[শ্রীমদ্ভাগবৎ পুরাণে পড়া যায়, শ্রীবিষ্ণুর দর্শন-ধন্য মহাভক্ত ধ্রুবর বংশধর অঙ্গ ছিলেন প্রজারঞ্জক ও অত্যন্ত ধার্মিক রাজা। কিন্তু তাঁর পুত্র বেণ ছিলেন ঈশ্বর ও বেদ বিরোধী দুর্দান্ত অত্যাচারী রাজা। ব্রাহ্মণদের ক্রোধে ও অভিশাপে তাঁর পতন হওয়ার পর বেণের নিস্তেজ শরীর ওষধি এবং তেলে সম্পৃক্ত করে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তারপর রাজ্যের স্বার্থে ঋষিরা রাজা বেণের দুই বাহু মন্থন করায় জন্ম হয় অলৌকিক এক পুত্র ও এক কন্যার – পৃথু ও অর্চি। এই পৃথুই হয়েছিলেন সসাগর ইহলোকের রাজা, তাঁর নামানুসারেই যাকে আমরা পৃথিবী বলি। ভাগবৎ-পুরাণে মহারাজ পৃথুর সেই অপার্থিব আবির্ভাবের যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় (৪র্থ স্কন্ধের, ১৩শ থেকে ১৬শ অধ্যায়গুলিতে), তার বাস্তবভিত্তিক পুনর্নির্মাণ করাই এই উপন্যাসের উদ্দেশ্য।]
এই উপন্যাসের পঞ্চম পর্ব পড়া যাবে পাশের সূত্র থেকে - "এক যে ছিলেন রাজা - ৫ম পর্ব"
১৩
নটী বিদ্যুল্লতার কথা অনেকের কাছে শুনে মহারাজা বেণের
মনে যে কল্পনা ছিল, বাস্তবে নটী বিদ্যুল্লতা তার থেকেও অনেক বেশি রমণীয়। নৃত্যে,
অভিনয়ে, সঙ্গীতে, রূপে, লাস্যে, আলাপে এবং আলাপের ভঙ্গীতে অনুপমা। এমনটি মহারাজ
বেণ আর দ্বিতীয় দেখেননি। প্রথম সাক্ষাতেই মহারাজ বেণ মুগ্ধ হয়েছিলেন। নটী বিদ্যুল্লতার নাচ দেখে গান
শুনে সে মুগ্ধতা বেড়েছে। নাচ-গানের শেষে যখন তাঁরা আলাপে বসলেন, কোথা দিয়ে যে
সারাটা রাত কেটে গেল বুঝতেই পারেননি। প্রত্যূষের পাখিদের কূজনে তাঁদের আলাপ যখন
সমাপ্ত করতে হল, তখন আসরের দিকে তাকিয়ে নটী বিদ্যুল্লতা ও মহারাজা বেণ উচ্চৈঃস্বরে
হেসে উঠলেন। নটী বিদ্যুল্লতার বাদ্যকরগণ ও অন্যান্য সহচরীগণ, ঢালাও গদির উপর
বিছানো সাদা চাদরে গভীর নিদ্রায় মগ্ন। এমনকি মহারাজা বেণের সহচর উপনগরপাল শক্তিধর,
তিনিও অদ্ভূত ভঙ্গিতে নিদ্রায় আচ্ছন্ন। তেলের অভাবে দীপাধারের অধিকাংশ দীপ নিভে
গেছে, দু একটা ক্ষীণ জ্বলছে ঘুম জড়িয়ে আসা চোখের মতো। সুগন্ধী ছড়াতে থাকা ধুপ,
নিঃশেষ হয়ে গেছে কবেই। ধুপদানের নিচেয় স্তূপ হয়ে জমে উঠেছে ছাই। তাজা সুবাসিত
অজস্র ফুলের মালায় সেজে উঠেছিল প্রমোদ কক্ষ, সেই মালা এখন ম্লান, ফুলের শুকনো
পাপড়ি ঝরে পড়ছে এক আধটা।
“আজকের রাতটা কী করে এত সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল, দেবী
বিদ্যুল্লতা? গতকালও বিনিদ্র রজনী যেন অনন্ত রাত্রি মনে হচ্ছিল। অথচ আজ সেই রাত্রি যেন পলক পাতে
ঊষার দরজায় পৌঁছে গেল!” মুগ্ধ হাসি নিয়ে মহারাজা বেণ নটী বিদ্যুল্লতার মুখের দিকে
তাকিয়ে বললেন।
নটী বিদ্যুল্লতার চোখে ক্লান্তিহীন কটাক্ষ, অধরে বিলাসী
হাসি নিয়ে বললেন, “গত রজনীতে আমি আপনার সামনে ছিলাম না যে, মহারাজ বেণ। আপনার চিন্তায় ছিল রাজ্য শাসনের
দুশ্চিন্তা। আজ আমাদের মিলনে, আপনি চিন্তা মুক্ত হতে পেরেছেন, মহারাজ”।
অত্যন্ত খুশি মনে, নটী বিদ্যুল্লতার সঙ্গ-ধন্য মহারাজ বেণ উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, “দেবী
বিদ্যুল্লতা, রাত্রি জাগরণে আপনি যদিও পরিশ্রান্ত, তবুও আজ দ্বিপ্রহরে আমার উদ্যান
বাটিকা পরিদর্শনের জন্যে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যদি অত্যন্ত অসম্ভব না হয়, তাহলে
আমার সঙ্গে চলুন, এ আমার অনুরোধ”।
“অবশ্যই যাবো, মহারাজ। এ আপনার অনুরোধ হতে পারে, কিন্তু আমার
কাছে আদেশ। যে কদিন আপনার ছায়ায় রয়েছি, মহারাজ, আমার জীবন ও যৌবন আপনার সেবায়
নিয়োজিত। আপনার
সঙ্গ কোনভাবেই আমার কাছে ক্লান্তিকর হতে পারে না, মহারাজ। আপনার সঙ্গী হতে আমি উন্মুখ হয়ে
থাকবো। যখনই আপনার ডাক আসবে, আপনার এই দাসী উপস্থিত হবে”।
“খুব ভালো, দেবী বিদ্যুল্লতা, দ্বিপ্রহরে আমি প্রস্তুত
হবার আগে আপনাকে সংবাদ পাঠাবো, এবং আপনার সঙ্গসুখ উপভোগের অপেক্ষায় থাকবো। এখন
আমাদের সাময়িক বিচ্ছেদ আসন্ন, অনুমতি দিন, দেবী বিদ্যুল্লতা”।
“এ বিচ্ছেদ আমার কাছে আদৌ সুখপ্রদ হবে না, মহারাজ। আপনার
সঙ্গসুখ বিনা এই রাজ্যবাস আমার কাছে বনবাসের মতো। অন্যদিকে আপনার রাজকার্যে বিঘ্ন
ঘটুক তাও আমার কাম্য নয়। অতএব বিরহ বিচ্ছেদ অনিবার্য, কিন্তু আপনার আহ্বানের
প্রতীক্ষায় আমি বসে থাকব, মহারাজ”। নটী বিদ্যুল্লতার নত মুখ বেদনায় ভারাক্রান্ত।
মহারাজ বেণ আশ্চর্য হলেন, নটী বিদ্যুল্লতার আন্তরিকতায়। একজন বিখ্যাত নটীর এমন
আচরণ তাঁকে আপ্লুত করে তুলল। তিনি মনে মনে বললেন, “তোমাকে ছেড়ে আমিও কি শান্তি
পাবো, হে ললনে?”
প্রিয়সখা উপনগরপাল শক্তিধরকে ঘুম থেকে তুলে মহারাজ বেণ,
প্রমোদ কানন ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। তাঁর প্রাসাদের অন্তঃপুরে প্রবেশের মুখে মহারাজ বেণ
একবার ফিরে তাকালেন প্রমোদ কাননের দিকে। দেখলেন নটী বিদ্যুল্লতা প্রমোদ কাননের
সদরে দাঁড়িয়ে আছেন। সুসজ্জিত
দরজার প্রেক্ষাপটে সকালের স্নিগ্ধ আলোকে, দাঁড়িয়ে থাকা নটী বিদ্যুল্লতার ওই জীবন্ত
প্রতিমা, তাঁর মনে এঁকে দিল অদ্ভূত প্রীতির অনুভব। এই নারী অনন্যা!
“মহারাজ, আপনি কি নিদ্রিত”? খুব অস্ফুট স্বরের ডাক
মহারাজ বেণের চিন্তার জাল ছিন্ন হল। তিনি বিরক্ত হলেন। নিমীলিত চোখ মেলে তাকিয়ে
দেখলেন, তাঁর সামনে নতমস্তকে করজোড়ে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রিয়সখা উপনগরপাল শক্তিধর।
মহারাজ বেণ বিরক্তমুখে শয্যায় উঠে বসলেন, বললেন, “কোন জরুরি সংবাদ, শক্তিধর?”
উপনগরপাল শক্তিধর খুবই বিনীত স্বরে বললেন, “না মহারাজ,
তেমন কিছু নয়। আজ রাজসভায় যাবেন কিনা, সেটাই জানতে এলাম। সভায় সকলে আপনার
প্রতীক্ষায় রয়েছেন”।
“আজ সভার কাজ স্থগিত করে দে, শক্তিধর। সভা ভঙ্গ করে আমার
উদ্যান-বাটিকা যাওয়ার প্রস্তুতি কর। আমার সঙ্গে দেবী বিদ্যুল্লতাও যাবেন। দেখিস
কোন রকম বিঘ্ন যেন না আসে, নিরাপদ, নিশ্চিন্ত যাত্রা হওয়া চাই। তুই আমাদের সঙ্গে
থাকবি”।
খুব কুণ্ঠিত স্বরে উপনগরপাল শক্তিধর বললেন, “প্রজাদের
একটা বিক্ষোভ হবার সম্ভাবনা রয়েছে, মহারাজ। আজই যাবেন, আগামীকাল গেলে চলত না?”
“প্রজাদের বিক্ষোভ? কোথায়? কোন প্রজাদের? প্রজাদের এত
সাহস হচ্ছে কী করে, শক্তিধর?”
“যে প্রজাদের গৃহচ্যুত করে, আমরা পাথর আর ইঁটের টুকরো
নিয়ে এসেছিলাম, তারা, মহারাজ। গতকাল রাত্রেই তাদের নেতাকে বন্দী করে এনে কারাগারে
নিক্ষেপ করেছি, মহারাজ। হয়তো কিছুই হবে না, তাও সাবধান হওয়া ভালো”।
“বিক্ষোভের ভয়ে রাজা বেণকে ঘরে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে
হবে, শক্তিধর? কী বলছিস কি, তুই? ওই বিক্ষোভের নেতাকে এখনই প্রকাশ্য রাজপথে শূলে
চড়া। সকলে দেখুক, রাজা বেণের বিরোধিতার কী ফল হয়। আর যেভাবেই হোক পরিস্থিতি সামলে
নে, আমি দেবী বিদ্যুল্লতাকে কথা দিয়েছি, আজ উদ্যান-বাটিকায় নিয়ে যাবো। তার অন্যথা
আমি সহ্য করবো না, শক্তিধর”।
মহারাজ বেণের এই আদেশে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে উপনগরপাল
শক্তিধর বললেন, “তাই হবে, মহারাজ। আপনার প্রত্যেকটি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালিত
হবে। আপনি নিশ্চিন্তে দেবী বিদ্যুল্লতার সঙ্গে উদ্যান-বাটিকা পরিদর্শনে চলুন, আমি
থাকতে আপনার কোন বিঘ্ন ঘটবে না”।
“অতি উত্তম, শক্তিধর। তোর থেকে আমি সর্বদা এমনটাই আশা
করি”। মহারাজ বেণের মুখে প্রশ্রয়ের হাসি।
একটু দ্বিধা নিয়ে উপনগরপাল শক্তিধর বলল, “একটা কথা ছিল,
মহারাজ। একটা সামান্য সন্দেহের কথা; মহারাজের অবগতির জন্যে বলতে চাই”।
“কী কথা, শক্তিধর, এত দ্বিধা করছিস কেন? বল না!”
“মহারাজ, দেবী বিদ্যুল্লতা আমাদের রাজ্যে এসেছেন, কার
আমন্ত্রণে? আমি যতদূর জানি, আপনি করেননি। দেবী বিদ্যুল্লতা সাধারণ কোন নারী নন,
ওঁনার মতো ব্যক্তিত্ব বিনা আমন্ত্রণে পররাজ্যে আসবেন, এমন হতে পারে না। তাহলে কে
সেই অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাঁর আমন্ত্রণ স্বীকার করে এই রাজ্যে এসেছেন দেবী
বিদ্যুল্লতা?”
উপনগরপাল শক্তিধরের মুখে দেবী বিদ্যুল্লতার নাম উচ্চারণ
শুনে প্রথমে অত্যন্ত অপ্রসন্ন হলেন মহারাজ বেণ। কিন্তু সামান্য চিন্তা করার পর
মহারাজ বেণ উপনগরপাল শক্তিধরের বক্তব্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন। অনেকক্ষণ কোন কথা
না বলে, তিনি তাকিয়ে রইলেন উপনগরপাল শক্তিধরের মুখের দিকে, তারপর বললেন, “যে
প্রভাবশালী ব্যক্তির আমন্ত্রণে দেবী বিদ্যুল্লতা এই রাজ্যে এসেছেন, তাকে তো তুইই
খুঁজে বের করবি, শক্তিধর। এটাই তোর কাজ। সে কথা আমি কী করে বলব? তোর কী মনে হচ্ছে,
কে হতে পারে এই রাজ্যে? এই রহস্যটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব কার, তোর না আমার,
শক্তিধর?”
“অবশ্যই আমার, মহারাজ। সে কাজে আমি ইতিমধ্যেই আমার
সবচেয়ে দক্ষ লোকদের লাগিয়ে রেখেছি। তবু আমার মনে হয়েছিল, আপনাকে এই সংবাদটা দেওয়া
জরুরি, আর অনুসন্ধানের জন্যে আপনার অনুমতিরও প্রয়োজন ছিল”।
“তোর কী মনে হচ্ছে, এ রাজ্যে দেবী বিদ্যুল্লতাকে
আমন্ত্রণ দেওয়ার মতো লোক কে হতে পারে? কোন ধনী শ্রেষ্ঠী হতে পারে না?”
“হতে পারে, মহারাজ। এই নগরে ধনী শ্রেষ্ঠীর অভাব নেই।
কিন্তু দেবী বিদ্যুল্লতা আমাদের রাজ্যে প্রবেশ করেছেন, এ সংবাদ পাওয়ার পর, আমরা
তাঁকে রাজপ্রাসাদের আতিথ্য গ্রহণের নিমন্ত্রণ করেছিলাম। উনি সে প্রস্তাব এককথায়
মেনে নিয়ে, গত তিনদিন প্রাসাদেই রয়েছেন। এই তিনদিনে কেউ আসেনি তাঁর
সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে, যদি কেউ নিমন্ত্রণ করে থাকে, সে কী একবারের জন্যেও আসত না,
কিংবা কোন দূত পাঠাতো না, মহারাজ?”
“তাহলে তো মিটেই গেল, শক্তিধর! তার মানে কেউই আমন্ত্রণ
করেনি। দেবী বিদ্যুল্লতা এসেছেন নিজের ইচ্ছাতে, হয়তো তীর্থ দর্শন আর দেশ ভ্রমণের
উদ্দেশে! তিনি জানতেন না, সম্প্রতি আমার আদেশে সমস্ত মন্দিরে পুজো পার্বণ বন্ধ।
এখন আমাকে অসন্তুষ্ট করে নিশ্চয়ই তিনি তীর্থ ভ্রমণে যাবেন না”।
উপনগরপাল খুব চিন্তিত মুখে বললেন, “হতে পারে, মহারাজ,
এমনও হতে পারে। কিন্তু আর মাত্র কয়েকদিন পরেই বর্ষা শুরু হয়ে যাবে। দেশভ্রমণ বা
তীর্থদর্শনের পক্ষে এখন অত্যন্ত অসময়। শরতের পর হেমন্ত ঋতু দেশভ্রমণের পক্ষে
প্রশস্ত। আপনার কথাই হয়তো ঠিক। তবু আমি অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে চাই, মহারাজ, যদি
আপনার কোন আপত্তি না থাকে”।
“আমার কোন আপত্তি নেই, শক্তিধর। তোর অনুসন্ধান করা
কর্তব্য, তুই অনুসন্ধান কর। কিন্তু
দেবী বিদ্যুল্লতার অকারণ কোন অসম্মান যেন না হয়, সেটাও লক্ষ্য রাখিস, দেবী বিদ্যুল্লতা
আমাদের রাজ্যের সম্মানীয়া অতিথি”।
“সে কথা বলাই বাহুল্য, মহারাজ। এখন আমাকে অনুমতি দিন,
মহারাজ। আমি যাই, আপনাদের দুজনের উদ্যান-বাটিকা যাওয়ার প্রস্তুতি করি”।
“যা, শক্তিধর, দেখ যাওয়ার পথে, কোন বিঘ্ন যেন না আসে”।
“আসবে না, মহারাজ। আপনার শক্তিধর যতক্ষণ আছে, আপনার কোন
বিপদ হতে দেবে না, মহারাজ। আরেকটা অনুরোধ, মহারাজ”।
“আবার কিসের অনুরোধ, শক্তিধর?”
“আপনি দয়া করে, অঙ্গে কবচ আর শিরস্ত্রাণ পড়বেন”।
“আমি কী রণক্ষেত্রে যাচ্ছি, শক্তিধর? তুই কিসের এত
আশঙ্কা করছিস বল তো? আমার নিজের রাজ্যে, রাজধানী থেকে অনতিদূরে, রণসাজে সেজে আমার
উদ্যানবাটিকায় যাবো? সীমান্তে যুদ্ধ করতে যাওয়া ছাড়া, রাজ্যের ভিতরে আমার পিতা
মহারাজ অঙ্গকে কোনদিন কবচ পড়তে দেখিনি, শক্তিধর!”
“আমার স্পর্ধা ক্ষমা করবেন, মহারাজ। আপনার পিতা মহারাজ
অঙ্গ ছিলেন, আপামর রাজ্যবাসীর নয়নের মণি, অজাতশত্রু। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং
প্রত্যেকের কাছে শ্রদ্ধার মানুষ ছিলেন”।
পিতার প্রশংসায় বিরক্ত মহারাজ বেণ বললেন, “ঠিক আছে, ঠিক
আছে, তুই এখন যা। আমি দেখছি কী করা যায় - এই গরমে লৌহজালিক গায়ে চড়ানোর মতো
বিড়ম্বনা আর হয় না”।
উপনগরপাল শক্তিধর, মহারাজ বেণকে নত মস্তকে প্রণাম করে বেরিয়ে গেলেন। মহারাজা বেণ একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন, তাঁর চলে যাওয়ার দিকে। শক্তিধর কিসের ভয় পাচ্ছে? তাঁর কপালে এখন চিন্তার গভীর খাঁজ, অদৃশ্যে কোথাও কী কোন ষড়যন্ত্র গড়ে উঠছে?
১৪
বেদব্রত
ও ধর্মধরকে নিয়ে বিশ্বপ্রভ বেরিয়ে যাওয়ার পর, মহর্ষি ভৃগু উপস্থিত সকল শিষ্যের
দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমাদের এই পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপের কাজের ভার ন্যস্ত হল
বেদব্রত ও ধর্মধরের ওপর। এবার দ্বিতীয় পদক্ষেপ। বর্তমান রাজার অপসারণ। কীভাবে?
হঠাৎ বিদ্রোহ, গণ আন্দোলন, রাজাকে গৃহবন্দী? নাঃ সে পথে অনেক রক্তক্ষরণ, অশান্তি,
অবিশ্বাস, সাফল্য-ব্যর্থতার দোলাচল, এ আমি চাইছি না। তাহলে অন্তঃপুরে ঘাতক পাঠিয়ে
গুপ্তহত্যা? তাতেও অনেক ঝুঁকি। ঘাতক ধরা পড়লে বা বিশ্বাসঘাতকতা করলে ষড়যন্ত্র ফাঁস
হয়ে যাবে। তাতে আমরা এবং আমাদের সঙ্গে জড়িত সমস্ত মানুষ চরম বিপদে পড়ে যাবে। এই
দুই পন্থাই আমার মনোমত নয়। তার কারণ এই নয় যে আমরা বিপদে পড়ে যাবো, এই ভয় আমি
পাচ্ছি। আমি ভয় পাচ্ছি, এই দুই উপায়ে আমরা ব্যর্থ হলে, বর্তমান রাজা সতর্ক হয়ে
যাবে। আরো সন্দিগ্ধ হয়ে উঠবে, আরো নৃশংস হয়ে উঠবে। আমাদের পক্ষে রাজাকে অপসারণের পরবর্তী
প্রচেষ্টা হয়ে উঠবে সুদূরপরাহত ও অনির্দিষ্ট”।
মহর্ষি
ভৃগু চুপ করলেন, উপস্থিত সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা
করলেন। সকলেই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিলেন মহর্ষি ভৃগুর দিকে। তাঁদের সকলেরই বিশ্বাস,
মহর্ষি ভৃগুই জানেন কোনটি নিশ্চিত পন্থা! মহর্ষি ভৃগু আবার বলতে শুরু করলেন, “অন্য
একটি উপায় আমার চিন্তায় রয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সেই পন্থায় আমরা নিশ্চিতভাবেই
বর্তমান রাজাকে নির্বিঘ্নে অপসারণ করতে পারবো। কিন্তু সেই পন্থায় আমাদের চিরাচরিত
নৈতিকতাকে কিছুদিনের জন্যে নির্বাসিত করতে হবে”।
আচার্য
সুনীতিকুমার উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন, “কী সেই পন্থা, আচার্য?”
সুনীতিকুমারের
দিকে তাকিয়ে মহর্ষি ভৃগু মৃদু হাসলেন, তারপর বললেন, “ধরো, বর্তমান রাজা অসুস্থ হয়ে
পড়লেন। প্রবল পীড়িত। তাঁর পক্ষে রাজ্যচালনা তো দূরের কথা, অসাড় জড়ের মতো পঙ্গু হয়ে
উঠলেন। উত্থানশক্তি রহিত, অপরের সাহায্য ছাড়া নিজের জীবনধারণ করতেও অপারগ। রাজা
এখনো অবিবাহিত, অতএব উত্তরাধিকারহীন। সেক্ষেত্রে আমরা জনগণের স্বার্থে, রাজ্যের
নিরাপত্তার স্বার্থে, রাজ্যপরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতেই পারি। আমরা আমাদের মনোনীত
ব্যক্তিকে সিংহাসনে বসাতেই পারি”।
আচার্য
রত্নশীল বললেন, “রাজার এই অসুস্থতা কোন মন্ত্রবলে আসবে, আচার্য? রাজা বেণ, সুস্থ
সবল নব্য যুবক। তিনি কবে অশক্ত, অথর্ব, পীড়িত হবেন, সেই আশায় আমরা অপেক্ষা করবো,
আচার্য?”
একথার
উত্তরে আচার্য বিশ্ববন্ধু বললেন, “কোন মন্ত্র নয়, মিত্র রত্নশীল, ওষধি। ওষধি
প্রয়োগে সুস্থ সবল মানুষকে অসুস্থ করে তোলা সম্ভব”।
“বিষ?
আমরা বিষ প্রয়োগ করবো? আপনি আমাদের এমন শিক্ষা তো দেননি, গুরুদেব? এ তো চরম
কাপুরুষতা, নিন্দনীয়, অনৈতিক”। আচার্য রণধীর মহর্ষি ভৃগুকে বললেন।
উত্তরে
আচার্য সুনীতিকুমার বললেন, “রণধীর, নীতির বিরুদ্ধে নীতিগত লড়াইটা জরুরি হতে পারে,
কিন্তু নীতিহীনতার বিরুদ্ধে নীতিহীন হলে, আমাদের বিবেকের দংশন হলেও, অনৈতিক হয়তো
হয় না। যে রাজা নিরীহ প্রজাদের গৃহ অকারণ ধ্বংস করে তাদের নিরাশ্রয় করে, যে রাজা বিচারপ্রার্থী
নিরীহ বৃদ্ধকে অত্যাচার করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। যে রাজা ধর্ষিতা কন্যাকে
বিনা বিচারে দুশ্চরিত্রা ঘোষণা করে, নিজের আশ্রিতদের অপরাধ আড়াল করে, সেই রাজা
আততায়ী। শুধু তাই নয়, এই রাজার পিতা, আমাদের অত্যন্ত প্রিয় মহারাজ অঙ্গের পরিণতি
নিয়েও আমাদের সকলেরই মনে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তাঁর অকস্মাৎ অন্তর্ধানের
পিছনে, বর্তমান রাজার ষড়যন্ত্র থাকাও বিচিত্র নয়!”
“এসব
অভিযোগ নিয়ে আমার কোন দ্বিধা নেই। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে নীতিহীনতা কোনদিন শুভ
হতে পারে না। ধর্মযুদ্ধ করে রাজার বিনাশ করাই এই ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তব্য।”
“ঠিক
কথা। বীরের মতো যুদ্ধ করে, দুই পক্ষের অজস্র লোকের মৃত্যু হলে, অজস্র লোক আহত হয়ে
বিকলাঙ্গ হলে, দারুণ শুভ হবে! এবং সেই যুদ্ধেরও পরিণতি, হয় বর্তমান রাজার মৃত্যু
অথবা আমাদের”।
আচার্য
সুনীতিকুমারের এই কথায় আচার্য রণধীর ম্লান হাসলেন, বললেন, “যুক্তির দিক থেকে তোমার
কথা ফেলতে পারছি না, মিত্র, কিন্তু মন থেকে তেমন সাড়াও পাচ্ছি না”।
মহর্ষি
ভৃগু এতক্ষণ কোন কথা না বলে, দুই শিষ্যের আলাপ শুনছিলেন। তিনি এতক্ষণ সকলের দিকেই
লক্ষ্য রাখছিলেন। শিষ্যদের মধ্যে এই প্রস্তাব ও তার বিতর্কে কার কী প্রতিক্রিয়া
সেটা অনুভব করছিলেন।
এবার
তিনি বলতে শুরু করলেন, “আমি প্রথমেই বলেছিলাম, রাজনীতিতে শঠতারও একটা জায়গা আছে
এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে শঠতাই আমাদের নিশ্চিত সাফল্য এনে দিতে পারে। এ নিয়ে
বিতর্ক চলতেই পারে। বরং বলব, বিতর্ক চলতে থাকুক, কারণ এই বিতর্ক থেকেই আমরা একদিন
সিদ্ধান্তে পোঁছে যেতে পারি। আপাততঃ, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ, ঔষধ প্রয়োগ। বৎস
বিশ্ববন্ধু এই দায়িত্ব তোমার। এমন এক ওষধি চয়ন করো, যার প্রয়োগে বর্তমান রাজা যেন ধীরে ধীরে
জড়ত্বলাভ করে। দশ ইন্দ্রিয় অসাড় হয়ে যাক, টিকে থাক শুধু জীবনটুকু। যার মাধ্যমে এই ওষধি
প্রয়োগের পরিকল্পনা আমি নিয়েছি, আমি চাই না, সেই নিরীহ মানুষটি নরহত্যার দোষে
দুষ্ট হয়”।
“ওষধি
চয়নে এক সপ্তাহ সময় দেবেন তো, গুরুদেব”? আচার্য বিশ্ববন্ধু জিজ্ঞাসা করলেন।
“এক
সপ্তাহ কি যথেষ্ট, বৎস বিশ্ববন্ধু? আমি তোমার জন্যে এক পক্ষকাল ভেবে রেখেছিলাম।
তুমি প্রস্তুত হলেই আমাকে বার্তা দেবে। নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে, তোমার
কাছে লোক পৌঁছে যাবে। তুমি তার হাতে ওষধি তুলে দেবে, বুঝিয়ে দেবে ওষধি প্রয়োগের
মাত্রা, বিধি-নিষেধ আর পদ্ধতি”।
“লোকটি
কে, গুরুদেব”?
“সে
কথা এখন থাক, যথা সময়ে আমি তোমাকে জানিয়ে দেব, বিশ্ববন্ধু। এবার আমাদের তৃতীয়
পদক্ষেপ। রণধীর, সম্যক যুদ্ধের আপাততঃ আমাদের কোন পরিকল্পনা নেই। কিন্তু রাজ্যের
সর্বত্র এবং রাজ প্রাসাদের নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যেও তুমি তোমার প্রভাব সঞ্চার
করো। বর্তমান রাজার ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বাইরে, সাধারণ সেনানায়ক এবং সৈন্য সামন্তদের
মনে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ বপন করো। প্রকৃতপক্ষে, তারাও গৃহস্থ মানুষ, যুদ্ধের পেশায়
নিরত বলেই, তারা অত্যাচারী রাজার আজ্ঞাবহ নাও থাকতে পারে। রাজার আদেশে ঘটতে থাকা
প্রত্যেকটি অন্যায় অবিচারের কাহিনী তাদের কানে সবিস্তারে পৌঁছে দাও। বার্তা পাঠাও
এই রাজার রাজত্বে কেউই নিশ্চিন্ত নিরাপদ নয়। এ রাজার কাছে সুবিচার আর সহানুভূতির
কোন স্থান নেই”।
“তাই
হবে, গুরুদেব। রাজা অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার সহকারিদের কেউ যাতে এই সেনা বাহিনীর
সাহায্য না পায়। রাজার অসুস্থতার সুযোগে, তাদের কেউ যেন রাজা হয়ে না বসে, আপনি
সেটাই লক্ষ্য রাখতে বলছেন, গুরুদেব”।
“ঠিক
বলেছ, রণধীর। রাজার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র শক্তিধর, ভীষণ উচ্চাকাঙ্খী আর লোভী। সে
সুযোগ পেলে, অসুস্থ হতে থাকা এই রাজাকে হত্যা করেও, সিংহাসন অধিকার করতে পারে”।
মহর্ষি
ভৃগু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর সকলের মুখের ওপর চোখ বুলিয়ে বললেন, “প্রিয়
সুনন্দ, তুমি সুরের মানুষ, সঙ্গীতের মানুষ, তোমার শিল্পী মন। তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো
এই সব ক্রূর ষড়যন্ত্রের মধ্যে তোমার কী কাজ? তোমার কাজ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
তোমাকে অনেক অনেক গান রচনা করতে হবে। এই রাজ্যের প্রতিটি শহরে, গ্রামে, সাধারণ
মানুষ আজ, রাজার অদ্ভূত আদেশে বিভ্রান্ত, বিচলিত, আতঙ্কিত। তাদের মনে ফিরিয়ে আনতে
হবে বিশ্বাস, আস্থা আর শান্ত জীবনের নিবিড় চেতনা। সে কথা গম্ভীর শাস্ত্র কথায়,
বাণীতে হবার নয়। ওদের ভাষায়, ওদের সুরে তোমাকে গান বাঁধতে হবে। সে গান ওদের মন ছুঁয়ে যাক,
মন্ত্রের মতো গেঁথে থাকুক মনের ভেতর। তুমি চারণ কবি হয়ে ওঠো। ভবিষ্যতের সোনালী দিনের
স্বপ্নমাখা গান বাঁধো। গান বাঁধো খুব ভালো এক রাজার কীর্তি নিয়ে। সে রাজা প্রজার
দুঃখে কাঁদে। সুবিচারে নিজের সন্তানকেও ক্ষমা করে না। বন্যা, খরা, ঝড়-ঝঞ্ঝায়
প্রজাদের পাশে থাকে। অসময়ে রাজকোষ খুলে দু হাত ভরে প্রজাদের সাহায্য করে। সে রাজা মহাবীর, দেবরাজ
ইন্দ্রও তাঁকে মান্য করেন। তাঁর রাজত্বে দেবরাজ সুবর্ষা দেন, মাঠে মাঠে হেসে ওঠে প্রচুর
ফসল। ঘরে ঘরে গাভীরা সন্তানবতী হয়, ক্ষীরের মতো ঘন দুধ জমে ওঠে তাদের পালানে। মনে
রেখো সে রাজার নাম পৃথু, আর রাণির নাম অর্চ্চি। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও
বর্তমান রাজার নিন্দা করো না। কোন বিরুদ্ধবাক্য বলো না। বর্তমান রাজার ভালো মন্দ
কোন কিছু নিয়েই তোমার কোন বক্তব্য থাকবে না! কোনমতেই না!”
“যথা
আজ্ঞা, গুরুদেব”। সঙ্গীতাচার্য সুনন্দ মাথা নত করে স্বীকার করে নিলেন মহর্ষি
ভৃগুর এই আদেশ। তিনি শিল্পী মানুষ, তাঁর মনে জটিল চিন্তা ভাবনার জায়গা নেই,
গুরুদেবের আদেশ তাঁর শিরোধার্য।
কিন্তু
অর্থনীতির আচার্য রত্নশীল মহর্ষি ভৃগুর এই কথায় অবাক হলেন, জিজ্ঞাসা করলেন, “গুরুদেব,
এই সব গান কোন কাজে আসবে? আর যে রাজা এখনো সিংহাসনেই বসল না, সু কিংবা কু, কোন
কীর্তিই করল না, তার মিথ্যা মহিমা প্রচারের অর্থ কী?”
মহর্ষি
ভৃগু উত্তরে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আচার্য সুনীতিকুমার বললেন, “গুরুদেব
আপনার এই সঙ্গীত রচনার গূঢ় রহস্য আমি বোধহয় কিছুটা বুঝতে পেরেছি। যদি অনুমতি দেন
মিত্র রত্নশীলকে বলি?”
মহর্ষি
ভৃগু মৃদু হেসে সম্মতি দিলেন, আচার্য সুনীতিকুমার বললেন, “রাজার অসুস্থতা যত
বাড়বে, এই সব গান, সাধারণ মানুষের ক্ষুব্ধ মনে তত আশা আর স্বপ্ন সঞ্চার করবে। এই
রাজার রাজত্বের সমস্ত দুঃখ-দুঃস্বপ্ন ভুলে, তারা নতুন কল্পিত এক রাজা - পৃথুর
রাজত্বের স্বপ্ন দেখতে শুরু করবে। সেই রাজত্বে তাদের স্বপ্নপূরণ হবে, আসবে তাদের
সমৃদ্ধি। রাজা সিংহাসনে বসার আগেই, প্রজারা অচেনা অদেখা সেই রাজার অনুগত হতে
থাকবে। এই নব্য রাজার রাজবংশের কোন গরিমা নেই, তাদের আশেপাশের গ্রাম থেকেই উঠে আসা
কোন সাধারণ যুবকই যে এই রাজা, সে কথা তাদের মনেও থাকবে না”।
আচার্য
সুনীতিকুমার এই পর্যন্ত বলে, মহর্ষি ভৃগুর দিকে তাকালেন। মহর্ষি ভৃগু স্মিত মুখে
বললেন, “একদম ঠিক বলেছ, বৎস সুনীতিকুমার। কিন্তু আরও একটা দিকের প্রতি লক্ষ্য
করোনি। অতি সাধারণ গ্রামের ছেলে হঠাৎ রাজ সিংহাসনে বসে, যদি বদলে যায়? বিপুল বৈভব
আর ক্ষমতায় যদি সে দাম্ভিক আর বিলাসী হয়ে ওঠে? এই গান তাকে সর্বদা মনে করিয়ে দেবে
তার কর্তব্য। এই সব আরোপিত মহিমার স্তুতিগান অনুযায়ী সে যদি নিজেকে তৈরি করতে না
পারে, এই স্তুতি তার কাছে বিদ্রূপ বলে মনে হবে! এই গান শুধু যে রাজভবনের বৈতালিকের
গান হয়েই থাকবে, তাও তো নয়! এই গান তার কানে আসবে, প্রাসাদের বাইরের পথে, ঘাটে,
গ্রামে, গঞ্জে, শহরে, নগরে, নদীর ঘাটে – সর্বত্র। নিজেকে এই স্তুতিগানের উপযুক্ত
করে তোলা ছাড়া, তার অন্য আর কিছুই করার থাকবে না, বৎস!”
মহর্ষি
ভৃগুর কথা শেষ হতে, সকল আচার্য শিষ্যই একসঙ্গে তাঁকে নত হয়ে প্রণাম জানালেন।
আচার্য সুনীতিকুমার বললেন, “গুরুদেব, আপনার দেখানো পথে, আমার স্থির বিশ্বাস, আমাদের
সমৃদ্ধি আসবে, আসবে শান্তি। আপনি আমাদের সকলের, এই রাজ্যের সমস্ত সাধারণ মানুষের
একমাত্র সহায়, আমাদের নিশ্চিন্ত আশ্রয়। হে গুরুদেব, আমরা সকলেই আপনার শরণাগত।
আপনাকে প্রণাম”।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন