পঞ্চম অধ্যায়ঃ সন্ন্যাসযোগ
৫/১ অর্জুন উবাচ অর্জুন উবাচ
সন্ন্যাসং কর্মণাং কৃষ্ণ
পুনর্যোগঞ্চ শংসসি। সন্ন্যাসং
কর্মণাং কৃষ্ণ পুনঃ যোগং চ শংসসি।
যচ্ছ্রেয় এতয়োরেকং
তন্মেব্রূহি সুনিশ্চিতম্।। যৎ শ্রেয় এতয়োঃ একং তৎ মে
ব্রূহি সুনিশ্চিতম্।।
অর্জুন বললেন- হে কৃষ্ণ, তুমি একবার কর্মত্যাগ,
সন্ন্যাসের
কথা বলছ, আবার কর্মযোগের প্রশংসাও করছ; এই দুই পন্থার মধ্যে একটির কথা বলো, যেটি নিশ্চিতভাবে বেশী মঙ্গলকর।
৫/২ শ্রীভগবানুবাচ শ্রীভগবান্ উবাচ
সন্ন্যাসঃ কর্মযোগশ্চ
নিঃশ্রেয়সকরাবুভৌ। সন্ন্যাসঃ
কর্মযোগঃ চ নিঃশ্রেয়সকরৌ উভৌ।
তয়োস্তু কর্মসন্ন্যাসাৎ
কর্মযোগো বিশিষ্যতে।। তয়ঃ তু কর্মসন্ন্যাসাৎ কর্মযোগঃ বিশিষ্যতে।।
শ্রীভগবান বললেন- সন্ন্যাস
অর্থাৎ কর্মত্যাগ এবং কর্মযোগ উভয়পন্থাতেই পরমমুক্তি সম্ভব। কিন্তু তার মধ্যেও
কর্মত্যাগের থেকে কর্মযোগ অনেক বেশী মঙ্গলকর পন্থা।
৫/৩ জ্ঞেয়ঃ স নিত্যসন্ন্যাসী যো ন দ্বেষ্টি ন কাঙ্ক্ষতি। জ্ঞেয়ঃ সঃ নিত্যসন্ন্যাসী যঃ ন দ্বেষ্টি ন
কাঙ্ক্ষতি।
নির্দ্বন্দ্বো হি মহাবাহো
সুখং বন্ধাৎ প্রমুচ্যতে।। নির্দ্বন্দ্বঃ হি
মহাবাহো সুখং বন্ধাৎ প্রমুচ্যতে।।
যে ব্যক্তির দ্বেষ নেই, আসক্তি নেই অর্থাৎ যিনি কামনাহীন এবং নির্বিকার হয়ে কর্ম
করেন, তাঁকেই নিত্যসন্ন্যাসী বলে
জানবে। যেহেতু, হে মহাবীর, রাগদ্বেষ, সুখ-দুঃখের
দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তিই সংসারের বন্ধন থেকে অনায়াসে মুক্ত হতে পারেন।
৫/৪ সাংখ্যযোগৌ পৃথগ্ বালাঃ প্রবদন্তি ন পণ্ডিতাঃ। সাংখ্যযোগৌ পৃথগ্ বালাঃ প্রবদন্তি ন পণ্ডিতাঃ।
একমপ্যাস্থিতঃ
সম্যগুভয়োর্বিন্দতে ফলম্।। একম্ অপি
আস্থিতঃ সম্যগ্ উভয়োঃ বিন্দতে ফলম্।।
অবোধ জনেরা সাংখ্যযোগ ও
কর্মযোগকে আলাদা বলে, কিন্তু পণ্ডিতেরা তা
বলেন না। এই দুই পন্থার যে কোন একটিকে নিষ্ঠা নিয়ে পালন করলে উভয়ের একই ফলই পাওয়া
যায়।
৫/৫ যৎ সাংখ্যৈঃ প্রাপ্যতে স্থানং তদ্যোগৈরপি গম্যতে। যৎ সাংখ্যৈঃ প্রাপ্যতে স্থানং তৎ যোগৈঃ অপি
গম্যতে।
একং সাংখ্যঞ্চ যোগঞ্চ যঃ
পশ্যতি স পশ্যতি।। একং সাংখ্যঞ্চ
যোগঞ্চ যঃ পশ্যতি স পশ্যতি।।
জ্ঞাননিষ্ঠ সাংখ্যযোগী যে
পরমপদ লাভ করে থাকেন, একনিষ্ঠ কর্মযোগীও
সেই একই পদ লাভ করেন। কাজেই যিনি সাংখ্য এবং কর্মকে একই দৃষ্টিতে দেখেন, তিনিই সঠিক দেখেন।
৫/৬ সন্ন্যাসস্তু মহাবাহো দুঃখমাপ্তুমযোগতঃ। সন্ন্যাসঃ তু মহাবাহো দুঃখম্ আপ্তুম্
অযোগতঃ।
যোগযুক্তো মুনির্ব্রহ্ম ন
চিরেণাধিগচ্ছতি।। যোগযুক্তো মুনিঃ ব্রহ্ম ন চিরেণ অধিগচ্ছতি।।
কিন্তু হে মহাবীর, নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠান ছাড়া জ্ঞাননিষ্ঠ সন্ন্যাসের পথ
কষ্টকর। কিন্তু কর্মযোগী ব্যক্তি সন্ন্যাসী হয়ে খুব সহজেই ব্রহ্মলাভ করেন।
.৫/৭ যোগযুক্তো
বিশুদ্ধাত্মা বিজিতাত্মা জিতেন্দ্রিয়ঃ। যোগযুক্তঃ বিশুদ্ধ-আত্মা বিজিত-আত্মা জিতেন্দ্রিয়ঃ।
সর্বভূতাত্মভূতাত্মা
কুর্বন্নপি ন লিপ্যতে।। সর্বভূত আত্মভূতাত্মা কুর্বন্ ন অপি লিপ্যতে।।
একনিষ্ঠ কর্মযোগীর চিন্তা
পবিত্র হয়, সমস্ত ইন্দ্রিয়কে তিনি সংযমে
রেখে সকল জীবের আত্মাকে নিজের আত্মায় উপলব্ধি করেন। সেই কারণে, তিনি কর্ম করলেও কর্মের বাঁধনে বদ্ধ হন না।
৫/৮-৯ নৈব কিঞ্চিৎ করোমীতি যুক্তো মন্যেত তত্ত্ববিৎ। ন এব কিঞ্চিৎ করোমি ইতি যুক্তঃ মন্যেত তত্ত্ববিৎ।
পশ্যন্ শৃণ্বন্ স্পৃশন্ জিঘ্রন্নশ্নন্ গচ্ছন্ স্বপন্ শ্বসন্।। পশ্যন্ শৃণ্বন্ স্পৃশন্ জিঘ্রন্ অশ্নন্ গচ্ছন্ স্বপন্ শ্বসন্।।
প্রলপন্ বিসৃজন্
গৃহ্নন্নুন্মিষন্নিমিষন্নপি। প্রলপন্ বিসৃজন্ গৃহ্নন্ উন্মিষন্ নিমিষন্ অপি।
ইন্দ্রিয়াণীন্দ্রিয়ার্থেষু
বর্তন্ত ইতি ধারয়ন্।। ইন্দ্রিয়াণি
ইন্দ্রিয়ার্থেষু বর্তন্ত ইতি ধারয়ন্।। ৯
একনিষ্ঠ কর্মযোগী
পরমতত্ত্বজ্ঞানী হয়েও দেখেন, শোনেন, স্পর্শ করেন, গন্ধ নেন, আহার করেন, চলাফেরা করেন, নিদ্রাগত হন, শ্বাস ত্যাগ, প্রশ্বাস গ্রহণ,
চোখের
পল্লব তোলা, নামানো সবই করেন। কিন্তু তাঁর
দৃঢ় প্রত্যয় থাকে যে, তিনি কিছুই করছেন না; দেহের ইন্দ্রিয়সমূহ তাদের নিজস্ব প্রবৃত্তি পালন করছে
মাত্র।
৫/১০ ব্রহ্মণ্যাধায় কর্মাণি সঙ্গং ত্যক্ত্বা করোতি যঃ। ব্রহ্মণি
আধায় কর্মাণি সঙ্গং ত্যক্ত্বা করোতি যঃ।
লিপ্যতে ন স পাপেন
পদ্মপত্রমিবাম্ভসা।। লিপ্যতে ন স পাপেন পদ্মপত্রম্ ইব অম্ভসা।।
যিনি কর্মফলের আসক্তি ত্যাগ
ক’রে, সমস্ত কর্ম পরমেশ্বরে সমর্পণ
করেন, পদ্মপাতায় জলের মতো, পাপ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না।
৫/১১ কায়েন মনসা বুদ্ধ্যা কেবলৈরিন্দ্রিয়ৈরপি। কায়েন
মনসা বুদ্ধ্যা কেবলৈ ইন্দ্রিয়ৈঃ অপি।
যোগিনঃ কর্ম কুর্বন্তি সঙ্গং
ত্যক্ত্বাত্মশুদ্ধয়ে।। যোগিনঃ কর্ম কুর্বন্তি সঙ্গং ত্যক্ত্বা
আত্মশুদ্ধয়ে।।
নিষ্কাম কর্মযোগী ফলের
প্রত্যাশা ত্যাগ ক’রে, নির্বিকার চিত্তে, দেহ, মন, বুদ্ধি এবং সমস্ত ইন্দ্রিয়ের প্রয়োগে শুধুমাত্র
চিত্তশুদ্ধির জন্যে কর্ম করেন।
৫/১২ যুক্তঃ কর্মফলং ত্যক্ত্বা শান্তিমাপ্নোতি নৈষ্ঠিকীম্। যুক্তঃ কর্মফলং ত্যক্ত্বা
শান্তিম্ আপ্নোতি নৈষ্ঠিকীম্।
অযুক্তঃ কামকারেণ ফলে সক্তো
নিবধ্যতে।। অযুক্তঃ কামকারেণ ফলে সক্তঃ নিবধ্যতে।।
কর্মফলের আসক্তি ত্যাগ ক’রে
একনিষ্ঠ কর্মযোগী পরম শান্তি লাভ করেন। আর যারা ফলের লোভে কর্ম করে, তারা কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
৫/১৩ সর্বকর্মাণি মনসা সংন্যস্যাস্তে সুখং বশী। সর্বকর্মাণি মনসা সংন্যস্য আস্তে সুখং বশী।
নবদ্বারে পুরে দেহী নৈব
কুর্বন্ন কারয়ন্।। নবদ্বারে পুরে দেহী ন এব কুর্বন্ ন কারয়ন্।।
ইন্দ্রিয়জয়ী ব্যক্তি মন থেকে
সমস্ত কর্ম ত্যাগ ক’রে, না নিজে কোন কর্ম
করেন, না কাউকে দিয়ে কর্ম করিয়ে নেন
এবং এইভাবেই নবদ্বারযুক্ত দেহভবনে তিনি আনন্দে বাস করেন।
[বেদে চার রকম কর্মের উল্লেখ আছেঃ- নিত্যকর্ম -
সন্ধ্যাবন্দনা ইত্যাদি দৈনিক অবশ্য কর্তব্য,
নৈমিত্তিককর্ম
– ঝড়, প্লাবন বা গৃহদাহ থেকে রক্ষার
নিমিত্ত, কাম্যকর্ম – রাজ্য, স্বর্গলাভ ইত্যাদির কামনায় এবং নিষিদ্ধকর্ম – ব্রাহ্মণহত্যা, ভ্রূণহত্যা ইত্যাদি। কাম্যকর্ম কর্মযোগীর ত্যাগ করা উচিৎ
এবং নিষিদ্ধকর্ম সকলেরই ত্যাগ করা উচিৎ।
মানুষের মুখমণ্ডলে সাতটি
ছিদ্র ও নিম্নদেহে মল-মূত্র ত্যাগ করার জন্য দুইটি ছিদ্র - মোট নয়টি ছিদ্রযুক্ত
মানবশরীরকে নবদ্বারযুক্ত ভবন বলা হয়।]
৫/১৪ ন কর্তৃত্বং ন কর্মাণি লোকস্য সৃজতি প্রভুঃ। ন কর্তৃত্বং ন কর্মাণি লোকস্য সৃজতি প্রভুঃ।
ন কর্মফলসংযোগং স্বভাবস্তু
প্রবর্ততে।। ন কর্মফলসংযোগং স্বভাবঃ তু প্রবর্ততে।।
সমস্ত জগতের যিনি প্রভু
অর্থাৎ ঈশ্বর মানুষের আত্মায় না কর্তৃত্ব সৃষ্টি করেন, না কর্ম এবং কর্মফলের প্রত্যাশা সৃষ্টি করেন, কিন্তু এমন আচরণই মানুষের স্বভাব।
৫/১৫ নাদত্তে কস্যচিৎ পাপং ন চৈব সুকৃতং বিভুঃ। নাদত্তে কস্যচিৎ পাপং ন চ এব সুকৃতং বিভুঃ।
অজ্ঞানেনাবৃতং জ্ঞানং তেন
মুহ্যন্তি জন্তবঃ।। অজ্ঞানেন আবৃতং জ্ঞানং তেন মুহ্যন্তি জন্তবঃ।।
আত্মা কোন ব্যক্তিরই পাপ
গ্রহণ করেন না, পুণ্যও গ্রহণ করেন না। জীবের
শুভবুদ্ধি অজ্ঞান ও অবিদ্যায় আচ্ছন্ন থাকার ফলেই জীব মোহগ্রস্ত হয়।
৫/১৬ জ্ঞানেন তু তদজ্ঞানং যেষাং নাশিতমাত্মনঃ। জ্ঞানেন তু তৎ অজ্ঞানং যেষাং নাশিতম্ আত্মনঃ।
তেষামাদিত্যবজ্জ্ঞানং
প্রকাশয়তি তৎপরম্। তেষাম্ আদিত্যবৎ জ্ঞানং প্রকাশয়তি তৎপরম্।
কিন্তু আত্মায় পরমজ্ঞান
উপলব্ধি ক’রে, সেই অজ্ঞানকে যিনি নাশ করতে
পেরেছেন, সূর্যের মতো দীপ্ত তাঁর সেই
জ্ঞান পরমব্রহ্মকে উদ্ভাসিত করে।
৫/১৭ তদ্বুদ্ধয়স্তদাত্মানস্তন্নিষ্ঠাস্তৎপরায়ণাঃ। তৎবুদ্ধয়ঃ তৎ আত্মানঃ তৎ নিষ্ঠাঃ তৎপরায়ণাঃ।
গচ্ছন্ত্যপুনরাবৃত্তিং
জ্ঞাননিধূর্তকল্মষাঃ।। গচ্ছন্তি অপুনঃ
আবৃত্তিং জ্ঞাননিধূর্তকল্মষাঃ।।
ব্রহ্মে একনিষ্ঠ যাঁর বুদ্ধি, নিজের আত্মায় যিনি ব্রহ্মকে উপলব্ধি করেন, ব্রহ্মচিন্তায় যিনি স্থির, ব্রহ্মতেই যাঁর আশ্রয় এবং ব্রহ্মজ্ঞানে যাঁর মন থেকে পাপ-পুণ্যের বোধ ধুয়ে
গিয়েছে, তাঁর পুনর্জন্ম হয়না।
৫/১৮ বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি। বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি।
শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ
সমদর্শিনঃ।। শুনি চ এব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ
সমদর্শিনঃ।।
বিদ্বান এবং বিনীত ব্রাহ্মণ
অথবা চণ্ডাল, গাভী, হাতি অথবা কুকুর,
সকলকেই
যিনি সমান চোখে দেখেন, তিনিই প্রকৃত
ব্রহ্মজ্ঞ পণ্ডিত।
[গঙ্গাজলে কিংবা সুরায় সূর্যের আলো পড়লে, সেই আলোয় গঙ্গাজলের গুণ কিংবা সুরার দোষ অর্শায় না, তেমনই ব্রহ্মজ্ঞানীকে শুদ্ধি বা অশুদ্ধি স্পর্শ করতে পারে
না।– শ্রীমধুসূদন সরস্বতী]
৫/১৯ ইহৈব তৈর্জিতঃ সর্গো যেষাং সাম্যে স্থিতং মনঃ। ইহ এব তৈঃ জিতঃ সর্গঃ যেষাং সাম্যে স্থিতং মনঃ।
নির্দোষং হি সমং ব্রহ্ম
তস্মাদ্ ব্রহ্মণি তে স্থিতাঃ।। নির্দোষং
হি সমং ব্রহ্ম তস্মাদ্ ব্রহ্মণি তে স্থিতাঃ।।
যাঁদের মন সর্বদা সমভাবে
অবিচলিত থাকে, এই জীবনেই তাঁরা সংসারের
বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যান। ব্রহ্মজ্ঞান যেহেতু দোষগুণের অতীত এবং সর্বত্র
সমভাবসম্পন্ন, সেহেতু ব্রহ্মভাবেই তাঁরা
স্থির থাকেন।
৫/২০ ন প্রহৃষ্যেৎ প্রিয়ং প্রাপ্য নোদ্বিজেৎ প্রাপ্য চাপ্রিয়ম্। ন প্রহৃষ্যেৎ প্রিয়ং প্রাপ্য ন উদ্বিজেৎ প্রাপ্য
চ
অপ্রিয়ম্।
স্থিরবুদ্ধিরসংমূঢ়ো
ব্রহ্মবিদ্ ব্রহ্মণি স্থিতঃ।। স্থিরবুদ্ধিঃ
অসংমূঢ়ঃ ব্রহ্মবিৎ ব্রহ্মণি স্থিতঃ।।
ব্রহ্মজ্ঞানীর মন ব্রহ্মে
স্থির থাকে, তিনি স্থিতপ্রজ্ঞ ও মোহশূণ্য
হন। প্রিয় জিনিষ পেলে তিনি উৎফুল্ল হন না এবং অপ্রিয় জিনিষ প্রাপ্তিতে উদ্বিগ্নও
হন না।
৫/২১ বাহ্যস্পর্শেষ্বসক্তাত্মা বিন্দত্যাত্মনি যৎ সুখম্। বাহ্যস্পর্শেষু অসক্ত আত্মা বিন্দতি আত্মনি যৎ
সুখম্।
স ব্রহ্মযোগযুক্তাত্মা
সুখমক্ষয়মশ্নুতে।। সঃ ব্রহ্মযোগযুক্ত আত্মা সুখম্ অক্ষয়ম্
অশ্নুতে।।
যাঁর মন বাইরের সমস্ত বিষয়ে
আসক্তিহীন, তিনি অন্তরে যে সুখ অনুভব
করেন, ব্রহ্মজ্ঞান উপলব্ধির পর সেই
তিনিই নিত্য আনন্দে বিভোর হয়ে থাকেন।
৫/২২ যে হি সংস্পর্শজা ভোগা দুঃখযোনয় এব তে। যে হি সংস্পর্শজা ভোগাঃ দুঃখযোনয়ঃ এব তে।
আদ্যন্তবন্তঃ কৌন্তেয় ন তেষু
রমতে বুধঃ।। আদি-অন্তবন্তঃ কৌন্তেয় ন তেষু
রমতে বুধঃ।।
হে কুন্তীপুত্র অর্জুন, ইন্দ্রিয়ের অনুভব থেকে যে সুখ আসে, সে সুখ ক্ষণস্থায়ী এবং জীবের দুঃখের কারণ। সেই কারণেই আদি ও
অন্তের জ্ঞানবিশিষ্ট প্রকৃত জ্ঞানী এই সুখকে পছন্দ করেন না।
৫/২৩ শক্নোতীহৈব যঃ সোঢ়ুং প্রাক্ শরীরবিমোক্ষণাৎ। শক্নোতী হি এব যঃ সোঢ়ুং প্রাক্ শরীরবিমোক্ষণাৎ।
কামক্রোধোদ্ভবং বেগং স যুক্তঃ
স সুখী নরঃ।। কামক্রোধ উদ্ভবং বেগং স
যুক্তঃ স সুখী নরঃ।।
এই জীবন সমাপ্তির আগেই মনের
কাম ও ক্রোধের আবেগ যিনি সংযম করতে সক্ষম হন,
তিনিই
জ্ঞানী এবং তিনিই সুখী।
৫/২৪ যোঽন্তঃসুখোঽন্তরারামস্তথান্তর্জ্যোতিরেব যঃ। যঃ অন্তঃসুখঃ অন্তঃ আরামঃ তথা অন্তঃ
জ্যোতিঃ
এব যঃ।
স যোগী ব্রহ্মনির্বাণং
ব্রহ্মভূতোঽধিগচ্ছতি।। সঃ যোগী ব্রহ্মনির্বাণং ব্রহ্মভূতঃ
অধিগচ্ছতি।।
যিনি নিজের অন্তরেই সুখ অনুভব
করেন, যিনি নিজের অন্তরের লীলায়
আনন্দ অনুভব করেন, দীপ্ত আলোয় যাঁর
অন্তর উজ্জ্বল, সেই জ্ঞানীব্যক্তি ব্রহ্মময়
হয়ে পরমমুক্তি লাভ করেন।
৫/২৫ লভন্তে ব্রহ্মনির্বাণমৃষয়ঃ ক্ষীণ কল্মষঃ। লভন্তে
ব্রহ্মনির্বাণম্ ঋষয়ঃ ক্ষীণ কল্মষঃ।
ছিন্নদ্বৈধা যতাত্মানঃ
সর্বভূতহিতে রতাঃ।। ছিন্নদ্বৈধা যতাত্মানঃ সর্বভূতহিতে
রতাঃ।।
যাঁর চিত্ত দোষ-গুণের অতীত, যাঁর চিন্তা সংশয়মুক্ত, ইন্দ্রিয় বন্ধন যিনি ত্যাগ করতে পেরেছেন,
সমস্ত
জীবের মঙ্গলকারী সেই ঋষি পরমব্রহ্মেই নির্বাণ লাভ করেন।
৫/২৬ কামক্রোধবিযুক্তানাং যতীনাং যতচেতসাম্। কাম-ক্রোধ-বিযুক্তানাং যতীনাং যত-চেতসাম্।
অভিতো ব্রহ্মনির্বাণং বর্ততে
বিদিতাত্মনাম্।। অভিতঃ ব্রহ্মনির্বাণং
বর্ততে বিদিত-আত্মনাম্।।
কাম-ক্রোধ মুক্ত, সংযতচিত্ত, আত্মজ্ঞানী
সন্ন্যাসীরা এই জীবনে এবং মৃত্যুর পরেও পরমব্রহ্মে নির্বাণ লাভ করেন।
৫/২৭-২৮ স্পর্শান কৃত্বা
বহির্বাহ্যাংশ্চক্ষুশ্চৈবান্তরে ভ্রুবোঃ। স্পর্শান কৃত্বা বহিঃ বাহ্যান্ চক্ষুঃ চ
এব অন্তরে
ভ্রুবোঃ।
প্রাণাপানৌ সমৌ কৃত্বা
নাসাভ্যন্তরচারিণৌ।। প্রাণ-অপানৌ সমৌ কৃত্বা নাসা
অভ্যন্তরচারিণৌ।।
যতেন্দ্রিয়মনোবুদ্ধির্মুনির্মোক্ষপরায়ণঃ।
যত-ইন্দ্রিয়-মনঃ-বুদ্ধিঃ
মুনিঃ মোক্ষপরায়ণঃ।
বিগতেচ্ছাভয়ক্রোধো যঃ সদা
মুক্ত এব সঃ।। বিগত-ইচ্ছা-ভয়-ক্রোধঃ যঃ সদা মুক্ত এব
সঃ।।
বাইরের সমস্ত বিষয় থেকে
চিত্তকে মুক্ত ক’রে, দুই ভ্রূর মধ্যে
দৃষ্টি স্থির রেখে, নাসিকার ভিতর বহমান
প্রাণবায়ু ও অপানবায়ুকে নিষ্ক্রিয় রেখে,
সমস্ত
ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধিকে সংযত ক’রে, কামনা, ভয় এবং ক্রোধ জয় ক’রে, যে সন্ন্যাসী পরমমুক্তির সন্ধান করেন, তিনি সর্বদাই মুক্ত থাকেন।
৫/২৯ ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্বলোকমহেশ্বরম্। ভোক্তারং
যজ্ঞ-তপসাং সর্বলোক-মহেশ্বরম্।
সুহৃদং সর্বভূতানাং জ্ঞাত্বা
মাং শান্তিমৃচ্ছতি।। সুহৃদং সর্বভূতানাং
জ্ঞাত্বা মাং শান্তিম্ ঋচ্ছতি।।
সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যায় আমিই
উপাস্য। সর্বলোকের আমিই ঈশ্বর। সমস্ত জীবের আমিই বন্ধু। যিনি এই তত্ত্ব অন্তরে
উপলব্ধি করেন, তিনিই পরমশান্তি লাভ
করেন।
সন্ন্যাসযোগ সমাপ্ত
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন