মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ধর্মাধর্ম - ৩/৬

 



["ধর্মাধর্ম"-এর তৃতীয় পর্বের পঞ্চম পর্বাংশ পড়ে নিতে পারেন এই সূত্র থেকে "ধর্মাধর্ম - ৩/৫"]


তৃতীয় পর্ব - ষষ্ঠ পর্বাংশ

(৬০০ বিসিই থেকে ০ বিসিই)


৩.৫.২ সম্রাট অশোকের শিলা-নির্দেশ

সম্রাট অশোকের শিলা-নির্দেশের (Rock Edict) গুরুত্ব ভারতীয় ইতিহাসে অনন্য। বিস্তীর্ণ মৌর্য সাম্রাজ্য জুড়ে এখনো পর্যন্ত যত শিলা-নির্দেশ পাওয়া গেছে, সেগুলিকে বিশেষজ্ঞরা তিন ভাগে ভাগ করেছেনঃ-

ক. পাথরের ওপরে বা পাথরের স্ল্যাবে – তিনটি গৌণ (Minor) শিলা; চোদ্দটি প্রধান (Major) শিলা; দুটি কলিঙ্গ শিলা; বৈরাত বা ভাবরু শিলা।

খ. স্তম্ভের গায়ে – লুম্বিনি স্তম্ভ; নিগালিসাগর স্তম্ভ; বিক্ষিপ্ত কিছু স্তম্ভ; এলাহাবাদ রাণির স্তম্ভ - মোট সাতটি স্তম্ভ।

গ. গুহার দেওয়ালে – বারাবর গুহার দুটি (অথবা তিনটি) নির্দেশ।

ভারতের যে যে অঞ্চলে এই নির্দেশগুলির এক বা একাধিক নমুনা পাওয়া গেছে, সেগুলি হল, কৌশাম্বি (এলাহাবাদ), বৈরাত (রাজস্থান), বারাবর (বিহার), ব্রহ্মগিরি (কর্ণাটক), মীরাট (দিল্লি), টোপরা (দিল্লি), ধৌলি (উড়িষ্যা), গাভীমঠ (কর্ণাটক), গিরনার (গুজরাট), গুজারা (মধ্যপ্রদেশ), জাটিঙ্গা-রামেশ্বর (কর্ণাটক), জৌগাড়া (গঞ্জাম, উড়িষ্যা), কালসি (দেরাদুন, উত্তরাখণ্ড), লৌড়িয়া-আরারাজ এবং নন্দনগড় (চম্পারণ, বিহার), লুম্বিনি (নেপাল), মানসেরা (খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাকিস্তান), মাসকি (রায়চুর, কর্ণাটক), নিগালিসাগর (নেপাল), পাল্কিগুণ্ডু (কর্ণাটক), রাজুলা-মন্দাগিরি (অন্ধ্রপ্রদেশ), রামপূর্বা (চম্পারণ, বিহার), সাসারাম (বিহার), সাঁচি (মধ্যপ্রদেশ), সারনাথ (উত্তরপ্রদেশ), শাহ্‌বাজগাঢ়্‌হি (খাইবার পাখতুনখাওয়া , পাকিস্তান), সিদ্দাপুরা ও ইয়েরাগুড়ি (কর্ণাটক), মহাস্থানগড় (বোগরা, বাংলাদেশ)।

undefined

A major pillar edict of Ashoka, in Lauria Araraj, Bihar, India.

৩.৫.২.১ নির্দেশের লিপি

মানেসারা এবং শাহ্‌বাজগাঢ়্‌হির নির্দেশগুলি খরোষ্ঠি লিপিতে লেখা, এ ছাড়া বাকি সবগুলি নির্দেশেরই লিপি ব্রাহ্মী। সম্রাট অশোক যে এই শিলা-নির্দেশের ধারণা পারস্যের রাজা দারিয়ুসের নিদর্শন থেকে গ্রহণ করেছিলেন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। পারস্যের অ্যাকিমিনিড সাম্রাজ্যের সঙ্গে উত্তরপশ্চিম ভারতের আগে থেকেই নিবিড় যোগাযোগ ছিল এবং সেই যোগাযোগ সূত্রেই ওই অঞ্চলে খরোষ্ঠি লিপির প্রচলন হয়েছিল। খরোষ্ঠি কথাটির উদ্ভব হিব্রু ভাষার “খরোসেথ” থেকে  – যার অর্থ লিখন। খরোষ্ঠি লিপি ডানদিক থেকে বাঁদিকে লেখা হত।

সম্রাট অশোকের সময় ভারতবর্ষে পাথর খোদাই করে লেখার মতো দক্ষ লিপিকারের সম্ভবতঃ অভাব ছিল। কারণ বেশ কয়েকটি শিলা-নির্দেশ ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা হলেও, তার শেষে খরোষ্ঠি লিপিতে শিল্পীর নাম খোদাই করা দেখা যায়। সম্ভবতঃ ওই শিল্পীরা উত্তর-পশ্চিমের লোক ছিল। অনেকে বলেন এই ব্রাহ্মীলিপির উদ্ভব সেমিটিক[1] লিপি থেকে, অনেকে বলেন হরপ্পা-মহেঞ্জোদরোর চিত্রলিপি থেকে, যার পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি।

কালসি, সাসারাম এবং মাস্কি নির্দেশাবলী ছাড়া, কোন লেখাতেই যতিচিহ্ন[2]-র কোন বালাই ছিল না। অতএব কোথায় বাক্যের শেষ, কোথায় অধ্যায়ের শেষ পুরোটাই অনুমান নির্ভর। যার ফলে, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের পাঠেও সামান্য ঊনিশ-বিশ হয়ে যায়। দেশের সর্বত্র একই নিয়মে স্বরবর্ণের চিহ্ন, যেমন ই-কার, ঈ-কার কিংবা যুক্তাক্ষর ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়াও অজস্র ভুল ভ্রান্তি তো ছিলই।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, রাজধানী পাটলিপুত্র থেকে হয়তো সম্রাট নিজেই নির্দেশের বয়ান (draft) তৈরি করে দিতেন। সেই পাণ্ডুলিপি পাঠানো হত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আঞ্চলিক প্রশাসকদের (Viceroy) কাছে, প্রশাসক তাঁর দপ্তরের কোন স্থানীয় কর্মচারীকে দিয়ে সেই পাণ্ডুলিপির স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করিয়ে নিতেন। তারপর অনূদিত লেখাটি পাথরের খোদাইকর শিল্পীদের হাতে তুলে দেওয়া হত, পাথরে লেখার জন্যে। কাজেই এই পদ্ধতিতে ভুল-ভ্রান্তির যথেষ্ট সুযোগ ছিল। তারওপর শিল্পীদের অনেকেই ছিল নিরক্ষর অর্থাৎ ব্রাহ্মীলিপি পড়তে পারত না, তারা অনূদিত লেখার অক্ষরগুলি ছবি আঁকার মতো সাজিয়ে তুলত পাথরের গায়ে, তার জন্যেই বিভিন্ন অঞ্চলের লিপিতে এত বেশি পার্থক্য দেখা যায়।

আজও আমাদের প্রত্যেকের হাতের লেখার টান আলাদা হয় - ই-কার, ঈ-কার কিংবা ঋ-ফলা, য-ফলারও ধরনধারণ আলাদা হয়। বাংলা লিপি পড়তে জানে না যে শিল্পী[3], তার কাজ লিপি দেখে পাথরে ছবি খোদাই করা, অতএব ভুল হবার সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাছাড়া অমনোযোগে একই শব্দ দুবার লিখে ফেলা কিংবা কোন শব্দ লিখতে ভুলে যাওয়ার ঘটনাও বিস্তর ঘটেছিল। পরবর্তী কালের নির্দেশগুলিতে এই ধরনের ভুলভ্রান্তি অনেকটাই কম। হয়তো এই সব ভুলের কথা রাজা অশোকের কানে গিয়েছিল এবং তিনি হয়তো তাঁর কর্মচারীদের কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন অথবা প্রথম থেকে শেষ অব্দি কাজটার তত্ত্বাবধানে কোন বিশেষ লোককে নিযুক্ত রেখেছিলেন। 

৩.৫.২.২ নির্দেশের ভাষা

অঞ্চল ভেদে সামান্য পার্থক্য থাকলেও অশোকের বেশির ভাগ নির্দেশের ভাষাই প্রাকৃত। সমসময়ে জৈন বা বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারে যে প্রাকৃত ভাষা ব্যবহার করা হত, তার থেকে অশোকের প্রাকৃত সামান্য অন্যরকম। সেই কারণে এই নির্দেশাবলীর প্রাকৃতকে, বিশেষজ্ঞরা “অশোকীয় প্রাকৃত” বলেন। অশোকীয় প্রাকৃতের সঙ্গে মাগধী প্রাকৃতের সবথেকে বেশি মিল দেখা যায়। অনুমান করা যায় অশোকের সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রভাষা ছিল মাগধী প্রাকৃত। গিরনারের শিলা-নির্দেশের ভাষা ছিল পালি। খরোষ্ঠি লিপির নির্দেশগুলি ছিল দ্বিভাষী - গ্রীক ও আরামায়িক[4]

৩.৫.২.৩ নির্দেশাবলীর বয়ান

পণ্ডিতেরা অনুমান করেন, কলিঙ্গ যুদ্ধের পর সম্রাট অশোক যখন প্রজাদের মধ্যে “ধম্ম”[5] প্রচারের ব্রত নিয়েছিলেন, তিনি ভারতীয় সমাজে প্রচলিত প্রাচীন পথেই হেঁটেছিলেন। অর্থাৎ জনবহুল এলাকায় – শহরের বাজারে এবং গ্রামে বা জনপদের হাটে – প্রচার কর্মীরা সম্রাটের নির্দেশ পাঠ করে শোনাত। অবশ্যই তাদের সঙ্গে থাকত বাদ্যকরের দল, নির্দেশ পড়ার আগে যারা ঢাক বাজিয়ে (ঢেঁড়া পিটিয়ে) সমবেত জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। এই পদ্ধতি সম্রাট অশোকের তেমন মনঃপূত হয়নি। যে লোকেরা নির্দেশ পড়তে যাবে, তারা কী বলবে, মানুষকে কী বোঝাবে তার ঠিক কী? যেহেতু তিনি তক্ষশিলায় বেশ কিছুদিন ছিলেন এবং উত্তরপশ্চিমের পারস্য সাম্রাজ্যের সঙ্গে তাঁর বেশ ভালই পরিচয় হয়েছিল, তিনি দারায়ুসের শিলা-নির্দেশের সঙ্গেও নিশ্চয়ই পরিচিত ছিলেন। অতএব সেই নিদর্শন অনুসরণ করে, তার বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে, তিনি নিজের উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজন মতো ভারতে শিলা-নির্দেশগুলির প্রচলন করেছিলেন।

দারিয়ুসের নির্দেশের শুরুর বয়ানটি হত, “মহান রাজা দারিয়ুস বলেন[6]। একই ভাবে অশোক তাঁর বেশির ভাগ নির্দেশ শুরু করেছেন “দেবানাম্পিয়, রাজা পিয়দশী বলেন” বাক্যবন্ধনী দিয়ে । তবে অশোক একটা বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন, পারস্য সাম্রাজ্যের নির্দেশগুলির উদ্দেশ্য এবং তাঁর নির্দেশের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ আলাদা। দারিয়ুসের নির্দেশের উদ্দেশ্য ছিল রাজ্য জয়ের বিবরণ এবং নিজের অতিরঞ্জিত মহিমা প্রচার। সেখানে অশোকের উদ্দেশ্য নিজেকে যথা সম্ভব বিনীত রেখে জনগণকে “ধম্ম” পালনে উৎসাহিত করা। অতএব নিজেকে মহান না বলে, তিনি বললেন “দেবতাদের প্রিয়” অথবা “রাজা প্রিয়দর্শী”, অথবা দুটোই একসঙ্গে।

প্রথম দিকে আবিষ্কৃত শিলা-নির্দেশগুলিতে শুধু এই দুটি নামেরই বারবার উল্লেখ থাকায়, বিশেষজ্ঞরা দ্বিধায় ছিলেন, এই দেবতাদের প্রিয় রাজা প্রিয়দর্শী আদৌ অশোক কিনা। পরবর্তী কালে গুজারা এবং মাসকি শিলা-নির্দেশ আবিষ্কার হওয়ার পর সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই দুটি নির্দেশে “দেবতাদের প্রিয়, প্রিয়দর্শী রাজা অশোক” এবং “দেবতাদের প্রিয় অশোক” নামেই তিনি নির্দেশ জারি করেছিলেন।

স্পষ্টতঃ “দেবতাদের প্রিয়” এবং “প্রিয়দর্শী” দুটি শব্দই রাজা অশোকের নাম নয়, উপাধি। “প্রিয়দর্শী” শব্দের অর্থ যিনি সকলকেই প্রিয় দেখেন, অথবা যাঁকে সকলে প্রিয় চোখে দেখে। এটা লক্ষ্য করার বিষয় দারিয়ুস নিজেকে বড়ো বড়ো উপাধিতে অলংকৃত করতেন, অথবা অশোক পরবর্তী ভারতীয় রাজারাও “মহারাজাধিরাজ”, “মহারাজচক্রবর্তী” ইত্যাদি জমকালো উপাধিতে নিজেদের নাম সাজাতেন। অথচ এতবড়ো সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েও তিনি নিজের নামের আগে “রাজা” শব্দই সর্বদা ব্যবহার করেছেন, কখনো “মহারাজ”ও বলেননি।

এই “দেবতাদের প্রিয়” – যার সংস্কৃত “দেবানাম্প্রিয়”- (অলুক) সমাস-বদ্ধ শব্দটির পতঞ্জলি (১৫০ বি.সি.ই) অর্থ করেছেন দেবতাদের প্রিয় - একটি সাম্মানিক শব্দ। কিন্তু অশোকের সমসাময়িক বিদগ্ধ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত কাত্যায়ন (২৫০-২০০ বি.সি.ই) পাণিনি সূত্র থেকে এই শব্দের আরেকটি অর্থ নির্দেশ করেছিলেন, যেটি মোটেই সাম্মানিক নয় বরং গালাগাল। এবং আরও পরবর্তী সময়ে দ্বাদশ এবং সপ্তদশ শতাব্দীর বিখ্যাত বৈয়াকরণিকরা, এই শব্দটির সঙ্গে সম্মানের লেশমাত্র না রেখে, একটিই স্পষ্ট অর্থ করেছেন, “নির্বোধ” বা “মূর্খ”! “দেবতাদের প্রিয়” সহজ এই শব্দটির অর্থ অশোকের সমসাময়িক কাল থেকেই কীভাবে “নির্বোধ” হতে শুরু করল, সেটা বুঝতে পারলে, জন সাধারণের চরিত্র বুঝতে অসুবিধে হয় না। এই অধ্যায়ের পরেই আমরা আলোচনা করব, দেবানাম্প্রিয়-র অর্থ কী করে “মূর্খ” হয়ে যায়।

সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত জৈনধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন এবং জৈন আদর্শে দেহত্যাগ করেছিলেন, জীবনের শেষদিকে। তিনি জৈনধর্মের প্রচারেও যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু অশোকের তুলনায় তার পরিমাণ নগণ্য। কিন্তু অশোক বৌদ্ধ মতে “ধম্ম” প্রচার শুরু করলেন পূর্ণ যৌবনে, সিংহাসনে বসার মাত্র ন’বছর পরে - কলিঙ্গ যুদ্ধ জয়ের পরের বছর থেকেই। তার পরের বছরেই অর্থাৎ দশম বছরে তিনি বৌদ্ধ হয়ে বৌদ্ধতীর্থ বোধগয়া পরিক্রমায় গেলেন। অতএব তাঁর সাঁইত্রিশ বছরের রাজত্বকালের মধ্যে প্রায় আঠাশ বা ঊণত্রিশ বছর ধরে তিনি শুধু “ধম্ম” প্রচার করলেন এবং প্রজাদের মঙ্গলের জন্যে নানাবিধ কাজ করলেন। জনগণের জন্যে বিস্তীর্ণ সেচ ব্যবস্থা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, তার মধ্যে তক্ষশিলা থেকে পাটলিপুত্র হয়ে তাম্রলিপ্তি পর্যন্ত রাজপথে[7]-র আমূল সংস্কার। রাজপথের ধারে ধারে পান্থশালা নির্মাণ এবং পথিককে ছায়া দেওয়ার জন্যে অজস্র বট, আম-জাম ফলের গাছ রোপণ, নির্দিষ্ট দূরত্বে তাদের জন্যে জলসত্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। সারা সাম্রাজ্য জুড়ে মানুষ এবং পশুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। শোনা যায় তিনি নাকি সাম্রাজ্যের বহু অঞ্চলেই চিকিৎসার সুবিধের জন্যে ওষধি গাছপালার চাষেও স্থানীয় কৃষকদের উৎসাহিত করেছিলেন। এই প্রয়োজনীয় ভাবনাটি তাঁর মনে উদয় হয়েছিল, হয়তো বৌদ্ধ বিহারগুলির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা থেকে।       

আবার তাঁর শিলা নির্দেশ প্রসঙ্গেই ফিরে আসি। কোন যুবক সম্রাট এমন কথা জনসমক্ষে লিখিত বলতে পারেন, চিন্তা করলে অবাক হতেই হয়ঃ-

দেবানাম্প্রিয় রাজা প্রিয়দর্শী বলছেন যে - অতীতে (রাজাদের কাছে) সর্বদা (জনগণের) সমস্যা শোনার অথবা সংবাদ নেবার মতো সময় থাকত না। কিন্তু এখন আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে, যে কোন সময়, (হয়তো) আমার খাবার সময়, (অথবা আমি) অন্দরমহলে রয়েছি, (অথবা) শোবার ঘরে, অথবা রথে, অথবা পাল্কিতে, অথবা উদ্যানে, সর্বত্র সংবাদবাহকরা নিযুক্ত হয়েছে (তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে) – “আমাকে জনগণের যে কোন সমস্যার সংবাদ দেবে” এবং যে কোন স্থানেই আমি জনগণের সমস্যা মিটিয়ে ফেলে থাকি”। (শিলা-নির্দেশ ৬-এর অংশবিশেষ – গিরনার, গুজরাট - সিংহাসনে আরোহণের ত্রয়োদশ বর্ষ – ২৫৫ বিসিই. – ইংরিজি অনুবাদ ডঃ অমূল্যচন্দ্র সেন, বাংলা অনুবাদ – লেখক।)

অথবা কোন যুবক সম্রাট তাঁর অধীনস্থ আধিকারিককে এমন লিখিত নির্দেশ দিতে পারেন, -

তোসালির নগর বিচারক মহামাত্রকে দেবানাম্প্রিয়র যে কথা বলার ছিল, সে কথা হল,

(মঙ্গলের জন্যে) আমি যা কিছু চিন্তা করি, আমি সঙ্কল্প করি আমি যেন সেই কাজগুলি করে উঠতে পারি এবং (যে কোন) উপায়ে সুসম্পন্ন করতে পারি।

এবং আমার ধারণা এই লক্ষ্য (পূরণের)-এর  মুখ্য উপায়, তোমাদের নির্দেশ দেওয়া।

তোমরা নিঃসন্দেহে সহস্র-সহস্র মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে আছ (এই লক্ষ্য নিয়ে যে,) “আমরা যেন সকল মানুষের প্রীতি অর্জন করতে পারি”।

সকল মানুষই আমার সন্তান। (আমার নিজের) সন্তানদের জন্যে আমার যেমন ইচ্ছে হয়, তাদের ইহলোকের এবং পরলোকেরও সকল কল্যাণ এবং সুখের সংস্থান করতে, আমি সকল মানুষের জন্যেও তেমনই ইচ্ছা করি।

কিন্তু তোমরা (আমার) লক্ষ্যের গভীরতা বুঝতে পারছ না। (তোমাদের মধ্যে) কেউ যদি বুঝেও থাকে, তারাও আংশিক (বুঝতে পেরেছ), (এবং এর) পুরোটা নয়”। (কলিঙ্গ শিলা-নির্দেশ ১ (ধৌলি)-র অংশ বিশেষ – ত্রয়োদশ রাজত্ব বর্ষ – ২৫৫ বি.সি.ই - ইংরিজি অনুবাদ ডঃ অমূল্যচন্দ্র সেন, বাংলা অনুবাদ – লেখক।) 

৩.৫.২.৪ বিরূপ মনোভাব

অশোকের মতো সম্রাট পৃথিবীতে কোনদিন আর কেউ এসেছিলেন কিনা জানা যায় না, অথচ তাঁর বহুল ব্যবহৃত উপাধি “দেবানাম্প্রিয়”-র এমন অর্থ বিকার কী করে হল, কেনই বা হল?

সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত ভারতীয় নাগরিক সমাজে বৌদ্ধদের যতটা প্রভাব ছিল, জৈন এবং আজীবিকদের সঙ্গে প্রায় তুল্যমূল্য। কারণ অশোকের পিতামহ নিজেই জৈনধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন এবং পিতা বিন্দুসার আজীবিক মতে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু অশোক বৌদ্ধ ধর্মগ্রহণ করে রীতিমতো ধর্মাশোক হয়ে উঠলেন এবং তাঁর পরবর্তী রাজত্ব বর্ষগুলিতে বৌদ্ধধর্ম প্রচার এবং “ধম্ম” আচরণই তাঁর একমাত্র কর্তব্য হয়ে উঠেছিল।

এইখানেই বিরূপতার সূত্রপাত হল। অন্যান্য সকল বিরোধী গোষ্ঠী – ব্রাহ্মণ্য, জৈন এবং আজীবিকরাও - বৌদ্ধদের এই হঠাৎ সৌভাগ্যে মনে মনে ক্ষুব্ধ, বিরক্ত এবং ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠতে লাগল। তারা চণ্ডাশোকের ভয়ে বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারল না, কিন্তু আড়ালে বিদ্রূপ আর বদনাম করতে লাগল প্রতিনিয়ত।

অশোকের যতগুলি শিলা-নির্দেশ এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক শিলা-নির্দেশ যে পরবর্তী যুগে ধ্বংস করা হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। অতএব যত জায়গায় তিনি শিলানির্দেশ স্থাপনা করেছেন, বিরোধী ব্রাহ্মণ এবং জৈনরা সাধারণ মানুষের মনে বপন করেছেন একের পর এক বিরূপ মনোভাবের বীজ। রাজধানীতে বসে অশোক যতই নির্দেশ ঘোষণা করুন, প্রজারা তাঁর সন্তান, তাদের মঙ্গলের জন্যে তিনি সদা জাগ্রত। সে কথায় কান দিতে গ্রাম-জনপদের নিরক্ষর সাধারণ মানুষের বয়েই গেছিল।

অশোকের পরোক্ষ ঘোষণার থেকে অনেক বেশি মূল্যবান গ্রাম বা জনপদ-প্রধানের প্রত্যক্ষ কথা। দায়-দৈবে, দুঃখ-বিপদে তারা সহায় না হলে, গ্রামের মানুষ কী প্রতিকারের আশায় মহাস্থান, অথবা গিরনার, কিংবা ধৌলি থেকে পাটলিপুত্রে যাবে? কোন অবৌদ্ধ গ্রাম-প্রধান তার গ্রামের সাধারণ মানুষদের যদি বলে, “এবার যে অবর্ষায় তোদের ধান এত কম হল, কই তোদের রাজা, যে নাকি তোদের নিজের সন্তানের মতো দেখে, তোদের কর কমিয়েছে? বলেছে এক-ষষ্ঠাংশ না দিয়ে, এক-দশমাংশ কর দাও। তোদের রাজা ওই যে পাথর বসাচ্ছে, তাতে হিজিবিজি লিখছে, এ সবের খরচ নেই? সে টাকা আসে কোথা থেকে, তোর-আমার রাজস্বের টাকা থেকেই তো! এসব না করে তোদের যদি রাজস্ব কমাত, বুঝতাম তোরা সব রাজার ছেলে-মেয়েই বটে। সে সব নেই শুধু উপদেশের পাথর বসাচ্ছে। তোদের ওই রাজাটি “দেবানাম্প্রিয়” না ছাই, আসলে একটি বুদ্ধু আর মাথামোটা – তার মাথায় হাত বুলিয়ে নেড়ামাথা বৌদ্ধগুলো নিজেদের আখের গোছাচ্ছে!”

অথবা অশোক যখন রাজকোষের বিপুল অর্থ ব্যয় করে বৌদ্ধবিহার বানাচ্ছেন, স্তূপ বানাচ্ছেন, দেশে-বিদেশে ধর্ম প্রচারের জন্যে বৌদ্ধদের দল পাঠাচ্ছেন, তাতে সর্বস্তরের সব রাজকর্মচারীরা আনন্দে উদ্বেল হচ্ছিলেন এমন ভাবনার কোন অবকাশই নেই। বরং তাঁরা নিজেদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে আলোচনা করতেন, “রাজা এসব কী করছেন বল দেখি? যেভাবে বৌদ্ধদের পেছনে জলের মতো নিষ্ক ঢালছেন, রাজকোষ শূণ্য হতে কতক্ষণ? আমরা যে এত কষ্ট করে, মাঠেঘাটে, জলে-জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে কর আদায় করে আনছি, আমাদের মাইনে-পত্তর ঠিকঠাক মিলবে তো? শেষ অব্দি ছেলেপুলে পরিবার-সংসার নিয়ে গাছতলায় দাঁড়াতে হবে না তো, ভায়া? বৌদ্ধরা কী করে যে এমন বশ করে ফেলল আমাদের রাজাকে, উঠতে বললে উঠছেন, বসতে বললে বসছেন”। “বৌদ্ধদের দোষ দিয়ে আর কী হবে, ভায়া, আমাদের “দেবানাম্প্রিয়” রাজাটিই আসলে নির্বোধ আর মূর্খ - নিজে তো ডুবছেনই, আমাদেরও ডোবাবেন”।

কিংবা অশোক তাঁর দ্বাদশ রাজত্ব বর্ষে যখন ঘোষণা করলেন, “দেবানাম্প্রিয় রাজা প্রিয়দর্শীর এই ধম্ম-অনুশাসন লেখার কারণ, এখানে (আমার সাম্রাজ্যে) কোন জীব হত্যা এবং যজ্ঞের বলিদান করা যাবে না। কোন সমাজ উৎসবেও সমবেত হওয়া যাবে না। প্রিয়দর্শী সমাজ[8]গুলিতে অনেক অনাচার হতে দেখেছেন। অবিশ্যি অন্য ধরনের কিছু উৎসব আছে, যেগুলি দেবানাম্প্রিয় রাজা প্রিয়দর্শী অনুমোদন করছেন। আগে প্রিয়দর্শীর রন্ধনশালায় মাংস রান্নার জন্যে প্রত্যেকদিন শত-সহস্র প্রাণী হত্যা করা হত। কিন্তু এই ধম্ম-অনুশাসন (যখন) লেখা হচ্ছে, তখন মাংস রান্নার জন্যে (প্রত্যেকদিন) মাত্র তিনটি জীব হত্যা করা হয় – দুটি ময়ুর এবং একটি হরিণ (এবং) একটি হরিণও সর্বদা নয়। ভবিষ্যতে এই তিনটি জীবহত্যাও আর (করা) হবে না”। (শিলা-নির্দেশ ১, গিরনার, দ্বাদশ রাজত্ব বর্ষ – ২৫৬ বি.সি.ই - ইংরিজি অনুবাদ ডঃ অমূল্যচন্দ্র সেন, বাংলা অনুবাদ – লেখক।), তখন আগুনে যেন ঘি পড়ল।

এই নির্দেশের ফলে, যজ্ঞে নানান প্রাণীর বলি দিয়ে ব্রাহ্মণ্য সমাজের রসনা তৃপ্তিতে বাধা পড়ল। এ তো ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, একজন মানুষ রুচি অনুসারে যা খুশি খেতে পারে, সেখানে দেশের রাজা কী করে ঠিক করে দেন, কে কী খাবে, বা খাবে না? জৈনরা হয়তো খুশি হয়েছিল, কিন্তু সাধারণ মানুষও বিগড়ে গেল এই নির্দেশে। তারাও হাজার হাজার বছর ধরে নানান প্রাণীর মাংস খেতে অভ্যস্ত এবং নিত্য ডাল-ভাত-রুটির সঙ্গে মাঝে মধ্যে মাংসাহার না হলে, তাদের জীবনে আর রইল কী? তাছাড়া সারাবছর ক্ষেতখামারে, খনিতে, কামারশাল কিংবা কুমোরশালায়, তাঁতঘরে হাড়-ভাঙা পরিশ্রমের পর সমাজ-উৎসবে কটা সপ্তাহের বিনোদনে, রাজার এ আবার কেমন ব্যাগড়া? অতএব ব্রাহ্মণদের ধর্মাচরণে এবং সাধারণ খেটে খাওয়া শূদ্রদের জীবনাচরণে বাধা পড়ল একই সঙ্গে। অবৌদ্ধ মানুষরা – ব্রাহ্মণ্যসমাজ এবং সমাজের অনার্য ও পতিত শূদ্ররাও এখন অনেকটা কাছাকাছি চলে এল। ব্রাহ্মণদের যজ্ঞ-ধর্মে এতদিন যে শূদ্রদের অনধিকার ছিল (এবং এর পরেও থাকবে!), সে কথাও আপাততঃ ভুলে গেল শূদ্র এবং ব্রাহ্মণরা। এই বিরূপতার প্রভাব ভারতের পরবর্তী ইতিহাসকে অনেকটাই বদলে দিয়েছিল সে কথা আসবে পরে। সাধারণ মানুষকে রাজার নির্বুদ্ধিতা এবং খ্যাপামি বোঝাতে ব্রাহ্মণ্য গোষ্ঠীকে খুব একটা বেগ পেতে হল না। অতএব আপামর অবৌদ্ধ জনগণের কাছে, এখন “দেবানাম্প্রিয়” উপাধিটি অন্যতম গাত্রদাহের কারণ, এই শব্দটি নির্বোধ, মূর্খের সমার্থক হয়ে উঠল। একইভাবে হয়তো বুদ্ধও হয়ে উঠেছিলেন “বুদ্ধু”। “বুদ্ধু” – শব্দের অর্থও বোকা, বাস্তববোধহীন।

সম্রাট অশোকের প্রতি বিরূপ মনোভাব আজও দেখা যায় কোন কোন কলিঙ্গবাসীর মনে। দুই সহস্রাধিক বছর পরেও তাঁরা ভুলতে পারেননি অশোকের কলিঙ্গ জয়ের নিষ্ঠুরতা। অশোক যতই না কেন তাঁর নিষ্ঠুরতার জন্য অনুতাপ ও সমবেদনার কথা খোদাই করে রেখে যান চিরস্থায়ী পাথরে।   


চলবে...



[1] সেমিটিক ভাষা এবং লিপির উদ্ভব হয়েছিল মধ্য প্রাচ্যে, পরবর্তী কালে উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়াতেও এই ভাষার প্রচলন হয়েছিল।  

[2] ভারতীয় লিপিতে একটি দাঁড়ি বা যুগ্ম দাঁড়ি ছাড়া যতিচিহ্নের প্রচলন কোনদিনই ছিল না। বিবিধ যতিচিহ্ন – যেমন কমা, কোলন, সেমি কোলন, প্রশ্ন-চিহ্ন, বিস্ময়-চিহ্ন ইত্যাদির প্রচলন শুরু হয়েছে বৃটিশ রাজত্ব তথা ইংরিজির প্রভাবে।

[3] ঊড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ইউপির যে তীর্থ বা পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে বাঙালী পর্যটকের বহুল যাতায়াত, সেখানকার সস্তার ভাতের হোটেল বা দোকানের সাইনবোর্ডে বাংলা লিপির “চিত্রাঙ্কন”-গুলি লক্ষ্য করলে ব্যাপারটা স্পষ্ট বোঝা যাবে।

[4] আরামায়িক (Aramaic) ভাষা উত্তরপশ্চিমের সেমিটিক গোষ্ঠীর ভাষা, যে ভাষা উত্তর আফ্রিকা, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় বহুল প্রচলিত ছিল।

[5] ধম্ম” শব্দটি সংস্কৃত ধর্মের প্রাকৃত রূপ। বৌদ্ধ ধর্মের মুখ্য তিন স্তম্ভ - বুদ্ধ, ধম্ম এবং সঙ্ঘ। অশোকের “ধম্ম” বুদ্ধদেবের “ধম্ম”-র থেকে বেশ কিছুটা আলাদা, সেই কারণেই অশোকের “ধম্ম” কথাটি দুইয়ের প্রভেদ বোঝাতে ব্যবহার করেছি। এ বিষয়ে পরে বিশদে আলোচনা করা যাবে।   

[6] রাজা দারিয়ুস নির্দেশগুলি এভাবে শুরু করতেন - ইংরিজিতে “Says Darius, the King”. ইংরিজিতে “the” এবং “King”-এর capital “K” দিয়ে যা বোঝানো যায়, বাংলাতে “মহান” ছাড়া আর কোন প্রতিশব্দ খুঁজে পেলাম না।

[7] আমাদের সাধারণ ধারণা হল এই রাজপথ বানিয়েছিলেন শের শাহ। কিন্তু বাস্তবে এই রাস্তাটি মানুষের অজস্র গোষ্ঠী আদিম কাল থেকেই ব্যবহার করে আসছে। সম্রাট অশোক এবং পরবর্তীকালে শেরশাহ এই রাস্তাটির সংস্কার ও উন্নয়ন করেছিলেন মাত্র। পরবর্তীকালে বৃটিশরাও এই রাস্তার উন্নতি ঘটিয়ে এবং হাওড়া/কলকাতার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে নাম দিয়েছিল গ্র্যাণ্ড ট্রাংক রোড।

[8] একধরনের উৎসব যাকে সে সময় “সমাজ” বলা হত। সম্রাট অশোকের আপত্তিকর এই মেলাগুলিতে ঘোড়া বা বলদের দৌড়, কুস্তি, জুয়া, নাচ, গান, নৃত্য-বাদ্য, ভেল্কিবাজি, ভানুমতীর খেল সবই থাকত এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে চলত। ওই সব মেলায় মাংস খাওয়া, মদ্যপান এবং পতিতা নারীদের সঙ্গে অবাধ যৌনাচারও চলত। সম্রাট অশোক এগুলিকেই নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি এই শিলালিপিতেই অন্যান্য নিরীহ মেলার স্পষ্ট অনুমতি দিয়েছিলেন।      


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন পোস্টগুলি

পুজোর সেকাল ও মোদের পাড়ার কুকুরগুলো

  পুজোর সেকাল সেবার পুজোয় হায়ার সেকেণ্ডারির দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে আমরা যেন স্পষ্ট অনুভব করতে পারলাম আমাদের হাড় জিরজিরে পিঠের দুপাশে চিকন চিকন ...