শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

গীতা - ৮ম পর্ব

 





এর আগের সপ্তম অধ্যায়ঃ জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ পড়া যাবে পাশের সূত্রে "গীতা - ৭ম পর্ব"


অষ্টম অধ্যায়ঃ অক্ষরব্রহ্মযোগ


অর্জুন উবাচ

কিং তদ্‌ব্রহ্ম কিমধ্যাত্মং কিং কর্ম পুরুষোত্তম।

অধিভূতং চ কিং প্রোক্তমধিদৈবং কিমুচ্যতে।।

অর্জুন উবাচ

কিং তৎ ব্রহ্ম কিং অধ্যাত্মং কিং কর্ম পুরুষোত্তম।

অধিভূতং চ কিং প্রোক্তম অধিদৈবং কিম্‌ উচ্যতে।।

অর্জুন বললেন- হে পুরুষোত্তম, ব্রহ্ম কি? অধ্যাত্ম কি? কর্ম কি? কাকেই বা অধিভূত বলে আর কাকেই বা অধিদৈব বলা হয়?

 

অধিযজ্ঞ কথং কোঽত্র দেহেঽস্মিন্‌ মধুসূদন।

প্রয়াণকালে চ কথং জ্ঞেয়োঽসি নিয়তাত্মভিঃ।।

অধিযজ্ঞ কথং কঃ অত্র দেহে অস্মিন্‌ মধুসূদন।

প্রয়াণকালে চ কথং জ্ঞেয়ঃ অসি নিয়ত-আত্মভিঃ।।

হে মধুসূদন, এই দেহে অধিযজ্ঞ কে এবং কোথায় তার অবস্থান? আত্মসংযমী ব্যক্তি কিভাবেই বা মৃত্যুকালে তোমাকে জানতে পারে?

 

শ্রীভগবানুবাচ

অক্ষরং ব্রহ্ম পরমং স্বভাবোঽধ্যাত্মমুচ্যতে।

ভূতভাবোদ্ভবকরো বিসর্গঃ কর্মসংজ্ঞিতঃ।।

শ্রীভগবান উবাচ

অক্ষরং ব্রহ্ম পরমং স্বভাবঃ অধ্যাত্মম্‌ উচ্যতে।

ভূতভাব-উদ্ভবকরঃ বিসর্গঃ কর্ম-সংজ্ঞিতঃ।।

শ্রীভগবান বললেন- অক্ষরকেই পরম ব্রহ্ম বলে। ব্রহ্মের স্বভাবকে অধ্যাত্ম বলে। সমস্ত ভূতবস্তুর সৃজনকারী দেবতাদের উদ্দেশে বিসর্গের নাম কর্ম। 

[ওঁ হল পরম অক্ষর ও আদি শব্দ, প্রণব। এই শব্দ থেকেই এই জগতের সৃষ্টি বিসর্গ মানে বিসর্জন, দেবতাদের উদ্দেশে দ্রব্য উৎসর্গ করা হয় যে যজ্ঞে, তাকেই বিসর্গ বলে।]

 

অধিভূতং ক্ষরো ভাবঃ পুরুষশ্চাধিদৈবতম্‌।

অধিযজ্ঞোঽহমেবাত্র দেহে দেহভূতাং বর।।

অধিভূতং ক্ষরঃ ভাবঃ পুরুষঃ চ অধিদৈবতম্‌।

অধিযজ্ঞঃ অহম এব অত্র দেহে দেহভূতাং বর।।

হে নরশ্রেষ্ঠ অর্জুন, বিনাশশীল সমস্ত পদার্থই অধিভূত, পরমপুরুষ ব্রহ্ম অধিদেবতা, আর আমিই এই দেহে অবস্থিত অধিযজ্ঞ।

 

অন্তকালে চ মামেব স্মরণ্মুক্ত্বা কলেবরম্‌।

যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ।।

অন্তকালে চ মাম্‌ এব স্মরন্‌ মুক্ত্বা কলেবরম্‌।

যঃ প্রয়াতি স মৎ ভাবং যাতি নাস্তি অত্র সংশয়ঃ।।

এবং মৃত্যুকালে আমাকেই স্মরণে রেখে, দেহ ত্যাগ ক’রে যিনি প্রয়াণ করেন, তিনি আমার স্বরূপেই মিলিত হন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

 

যং যং বাপি স্মরন্‌ ভাবং ত্যজত্যন্তে কলেবরম্‌।

তং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদ্ভাবভাবিতাঃ।।

যং যং বা অপি স্মরন্‌ ভাবং ত্যজতি অন্তে কলেবরম্‌।

তং তম্‌ এব ইতি কৌন্তেয় সদা তৎ ভাব ভাবিতাঃ।।

হে কুন্তীপুত্র অর্জুন, যিনি সর্বদা যে দেবতার শরণাগত থাকেন, মৃত্যুকালেও সেই দেবতার বিষয়ে চিন্তা করে দেহ ত্যাগ করলে, তিনি সেই দেবতারই স্বরূপ লাভ করেন।

   

তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু মামনুস্মর যুধ্য চ।

ময্যর্পিতমনোবুদ্ধির্মামেবৈষ্যস্যসংশয়ম্‌।।

তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু মাম্‌ অনুস্মর যুধ্য চ।

ময়ি অর্পিত মনঃ-বুদ্ধিঃ মাম্‌ এব এষ্যসি অসংশয়ম্‌।।

অতএব, আমাকে সর্বদা স্মরণে রেখে, তুমি যুদ্ধ করো। কোন দ্বিধা বা সংশয় না ক’রে, তোমার মন এবং বুদ্ধি আমাকে সমর্পণ করলে, তুমি আমাকেই লাভ করবে। এই বিষয়ে সন্দেহ নেই।

 

অভ্যাসযোগযুক্তেন চেতসা নান্যগামিনা।

পরমং পুরুষং দিব্যং যাতি পার্থানুচিন্তয়ন্‌।।

অভ্যাস-যোগ-যুক্তেন চেতসা না অন্যগামিনা।

পরমং পুরুষং দিব্যং যাতি পার্থ অনুচিন্তয়ন্‌।।

হে পার্থ, অন্তরে সর্বদা ঈশ্বর চিন্তার অভ্যাসকে অন্তরঙ্গ সাধন বলে। অভ্যাস যোগে, একাগ্র মনে সর্বদা ধ্যান করতে করতেই সেই দিব্য পরমপুরুষকে লাভ করা যায়। 

 

কবিং পুরাণমনুশাসিতারমণোরণীয়াংসমনুস্মরেদ্‌ যঃ।

সর্বস্য ধাতারমচিন্ত্যরূপমাদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ।।

কবিং পুরাণং অনুশাসিতারম্‌ অণোঃ অণীয়াংসম্‌ অনুস্মরেৎ যঃ।

সর্বস্য ধাতারম্‌ অচিন্ত্য-রূপম্‌ আদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ।।

যিনি সর্বজ্ঞ, চিরায়ত বিশ্বকে যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন, যিনি সূক্ষ্ম থেকেও সূক্ষ্মতর, যাঁর স্বরূপ চিন্তা করা যায় না, যিনি সূর্যের মতো স্বপ্রকাশ ও দীপ্তিমান, যিনি সমস্ত অন্ধকারের অতীত এবং সর্ব জীবের কর্মফলদাতা

  

১০

প্রয়াণকালে মনসাঽচলেন

   ভক্ত্যা যুক্তো যোগবলেন চৈব।

ভ্রুবোর্মধ্যে প্রাণমাবেশ্য সম্যক্‌

   স তং পরং পুরুষমুপৈতি দিব্যম্‌।।

প্রয়াণকালে মনসাঃ অচলেন

   ভক্ত্যা যুক্তঃ যোগবলেন চ এব।

ভ্রুবোঃ মধ্যে প্রাণম্‌ আবেশ্য সম্যক্

   স তং পরং পুরুষম্‌ উপৈতি দিব্যম্‌।।

মৃত্যুকালে একান্ত ভক্তিতে, একাগ্র মনে, একনিষ্ঠ সাধনায়, নিজের প্রাণকে ভ্রূযুগলের মধ্যে স্থির রেখে, তাঁর স্মরণে যিনি ধ্যানমগ্ন থাকেন, তিনিই সেই দিব্য পরম পুরুষকে লাভ করেন।

 

১১

যদক্ষরং বেদবিদো বদন্তি

   বিশন্তি যদ্‌ যতয়োঃ বীতরাগাঃ।

যদিচ্ছন্তো ব্রহ্মচর্যং চরন্তি

   তৎ তে পদং সংগ্রহেণ প্রবক্ষ্যে।।

যৎ অক্ষরং বেদবিদঃ বদন্তি

   বিশন্তি যদ্‌ যতয়োঃ বীতরাগাঃ।

যৎ ইচ্ছন্তঃ ব্রহ্মচর্যং চরন্তি

   তৎ তে পদং সংগ্রহেণ প্রবক্ষ্যে।।

বেদবিৎ পণ্ডিতেরা যাঁকে অবিনাশী অক্ষর বলেন, বিষয়ের আসক্তিহীন সন্ন্যাসীরা যাঁর স্বরূপে মিশে যান, যাঁকে উপলব্ধির জন্যে ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়, সেই পরম ব্রহ্মপদ লাভের উপায় আমি তোমাকে সংক্ষেপে বলছি।

 

১২

সর্বদ্বারাণি সংযম্য মনো হৃদি নিরুধ্য চ।

মূর্ধ্ন্যাধায়াত্মনঃ প্রাণমাস্থিতো যোগধারণাম্‌।।

সর্বদ্বারাণি সংযম্য মনঃ হৃদি নিরুধ্য চ।

মূর্ধ্নি আধায় আত্মনঃ প্রাণম্‌ আস্থিতঃ যোগধারণাম্‌।।

সমস্ত ইন্দ্রিয়দ্বার সংযত করে, অস্থির চিত্তকে হৃদয়ের মধ্যে রুদ্ধ রেখে, ভ্রুযুগলের মাঝখানে নিজের প্রাণকে স্থির রেখে, একনিষ্ঠ সাধনায়,

 

১৩

ওমিত্যেকাক্ষরং ব্রহ্ম ব্যাহরন্‌ মামনুস্মরন্‌।

যঃ প্রয়াতি ত্যজন্‌ দেহং স যাতি পরমাং গতিম্‌।।

ওম্‌ ইতি এক-অক্ষরং ব্রহ্ম ব্যাহরন্‌ মাম্‌ অনুস্মরন্‌।

যঃ প্রয়াতি ত্যজন্‌ দেহং স যাতি পরমাং গতিম্‌।।

এবং যিনি মৃত্যুকালে দেহত্যাগের সময় ব্রহ্মস্বরূপ ‘ওঁ’ এই এক অক্ষর উচ্চারণ করতে করতে, আমার চিন্তা করেন, তিনি পরম ব্রহ্মপদ লাভ করেন।

  

 

১৪

অনন্যচেতাঃ সততং যো মাং স্মরতি নিত্যশঃ।

তস্যাহং সুলভঃ পার্থ নিত্যযুক্তস্য যোগিনঃ।।

অনন্যচেতাঃ সততং যঃ মাং স্মরতি নিত্যশঃ।

তস্য অহং সুলভঃ পার্থ নিত্যযুক্তস্য যোগিনঃ।।

হে পার্থ, যিনি অন্য কোন চিন্তা না করে, সারা জীবন সব সময় আমাকেই স্মরণ করেন, আমার চিন্তায় মগ্ন সেই সন্ন্যাসীর কাছে আমি সহজেই ধরা দিয়ে থাকি। 

 

১৫

মামুপেত্য পুনর্জন্ম দুঃখালয়মশাশ্বতম্‌।

নাপ্নুবন্তি মহাত্মানঃ সংসিদ্ধিং পরমাং গতাঃ।।

মাম্‌ উপেত্য পুনর্জন্ম দুঃখ-আলয়ম্‌ অশাশ্বতম্‌।

ন আপ্নুবন্তি মহাত্মানঃ সংসিদ্ধিং পরমাং গতাঃ।।

আমাকে লাভ করার পর, পরমজ্ঞানী সিদ্ধ পুরুষকে, দুঃখের আধার এই অনিশ্চিত সংসারে আর জন্ম গ্রহণ করতে হয় না।

 

১৬

আব্রহ্মভুবনাল্লোকাঃ পুনরাবর্তিনোঽর্জুন।

মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।।

আব্রহ্ম ভুবনাৎ লোকাঃ পুনঃ-আবর্তিনঃ অর্জুন।

মাম্‌ উপেত্য তু কৌন্তেয় পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।।

হে অর্জুন, ব্রহ্মলোক থেকে এই ভূলোক পর্যন্ত সর্বত্র বার বার জন্ম নিতে হয়, কিন্তু, হে কৌন্তেয়,  আমাকে লাভ করলে আর পুনর্জন্ম হয় না।  

 

১৭

সহস্রযুগপর্যন্তমহর্যদ্‌ ব্রহ্মণো বিদুঃ।

রাত্রিং যুগসহস্রান্তাং তেঽহোরাত্রবিদো জনাঃ।। 

সহস্র-যুগ-পর্যন্তম্‌ অহঃ যৎ ব্রহ্মণঃ বিদুঃ।

রাত্রিং যুগ-সহস্র-অন্তাং তে অহঃ-রাত্র-বিদঃ জনাঃ।। 

হাজার যুগ ধরে ব্যাপ্ত ব্রহ্মার দিন এবং হাজার যুগ ব্যাপি তাঁর রাত, এই তত্ত্ব যিনি জানেন, তিনিই দিনরাত্রির রহস্য উপলব্ধি করতে পারেন।  

 

১৮

অব্যক্তাদ্‌ ব্যক্তয়ঃ সর্বাঃ প্রভবন্ত্যহরাগমে।

রাত্র্যাগমে প্রলীয়ন্তে তত্রৈবাব্যক্তসংজ্ঞকে।।

অব্যক্তাদ্‌ ব্যক্তয়ঃ সর্বাঃ প্রভবন্তি অহঃ আগমে।

রাত্রি আগমে প্রলীয়ন্তে তত্র এব অব্যক্তসংজ্ঞকে।।

ব্রহ্মার দিন শুরু হলে অব্যক্ত থেকে এই জগতের সবকিছুই আকার পায় এবং রাত্রিতে তারাই আবার নিরাকারে বিলীন হয়।

 

১৯

ভূতগ্রামঃ স এবায়ং ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে।

রাত্র্যাগমেঽবশঃ পার্থ প্রভবত্যহরাগমে।।

ভূতগ্রামঃ স এবায়ং ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে।

রাত্রি-আগমে অবশঃ পার্থ প্রভবতি অহঃ-আগমে।।

হে পার্থ, সেই পার্থিব বস্তুসকল বার বার সৃষ্টি হয়ে ব্রহ্মার রাত্রিতে বিলীন হয় এবং তাঁর দিনের শুরুতে,  নিজের কর্মের ফল অনুসারে তারা আবার জন্মলাভ করে।

   

২০

পরস্তস্মাৎ তু ভাবোঽন্যোঽব্যক্তোঽব্যক্তাৎ সনাতনঃ।

যঃ স সর্বেষু ভূতেষু নশ্যৎসু ন বিনশ্যতি।।

পরঃ তস্মাৎ তু ভাবঃ অন্যঃ অব্যক্তঃ অব্যক্তাৎ সনাতনঃ।

যঃ স সর্বেষু ভূতেষু নশ্যৎসু ন বিনশ্যতি।।

কিন্তু যে অব্যক্তভাব থেকে এই বিশ্বচরাচরের সৃষ্টি হয়, তার থেকে শ্রেষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অগোচর সনাতন অব্যক্তভাব। সমস্ত বিশ্বচরাচরের বিনাশ হলেও এই ভাব নষ্ট হয় না।

   

২১

অব্যক্তোঽক্ষর ইত্যুক্তস্তমাহুঃ পরমাং গতিম্‌।

যঃ প্রাপ্য ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম।।

অব্যক্তঃ অক্ষর ইতি উক্তঃ তং আহুঃ পরমাং গতিম্‌।

যঃ প্রাপ্য ন নিবর্তন্তে তৎ ধাম পরমং মম।।

এই যে সনাতন অব্যক্তভাবের কথা বললাম, এই ভাবকেই অক্ষর বলে, এই ভাবকেই পরমা গতি বলে। এই ভাব লাভ করলে পুনর্জন্ম হয় না, আর এই ভাবই আমার পরমধাম।

 

 

২২

পুরুষঃ স পরঃ পার্থ ভক্ত্যা লভ্যস্ত্বনন্যয়া।

যস্যান্তঃস্থানি ভূতানি যেন সর্বমিদং ততম্‌।।

পুরুষঃ স পরঃ পার্থ ভক্ত্যা লভ্যঃ তু অনন্যয়া।

যস্য অন্তঃস্থানি ভূতানি যেন সর্বম্‌ ইদং ততম্‌।।

হে পার্থ, যাঁর অন্তরে সকল জীবজগতের আশ্রয়, যিনি এই বিশ্বের সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছেন, সেই পরম পুরুষকে হৃদয়ের একান্ত ভক্তি দিয়ে লাভ করা যায়।

 

২৩

যত্র কালে ত্বনাবৃত্তিমাবৃত্তিং চৈব যোগিনঃ।

প্রয়াতা যান্তি তং কালং বক্ষ্যামি ভরতর্ষভঃ।।

যত্র কালে তু অনাবৃত্তিম্‌ আবৃত্তিং চ এব যোগিনঃ।

প্রয়াতা যান্তি তং কালং বক্ষ্যামি ভরতর্ষভঃ।।

হে ভরতকুলশ্রেষ্ঠ, যে কালে মৃত্যু হলে, যোগীগণ পরমমুক্তি লাভ করেন অথবা আবার জন্ম গ্রহণ করেন, সেই কালের কথাই তোমাকে এখন বলব। 

 

২৪

অগ্নির্জ্যোতিরহঃ শুক্লঃ ষণ্মাসা উত্তরায়ণম্‌।

তত্র প্রয়াতা গচ্ছন্তি ব্রহ্ম ব্রহ্মবিদো জনাঃ।।

অগ্নিঃ জ্যোতিঃ অহঃ শুক্লঃ ষণ্মাসা উত্তরায়ণম্‌।

তত্র প্রয়াতা গচ্ছন্তি ব্রহ্ম ব্রহ্মবিদো জনাঃ।।

অগ্নি, জ্যোতি, দিবস, শুক্লপক্ষ, এবং উত্তরায়ণের ছয়মাস, দেবযানের এই মার্গে প্রয়াণ হলে, ব্রহ্মসাধক ব্যক্তিগণ ব্রহ্মলোক লাভ করেন।

 

২৫

ধূমো রাত্রিস্তথা কৃষ্ণঃ ষণ্মাসা দক্ষিণায়নম্‌।

তত্র চান্দ্রমসং জ্যোতির্যোগী প্রাপ্য নিবর্ততে।।

ধূমঃ রাত্রিঃ তথা কৃষ্ণঃ ষণ্মাসা দক্ষিণায়নম্‌।

তত্র চান্দ্রমসং জ্যোতিঃ যোগী প্রাপ্য নিবর্ততে।।

ধোঁয়া, রাত্রি, কৃষ্ণপক্ষ এবং দক্ষিণায়নের ছয় মাস, পিতৃযানের এই মার্গে যোগী চন্দ্রের জ্যোতি লাভ ক’রে আবার এই জগতে ফিরে আসেন।  

 

২৬

শুক্লকৃষ্ণ গতী হ্যেতে জগতঃ শাশ্বতে মতে।

একয়া যাত্যনাবৃত্তিমন্যয়াবর্ততে পুনঃ।।

শুক্লকৃষ্ণে গতী হি এতে জগতঃ শাশ্বতে মতে।

একয়া যাতি অনাবৃত্তিম্‌ অন্যয়া আবর্ততে পুনঃ।।

শুক্ল এবং কৃষ্ণ এই দুটি পথই জগতের সনাতন পথ বলে জ্ঞানীরা মনে করেন, একটি পথে পরম মুক্তি পাওয়া যায়, আর অন্যটিতে আবার দেহধারণ করতে হয়।

 

২৭

নৈতে সৃতী পার্থ জানন্‌ যোগী মুহ্যতি কশ্চন।

তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু যোগযুক্তো ভবার্জুন।।

ন এতে সৃতী পার্থ জানন্‌ যোগী মুহ্যতি কঃ চন।

তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু যোগ-যুক্তঃ ভব অর্জুন।।

হে পার্থ, এই দুই মার্গ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে, কোনও যোগীই মোহের বন্ধনে আবদ্ধ হন না। অতএব, হে অর্জুন, তুমি সর্বদা ব্রহ্মধ্যানে অভ্যস্ত হও। 

 

২৮

বেদেষু যজ্ঞেষু তপঃসু চৈব

দানেষু যৎ পুণ্যফলং প্রদিষ্টম্‌।

অত্যেতি তৎ সর্বমিদং বিদিত্বা

যোগী পরং স্থানমুপৈতি চাদ্যম্‌।

বেদেষু যজ্ঞেষু তপঃসু চ এব

দানেষু যৎ পুণ্যফলং প্রদিষ্টম্‌।

অত্যেতি তৎ সর্বম্‌ ইদং বিদিত্বা

যোগী পরং স্থানম্‌ উপৈতি চ আদ্যম্‌।

বেদ পাঠ, যজ্ঞ অনুষ্ঠান, কঠোর তপস্যা এবং দান কর্ম থেকে যে সমস্ত পুণ্যফলের কথা শাস্ত্রে বলা হয়েছে, তোমার ওই সাতটি প্রশ্নে আমার এই উত্তর সম্যক উপলব্ধি করতে পারলে, ধ্যানযোগী ঐ সব পুণ্যফল অতিক্রম করে জগতের আদি কারণস্বরূপ পরমপদ লাভ করে থাকেন।    

 

অক্ষরব্রহ্মযোগ সমাপ্ত


চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন পোস্টগুলি

গীতা - ৮ম পর্ব

  এর আগের সপ্তম অধ্যায়ঃ জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ পড়া যাবে পাশের সূত্রে " গীতা - ৭ম পর্ব " অষ্টম অধ্যায়ঃ অক্ষরব্রহ্মযোগ ১ ...