১
আদিম
মানুষের সঙ্গে অমানুষের – অর্থাৎ অন্য প্রাণীর বুদ্ধির তফাৎটা প্রথম চোখে পড়েছিল
যে কারণে, সেটা হল অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যবহার। আদিম মানুষেরা প্রধানতঃ বন্য জীবজন্তু
শিকার করে প্রাণধারণ করত। তাদের মধ্যে আদিম যে মানুষেরা অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার শুরু
করেছিল, বিজ্ঞানীরা তাদের হোমো হ্যাবিলিস বলেন। সেই অস্ত্র-শস্ত্র তারা বানিয়েছিল
পাথরের টুকরো, গাছের ডালপালা এবং মরা জন্তুর শক্ত-পোক্ত হাড় দিয়ে। কয়েকটা নমুনা
দেখালে বুঝতে পারবে, সেই সময়কার অস্ত্র-শস্ত্রের রকমসকম।
|
|
| হোমো হ্যাবিলিস |
|
|
| প্রস্তর যুগের পাথরের ফলা |
পাথরের পরিবর্তে ধাতু এসে যাওয়াতে
অস্ত্রশস্ত্র এবং তার সঙ্গে যাবতীয় যন্ত্রপাতি যেমন, কোদাল, কুড়ুল, কাস্তে,
হাতুড়ির আমূল পরিবর্তন হতে বেশী দেরি হল না। প্রস্তর যুগ (stone
age) থেকে
তাম্র যুগে (copper
age) আসতে
আদিম মানুষের লেগেছিল লক্ষ বছর। পণ্ডিতেরা বলেন, তাম্রযুগের শুরু হয়েছিল
যিশুখ্রীষ্টের জন্মের মোটামুটি ৯০০০ বছর আগে (9000 B.C.E) অর্থাৎ আজ থেকে মাত্র এগারো
হাজার বছর আগে!
তামা তেমন কিছু শক্ত ধাতু নয়, খুব
সহজেই বেঁকে যেত এবং তামা দিয়ে বানানো ধারালো পাত কিংবা ফলার সূক্ষ্ম মুখটি চট করে
ভোঁতা হয়ে যেত। তামার এই অসুবিধে দূর করতে, তামার সঙ্গে আরো কিছু ধাতু মিশিয়ে
বানিয়ে তোলা হল ব্রোঞ্জ (Bronze), যাকে আমাদের সংস্কৃতে বলা হয় কাংস্য, চলতি ভাষায় কাঁসা।
| ব্রোঞ্জের কিছু অস্ত্র ও রক্ষা কবচ |
ব্রোঞ্জযুগে তামার সঙ্গে ১২% থেকে ৬% টিন মিশিয়ে নানান ধরনের ব্রোঞ্জ ব্যবহার হত। ১০% -১২% টিন মিশ্রিত কঠিন ব্রোঞ্জ থেকে সাধারণতঃ অস্ত্রশস্ত্র, যন্ত্রপাতি বানানো হত, এবং ৬%-৮% টিন মিশ্রিত ব্রোঞ্জ থেকে শিরস্ত্রাণ (helmet), গায়ের বর্ম বা কবচ (armor) বানানো হত।
তবে অস্ত্র-শস্ত্র বানানোর ব্যাপারে, ব্রোঞ্জের ব্যবহার খুব বেশি হলে হাজারখানেক বছরের বেশি চলেনি, তার কারণ ততদিনে মানুষ লোহার আবিষ্কার ও ব্যবহার শিখে ফেলেছিল। লোহার ব্যবহার শিখে ফেলার পর, মানব সভ্যতার অতি দ্রুত উন্নতি ঘটতে লাগল।
আমাদের দেশের প্রাচীন সভ্যতার
মধ্যে হরপ্পা-মহেঞ্জোদরো সভ্যতায় তামার অস্ত্র-শস্ত্র ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের
প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গেছে, কিন্তু ব্রোঞ্জের ব্যবহার তেমন পাওয়া যায়নি। পণ্ডিতেরা
বলেন, ভারতীয় সভ্যতায় তাম্রযুগের পরেই লৌহযুগের শুরু হয়েছিল। প্রাচীন ভারতবাসী
ব্রোঞ্জের ব্যবহার জানলেও, ব্রোঞ্জের ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত ছিল। গয়না-পত্র, পূজা এবং গৃহস্থালীতে প্রয়োজনীয়
নানান পাত্র ও উপকরণ এবং দেব-দেবীর নানান মূর্তি নির্মাণে ব্রোঞ্জ ব্যবহারের
প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গেছে।
২
অস্ত্র-শস্ত্র বলতে আমরা সাধারণ
ভাবে ইংরিজিতে “weapon”
বুঝি। কিন্তু আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রে অস্ত্র আর শস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য ছিল
বিস্তর। অস্ত্র মানে যা ছুঁড়ে শত্রুকে বা বিপক্ষকে আঘাত এবং আক্রমণ করা হয়, অন্যদিকে
শস্ত্র মানে যা হাতে ধরে রেখে শত্রু বা বিপক্ষকে আঘাত করা হয়। নানান প্রকারের অস্ত্র-শস্ত্রের বিভাগ নীচেয়
দেওয়া হল, চট করে মনে রাখার সুবিধের জন্য, -
|
বিভিন্ন অস্ত্রের নাম |
অস্ত্রের বিবরণ |
উদাহরণ |
|
অস্ত্র তিন প্রকার |
|
|
|
পাণিমুক্ত অস্ত্র |
পাণি অর্থাৎ হাত থেকে ছোঁড়া অস্ত্র |
শক্তি - একধরনের
বর্শা। |
|
যন্ত্রমুক্ত অস্ত্র |
যন্ত্রে বসিয়ে ছোঁড়া অস্ত্র |
শর, তির, বাণ। |
|
মুক্তামুক্ত |
হাতে রেখে আবার কখনো কখনো হাত থেকে ছুঁড়ে যে অস্ত্রে
আঘাত করা হয়। |
দণ্ড (ধাতু বা কাঠের লাঠি), গদা ইত্যাদি, |
|
শস্ত্র |
অমুক্ত অস্ত্র - হাতে ধরে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। |
তরবারি, খড়্গ ইত্যাদি। |
এবারে মহাভারতে উল্লেখ থাকা কয়েকটি ভয়ংকর (নাকি মজার?) অস্ত্রের ক্ষমতার কথা বলছি শোনোঃ-
|
অস্ত্রের নাম |
অস্ত্রের বিশেষ ক্ষমতা |
|
কাকুদীক |
যে
অস্ত্রে বিদ্ধ হলে সৈন্যরা রথ,
অশ্ব, গজের
উপর ঘুমিয়ে পড়ে। (তিরের ফলায় ঘুমের ওষুধ মেশানো থাকত?) |
|
শুক |
যে অস্ত্রের ভয়ে সৈন্যরা রথের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। (ভীতু সৈন্যরা যে কোন
অস্ত্রের ভয়েই লুকিয়ে পড়বে, তাতে আর আশ্চর্য কী?) |
|
নাক |
যে অস্ত্রে বিদ্ধ হলে সৈন্যরা উন্মত্তের মতো
স্বর্গদর্শনের ভুল করত। (তিরের
ফলায় তীব্র নেশার ওষুধ মেশানো থাকত?) |
|
অক্ষিসন্তর্জন |
যে অস্ত্রের প্রভাবে সৈন্যরা প্রস্রাব ও বাহ্য করে
ফেলত। |
|
নর্তক |
যার
আঘাতে সৈন্যরা পিশাচের মতো নৃত্য করে। |
|
ঘোর |
যে
অস্ত্র নির্দয়ভাবে বিনাশ করে। |
|
আস্যমোদক |
যে
অস্ত্রে সৈন্যদের অবশ্য মৃত্যু হয়। মৃত্যুর দেবতা যমের আনন্দবর্ধক। |
মানবসভ্যতায় প্রথম যে যন্ত্রমুক্ত অস্ত্র আবিষ্কার হয়েছিল, সেটার নাম জানা না গেলেও, সেটা অনেকটা আমাদের গুলতির (slingshot) মতো। বুনো লতার শক্ত তন্তু দিয়ে দড়ি বুনে তার মধ্যে ধারালো পাথরের টুকরো বেঁধে, বার কতক ঘুরিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া হত শিকারের দিকে। কিন্তু তাতে লক্ষ্য স্থির রাখা প্রায় অসম্ভব। তারপর যে গুলতি আবিষ্কার হল, সেটা অনেক কাজের জিনিষ। দুই হাতওয়ালা গাছের ডালে, পশুর নাড়িভুঁড়ির ফিঁতে আর চামড়ার পট্টি, লাগিয়ে জোরদার গুলতি তৈরি করে ফেলেছিল সে যুগের মানুষেরা। নীচের ছবিতে যে গুলতিগুলির ছবি দেখছো, দুটোই এযুগের গুলতি, সেই আমলের গুলতি আমাদের সময় পর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি। কিন্তু তাদের হদিশ পাওয়া গেছে গুহার দেওয়ালে আঁকা ছবিতে এবং পরবর্তীকালের নানান নিদর্শন থেকে।
গুলতির পরবর্তী ধাপ হল, ধনুক ও তির। মানুষের প্রথম কারিগরি বিদ্যার সার্থক ও অত্যন্ত উপযোগী ব্যবহার বললে এতটুকুও অত্যুক্তি হয় না। হয়তো সেই প্রস্তর যুগ থেকে শুরু হয়ে খ্রীষ্টাব্দ পনের শতাব্দী পর্যন্ত, তির-ধনুক ব্যবহারের কোন বিকল্প ছিল না। পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক যত বীরের কাহিনী ও গল্প আমরা শুনি, তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ তিরন্দাজ। তির-ধনুকের এই বিদ্যাকে আমাদের শাস্ত্রে ধনুর্বেদও বলা হত। আচার্য দ্রোণ ছিলেন এই ধনুর্বেদ বিদ্যায় সেই সময়কার শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত, তাঁর বিখ্যাত শিষ্যদের মধ্যে অর্জুন ও কর্ণ এবং একলব্যের নামও তোমরা নিশ্চয় শুনেছ।
ধনুক ও তিরের বিজ্ঞানঃ
ধনুকের চাপটি (arc) বানানো হত খুবই শক্ত
অথচ স্থিতিস্থাপক কাঠ দিয়ে। আর জ্যা, গুণ বা ছিলা (chord) বানানো হত, সাধারণতঃ মরা জন্তুর
নাড়িভুঁড়ি রোদ্দুরে শুকিয়ে তোলা তন্তু দিয়ে। চাপের এক প্রান্তে এই জ্যা, লতা থেকে
বানানো শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকত। আর চাপের অন্য প্রান্তটা হত হুকের মতো, সেই হুকে
গুণের ফাঁস টেনে পরিয়ে দেওয়া হত। ধনুকের গুণ সর্বদাই প্রয়োজনীয় দৈর্ঘ্যের থেকে
একটু কম রাখা হত, কারণ গুণ টেনে না পরালে চাপ ও গুণ সমেত ধনুকটি টান-টান হতে পারত
না। অতএব ধনুকের এই গুণ পরানোতেও যথেষ্ট শক্তি ও দক্ষতার দরকার হত। যে ঘটনার কথা পড়া
যায়, রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্রের হরধনু ভাঙার কাহিনীতে অথবা দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায়
অর্জুনের লক্ষ্যভেদের সময়।
প্রথমদিকের তির ও ধনুক দুটোই কাঠ অথবা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে
বানানো হত। তিরের মুখগুলি ছেঁটে তীক্ষ্ণ বানানো হত এবং তিরের পিছনের দিকে কিছুটা
চিরে, গাছের শুকনো পাতা কিংবা পাখির লেজের পালক লাগানো হত। তাতে তির ছোঁড়ার পর
বাতাস কেটে ভেসে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত করার সুবিধে হত।
৩
তির ধনুকের ক্ষেত্রেও একই তত্ত্ব
কাজ করে। ছিলার টানে ধনুকের জ্যা যত বেঁকে আসবে, তিরের মধ্যে তত স্থিতি শক্তি
সঞ্চিত হবে, তারপর ওই অবস্থা থেকে তির ছেড়ে দিলেই, তির তীব্র গতিতে লক্ষ্যের দিকে
ছুটবে। তির ছাড়লেই ধনুকের জ্যা আর ছিলা আগের অবস্থায় ফিরে যায়, আর সেই সময় প্রচণ্ড
টানে থাকা ধনুকের ছিলা, টান মুক্ত হয়ে, স্বাভাবিক অবস্থায় আসার সময়, তিরন্দাজের বাহুতে
আঘাত করত। এই আঘাতে তিরন্দাজের বাহু ক্ষতবিক্ষত হতে থাকত এবং বছরের পর বছর এই
আঘাতের ফলে, তিরন্দাজ বীরের বাহু কড়া পড়ে শক্ত হয়ে উঠত। সেকালে কে কত বড়ো তিরন্দাজ
মহাবীর, তার পরিচয় মিলত তাঁদের বাহুর দিকে তাকালেই। অর্জুনের মতো সব্যসাচী বীর,
যাঁর দু হাতই তির নিক্ষেপে সমান দক্ষ ছিল, তাঁর দুহাতেই যে ওই রকম কড়া পড়েছিল সে
কথা বলাই বাহুল্য। যদিও বড়সড়ো যুদ্ধের সময় তাঁরা বাহুতে ধাতু অথবা গণ্ডারের চামড়ার
বর্ম পরতেন।
অতএব টিভি সিরিয়ালে বা সিনেমায়
যখন রামায়ণ বা মহাভারতের গল্প দেখ, সেখানে শ্রীরামচন্দ্র, লক্ষ্মণ, শ্রীকৃষ্ণ,
অর্জুন, কর্ণ প্রমুখ মহাবীরদের যে পেশিবহুল বলিষ্ঠ মসৃণ হাত দেখ, সে সব একান্তই
অবাস্তব, কারণ প্রকৃত বীর যোদ্ধাদের হাত পেশিবহুল বলিষ্ঠ তো হবেই, কিন্তু সে হাতে
বহু যুদ্ধে তির নিক্ষেপের ক্ষত এবং কড়ার লক্ষণ থাকতেই হবে!
তিরনিক্ষেপের সময় পদার্থবিদ্যার
আরেকটি শাখা গতিবিদ্যা (dynamics)-র একটি তত্ত্ব সেকালের বীর তিরন্দাজরা না জেনেই
ব্যবহার করতেন, সেটি হল প্রজেক্টাইলস্ (projectiles)। যে কোন বস্তু যত জোরেই
ছোঁড়া হোক না কেন, কিছুদূর সমান্তরালে গিয়ে, মাধ্যাকর্ষণের ফলে, মাটির দিকে নেমে
আসবেই! সেক্ষেত্রে তিরটাকে নির্দিষ্ট এক কৌণিক অবস্থানে (angular position) রেখে
নিক্ষেপ করলে, সেই তির অনেকটা দূরে গিয়েও লক্ষ্যকে আঘাত করতে পারে। ওই কৌণিক
অবস্থান তিরের গতি এবং লক্ষ্যবস্তুর দূরত্বের উপর নির্ভর করে।
লক্ষ্য একটু দূরে হলে, ধনুক থেকে
সোজাসুজি তির ছুঁড়লে চিত্রঃ ১ এ দেখানো পথে তির মাটিতে পড়ে যায়, কিন্তু চিত্রঃ ২ এ
দেখানো কোণে তির ছুঁড়লে তির লক্ষ্যভেদ করে ফেলে।
ধনুক থেকে তির ছোঁড়ার ব্যাপারে যে কতখানি সূক্ষ্ম হিসেব থাকে, আশা করি সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছ। এরপরেও, কোন লক্ষ্য – সে শত্রু হোক বা পশু, সে তোমার তির খাওয়ার জন্যে, চিত্রঃ ১ এর মতো হাসিহাসি মুখে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকবে, এমনও হয় না, সে হয়তো তোমার দিকে ধেয়ে আসছে অথবা তোমার থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে! সেক্ষেত্রে ওই হিসেব আরো জটিল ও সূক্ষ্ম হয়ে উঠবে সে তো বুঝতেই পারছো! এই হিসেব আরো জটিল হবে যখন তুমি নিজেই ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠ থেকে অথবা ছুটন্ত রথের থেকে তির ছুঁড়বে! কাজেই সারা বিশ্বের ইতিহাস, পুরাণ অথবা কাব্য গাথায় যত বিখ্যাত বীর তিরন্দাজের কথা পড়া যায় বা শোনা যায়, তাঁদের দক্ষতা অলৌকিক বললেও কম বলা হয়, আর সেই কারণেই তাঁরা সাধারণ মানুষের চোখে বীর নায়ক হিসেবে শ্রদ্ধা ও পূজা পেয়ে এসেছেন!
৪
সেকালে তির ধনুক ছাড়া যে অস্ত্রটি
সব থেকে জনপ্রিয় ছিল সেটি তলোয়ার। আমাদের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী অস্ত্র বললাম ঠিকই, কিন্তু
এটি একটি শস্ত্র, হাতে ধরে রেখে শত্রুকে আঘাত করার জন্যে। ইস্পাতের তৈরি ধারালো পাতের নাম
তলোয়ার বা সংস্কৃতে তরবারি। কিন্তু পৌরাণিক যুগে তার নাম ছিল অন্য। সেই শস্ত্রগুলির
প্রায় অধিকাংশই যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা আর বহুদিন ব্যবহার করিনি। এই শস্ত্রগুলির দেখা
পাওয়া যায় দেবদেবীদের হাতে, কিংবা ব্যবহার হয় বিশেষ বিশেষ পুজোর উপচার হিসেবে।
মহাভারতের শান্তি পর্বে, ভীষ্ম
যখন কুরুক্ষেত্রে শরশয্যায় ইচ্ছামৃত্যুর দিন গুনছেন, সেই সময় চতুর্থ পাণ্ডব নকুল
পিতামহ ভীষ্মকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “হে পিতামহ, জনসমাজে তির ধনুককেই সর্বশ্রেষ্ঠ
অস্ত্র বলা হয়ে থাকে, কিন্তু আমার মতে খড়্গই শ্রেষ্ঠ। যুদ্ধের সময় ধনুক ভেঙে গেলে
কিংবা যোদ্ধা অশ্বহীন হয়ে পড়লেও, একমাত্র খড়গ দিয়েই আত্মরক্ষা এবং শত্রুনিধন করা
সম্ভব। খড়্গধারী বীরপুরুষ একাই অনেক তীরন্দাজ ও গদাধারী অসংখ্য শত্রুকে পরাজিত
করতে পারেন। সব ধরনের যুদ্ধে আপনি কোন অস্ত্র বা শস্ত্রকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন?
আর এই খড়্গ কে বানিয়েছিলেন, কিভাবে বানিয়েছিলেন, খড়্গ বানানোর উদ্দেশ্যই বা কী
ছিল?”
পিতামহ ভীষ্ম নকুলের প্রশ্নের
জবাবে বলেছিলেন, “পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির কিছুকাল পরেই, হিরণ্যকশিপু, হিরণ্যাক্ষ,
বিরোচন, নমুচির মতো কিছু দানব, পিতামহ ব্রহ্মার শাসন অস্বীকার করে, প্রাণীদের
প্রতি অত্যন্ত অত্যাচারী ও নৃশংস হয়ে উঠেছিল। তখন প্রজাপিতা ব্রহ্মা দানবদের কঠোর
শাস্তি দেওয়ার জন্যে এক মহা যজ্ঞের আয়োজন করলেন। সেই যজ্ঞের আগুন থেকে এক দুর্ধর্ষ
পুরুষ সৃষ্টি হলেন, তাঁর দেহ বেশ লম্বা, গায়ের রং নীলপদ্মের মতো শ্যামল, ভীষণ
ধারালো দাঁত আর তাঁর পেট খুব সরু। তাঁকে দেখে জগৎ সৃষ্টিকারী ব্রহ্মা বললেন, “আমি
দানবদের বিনাশের জন্যে এবং জনগণের রক্ষার জন্যে অসি নামের এই পুরুষকে সৃষ্টি
করেছি”। পিতামহ ব্রহ্মা এই কথা বলা মাত্র সেই পুরুষ তীক্ষ্ণধার খড়্গের রূপ ধারণ
করলেন।
সেই খড়্গ তিনি ভগবান রুদ্র বা
দেবাদিদেব মহাদেবের হাতে তুলে দিলেন। ভগবান রুদ্র সেই খড়্গ দিয়ে ভীষণ যুদ্ধ করে
অসুর ও দানবদের বিনাশ করলেন। সেই খড়্গ পুরাকাল থেকে বহু ঋষি এবং মহাবীর রাজাদের
হাত ঘুরে ঋষি ভরদ্বাজের পুত্র আচার্য দ্রোণ পেয়েছিলেন, তাঁর থেকে পেয়েছ তুমি। অতএব
এই খড়্গ মহাস্ত্র বৈকি! এখন আট রকম খড়্গের নাম তোমাকে বলছি, মন দিয়ে শোন, অসি,
বিশসন, খড়্গ, তীক্ষ্ণধার, দুরাসদ, শ্রীগর্ভ, বিজয় ও ধর্মপাল”।
এই খড়্গই আমাদের চলিত কথায় হয়ে
গেছে খাঁড়া। যে খাঁড়া আমরা মা কালীর হাতে দেখি। তবে বাংলায় আমরা খাঁড়া বলতে যা
বুঝি, উত্তরভারতে সেই খাঁড়া কিন্তু একদমই অন্য রকম।
সেই সময়কার কোন অস্ত্রশস্ত্রই
আমাদের সময় পর্যন্ত এসে পৌঁছোয়নি। কাজেই তাদের বাস্তব আকার বা চেহারা কেমন ছিল
সম্পূর্ণ অনুমানসাপেক্ষ। নিচের একটি ছবিতে খ্রীঃপূঃ পঞ্চম শতাব্দীর মাগধী সৈন্যদের
একটি যুদ্ধযাত্রার ছবি দিয়েছি, তাতে সেই সময়কার নানান অস্ত্র শস্ত্র, যেমন
তির-ধনুক, বল্লম, ভল্ল, গদা, খড়্গ বা অসির চেহারা কিছুটা যেন চেনা যায়।
মধ্যপ্রদেশের সাঁচি স্তূপের
দক্ষিণ দিকের দরজার নীচে এই ছবিটি পণ্ডিতদের অনুমান মাগধী সৈন্যদের যুদ্ধযাত্রা।
এটি খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে ভগবান বুদ্ধের অস্থি নিয়ে যে যুদ্ধ হয়েছিল, সে
যুদ্ধের কল্পনা করে আঁকা!
আরেকটি অস্ত্রের কথা না বললেই নয়, সেটি হল বজ্র। এই অস্ত্রটিও মারাত্মক। এই অস্ত্রটির বারবার ব্যবহার করেছেন, দেবরাজ ইন্দ্র। এই বজ্রের সৃষ্টি সম্পর্কে এক অদ্ভূত পৌরাণিক কাহিনী আছে, সেটি খুব সংক্ষেপে বলি। একবার অসুরদের রাজা বৃত্রর আক্রমণে পরাজিত হয়ে, দেবরাজ ইন্দ্রকে দেবলোক ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। বৃত্রাসুরকে কিছুতেই পরাস্ত না করতে পেরে, দেবরাজ ইন্দ্র ভগবান বিষ্ণুর সাহায্য চাইলেন। ভগবান বিষ্ণু বললেন, দধীচি মুনির অস্থি বা হাড় থেকে তৈরি অস্ত্র দিয়েই বৃত্রাসুরকে বিনাশ করা সম্ভব। তখন দেবরাজ ইন্দ্র সকল দেবতাদের নিয়ে দধীচি মুনির কাছে ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশের কথা বলে, তাঁর অস্থি প্রার্থনা করলেন। দধীচি মুনি ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশ স্বীকার করলেন এবং যোগবলে দেহত্যাগ করলেন। মৃত্যুর পর তাঁর অস্থি দিয়ে যে অস্ত্র তৈরি হল, তার নাম বজ্র এবং এই বজ্র দিয়েই দেবরাজ ইন্দ্র বৃত্রকে হত্যা করে, দেবরাজ্য উদ্ধার করেছিলেন। নীচের ছবিতে ঐরাবতের পিঠে চড়ে দেবরাজ বজ্রপাণি ইন্দ্র – পিছনের বাঁহাতে বজ্রাস্ত্র ধরা রয়েছে।
এই বজ্রাস্ত্রের কথা শুধু যে ভারতীয় পুরাণ বা শাস্ত্রে পাওয়া যায়, তা নয়। থাণ্ডারবোল্ট (thunderbolt) নামের যে অস্ত্রটির কথা গ্রীস ও মিশরের পুরাণে পাওয়া যায়, সেটির সঙ্গে বজ্রের মিল দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। চক্রের মতো বজ্র কিংবা থাণ্ডারবোল্টও সাধারণ যোদ্ধার আয়ত্ত্বের বাইরে ছিল। এটি শুধুমাত্র দেবতারাই ব্যবহার করতেন।
উপরের বাঁদিকে গ্রীসের অলিম্পিয়া
থেকে পাওয়া ৪৩২-৪২১ বিসির একটি মুদ্রা, যার এক পিঠে ঈগল পাখি এবং অন্য দিকে
থাণ্ডারবোল্ট মুদ্রিত।
আর ডানদিকে টলোমায়িক (Ptolomaic) মিশরের একটি মুদ্রা যার উপরে ঈগলরূপী দেবতা জিউস, থাণ্ডারবোল্ট ধরে আছেন। |
৫
পৌরাণিক যুগ থেকে
মধ্যযুগের হিন্দু রাজাদের সময় পর্যন্ত এই সব অস্ত্র শস্ত্রের তেমন পরিবর্তন হয়নি
বললেই চলে। আমাদের দেশে এখন তলোয়ার বা তরবারি বলতে যা বোঝায় সেগুলি এসেছিল তুর্কি
এবং পরবর্তী সময়ে পাঠান ও মুঘলদের ভারত আক্রমণ ও ভারত বিজয়ের সময়। এই তলোয়ার
আমাদের প্রাচীন অস্ত্র-শস্ত্রগুলিকে অনেকটাই পিছনে ঠেলে দিল। অর্থাৎ আমাদের দেশীয়
খড়গ এবং অসির থেকে তলোয়ার যে অনেক বেশি কার্যকরী ও ব্যবহারে সুবিধেজনক ছিল, একথা
স্পষ্টতঃই বোঝা যায়।
বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত বীর যোদ্ধা ছিলেন জেঙ্গিজ খান (Genghis Khan মোটামুটি ১১৫০ থেকে ১২২৭ খ্রীষ্টাব্দ), যাঁকে আমরা সাধারণতঃ চেঙ্গিস খাঁ নামেই চিনি। তাঁকে বিতর্কিত বললাম, এই কারণে যে, তাঁর নিজের দেশে তিনি ভীষণ সম্মানিত দিগ্বিজয়ী বীর, কিন্তু বিশ্বের বহু বিজিত দেশই তাঁকে অত্যাচারী ও হিংস্র রাজা হিসেবে মনে রেখেছে।
এশিয়া
মহাদেশের কতখানি জুড়ে তাঁর মোঙ্গল সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল, সেটা উপরের ম্যাপটি
দেখলে বুঝতে পারবে। তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে যতই বিতর্ক থাক, তাঁর অসাধারণ রণনৈপুণ্য
এবং রণশক্তিকে কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না। আর এই রণদক্ষতার অনেকটাই নির্ভর করে
অস্ত্র-শস্ত্রের ওপর। অতএব তাঁর ব্যবহার করা অস্ত্র এবং বিশেষ করে তলোয়ার যে সেই
সময়ের অনেক দেশের অস্ত্রসম্ভারকেই প্রভাবিত করেছিল, সে কথা বলাই বাহুল্য।
অতএব পরবর্তী সময়ে ভারতের উত্তর
পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ঢুকে মহম্মদ ঘোরি (রাজত্বকাল
১১৭৩-১২০৬) যখন ভারতের মূল ভূখণ্ডে প্রথম ইসলাম রাজত্বের সূচনা করলেন, তখন তিনি
কিছুটা হলেও জেঙ্গিজ খানের রণ কুশলতায় প্রভাবিত ছিলেন এবং নিয়ে এসেছিলেন নতুন
ধরনের তলোয়ারের প্রকৌশল। ভারতের সুলতানী আমলের তলোয়ার দেখলে সেই প্রভাবের কথাই মনে
পড়ে।
উপরের বাঁদিকে সে সময় আরব এবং মধ্য এশিয়ায় যে ধরনের তলোয়ার ব্যবহার হত, তার নমুনা। ডানদিকে মঙ্গোলিয়ার সম্রাট জেঙ্গিজ খান যে ধরনের তলোয়ার ব্যবহার করে এশিয়ার অনেকটা জয় করেছিলেন।
জেঙ্গিস খানের তলোয়ারের পাতের (Blade) বক্রতা (Curvature) অনেকটাই কম এবং মাথার দিকে কিছুটা অংশ চওড়া। তলোয়ারের হাতলও (Hilt) অনেক মজবুত ।
| মুঘল সম্রাট শাজাহানের পুত্র দারাশিকোর তলোয়ারের সম্ভার, ব্রিটিশ মিউজিয়াম। |
কয়েকটি বিখ্যাত তলোয়ারের কথা বলে, এই প্রসঙ্গ শেষ করব।
জুলফিকর (Zulfiqar) – বলা হয় পয়গম্বর হজরত মহম্মদ
এবং তাঁর জামাই আলি ইব্ন্ আবু তালিব এই তলোয়ার ব্যবহার করেছিলেন। ইসলাম ধর্মের
কোন কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি অত্যন্ত পবিত্র একটি প্রতীক হিসেবে এখন ব্যবহার করা
হয়। এই তরোয়াল যেন সমস্ত অন্যায় এবং অশুভ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। মুঘল আমলের এরকম
একটি জুলফিকার তলোয়ারের ছবি নীচেয় দেখ।
আলমগির – মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের খুব প্রিয় তলোয়ার ছিল আলমগির। এই তলোয়ারটি তিনি পিতা সম্রাট শাহজাহানের থেকে পুরষ্কার পেয়েছিলেন। শোনা যায় প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর এই তলোয়ারটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। “আলমগির” শব্দটির অর্থ বিশ্বজয়ী। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, রাজকুমার ঔরঙ্গজেব দিল্লির মসনদ অধিকার করে নিজেও “আলমগির” উপাধি নিয়েছিলেন। সম্রাট ঔরঙ্গজেবের অন্য একটি তলোয়ার রাখা আছে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। এই তলোয়ারটি সম্রাট মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদকুলি খানকে তিনি উপহার দিয়েছিলেন।
ভবানী
– মহারাজ ছত্রপতি শিবাজীর প্রিয় তলোয়ারের নাম ভবানী। জনশ্রুতি বলে, এই তলোয়ার
নাকি, তিনি তাঁর মায়ের এবং তাঁর আরাধ্যা দেবী মা ভবানীর কাছ থেকে বর পেয়েছিলেন।
কিন্তু ইতিহাস বলছে, এই তলোয়ার তিনি সংগ্রহ করেছিলেন, কোন এক পর্তুগীজ জাহাজের এক
নাবিকের থেকে। সেই জাহাজ সেই সময় কোঙ্কোন উপকূলের বান্দা বন্দরের অগভীর জলে আটকে
গিয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে তলোয়ারের উপযুক্ত ভাল ইস্পাতের কথা একটু বলে নিই। তরোয়ালের
ইস্পাত অবশ্যই কঠিন হতে হবে, তা নাহলে, কয়েকবার ব্যবহারেই তার ধার (sharp edge) নষ্ট হয়ে যাবে। কঠিন হওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে তলোয়ারকে ঘাতসহও (Ductile) হতে হবে। তা না হলে যুদ্ধের সময় শত্রুর তলোয়ারের
আঘাতে তোমার তলোয়ার যদি ভেঙে যায়, তাহলে সেখানেই তোমার যুদ্ধ শেষ, বলা বাহুল্য!
ইস্পাতকে কঠিন এবং ঘাতসহ করার জন্যে দক্ষতার সঙ্গে টেম্পারিং (Tempering)
করাটা জরুরি। খুব সংক্ষেপে এই টেম্পারিং ব্যাপারটা হল, ইস্পাতের
পাতকে বারবার উচ্চ তাপে গরম করা এবং ঠাণ্ডা করা। এই টেম্পারিং ইস্পাত বানানোতে
ইউরোপের কিছু কিছু দেশ, যেমন স্পেন, ইটালি, জার্মানি খুব দক্ষ ছিল। সেসময় ইউরোপের
সঙ্গে ভারতের সরাসরি নৌবাণিজ্য শুরু হয়ে যাওয়াতে ওই সব দেশের তৈরি তলোয়ার ভারতেও
খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। ওই ধরনের তলোয়ারকে বলা হত “ফিরঙ্গি”। সাধারণ ভারতীয়রা তখন
ইউরোপীয়দের “ফিরিঙ্গি” বলেই ডাকত।
এই কারণে অনেকে মনে করেন ভবানী তলোয়ার প্রকৃতপক্ষে একটি “ফিরঙ্গি” তলোয়ার। বর্তমানে ভবানী তলোয়ারের অস্তিত্ব নিয়ে খুবই বিতর্ক আছে। কেউ বলেন লণ্ডনের মিউজিয়ামে রাখা আছে। কেউ বলেন মহারাষ্ট্রের সাতারায় মহারাজ শিবাজীর বংশধরের কাছেই আছে, সেই ভবানী তলোয়ার। উপরের ছবিটি নিশ্চিতভাবে ভবানী তলোয়ারের ছবি কিনা বলা মুশকিল।
৬
পাঠান
সুলতানদের হাত ধরেই ভারতবর্ষে কামান-গোলা-বারুদের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। কিন্তু
সবচেয়ে দক্ষভাবে এটির ব্যবহার করেছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর। তখনকার
দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদির বিপুল সুসজ্জিত
সৈন্যদলকে পানিপথের (১৫২৬ সাল) যুদ্ধে এবং রাজস্থানের রাণা সঙ্গকে খানুয়ার (১৫২৭
সাল) যুদ্ধে, খুব সামান্য সৈন্যদল নিয়ে তিনি যেভাবে পরাস্ত এবং নিহত করেছিলেন,
তারপর থেকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তিরধনুক এবং তলোয়ারের গুরুত্ব ধীরে ধীরে কমতে
লাগল।
এরপরে
মোটামুটি ৫০০ বছরের মধ্যে, প্রায় দু হাজার বছর ধরে চলে আসা যুদ্ধের প্রকৃতি
সম্পূর্ণ বদলে গেল, বদলে গেল যুদ্ধের অস্ত্রসমূহ। আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রের ভয়াবহ
নাশকতা, মাঝে মাঝেই সমগ্র মানব সভ্যতারই ধ্বংসের ইঙ্গিত দেয়। আর সেসব অজস্র এবং
অসংখ্য ধরনের মারণাস্ত্রের বর্ণনা আজকাল খবরের কাগজে, টেলিভিশনের পর্দায় কিংবা
সিনেমাতে প্রায়ই তোমরা দেখতে পাও। অতএব সেই প্রসঙ্গ এই লেখাতে আনছি না।
তবে ওই সব প্রাচীন অস্ত্র–শস্ত্রের সঙ্গেই, আমাদের সভ্যতা থেকে ক্রমশঃ ম্লান এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে, মহৎ শৌর্যের সকল বীরগাথা! মূল্যহীন হয়ে যাছে মহৎ বীরদের মনুষ্যত্ব, নৈতিকতা এবং মহত্ব! সেটা ভাল কী মন্দ, বুঝতে গেলে তাকিয়ে থাকতে হবে ভবিষ্যতের দিকে!
..০০..
কৃতজ্ঞতাঃ ছবিগুলি গুগ্ল্ ওয়েব সার্চ এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন