনীষিগণ তাঁদের কাজের সকল ফল ত্যাগ করে জন্ম-মৃত্যুর বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে থাকেন এবং জগতের সমস্ত উপদ্রবের ঊর্ধে নিরঙ্কুশ ব্রহ্মপদে উত্তীর্ণ হন।

   

 

 

৫২

যদা তে মোহকলিলং বুদ্ধির্ব্যতিতরিষ্যতি।

তদা গন্তাসি নির্বেদং শ্রোতব্যস্য শ্রুতস্য চ।।

যদা তে মোহকলিলং বুদ্ধিঃ ব্যতিতরিষ্যতি।

তদা গন্তাসি নির্বেদং শ্রোতব্যস্য শ্রুতস্য চ।।

যেদিন তোমার চিন্তা সমস্ত আসক্তি ও মোহের করাল গ্রাস অতিক্রম করে যাবে, সেদিন শাস্ত্রে যত কর্মফলের কথা তুমি শুনছ কিংবা শুনেছ, সে সব তোমার কাছে অর্থহীন প্রলাপ বলে মনে হবে।

       

 

 ৫৩

শ্রুতিবিপ্রতিপন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা।

সমাধাবচলা বুদ্ধিস্তদা যোগমবাপ্স্যসি।।

শ্রুতি-বিপ্রতিপন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা।

সমাধৌ অচলা বুদ্ধিঃ তদা যোগম্‌ অবাপ্স্যসি।।

কর্মফল সম্পর্কে নানান মতামত শুনে তোমার চিত্ত এখন বিক্ষিপ্ত। যেদিন তোমার উপলব্ধিতে পরমাত্মা্র স্বরূপ অচঞ্চল স্থায়িরূপ নেবে, সেদিন তোমার পরম তত্ত্বজ্ঞান অর্থাৎ যোগ লাভ ঘটে যাবে।

 

 

৫৪

অর্জুন উবাচ

স্থিতপ্রজ্ঞস্য কা ভাষা সমাধিস্থস্য কেশব।

স্থিতধীঃ কিং প্রভাষেত কিমাসীত ব্রজেত কিম্‌।।

অর্জুন উবাচ

স্থিতপ্রজ্ঞস্য কা ভাষা সমাধিস্থস্য কেশব।

স্থিতধীঃ কিং প্রভাষেত কিম্‌ আসীত ব্রজেত কিম্‌।।

অর্জুন বললেন – হে কেশব, সমাধিতে অবস্থান করা স্থিতপ্রজ্ঞ মানুষকে কিভাবে চিনতে পারব, তাঁরা কি ভাষায় কথা বলেন, কিভাবে থাকেন আর তাঁর চালচলনই বা কেমন হয়?

 

 

৫৫

শ্রীভগবানুবাচ

প্রজহাতি যদা কামান্‌ সর্বান্‌ পার্থ মনোগতান্‌।

আত্মন্যেবাত্মনা তুষ্টঃ স্থিতপ্রজ্ঞস্তদোচ্যতে।।

শ্রীভগবান্‌ উবাচ

প্রজহাতি যদা কামান্‌ সর্বান্‌ পার্থ মনোগতান্‌।

আত্মনি এব আত্মনা তুষ্টঃ স্থিতপ্রজ্ঞঃ তদা উচ্যতে।।

শ্রীভগবান বললেন – হে পার্থ, পরমাত্মার অনুভূতিতে যাঁর নিজের আত্মা সন্তুষ্ট হয়ে ওঠে এবং মনের সমস্ত কামনা বাসনা যিনি সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে পারেন, তাঁকে স্থিতপ্রজ্ঞ বলে। আত্মার কোন বাসনা হয় না, বাসনা থাকে শুধুমাত্র মানুষের মনে।

 

 

৫৬

দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ।

বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে।।

দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ।

বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীঃ মুনিঃ উচ্যতে।।

যিনি দুঃখের সময় উদ্বেগ করেন না, যিনি সুখের সময় উদাসীন থাকেন, যিনি সমস্ত আসক্তি, ভয় এবং  ক্রোধ জয় করতে পেরেছেন, সেইরকম মননশীল যোগীকেই স্থিতধী বা স্থিতপ্রজ্ঞা মুনি বলা হয়।

  

 

৫৭

যঃ সর্বত্রানভিস্নেহস্তত্তৎ প্রাপ্য শুভাশুভম্‌।

নাভিনন্দতি ন দ্বেষ্টি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা।।

যঃ সর্বত্র অনভিস্নেহঃ তৎ তৎ প্রাপ্য শুভাশুভম্‌।

নাভিনন্দতি ন দ্বেষ্টি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা।।

কোন বিষয়েই যাঁর কোন অনুরাগ নেই, ভাল বা মন্দ কোন কারণেই যিনি আনন্দিত হন না বা দুঃখ অনুভব করেন না, তাঁর অন্তরে স্থিতপ্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলা যায়।

 

 

৫৮

যদা সংহরতে চায়ং কূর্মোঽঙ্গানীব সর্বশঃ।

ইন্দ্রিয়াণীন্দ্রিয়ার্থেভ্যস্তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা।।

যদা সংহরতে চ অয়ং কূর্মঃ অঙ্গানি ইব সর্বশঃ।

ইন্দ্রিয়াণি ইন্দ্রিয়ার্থেভ্যঃ তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা।।

কচ্ছপ যেমন ভয় পেলে তার খোলসের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, একজন স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিও তেমনি সমস্ত বিষয় থেকেই নিজের সকল ইন্দ্রিয়কে নিরস্ত এবং সংযত রাখতে পারেন।

  

 

৫৯

বিষয়া বিনিবর্তন্তে নিরাহারস্য দেহিনঃ।

রসবর্জং রসোঽপ্যস্য পরং দৃষ্ট্বা নিবর্ততে।।

বিষয়া বিনিবর্তন্তে নিরাহারস্য দেহিনঃ।

রসবর্জং রসঃ অপি অস্য পরং দৃষ্ট্বা নিবর্ততে।।

অসমর্থ জড় কিংবা আতুর ব্যক্তি বিষয় উপভোগে অসমর্থ হলেও, তাদের বিষয়ের প্রতি আসক্তি থেকেই যায়, তারা স্থিতপ্রজ্ঞ হতে পারে নাপরমাত্মাকে অনুভবের পর, স্থিতপ্রজ্ঞ মানুষের বিষয়ের প্রতি আসক্তি ও ভোগের ইচ্ছা দুইই লোপ পায়। 

  

 

৬০

যততো হ্যপি কৌন্তেয় পুরুষস্য বিপশ্চিতঃ।

ইন্দ্রিয়াণি প্রমাথীনি হরন্তি প্রসভং মনঃ।।

যততঃ হি অপি কৌন্তেয় পুরুষস্য বিপশ্চিতঃ।

ইন্দ্রিয়াণি প্রমাথীনি হরন্তি প্রসভং মনঃ।।

হে কুন্তীপুত্র, মানুষের ইন্দ্রিয়গুলি মানুষের মনকে সর্বদা চঞ্চল ও বিক্ষিপ্ত করার কাজেই ব্যস্ত। বহু একনিষ্ঠ জ্ঞানী পুরুষের মনকেও এই ইন্দ্রিয়সকল দুর্বল করে তুলতে পারে।

 

 

৬১

তানি সর্বাণি সংযম্য যুক্ত আসীত মৎপরঃ।

বশে হি যস্যেন্দিয়াণি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা।।

তানি সর্বাণি সংযম্য যুক্ত আসীত মৎপরঃ।

বশে হি যস্য ইন্দিয়াণি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা।।

যে যোগী ব্যক্তি এই সমস্ত ইন্দ্রিয়কে সংযত করে, আত্মস্থ ও একনিষ্ঠ থাকতে পারেন, সমস্ত ইন্দ্রিয় যাঁর বশীভূত, তাঁর স্থিতপ্রজ্ঞা সুনিশ্চিত।

 

 

৬২

ধ্যায়তো বিষয়ান্‌ পুংসঃ সঙ্গস্তেষূপজায়তে।

সঙ্গাৎ সঞ্জায়ত কামঃ কামাৎ ক্রোধোঽভিজায়তে।।

ধ্যায়তঃ বিষয়ান্‌ পুংসঃ সঙ্গঃ তেষু উপজায়তে।

সঙ্গাৎ সঞ্জায়ত কামঃ কামাৎ ক্রোধঃ অভিজায়তে।।

বিষয়ের কথা চিন্তা করতে করতে বিষয়ের উপর আসক্তি তৈরি হয়, আসক্তি থেকে কামনার জন্ম হয়, আর কামনা থেকেই আসে ক্রোধ।

 

 

৬৩

ক্রোধাদ্‌ ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ।

স্মৃতিভ্রংশাদ্‌ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি।।

ক্রোধাৎ ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ।

স্মৃতিভ্রংশাদ্‌ বুদ্ধিনাশঃ বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি।।

ক্রোধ থেকে জন্ম নেয় মোহ, ভালো মন্দ বিবেচনার শক্তি লোপ পায়। মোহ থেকে আসে স্মৃতিবিভ্রম। স্মৃতিনাশ থেকে বুদ্ধিনাশ হয়, শুভ অশুভ বিচারের বুদ্ধি লোপ পায়। বুদ্ধিনাশ হলে মানুষ মনুষ্যত্বই হারিয়ে ফেলে।

     

 

৬৪

রাগদ্বেষবিযুক্তৈস্তু বিষয়ানিন্দ্রিয়ৈশ্চরন্‌।

আত্মবশ্যৈর্বিধেয়াত্মা প্রসাদমধিগচ্ছতি।।

রাগদ্বেষবিযুক্তৈঃ তু বিষয়ান্‌ ইন্দ্রিয়ৈঃ চরন্‌।

আত্মবশ্যৈঃ বিধেয়-আত্মা প্রসাদম্‌ অধিগচ্ছতি।।

একজন সংযত মনের মানুষ, আসক্তি ও হিংসা ত্যাগ করে, ইন্দ্রিয়সমূহকে নিজের সংযমে রেখে, দেহধারণের জন্য একান্ত জরুরি সকল বিষয় উপভোগ করেও প্রসন্নতা লাভ করতে পারেন।

 

 

৬৫

প্রসাদে সর্বদুঃখানাং হানিরস্যোপজায়তে।

প্রসন্নচেতসো হ্যাশু বুদ্ধিঃ পর্যবতিষ্ঠতে।।

প্রসাদে সর্বদুঃখানাং হানিঃ অস্য উপজায়তে।

প্রসন্নচেতসঃ হি আশু বুদ্ধিঃ পর্যবতিষ্ঠতে।।

প্রসন্ন চিত্ত মানুষের বুদ্ধি অবিলম্বে পরমপুরুষের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়, এবং তাঁর অনুগ্রহে সকল দুঃখের অবসান হয়।

[মানুষের জীবনে তিন ধরনের দুঃখ উপস্থিত হতে পারে। আধ্যাত্মিক – মানসিক বা দৈহিক ব্যাধিজনিত দুঃখ, আধিদৈবিক – ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণ জনিত দুঃখ এবং আধিভৌতিক – সাপ, বিছে ইত্যাদির দংশন জনিত কষ্ট।]


 

৬৬

নাস্তি বুদ্ধিরযুক্তস্য ন চাযুক্তস্য ভাবনা।

ন চাভাবয়তঃ শান্তিরশান্তস্য কুতঃ সুখম্‌।।

নাস্তি বুদ্ধিঃ অযুক্তস্য ন চ অযুক্তস্য ভাবনা।

ন চ অভাবয়তঃ শান্তিঃ অশান্তস্য কুতঃ সুখম্‌।।

অপ্রসন্ন চিত্ত মানুষের আত্ম উপলব্ধি হয় না, আত্ম উপলব্ধিহীন মানুষের পরমার্থ চিন্তায় অনুরাগ জন্মায় না। পরমার্থ চিন্তাহীন ব্যক্তির বিষয়তৃষ্ণার শান্তি হয় না। যে ব্যক্তি বিষয়ের প্রতি আসক্ত তার প্রকৃত সুখ কোথায়?

    

 

৬৭

ইন্দ্রিয়াণাং হি চরতাং যন্মনোঽনুবিধীয়তে।

তদস্য হরতি প্রজ্ঞাং বায়ুর্নাবমিবাম্ভসি।।

ইন্দ্রিয়াণাং হি চরতাং যৎ মনঃ অনুবিধীয়তে।

তৎ অস্য হরতি প্রজ্ঞাং বায়ুঃ নাবম্‌ ইব অম্ভসি।।

জলে ভাসমান নৌকাকে বাতাস যেমন বিক্ষিপ্ত করে তোলে, তেমনই ইন্দ্রিয়ের বশীভূত চিত্ত যদি ইন্দ্রিয়ের সর্বময় কর্তৃত্ব মেনে নেয়, তাহলে সেই চিত্ত মানুষের বিবেক বোধকে বিভ্রান্ত করতে থাকে

 

 

৬৮

তস্মাদ্‌ যস্য মহাবাহো নিগৃহীতানি সর্বশঃ।

ইন্দ্রিয়াণীন্দ্রিয়ার্থেভ্যস্তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা।।

তস্মাৎ যস্য মহাবাহো নিগৃহীতানি সর্বশঃ।

ইন্দ্রিয়াণি ইন্দ্রিয়ার্থেভ্যঃ তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা।।

সেই কারণে, হে মহাবীর, যে ব্যক্তি সকল বিষয়ের থেকে ইন্দ্রিয়কে সংযত ও নিয়ন্ত্রিত করতে পেরেছেন, তিনিই প্রকৃত স্থিতপ্রজ্ঞ।

 

 

৬৯

যা নিশা সর্বভূতানাং তস্যাং জাগর্তি সংযমী।

যস্যাং জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশ্যতো মুনেঃ।।

যা নিশা সর্বভূতানাং তস্যাং জাগর্তি সংযমী।

যস্যাং জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশ্যতো মুনেঃ।।

অজ্ঞানের অন্ধকারে সাধারণ মানুষ যে সময়কে রাত্রি মনে করে, সেই সময় স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি জেগে থাকেন, আর সাধারণ মানুষ বিষয়ের আলোয় যে সময় জেগে থাকে, স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি সেই সময়কে রাত্রি মনে করেন।

 

 

৭০

আপূর্যমাণমচলপ্রতিষ্ঠং

সমুদ্রমাপঃ প্রবিশন্তি যদ্বৎ।

তদ্বৎ কামা যং প্রবিশন্তি সর্বে

স শান্তিমাপ্নোতি ন কামকামী।।

আপূর্যমাণম্‌ অচলপ্রতিষ্ঠং

সমুদ্রমাপঃ প্রবিশন্তি যদ্বৎ।

তদ্বৎ কামা যং প্রবিশন্তি সর্বে

স শান্তিম্‌ আপ্নোতি ন কামকামী।।

সমস্ত নদীর জল সাগরে মিশলেও বিপুল সাগরের যেমন কোন পরিবর্তন হয় না, তেমনি সমস্ত বিষয় কামনা স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যে বিলীন হলেও তিনি শান্ত থাকেন। কিন্তু কামনায় অভিভূত সাধারণ মানুষ কখনো শান্তি পায় না।

  

 

৭১

বিহায় কামান্‌ যঃ সর্বান্‌ পুমাংশ্চরতি নিঃস্পৃহঃ।

নির্মমো নিরহঙ্কারঃ স শান্তিমধিগচ্ছতি।।

বিহায় কামান্‌ যঃ সর্বান্‌ পুমান্‌ চরতি নিঃস্পৃহঃ।

নির্মমঃ নিরহঙ্কারঃ স শান্তিম্‌ অধিগচ্ছতি।।

যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা ত্যাগ করে নির্বিকার, নিরহঙ্কার এবং সমস্ত বিষয়ের প্রতি আসক্তি মুক্ত হয়ে থাকতে পারেন, তিনিই পরম শান্তি লাভ করেন।

 

 

৭২

এষা ব্রাহ্মী স্থিতি পার্থ নৈনাং প্রাপ্য বিমুহ্যতি।

স্থিত্বাস্যামন্তকালেঽপি ব্রহ্মনির্বাণমৃচ্ছতি।।

এষা ব্রাহ্মী স্থিতি পার্থ ন এনাং প্রাপ্য বিমুহ্যতি।

স্থিত্বা অস্যাম্‌ অন্তকালে অপি ব্রহ্মনির্বাণম্‌ ঋচ্ছতি।।

হে পার্থ, এই রকম একনিষ্ঠ ব্রহ্মজ্ঞান যে ব্যক্তি লাভ করতে পারেন, সংসারের কোন বিষয়ের প্রতি তাঁর কোন মোহ অবশিষ্ট থাকতে পারে না। এই নিষ্ঠা নিয়ে মৃত্যু হলেও তিনি পরমব্রহ্মে মিলিত হন। 

 

সাংখ্যযোগ সমাপ্ত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন পোস্টগুলি

ধর্মাধর্ম - ৩/২

  ["ধর্মাধর্ম"-এর তৃতীয় পর্বের প্রথম পর্বাংশ  পড়ে নিতে পারেন এই সূত্র থেকে " ধর্মাধর্ম - ৩/১ " তৃতীয় পর্ব - দ্বিতীয়  পর্...