রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

শ্রীশ্রী চণ্ডী - পর্ব ৩

 


[প্রত্যেকটি লেখা সরাসরি আপনার মেলে পেতে চাইলে, ডান দিকের কলমে "ফলো করুন" 👉 

 বক্সটি ক্লিক করে নিজের নাম ও মেল আইডি রেজিস্টার করে নিন] 



[পূর্ব প্রকাশিত শ্রীশ্রী চণ্ডীর পর্ব ২ এই সূত্রে পড়া যাবে - শ্রীশ্রী চণ্ডী - পর্ব ২ ]



মধ্যমচরিত

মহিষাসুরসৈন্যবধ

ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ

দ্বিতীয় অধ্যায়

 

(ওঁ হ্রীঁ) ঋষিরুবাচ।

দেবাসুরমভূদ্‌ যুদ্ধং পূর্ণমব্দশতং পুরা।

মহিষেঽসুরাণামধিপে দেবানাঞ্চ পুরন্দরে।। ১

[দেব-অসুরম্‌ অভূৎ যুদ্ধম্‌ পূর্ণম্‌ অব্দ-শতম্‌ পুরা। মহিষে-অসুরাণাম্‌ অধিপে দেবানাম্‌ চ পুরন্দরে।। ১]

পুরাকালে (প্রথম মনু স্বায়ম্ভূবের মন্বন্তরে) অসুরদের রাজা ছিলেন মহিষ এবং দেবতাদের পুরন্দর ইন্দ্র। সেই সময়ে পুরো একশ’ বছর ধরে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ চলেছিল।

[ওঁ, ঐং, হ্রীং, ক্লীং প্রভৃতি শব্দগুলি বৈদিক ও তন্ত্রশাস্ত্রের বীজ মন্ত্র। ওঁ আদি প্রণব মন্ত্র। ঐং মন্ত্র চিৎরূপা সরস্বতী কে, হ্রীং মন্ত্র সৎ-রূপা লক্ষ্মীকে, ক্লীং মন্ত্রে আনন্দস্বরূপিনী মহাকালীকে সম্বোধন, আবাহন এবং স্মরণ করা হয়।] 

তত্রাসুরৈর্মহাবীর্যৈর্দেবসৈন্যং পরাজিতম্‌।

জিত্বা চ সকলান দেবানিন্দ্রোঽভূন্মহিষাসুরঃ।। ২

[তত্র অসুরৈঃ মহাবীর্যৈঃ দেব-সৈন্যম্‌ পরাজিতম্‌। জিত্বা চ সকলান দেবান্‌ ইন্দ্রঃ অভূৎ মহিষাসুরঃ।। ২]

সেই যুদ্ধে মহাবীর অসুরেরা দেবসৈন্যদের পরাজিত করেছিল এবং সকল দেবতাদের জয় করে, মহিষাসুর হয়েছিল ইন্দ্র - অর্থাৎ স্বর্গের অধিপতি।

ততঃ পরাজিতা দেবাঃ পদ্মযোনিং প্রজাপতিম্‌।

পুরষ্কৃত্য গতাস্তত্র যত্রেশগরুড়ধ্বজৌ।। ৩

[ততঃ পরাজিতাঃ দেবাঃ পদ্মযোনিং প্রজাপতিম্‌। পুরষ্কৃত্য গতাঃ তত্র যত্র ঈশ-গরুড়ধ্বজৌ।। ৩]

তখন পরাজিত দেবতারা পদ্মযোনি-প্রজাপতি ব্রহ্মার নেতৃত্বে সেখানে গেলেন, যেখানে ছিলেন শিব ও গরুড়ধ্বজ বিষ্ণু। 

 যথাবৃত্তং তয়োস্তদ্‌বন্মহিষাসুরচেষ্টিতম্‌।

ত্রিদশাঃ কথয়ামাসুর্দেবাভিভববিস্তরম্‌।। ৪

সূর্যেন্দ্রাগ্ন্যনিলেন্দূনাং যমস্য বরুণস্য চ।

অন্যেষাঞ্চাধিকারান্‌ স স্বয়মেবাধিতিষ্ঠতি।। ৫

[যথাবৃত্তং তয়োঃ তৎবৎ মহিষাসুর অচেষ্টিতম্‌। ত্রিদশাঃ কথয়ামাসুঃ দেব-অভিভব-বিস্তরম্‌।

সূর্য-ইন্দ্র-অগ্নি-অনিল-ইন্দূনাম্‌ যমস্য বরুণস্য চ। অন্যেষান্‌ চ অধিকারান্‌ স স্বয়ম্‌ এব অধিতিষ্ঠতি।। ৫]

(মহেশ্বর ও বিষ্ণুর সামনে) মহিষাসুরের উপদ্রবের ফলে দেবতাদের যেমন-যেমন পরাজয় হয়েছিল, সেকথা তাঁরা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। (আরও বললেন) সে এখন সূর্য, ইন্দ্র, অগ্নি, বায়ু, চন্দ্র, যম ও বরুণ এবং অন্য দেবতাদের অধিকারসমূহে নিজেই অধিষ্ঠিত হয়েছে।

স্বর্গান্নিরাকৃতাঃ সর্বে তেন দেবগণা ভুবি।

বিচরন্তি যথা মর্ত্যা মহিষেণ দুরাত্মনা।। ৬

এতদ্‌ বঃ কথিতং সর্বমমরারিবিচেষ্টিতম্‌।

শরণঞ্চ প্রপন্নাঃ স্মো বধস্তস্য বিচিন্ত্যতাম্‌।। ৭

[স্বর্গাৎ নিরাকৃতাঃ সর্বে তেন দেবগণা ভুবি। বিচরন্তি যথা মর্ত্যা মহিষেণ দুরাত্মনা।। ৬

এতৎ বঃ কথিতম্‌ সর্বম্‌ অমর-অরি বিচেষ্টিতম্‌শরণম্‌ চ প্রপন্নাঃ স্মঃ বধঃ তস্য বিচিন্ত্যতাম্‌।। ৭]

সেই দুরাত্মা মহিষ স্বর্গ থেকে সকল দেবতাদের দূর করে দেওয়াতে, দেবতারা এখন মরণশীল মানুষের মতোই পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনাদের সামনে এই দেব-শত্রু বিষয়ে সকল কথাই বললাম এবং (এখন) আমরা আপনাদের শরণাপন্ন হলাম, আপনারা তার বধের কোন উপায় চিন্তা করুন।

ইত্থং নিশম্য দেবানাং বচাংসি মধুসূদনঃ।

চকার কোপং শম্ভুশ্চ ভ্রূকুটিকুটিলাননৌ।। ৮

ততোঽতিকোপপূর্ণস্য চক্রিণো বদনাৎ ততঃ।

নিশ্চক্রাম মহৎ তেজো ব্রহ্মণঃ শঙ্করস্য চ।। ৯

[ইত্থং নিশম্য দেবানাং বচাংসি মধুসূদনঃ। চকার কোপম্‌ শম্ভুঃ চ ভ্রূকুটি-কুটিল আননৌ।। ৮

ততঃ অতি-কোপ-পূর্ণস্য চক্রিণো বদনাৎ ততঃ। নিশ্চক্রাম মহৎ তেজঃ ব্রহ্মণঃ শঙ্করস্য চ।। ৯]

দেবতাদের থেকে এই কথা শুনে, ক্রোধে মধুসূদন ও শম্ভু উভয়ের মুখই ভ্রূকুটি-কুটিল হয়ে উঠল। প্রচণ্ড ক্রোধে বিষ্ণু, মহেশ্বর ও ব্রহ্মার মুখ থেকে মহাতেজের বিকিরণ শুরু হল।

 অন্যেষাঞ্চৈব দেবানাং শক্রাদীনাং শরীরতঃ।

নির্গতং সুমহৎ তেজস্তচ্চৈক্যং সমগচ্ছত।। ১০

অতীব তেজসঃ কূটং জ্বলন্তমিব পর্বতম্‌।

দদৃশুস্তে সুরাস্তত্র জ্বালাব্যাপ্তদিগন্তরম্‌।। ১১

[অন্যেষান্‌ চ এব দেবানাম্‌ শক্রাদীনাম্‌ শরীরতঃ। নির্গতম্‌ সুমহৎ তেজঃ তৎ চ ঐক্যম্‌ সমগচ্ছত।। ১০

অতীব তেজসঃ কূটম্‌ জ্বলন্তম্‌ ইব পর্বতম্‌। দদৃশুঃ তে সুরাঃ তত্র জ্বালা-ব্যাপ্ত-দিক্‌-অন্তরম্‌।। ১১]

শক্র অর্থাৎ ইন্দ্রাদি অন্য সকল দেবতাদের শরীর থেকেও, বিপুল তেজ বিকির্ণ হয়ে একত্রে সঞ্চিত হতে লাগল। দেবতাদের এই সুতীব্র সম্মিলিত তেজপুঞ্জ, জ্বলন্ত ও দীপ্ত পর্বতের মতো বহুদূর বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকেও দেখা যাচ্ছিল।

অতুলং তত্র তত্তেজঃ সর্বদেবশরীরজম্‌।

একস্থং তদ্ভূন্নারী ব্যাপ্তলোকত্রয়ং ত্বিষা।। ১২

যদ্ভূচ্ছাম্ভবং তেজস্তেনাজায়ত তন্মুখম্‌।

যাম্যেন চাভবন কেশা বাহবো বিষ্ণুতেজসা।। ১৩

সৌম্যেন স্তনয়োর্যুগ্মং মধ্যং চৈন্দ্রেণ চাভবৎ।

বারুণেন চ জঙ্ঘোরূ নিতম্বস্তেজসা ভুবঃ।। ১৪

[অতুলম্‌ তত্র তৎ তেজঃ সর্ব-দেব-শরীরজম্‌। একস্থং তৎ অভূৎ নারী ব্যাপ্ত-লোক-ত্রয়ং ত্বিষা।। ১২

যৎ অভূৎ শাম্ভবম্‌ তেজঃ তেন অজায়ত তৎ-মুখম্‌। যাম্যেন চ অভবন কেশা বাহবো বিষ্ণু-তেজসা।। ১৩

সৌম্যেন স্তনয়োঃ যুগ্মম্‌ মধ্যম্‌ চ ইন্দ্রেণ চ অভবৎ। বারুণেন চ জঙ্ঘা-উরূ নিতম্বঃ তেজসা ভুবঃ।। ১৪]

তারপর সকল দেব-শরীরের সেই সম্মিলিত ও ত্রিভুবনব্যাপী দীপ্ত তেজপুঞ্জ একত্র হয়ে এক নারী মূর্তি ধারণ করল। ভগবান শম্ভুর তেজ থেকে সৃষ্টি হল তাঁর মুখ। দেবতা যম থেকে সৃষ্টি হল তাঁর কেশরাজি। ভগবান বিষ্ণুর থেকে তাঁর অষ্টবাহু, চন্দ্রের থেকে তাঁর স্তনযুগল, ইন্দ্রের থেকে মধ্যদেশ (কটি), বরুণের থেকে দুই উরু ও জঙ্ঘা এবং পৃথিবীর তেজ থেকে সৃষ্টি হল তাঁর নিতম্ব।

 ব্রহ্মণতেজসা পাদৌ তদঙ্গুল্যোঽর্কতেজসা।

বসূনাঞ্চ করাঙ্গুল্যঃ কৌবরেণ চ নাসিকা।। ১৫

তস্যাস্তু দন্তাঃ সম্ভূতাঃ প্রাজাপত্যেন তেজসা।

নয়নত্রিতয়ং জজ্ঞে তথা পাবক তেজসা।। ১৬

ভ্রুবৌ চ সন্ধ্যয়োস্তেজঃ শ্রবণাবিনলস্য চ।

অন্যেষাঞ্চৈব দেবানাং স্মভবস্তেজসাং শিবা।। ১৭

[ব্রহ্মণ-তেজসা পাদৌ তৎ অঙ্গুল্যঃ অর্ক-তেজসা। বসূনান্‌ চ করাঙ্গুল্যঃ কৌবরেণ চ নাসিকা।। ১৫

তস্যা অস্তু দন্তাঃ সম্ভূতাঃ প্রাজাপত্যেন তেজসা। নয়ন-ত্রিতয়ং জজ্ঞে তথা পাবক তেজসা।। ১৬

ভ্রুবৌ চ সন্ধ্যয়োঃ তেজঃ শ্রবণৌ অনিলস্য চ। অন্য এষান্‌ চ এব দেবানাম্‌ সম্ভবঃ তেজসাম্‌ শিবা।। ১৭]

ব্রহ্মার তেজে তাঁর পদযুগল, সূর্যের তেজে তাঁর পায়ের অঙ্গুলি, অষ্টবসুর থেকে তাঁর হাতের আঙুল এবং কুবেরের থেকে সৃষ্টি হল তাঁর নাক। দক্ষাদি প্রজাপতিদের তেজে সৃষ্টি হল তাঁর দাঁতের সারি এবং অগ্নির তেজে সৃষ্টি হল তাঁর ত্রিনয়ন। সন্ধ্যাদ্বয়ের তেজে সৃষ্টি হল তাঁর ভ্রূ-যুগল, বায়ুর থেকে তাঁর দুই কর্ণ এবং অন্যান্য দেবতাদের তেজ থেকে দেবী শিবা অর্থাৎ দুর্গার আবির্ভাব হল।

[সন্ধ্যার দুই দেবী – প্রাতঃসন্ধ্যা (রাত্রি-শেষ ও দিন-শুরুর সন্ধিকাল) ও সায়ংসন্ধ্যা (দিন-শেষ ও রাত্রি-শুরুর সন্ধিকাল]

ততঃ সমস্তদেবানাং তেজোরাশিসমুদ্ভবাম্‌।

তাং বিলোক্য মুদং প্রাপুরমরা মহিষার্দিতাঃ।। ১৮

শূলং শূলাদ্‌ বিনিষ্কৃস্য দদৌ তস্যৈ পিনাকধৃক্‌।

চক্রঞ্চ দত্তবান্‌ কৃষ্ণঃ সমুৎপাদ্য স্বচক্রতঃ।। ১৯

[ততঃ সমস্ত-দেবানাম্‌ তেজঃ-রাশি-সমুদ্ভবাম্‌। তাম্‌ বিলোক্য মুদম্‌ প্রাপুঃ অমরাঃ মহিষ-অর্দিতাঃ।। ১৮

শূলং শূলাদ্‌ বিনিষ্কৃস্য দদৌ তস্যৈ পিনাক-ধৃক্‌। চক্রম্‌ চ দত্তবান্‌ কৃষ্ণঃ সমুৎপাদ্য স্ব-চক্রতঃ।। ১৯]

সকল দেবতাদের তেজরাশি থেকে তাঁকে আবির্ভূতা হতে দেখে, মহিষাসুর-পীড়িত-দেবতারা আনন্দিত হলেন। পিনাকধারী মহাদেব তাঁর ত্রিশূল থেকে আরেকটি শূল এবং ভগবান বিষ্ণু তাঁর নিজের চক্র থেকে আরেকটি চক্র সৃষ্টি করে, তাঁর হাতে সমর্পণ করলেন।

 শঙ্খঞ্চ বরুণঃ শক্তিং দদৌ তস্যৈ হুতাশনঃ।

মারুতো দত্তবাংশ্চাপং বাণপূর্ণে তথেষুধী।। ২০

বজ্রমিন্দ্রঃ সমুৎপাদ্য কুলিশাদমরাধিপঃ।

দদৌ তস্যৈ সহস্রাক্ষো ঘন্টামৈরাবতাদ্‌ গজাৎ।। ২১

[শঙ্খম্‌ চ বরুণঃ শক্তিং দদৌ তস্যৈ হুতাশনঃ। মারুতঃ দত্তবান্‌ চাপং বাণপূর্ণে তথা ইষুধী।। ২০

বজ্রম্‌ ইন্দ্রঃ সমুৎপাদ্য কুলিশাদ্‌ অমর-অধিপঃ। দদৌ তস্যৈ সহস্র-অক্ষঃ ঘন্টাম্‌ ঐরাবতাৎ গজাৎ।। ২১]

এরপর বরুণদেব তাঁকে দিলেন শঙ্খ, অগ্নি দিলেন শক্তিশেল, বায়ুদেব মরুৎ দিলেন ধনুক ও তিরপূর্ণ তূণীর। দেবরাজ সহস্রলোচন ইন্দ্র তাঁর বজ্র থেকে আরেকটি বজ্র দিলেন এবং তাঁর ঘন্টাযুক্ত ঐরাবত হাতির থেকে অন্য একটি হাতি দিলেন।

কালদণ্ডাদ্‌ যমো দণ্ডং পাশঞ্চাম্বুপতির্দদৌ।

প্রজাপতিশ্চাক্ষমালাং দদৌ ব্রহ্মা কমণ্ডলুম্‌।২২

সমস্তরোমকূপেষু নিজরশ্মীন্‌ দিবাকরঃ।

কালশ্চ দত্তবান খড়্গং তস্যাশ্চর্ম চ নির্মলম্‌।। ২৩

[কাল-দণ্ডাৎ যমঃ দণ্ডম্‌ পাশম্‌ চ অম্বু-পতিঃ দদৌ। প্রজাপতিঃ চ অক্ষমালাম্‌ দদৌ ব্রহ্মা কমণ্ডলুম্‌।। ২২

সমস্ত-রোমকূপেষু নিজ-রশ্মীন্‌ দিবাকরঃ। কালঃ চ দত্তবান খড়্গম্‌ তস্যাঃ চর্ম চ নির্মলম্‌।। ২৩]

যম তাঁর কালদণ্ড থেকে একটি দণ্ড, অম্বুপতি-বরুণ দিলে পাশ-অস্ত্র। প্রজাপতি দিলেন রুদ্রাক্ষমালা এবং ব্রহ্মা দিলেন কমণ্ডলু। দেবীর সমস্ত রোমকূপে সূর্য দিলেন তাঁর নিজের জ্যোতি এবং কাল দিলেন একটি খড়্গ ও একটি পরিচ্ছন্ন ঢাল।

ক্ষীরোদশ্চামলং হারমজরে চ তথাম্বরে।

চূড়ামণিং তথা দিব্যং কুণ্ডলে কটকানি চ।। ২৪

অর্ধচন্দ্রং তথা শুভ্রং কেয়ুরান্‌ সর্ববাহুষু।

নূপুরৌ বিমলৌ তদবদ্‌ গ্রৈবেয়কমনুত্তমম্‌।

অঙ্গুরীয়করত্নানি সমস্তাস্বঙ্গুলিষু চ।। ২৫

[ক্ষীরোদঃ চ অমলম্‌ হারম্‌ অজরে চ তথা অম্বরে। চূড়ামণিম্‌ তথা দিব্যম্‌ কুণ্ডলে কটকানি চ।। ২৪

অর্ধচন্দ্রম্‌ তথা শুভ্রম্‌ কেয়ুরান্‌ সর্ববাহুষু। নূপুরৌ বিমলৌ তদবৎ গ্রৈবেয়কম্‌ অনুত্তমম্‌। অঙ্গুরীয়ক-রত্নানি সমস্তাসু অঙ্গুলিষু চ।। ২৫]

ক্ষীরসমুদ্র তাঁকে দিলেন উজ্জ্বল কণ্ঠহার, সদা-নির্মল দুই বস্ত্র, দিব্য চূড়ামণি, দুটি কুণ্ডল ও হাতের বালা। ললাটে শুভ্র অর্ধচন্দ্র, সকল বাহুতে অঙ্গদ, উজ্জ্বল দুই নূপুর, অতীব সুন্দর কণ্ঠভূষণ, সমস্ত অঙ্গুলিতে রত্ন-অঙ্গুরীয়।

বিশ্বকর্মা দদৌ তস্যৈ পরশুঞ্চাতিনির্মলম্‌।

অস্ত্রাণ্যনেকরূপাণি তথাঽভেদ্যঞ্চ দংশনম্‌।। ২৬

অম্লানপঙ্কজং মালাং শিরস্যুরসি চাপরাম্‌।

অদদজ্জলধিস্তস্যৈ পঙ্কজঞ্চাতিশোভনম্‌।। ২৭

হিমবান্‌ বাহনং সিংহং রত্নানি বিবিধানি চ।

দদাবশূণ্যং সুরয়া পানপাত্রং ধনাধিপঃ।। ২৮

[বিশ্বকর্মা দদৌ তস্যৈ পরশুম্‌ চ অতিনির্মলম্‌। অস্ত্রাণি অনেক-রূপাণি তথা অভেদ্যম্‌ চ দংশনম্‌।। ২৬

অম্লান-পঙ্কজম্‌ মালাম্‌ শিরসি উরসি চা অপরাম্‌। অদদৎ জলধিঃ তস্যৈ পঙ্কজম্‌ চ অতিশোভনম্‌।। ২৭

হিমবান্‌ বাহনম্‌ সিংহম্‌ রত্নানি বিবিধানি চ। দদৌ অশূণ্যম্‌ সুরয়া পানপাত্রম্‌ ধনাধিপঃ।। ২৮]

দেব বিশ্বকর্মা দিলেন সুতীক্ষ্ণ কুঠার, বহুবিধ অস্ত্র এবং দুর্ভেদ্য কবচ। সমুদ্র তাঁর মাথায় ও বুকে পরিয়ে দিলেন অতীব মনোরম অম্লান পদ্মের মালা। হিমালয় তাঁকে বাহনরূপে একটি সিংহ দিলেন, আরও দিলেন বহু রত্নাদি। ধনরাজ কুবের দিলেন সুরাপূর্ণ অশেষ-পানপাত্র (যে পাত্রের পানীয় কখনও শেষ হয় না)।

শেষশ্চ সর্বনাগেশো মহামণিবিভূষিতম্‌।

নাগহারং দদৌ তস্যৈ ধত্তে যঃ পৃথিবীমিমাম্‌।। ২৯

অন্যৈরপি সুরৈর্দেবী ভূষণৈরায়ুধৈস্তথা।

সম্মানিতা ননাদোচ্চৈঃ সাট্টহাসং মুহুর্মুহুঃ।। ৩০

তস্যা নাদেন ঘোরেণ কৃৎস্নমাপূরিতং নভঃ।

অমায়তাতিমহতা প্রতিশব্দো মহানভূৎ।। ৩১

[শেষঃ চ সর্বনাগ-ঈশঃ মহামণি-বিভূষিতম্‌। নাগহারম্‌ দদৌ তস্যৈ ধত্তে যঃ পৃথিবীম্‌ ইমাম্‌।। ২৯

অন্যৈঃ অপি সুরৈঃ দেবী ভূষণৈঃ আয়ুধৈঃ তথা। সম্মানিতা ননাদ-উচ্চৈঃ সাট্টহাসম্‌ মুহুর্মুহুঃ।। ৩০

তস্যাঃ নাদেন ঘোরেণ কৃৎস্নম্‌ আপূরিতম্‌ নভঃ। অমায়তা অতিমহতা প্রতিশব্দঃ মহান্‌ অভূৎ।। ৩১]   

সকল নাগের রাজা শেষ, যিনি এই পৃথিবীকে ধারণ করেন, তিনি দেবীকে দিলেন মহামণি-ভূষিত নাগহার। অন্য দেবতারাও যখন দেবীকে নানান অলঙ্কার ও অস্ত্রাদি প্রদান করলেন, তখন মহা-সম্মানিতা দেবী উচ্চ অট্টহাস্য এবং বারবার হুঙ্কার করতে লাগলেন। তাঁর সেই ভয়ংকর গর্জনে সমগ্র আকাশ-বাতাস পূর্ণ হয়ে উঠল, বিপুল প্রতিধ্বনিতে রণিত হয়ে উঠল চারদিক।

 চুক্ষুভুঃ সকলা লোকাঃ সমুদ্রাশ্চ চকম্পিরে।

চচাল বসুধা চেলুঃ সকলাশ্চ মহীধরাঃ।। ৩২

জয়েতি দেবাশ্চ মুদা তামূচুঃ সিংহবাহিনীম্‌।

তুষ্টুবুর্মুনয়শ্চৈনাং ভক্তিনম্রাত্মমূর্তয়ঃ।। ৩৩

[চুক্ষুভুঃ সকলা লোকাঃ সমুদ্রাঃ চ চকম্পিরে। চচাল বসুধা চেলুঃ সকলাঃ চ মহীধরাঃ।। ৩২

জয়েতি দেবাঃ চ মুদা তাম্‌ ঊচুঃ সিংহ-বাহিনীম্‌। তুষ্টুবুঃ মুনয়ঃ চ এনাম্‌ ভক্তি-নম্র-আত্ম-মূর্তয়ঃ।। ৩৩]

দেবীর মহানাদে সকল লোক বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল, সকল সমুদ্র উত্তাল হল, পৃথিবী হল চঞ্চল এবং সকল পর্বত উঠল কেঁপে। দেবতারা আনন্দে দেবী সিংহবাহিনীর জয়-ধ্বনি ঘোষণা করলেন এবং মুনিরা ভক্তি-নিষ্ঠা ভরে, নতমস্তকে দেবীর স্তব করতে লাগলেন।

[পুরাণের মতে মোট চোদ্দটি লোক – ঊর্ধে সাতটি – ভূঃ, ভুবঃ, স্বঃ, মহঃ, জনঃ, তপঃ ও সত্য লোক বা ব্রহ্মলোক এবং নীচেয় সপ্তলোক – অতল, বিতল, সুতল, রসাতল, তলাতল, মহাতল ও পাতাল। 

সমুদ্র সাতটি – লবণ, ইক্ষু, সুরা, সর্পিঃ, দধি, দুগ্ধ ও জল।]

দৃষ্ট্বা সমস্তং সংক্ষুব্ধং ত্রৈলোক্যমম্রারয়ঃ।

সন্নদ্ধাখিলসৈন্যাস্তে সমুত্তস্থুরুদায়ুধাঃ।। ৩৪

আঃ কিমেতদিতি ক্রোধাদাভাষ্য মহিষাসুরঃ।

অভ্যধাবত তং শব্দমশেষৈরসুরৈর্বৃতঃ।। ৩৫

[দৃষ্ট্বা সমস্তম্‌ সংক্ষুব্ধম্‌ ত্রৈলোক্যম্‌ অমর-অরয়ঃ। সন্নদ্ধ অখিল-সৈন্যাঃ তে সমুত্তস্থ উদায়ুধাঃ।। ৩৪

আঃ কিম্‌ এতদ্‌ ইতি ক্রোধাৎ আভাষ্য মহিষাসুরঃ। অভ্যধাবত তম্‌ শব্দম্‌ অশেষৈঃ অসুরৈঃ বৃতঃ।। ৩৫]

সমস্ত ত্রিলোক আলোড়িত হওয়াতে, দেবারিদের সকল সৈন্যরা অস্ত্র উদ্যত করে যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হল। মহিষাসুর সক্রোধে বলল, “আঃ এসব আবার কী”, তারপর অসংখ্য অসুরদের সঙ্গে নিয়ে শব্দের উৎসে দৌড়ে গেল।

স দদর্শ ততো দেবীং ব্যাপ্তলোকত্রয়াং ত্বিষা।

পাদাক্রান্ত্যা নতভুবং কিরীটোল্লিখিতাম্বরাম্‌।। ৩৬

ক্ষোভিতাশেষপাতালাং ধনুর্জ্যানিঃস্বনেন তাম্‌।

দিশো ভুজসহস্রেণ সমন্তাদ্‌ব্যাপ্য সংস্থিতাম্‌।। ৩৭

ততঃ প্রববৃতে যুদ্ধং তয়া দেব্যা সুরদ্বিষাম্‌।

শস্ত্রাস্ত্রৈর্বহুধা মুক্তৈরাদীপিতদিগন্তরম্‌।। ৩৮

[সঃ দদর্শ ততঃ দেবীম্‌ ব্যাপ্ত-লোক-ত্রয়াম্‌ ত্বিষা। পাদ-আক্রান্ত্যা নত-ভুবম্‌ কিরীট উল্লিখিত-অম্বরাম্‌।। ৩৬

ক্ষোভিত অশেষ-পাতালাম্‌ ধনুঃ-জ্যা-নিঃস্বনেন তাম্‌। দিশঃ ভুজসহস্রেণ সমন্তাৎ ব্যাপ্য সংস্থিতাম্‌।। ৩৭

ততঃ প্রববৃতে যুদ্ধং তয়া দেব্যা সুর-দ্বিষাম্‌। শস্ত্র-অস্ত্রৈঃ বহুধা মুক্তৈঃ আদীপিত-দিগন্তরম্‌।। ৩৮]

সে তখন সেই দেবীকে দেখতে পেল - যাঁর জ্যোতিতে ত্রিলোক উদ্ভাসিত, যাঁর পদভারে পৃথিবী অবনত, যাঁর মুকুট গগন স্পর্শ করেছে। যাঁর ধনুর টংকারে পাতাল পর্যন্ত কেঁপে উঠছে, যাঁর সহস্রহাত সর্বদেশে সর্বদিকে ব্যাপ্ত হয়ে অবস্থান করছে। সেই দেবী তারপর দেব-বিদ্বেষীদের সঙ্গে প্রবল যুদ্ধে প্রবৃত্তা হলেন, তাঁর নিক্ষিপ্ত বহু অস্ত্র–শস্ত্রের প্রভায় দিক-দিগন্ত ঝলসে উঠতে লাগল।

 মহিষাসুরসেনানীশ্চিক্ষুরাখ্যো মহাসুরঃ।

যুযুধে চামরশ্চান্যৈশ্চতুরঙ্গবলান্বিতঃ।৩৯

রথানামযুতৈঃ ষড়্‌ভিরুদগ্রাখ্যো মহাসুরঃ।

অযুধ্যতাযুতানাঞ্চ সহস্রেণ মহাহনুঃ।। ৪০

[মহিষাসুর-সেনানীঃ চিক্ষুর-আখ্যঃ মহাসুরঃ। যুযুধে চামরঃ চ অন্যৈঃ চতুরঙ্গ-বলান্বিতঃ।। ৩৯

রথানাম্‌ অযুতৈঃ ষড়্‌ভিঃ উদগ্র-আখ্যঃ মহাসুরঃ। অযুধ্যত অযুতানম্‌ চ সহস্রেণ মহাহনুঃ।। ৪০]

মহিষাসুরের চিক্ষুর ও চামর নামের দুই সেনাপতি চতুরঙ্গ সেনা নিয়ে, আর ছয়-অযুত (ষাট হাজার) রথ নিয়ে উদগ্র নামের মহাসুর এবং সহস্র-অযুত (এককোটি) রথ নিয়ে মহাহনু যুদ্ধ করতে লাগল।

পঞ্চাশদ্ভিশ্চ নিযুতৈরসিলোমা মহাসুরঃ।

অযুতানাং শতৈঃ ষড়্‌ভির্বাস্কলো যুযুধে রণে।। ৪১

গজবাজিসহস্রৌঘৈরনেকৈঃ পরিবারিতঃ।

বৃতো রথানাং কোট্যা চ যুদ্ধে তস্মিন্নযুধ্যত।। ৪২

[পঞ্চাশদ্ভিঃ চ নিযুতৈঃ অসিলোমা মহাসুরঃ। অযুতানাম্‌ শতৈঃ ষড়্‌ভিঃ বাস্কলঃ যুযুধে রণে।। ৪১

গজ-বাজি-সহস্র-ওঘৈঃ অনেকৈঃ পরিবারিতঃ। বৃতঃ রথানাম্‌ কোট্যা চ যুদ্ধে তস্মিন্‌ অযুধ্যত।। ৪২]

পঞ্চাশ নিযুত (পাঁচ-কোটি) সৈন্য নিয়ে মহাসুর অসিলোমা আর ছশ’ অযুত (ষাট লক্ষ) সৈন্য নিয়ে বাস্কল সেই যুদ্ধে লড়াই করতে লাগল। সহস্র-সহস্র হাতি-ঘোড়া এবং এক কোটি সৈন্য পরিবৃত হয়ে অসুররা ভয়ানক যুদ্ধ করতে লাগল।

বিড়ালাক্ষোঽযুতানাঞ্চ পঞ্চাশদ্ভিরথাযুতৈঃ।

যুযুধে সংযুগে তত্র রথানাং পরিবারিত।। ৪৩

অন্যে চ তথাযুতশো রথনাগহয়ৈর্বৃতাঃ।

যুযুধুঃ সংযুগে দেব্যা সহ তত্র মহাসুরাঃ।। ৪৪

কোটিকোটিসহস্রৈস্তু রথানাং দন্তিনাং তথা।

হয়ানাঞ্চ বৃতো যুদ্ধে তত্রাভূন্মহিষাসুরঃ।। ৪৫

[বিড়ালাক্ষঃ অযুতানাম্‌ চ পঞ্চাশদ্ভিঃ-অথ-অযুতৈঃ। যুযুধে সংযুগে তত্র রথানাম্‌ পরিবারিতঃ।। ৪৩

অন্যে চ তথা অযুত-শঃ রথ-নাগ-হয়ৈঃ বৃতাঃ। যুযুধুঃ সংযুগে দেব্যা সহ তত্র মহাসুরাঃ।। ৪৪

কোটি-কোটি-সহস্রৈঃ তু রথানাম্‌ দন্তিনাম্‌ তথা। হয়ানাম্‌ চ বৃতঃ যুদ্ধে তত্র অভূৎ মহিষাসুরঃ।। ৪৫]

এরপর বিড়ালাক্ষ নামে মহাসুর পঞ্চাশ অযুত রথে পরিবৃত হয়ে সেই সংগ্রামে যোগ দিল। অন্যান্য মহাসুররাও বহু অযুত রথ, হস্তী ও ঘোড়ায় পরিবৃত হয়ে দেবীর সঙ্গে মহাযুদ্ধে প্রবৃত্ত হল। মহিষাসুর সেই যুদ্ধে কোটি-কোটি সহস্র রথ, হস্তী ও ঘোড়ায় পরিবৃত হয়ে উপস্থিত ছিল।

[ দেবী মাহাত্ম্য প্রচার করতে গিয়ে, পুরাণ-কবি সৈন্য সংখ্যার অতিরঞ্জনের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছেন – একথা মানতেই হবে।]  

 তোমরৈর্ভিন্দিপালৈশ্চ শক্তিভির্মুসলৈস্তথা।

যুযুধুঃ সংযুগে দেব্যা খড়্গৈঃ পরশুপট্টিশৈঃ।। ৪৬

কেচিচ্চ চিক্ষিপুঃ শক্তীঃ কেচিৎ পাশাংস্তথাপরে।

দেবীং খড়্গপ্রহারৈস্তু তে তাং হন্তুং প্রচক্রমুঃ।। ৪৭

[তোমরৈঃ ভিন্দিপালৈঃ চ শক্তিভিঃ মুসলৈঃ তথা। যুযুধুঃ সংযুগে দেব্যা খড়্গৈঃ পরশু-পট্টিশৈঃ।। ৪৬

কেচিৎ চ চিক্ষিপুঃ শক্তীঃ কেচিৎ পাশান্‌ তথা অপরে। দেবীম্‌ খড়্গ-প্রহারৈঃ তু তে তাম্‌ হন্তুম্‌ প্রচক্রমুঃ।। ৪৭]

(অসুররা) শাবল, ভিন্দিপাল, শক্তি, মুসল খড়্গ, পরশু ও পট্টিশ নিয়ে দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগল। কেউ কেউ শক্তি, কেউ কেউ পাশ নিক্ষেপ করে এবং অন্যরা খড়্গের আঘাতে দেবীকে হত্যা করতে উদ্যত হল।

সাপি দেবী ততস্তানি শস্ত্রাণ্যস্ত্রাণি চণ্ডিকা।

লীলয়ৈব প্রচিচ্ছেদ নিজশস্ত্রাস্ত্রবর্ষিণী।। ৪৮

অনায়স্তাননা দেবী স্তূয়মানা সুরর্ষিভিঃ।

মুমোচাসুরদেহেষু শস্ত্রাণ্যস্ত্রাণি চণ্ডিকা।। ৪৯

সোঽপি ক্রুদ্ধো ধূতসটো দেব্যা বাহনকেশরী।

চচারাসুরসৈন্যেষু বনেষ্বিব হুতাশনঃ।। ৫০

[সা অপি দেবী ততঃ তানি শস্ত্রাণি-অস্ত্রাণি চণ্ডিকা। লীলয়া এব প্রচিচ্ছেদ নিজ-শস্ত্র-অস্ত্র-বর্ষিণী।। ৪৮

অনায়স্ত-আননা দেবী স্তূয়মানা সুর-ঋষিভিঃ। মুমোচ অসুরদেহেষু শস্ত্রাণি-অস্ত্রাণি চণ্ডিকা।। ৪৯

সঃ অপি ক্রুদ্ধঃ ধূত-সটঃ দেব্যা বাহন-কেশরী। চচার অসুরসৈন্যেষু বনেষু ইব হুতাশনঃ।। ৫০]

তখন দেবীচণ্ডিকাও নিজের অস্ত্রশস্ত্র নিক্ষেপ করে, তাদের অস্ত্রশস্ত্রকে অবলীলায় প্রতিহত করতে লাগলেন। দেবতা ও ঋষিদের স্তবের মধ্যেই দেবীচণ্ডিকা প্রশান্ত-মুখে অসুরদেহে অস্ত্রশস্ত্র বিদ্ধ করতে লাগলেন। প্রচণ্ড ক্রোধে তাঁর বাহন সিংহেরও কেশর ফুলে উঠল, অরণ্যের মধ্যে দাবানলের মতো সে অসুরসৈন্যদের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগল।

নিঃশ্বাসান্মুমুচে যাংশ্চ যুধ্যমানা রণেঽম্বিকা

ত এব সদ্যঃ সম্ভূতা গণাঃ শতসহস্রশঃ।। ৫১

যুযুধুস্তে পরশুভির্ভিন্দিপালাসিপট্টিশৈঃ।

নাশয়ন্তোঽসুরগণান্‌ দেবীশক্ত্যুপবৃংহিতাঃ।। ৫২

[নিঃশ্বাসাৎ মুমুচে যান্‌ চ  যুধ্যমানা রণে অম্বিকাত এব সদ্যঃ সম্ভূতা গণাঃ শত-সহস্রশঃ।। ৫১

যুযুধুঃ তে পরশুভিঃ-ভিন্দিপাল-অসি-পট্টিশৈঃ। নাশয়ন্তঃ অসুরগণান্‌ দেবী-শক্তি-উপবৃংহিতাঃ।। ৫২]

যুদ্ধরতা দেবী অম্বিকার প্রতিটি নিঃশ্বাস মোচনে শত-সহস্র দেবী-সৈন্যের উদ্ভব হতে লাগল। তাদের মধ্যে দেবীরই শক্তি সঞ্চারিত হওয়াতে, তারাও পরশু-ভিন্দিপাল-অসি-পট্টিশ নিয়ে অসুরদের বিনাশ করতে লাগল।

 

অবাদয়ন্ত পটহান্‌ গণাঃ শঙ্খাংস্তথাপরে।

মৃদঙ্গাংশ্চ তথৈবান্যে তস্মিন্‌ যুদ্ধমহোৎসবে।। ৫৩

ততো দেবী ত্রিশূলেন গদয়া শক্তিবৃষ্টিভিঃ।

খড়্গাদিভিশ্চ শতশো নিজঘান মহাসুরান্‌।। ৫৪

পাতয়ামাস চৈবান্যান্‌ ঘন্টাস্বনবিমোহিতান্‌।

অসুরান্‌ ভুবি পাশেন বদ্ধা চান্যানকর্ষয়ৎ।। ৫৫

[অবাদয়ন্ত পটহান্‌ গণাঃ শঙ্খান্‌ তথা অপরে। মৃদঙ্গান্‌ চ তথা এব অন্যে তস্মিন্‌ যুদ্ধ-মহোৎসবে।। ৫৩

ততঃ দেবী ত্রিশূলেন গদয়া শক্তিবৃষ্টিভিঃ। খড়্গাদিভিঃ চ শতশঃ নিজঘান মহাসুরান্‌।। ৫৪

পাতয়ামাস চ এব অন্যান্‌ ঘন্টাস্বন-বিমোহিতান্‌। অসুরান্‌ ভুবি পাশেন বদ্ধা চ অন্যান অকর্ষয়ৎ।। ৫৫]

এরপর দেবী-সৈন্যরা যখন ঢাক, শঙ্খ ও মৃদঙ্গ বাজাতে শুরু করলেন, তখন সেই যুদ্ধ মহোৎসব হয়ে উঠল। বৃষ্টির মতো ত্রিশূল, গদা, শক্তি ও খড়্গ নিক্ষেপ করে দেবী শত-শত মহাসুরকে নিহত করতে লাগলেন। কেউ কেউ তাঁর ঘন্টাধ্বনিতে বিমুগ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল, বহু অসুরকে তিনি রজ্জুতে বদ্ধ করে টেনে নিলেন।

কেচিদ্দ্বধাকৃতাস্তীক্ষ্ণৈঃ খড়্গপাতৈস্তথাপরে।

বিপোথিতা নিপাতেন গদয়া ভুবি শেরতে।। ৫৬

বেমুশ্চ কেচিদ্রুধিরং মুষলেন ভৃশং হতাঃ।

কেচিন্নিপাতিতা ভূমৌ ভিন্নাঃ শূলেন বক্ষসি।। ৫৭

নিরন্তরাঃ শরোঘেন কৃতাঃ কেচিদ্রণাজিরে।

সেনানুকারিণঃ প্রাণান্‌ মুমুচুস্ত্রিদশার্দনাঃ।। ৫৮

কেষাঞ্চিদ্‌ বাহবাশ্ছিন্নাশ্ছিন্নগ্রীবাস্তথাপরে।

শিরাংসি পেতুরন্যেষামন্যে মধ্যে বিদারিতাঃ।। ৫৯

বিচ্ছিন্নজঙ্ঘাস্ত্বপরে পেতুরুর্ব্যাং মহাসুরাঃ।

একবাহ্বক্ষিচরণাঃ কেচিদ্দেব্যা দ্বিধাকৃতাঃ।। ৬০

[কেচিৎ দ্বিধাকৃতাঃ তীক্ষ্ণৈঃ খড়্গ-পাতৈঃ তথা অপরে। বিপোথিতা নিপাতেন গদয়া ভুবি শেরতে।। ৫৬

বেমুঃ চ কেচিৎ রুধিরম্‌ মুষলেন ভৃশম্‌ হতাঃ। কেচিৎ নিপাতিতা ভূমৌ ভিন্নাঃ শূলেন বক্ষসি।। ৫৭

নিরন্তরাঃ শর-ওঘেন কৃতাঃ কেচিৎ রণ-অজিরে। সেনা-অনুকারিণঃ প্রাণান্‌ মুমুচুঃ ত্রিদশ-অর্দনাঃ।। ৫৮

কেষান্‌ চিৎ বাহবাঃ ছিন্নাঃ ছিন্ন-গ্রীবাঃ তথা অপরে। শিরাংসি পেতুঃ অন্যেষাম্‌ অন্যে মধ্যে বিদারিতাঃ।। ৫৯

বিচ্ছিন্ন-জঙ্ঘাঃ তু অপরে পেতুঃ উর্ব্যাম্‌ মহাসুরাঃ। এক-বাহু-অক্ষি-চরণাঃ কেচিৎ দেব্যা দ্বিধা-কৃতাঃ।। ৬০]

কেউ কেউ তাঁর তীক্ষ্ণ খড়্গের আঘাতে দুটুকরো হল, কেউ ধরাশায়ী হল তাঁর গদার আঘাতে। কেউ তাঁর মুষলের আঘাতে রক্ত-বমি করতে করতে ভয়ংকর মৃত্যু বরণ করল, কেউ তাঁর শূলে বিদ্ধ বক্ষ নিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। দেব-শত্রু সেনাদের মধ্যে যারা সামনে ছিল, তারা তাঁর নিরবচ্ছিন্ন তিরের আঘাতে জর্জর (শজারুর মতো) হয়ে রণস্থলে প্রাণত্যাগ করল। তিনি কারো বাহু কেটে ফেললেন, কারো কাটলেন গলা, কারো মাথা ছিন্ন করলেন, কারো পেট কেটে ফেললেন। কোন কোন মহাসুর ছিন্ন-জঙ্ঘা হয়ে মাটিতে পড়ে রইল, কেউ কেউ দেবীর আঘাতে – একবাহু, একচক্ষু, একপদ নিয়ে – দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল।

 ছিন্নেঽপি চান্যে শিরসি পতিতাঃ পুনরুত্থিতাঃ।। ৬১

কবন্ধা যুযুধুর্দেব্যা গৃহীতপরমায়ুধাঃ।

ননৃতুশ্চাপরে তত্র যুদ্ধে তূর্যলয়াশ্রিতাঃ।। ৬২

কবন্ধাশ্ছিন্নশিরসঃ খড়্গশক্ত্যৃষ্টিপাণয়ঃ।

তিষ্ঠ তিষ্ঠেতি ভাষন্তো দেবীমন্যে মহাসুরাঃ।। ৬৩

পাতিতৈ রথনাগাশ্বৈরসুরৈশ্চ বসুন্ধরা।

অগম্যা সাঽভবত্তত্র যত্রাভূৎ স মহারণঃ।। ৬৪

[ছিন্নে অপি চ অন্যে শিরসি পতিতাঃ পুনরুত্থিতাঃ।। ৬১

কবন্ধাঃ যুযুধুঃ দেব্যা গৃহীত-পরম-আয়ুধাঃ। ননৃতুঃ চ অপরে তত্র যুদ্ধে তূর্যলয় আশ্রিতাঃ।। ৬২

কবন্ধাঃ ছিন্নশিরসঃ খড়্গ-শক্তি-ঋষ্টি-পাণয়ঃ। তিষ্ঠ তিষ্ঠ ইতি ভাষন্তঃ দেবীম্‌ অন্যে মহাসুরাঃ।। ৬৩

পাতিতৈ রথ-নাগ-অশ্বৈঃ-অসুরৈঃ চ বসুন্ধরা। অগম্যা সা অভবৎ তত্র যত্র অভূৎ স মহারণঃ। ৬৪]

কেউ কেউ ছিন্ন শির হয়েও মাটি থেকে উঠে দাঁড়াল। কিছু কবন্ধ পরম-অস্ত্র হাতে নিয়ে দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগল, অন্য কবন্ধদের কেউ রণবাদ্যের তালে নৃত্য করতে লাগল। ছিন্নশির কবন্ধরা হাতে খড়্গ, শক্তি, ঋষ্টি নিয়ে এবং অন্য মহাসুরেরা দেবীকে “দাঁড়াও, দাঁড়াও” বলে উঠল। যে স্থানে মহাযুদ্ধ হচ্ছিল, সেখানে মাটিতে পড়ে থাকা রথ, হস্তী, ঘোড়া এবং অসুরের দেহের জন্যে, অগম্য হয়ে উঠেছিল।

 শোণিতৌঘা মহানদ্যঃ সদ্যস্তত্র বিসুস্রুবঃ।

মধ্যে চাসুরসৈন্যস্য বারণাসুরবাজিনাম্‌।। ৬৫

ক্ষণেন তন্মহাসৈন্যমসুরাণাং তথাম্বিকা।

নিন্যে ক্ষয়ং যথা বহ্নিস্তৃণদারুমহাচয়ম্‌। ৬৬

স চ সিংহো মহানাদমুৎসৃজন্‌ ধূতকেশরঃ।

শরীরেভ্যোঽমরারীণামসূনিব বিচিন্বতি।। ৬৭

[শোণিত-ওঘাঃ মহানদ্যঃ সদ্যঃ তত্র বিসুস্রুবঃ। মধ্যে চ অসুরসৈন্যস্য বারণ-অসুর-বাজিনাম্‌।। ৬৫

ক্ষণেন তৎ মহাসৈন্যম্‌ অসুরাণাম্‌ তথা অম্বিকা। নিন্যে ক্ষয়ং যথা বহ্নিঃ-তৃণ-দারু মহাচয়ম্‌। ৬৬

সঃ চ সিংহো মহানাদম্‌ উৎসৃজন্‌ ধূত-কেশরঃ। শরীরেভ্যঃ অমর-অরীণাম্‌ অসূন্‌ ইব বিচিন্বতি।। ৬৭]

অসুরসৈন্যদের মধ্যে সেখানে হাতি-অসুর ও ঘোড়াদের রক্তের প্রবাহে মহানদী হয়ে উঠল। আগুন যেমন তৃণ বা কাঠকে নিমেষের মধ্যে দগ্ধ করে, তেমনি দেবী অম্বিকা অসুরদের মহাসৈন্যদের বিনাশ করতে লাগলেন। এমনকি দেবীবাহন সেই সিংহও কেশর ফুলিয়ে মহা গর্জনে, দেব-শত্রুদের দেহ থেকে প্রাণ চয়ন করতে লাগল।

দেব্যা গণৈশ্চ তৈস্তত্র  কৃতং যুদ্ধং তথাসুরৈঃ।

যথৈষাং তুতুষুর্দেবাঃ পুষ্পবৃষ্টিমুচো দিবি।। ৬৮

[দেব্যা গণৈঃ চ তৈঃ তত্র কৃতম্‌ যুদ্ধম্‌ তথা অসুরৈঃ। যথ এষাম্‌ তুতুষুঃ দেবাঃ পুষ্প-বৃষ্টি-মুচঃ দিবি।। ৬৮]

যুদ্ধক্ষত্রে দেবীর সেই সৈন্যরাও অসুরদের সঙ্গে এমন যুদ্ধ করেছিল যে, স্বর্গে দেবতারা তাঁদের সন্তোষ প্রকাশ করার জন্যে পুষ্পবৃষ্টি শুরু করলেন। 

 ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবী মাহাত্ম্যে মহিষাসুরসৈন্যবধো

নাম দ্বিতীয়োঽধ্যায়।

[ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়-পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবী মাহাত্ম্যে মহিষাসুর-সৈন্যবধঃ নাম দ্বিতীয়ঃ অধ্যায়।]

শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণের অন্তর্গত সাবর্ণি মনুর অধিকার কালে

মহিষাসুর-সৈন্যবধ নামক দেবীমাহাত্ম্য কথার দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত

 

মধ্যম চরিত

তৃতীয় অধ্যায়

ধ্যান

 

উদ্যদ্‌ভানুসহস্রকান্তিমরুণক্ষৌমাং শিরোমালিকাং।

রক্তালিপ্তপয়োধরাং জপবটীং বিদ্যামভীতিং বরাম্‌।।

হস্তাব্জৈর্দধতীং ত্রিনেত্রবিলসদ্বক্ত্রারবিন্দশ্রিয়ং।

দেবীং বদ্ধহিমাংশুরত্নমুকুটাং বন্দে সুমন্দস্মিতাম্‌।।

[উদ্যৎ-ভানু-সহস্র-কান্তিম্‌ অরুণ-ক্ষৌমাম্‌ শিরঃ-মালিকাম্‌ রক্ত-আলিপ্ত-পয়োধরাম্‌ জপবটীম্‌ বিদ্যাম্‌ অভীতিম্‌ বরাম্‌।। হস্ত-অব্জৈঃ দধতীম্‌ ত্রিনেত্র-বিলসৎ-বক্ত্র–অরবিন্দশ্রিয়ম্‌দেবীম্‌ বদ্ধ-হিমাংশু-রত্ন-মুকুটাম্‌ বন্দে সুমন্দ-স্মিতাম্‌।।]

উদীয়মান সহস্র সূর্যের মতো যাঁর দেহকান্তি, রক্তবর্ণ-ক্ষৌমবসনা, নরমুণ্ড-মালিনী, যাঁর স্তনযুগল রক্তে আলিপ্ত, যাঁর চার কমলকরে রুদ্রাক্ষমালা, বিদ্যা, অভয় এবং বরদা মুদ্রা, যাঁর মুখমণ্ডল ত্রিনেত্র শোভিত এবং পদ্মের মতো শ্রীময়ী। যাঁর মুকুটে রত্নরূপে চন্দ্র আবদ্ধ, সুস্মিতা সেই দেবীকে আমি বন্দনা করি।

 

মহিষাসুর বধ

 ঋষিরুবাচ।

নিহন্যমানং তৎ সৈন্যমবলোক্য মহাসুরঃ।

সেনানীশ্চিক্ষুরঃ কোপাদ্‌ যযৌ যোদ্ধুমথাম্বিকাম্‌।। ১

স দেবীং শরবর্ষেণ ববর্ষ সমরেঽসুরঃ।

যথা মেরুগিরেঃ শৃঙ্গং তোয়বর্ষেণ তোয়দঃ।। ২

[ঋষিঃ উবাচ। নিহন্যমানম্‌ তৎ সৈন্যম্‌ অবলোক্য মহাসুরঃ। সেনানীঃ চিক্ষুরঃ কোপাৎ যযৌ যোদ্ধুম্‌ অথ অম্বিকাম্‌।। ১

স দেবীম্‌ শরবর্ষেণ ববর্ষ সমর অসুরঃ। যথা মেরুগিরেঃ শৃঙ্গং তোয়বর্ষেণ তোয়দঃ।। ২]

ঋষি বললেন। অনন্তর অসুর-সেনাপতি চিক্ষুর, তার মহাসুর সৈন্যদের দেবীর হাতে নিহত হতে দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে দেবী অম্বিকার সঙ্গে যুদ্ধ করতে এগিয়ে এল। মেঘের ঘনবর্ষণে সুমেরু পর্বতের শিখর যেমন আছন্ন হয়, তেমনই অসুর সেই যুদ্ধে দেবীকে শরবর্ষণে আচ্ছন্ন করতে লাগল।

 

তস্য ছিত্বা ততো দেবী লীলয়ৈব শরোৎকরান্‌।

জঘান তুরগান্‌ বাণৈর্যন্তারঞ্চৈব বাজিনাম।। ৩

চিচ্ছেদ চ ধনুঃ সদ্যো ধ্বজঞ্চাতিসমুচ্ছ্রিতম্‌।

বিব্যাধ চৈব গাত্রেষু ছিন্নধন্বানমাশুগৈঃ।। ৪

[তস্য ছিত্বা ততঃ দেবী লীলয়া এব শর-উৎকরান্‌। জঘান তুরগান্‌ বাণৈঃ যন্তারনম্‌ চ এব বাজিনাম।। ৩

চিচ্ছেদ চ ধনুঃ সদ্যঃ ধ্বজম্‌ চ অতিসমুচ্ছ্রিতম্‌। বিব্যাধ চ এব গাত্রেষু ছিন্ন-ধন্বানম্‌ আশুগৈঃ।। ৪]

কিন্তু তার নিক্ষেপ করা তিরসমূহ দেবী অবহেলায় ছিন্ন করে, তার ঘোড়া এবং ঘোড়ার সহিসদের তিরের আঘাতে নিহত করলেন এবং তখনই তিনি মহাসুরের ধনুক এবং উঁচুতে উড়তে থাকা ধ্বজা ছিন্ন করলেন, তারপর ছিন্ন-ধনু অসুরের সর্বাঙ্গে তির বিদ্ধ করতে লাগলেন।

স ছিন্নধন্বা বিরথো হতাশ্বো হতসারথিঃ।

অভ্যধাবত তাং দেবীং খড়্গচর্মধরোঽসুরঃ।

সিংহমাহত্য খড়্গেন তীক্ষ্ণধারেন মূর্ধনি।

আজঘান ভুজে সব্যে দেবীমপ্যতিবেগবান।। ৬

তস্যাঃ খড়্গো ভুজং প্রাপ্য পফাল নৃপনন্দন।

ততো জগ্রাহ শূলং স কোপাদরুণলোচনঃ।। ৭

[সঃ ছিন্নধন্বা বিরথঃ হত-অশ্বঃ হত-সারথিঃ। অভ্যধাবত তাম্‌ দেবীম্‌ খড়্গ-চর্ম-ধরঃ অসুরঃ।

সিংহম্‌ আহত্য খড়্গেন তীক্ষ্ণধারেন মূর্ধনি। আজঘান ভুজে সব্যে দেবীম্‌ অপি অতি-বেগবান।। ৬

তস্যাঃ খড়্গঃ ভুজম্‌ প্রাপ্য পফাল নৃপনন্দন। ততঃ জগ্রাহ শূলম্‌ সঃ কোপাৎ অরুণ-লোচনঃ।। ৭]

ছিন্ন-ধনু, রথহীন, মৃত-অশ্ব এবং মৃত-সারথি সেই মহাসুর চিক্ষুর তখন খড়্গ ও ঢাল নিয়ে দেবীর দিকে ধেয়ে এল। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এসে, সে তার তীক্ষ্ণধার খড়্গ দিয়ে সিংহের মাথায় এবং দেবীর বাম বাহুতেও আঘাত করল। কিন্তু হে নৃপনন্দন (সুরথ), দেবীর হাতে লেগে তার খড়্গ ভেঙে গেল। তাতে ক্রোধে রক্তচক্ষু হয়ে চিক্ষুর হাতে তুলে নিল শূল।

চিক্ষেপ চ ততস্তত্তু ভদ্রকাল্যাং মহাসুরঃ।

জাজ্বল্যমানং তেজোভী রবিবিম্বমিবাম্বরাৎ।। ৮

দৃষ্ট্বা তদাপতচ্ছূলং দেবী শূলমমুঞ্চত।

তচ্ছূলং শতধা তেন নীতং স চ মহাসুরঃ।। ৯

হতে তস্মিন্‌ মহাবীর্যে মহিষস্য চমূপতৌ।

আজগাম গজারূঢ়শ্চামরস্ত্রিদশার্দনঃ।। ১০

[চিক্ষেপ চ ততঃ তৎ তু ভদ্রকাল্যাম্‌ মহাসুরঃ। জাজ্বল্যমানম্‌ তেজোভী রবি-বিম্বম্‌ ইব অম্বরাৎ।। ৮

দৃষ্ট্বা তৎ আপতৎ শূলম্‌ দেবী শূলম্‌ অমুঞ্চত। তৎ শূলম্‌ শতধা তেন নীতম্‌ সঃ চ মহাসুরঃ।। ৯

হতে তস্মিন্‌ মহাবীর্যে মহিষস্য চমূ-পতৌ। আজগাম গজ-আরূঢ়ঃ চামরঃ-ত্রিদশ-অর্দনঃ।। ১০]

আকাশের সূর্য-বিম্বের মতো উজ্জ্বল তেজময় সেই শূল, মহাসুর চিক্ষুর দেবীভদ্রকালীর দিকে নিক্ষেপ করল। দেবী সেই নিক্ষিপ্ত শূল দেখে নিজের শূলটি নিক্ষেপ করলেন এবং তার আঘাতে মহাসুর এবং তার নিক্ষিপ্ত শূল শত-টুকরো হয়ে গেল। মহিষের মহাবীর সেনাপতি নিহত হওয়াতে, দেব-পীড়ক চামরাসুর হাতির পিঠে চড়ে সেখানে উপস্থিত হল।

সোঽপি শক্তিং মুমোচাথ দেব্যাস্তামম্বিকা দ্রুতম্‌।

হুঙ্কারাভিহতাং ভূমৌ পাতয়ামাস নিষ্প্রভাম্‌।। ১১

ভগ্নাং শক্তিং নিপতিতাং দৃষ্ট্বা ক্রোধসমন্বিতঃ।

চিক্ষেপ চামরঃ শূলং বাণৈস্তদপি সাচ্ছিনৎ।। ১২

ততঃ সিংহঃ  সমুৎপত্য গজকুম্ভান্তরস্থিত।

বাহুযুদ্ধেন যুযুধে তেনোচ্চৈস্ত্রিদশারিণা।। ১৩

[সঃ অপি শক্তিম্‌ মুমোচ অথ দেব্যাঃ তাম্‌ অম্বিকা দ্রুতম্‌। হুঙ্কার-অভিহতাম্‌ ভূমৌ পাতয়ামাস নিষ্প্রভাম্‌।। ১১

ভগ্নাম্‌ শক্তিম্‌ নিপতিতাম্‌ দৃষ্ট্বা ক্রোধ-সমন্বিতঃ। চিক্ষেপ চামরঃ শূলম্‌ বাণৈঃ তৎ অপি সা অচ্ছিনৎ।। ১২

 ততঃ সিংহঃ  সমুৎপত্য গজ-কুম্ভ-অন্তরস্থিত। বাহুযুদ্ধেন যুযুধে তেন উচ্চৈঃ ত্রিদশ-অরিণা।। ১৩]

তারপর সেও দেবীর দিকে শক্তি নিক্ষেপ করল, দেবী অম্বিকা তখনই তাঁর প্রচণ্ড হুংকার ধ্বনিতে সেই শক্তিকে নিষ্প্রভ করে মাটিতে নামিয়ে আনলেন। ভাঙা শক্তিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে, ভয়ংকর ক্রোধান্বিত চামর শূল নিক্ষেপ করলেন, কিন্তু দেবীর তিরে সেটিও ছিন্ন হল। তখন দেবীর বাহন সিংহ লাফিয়ে উঠল হাতির মাথার দুই কুম্ভের মাঝখানে, তার সঙ্গে দেব-শত্রুর প্রবল বাহুযুদ্ধ শুরু হল।

 

যুধ্যমানৌ ততস্তৌ তু তস্মান্নাগান্মহীঙ্গতৌ।

যুযুধাতেঽতিসংরব্ধৌ প্রহারৈরতিদারুণৈঃ।। ১৪

ততো বেগাৎ খমুৎপত্য নিপত্য চ মৃগারিণা।

করপ্রহারেণ শিরশ্চামরস্য পৃথক্‌ কৃতম্‌।। ১৫

[যুধ্যমানৌ ততঃ তৌ তু তস্মাৎ নাগাৎ মহীম্‌ গতৌ। যুযুধাতে অতিসংরব্ধৌ প্রহারৈঃ অতিদারুণৈঃ।। ১৪

ততঃ বেগাৎ খম্‌-উৎপত্য নিপত্য চ মৃগারিণা। করপ্রহারেণ শিরঃ চামরস্য পৃথক্‌ কৃতম্‌।। ১৫]

দুজনেই যুদ্ধ করতে করতে হাতির পিঠ থেকে মাটিতে নেমে এল। তারপর ভয়ংকর ক্রুদ্ধ হয়ে অতি ভীষণ প্রহারে যুদ্ধ করতে লাগল। অকস্মাৎ ক্ষিপ্রবেগে সিংহ শূণ্যে লাফিয়ে উঠল এবং নিচে নেমে আসার সময় তার থাবার আঘাতে চামরের মাথা আলাদা করে দিল।

 উদগ্রশ্চ রণে দেব্যা শিলাবৃক্ষাদিভির্হতঃ।

দন্তমুষ্টিতলৈশ্চৈব করালশ্চ নিপাতিতঃ।। ১৬

দেবী ক্রুদ্ধা গদাপাতৈশ্চূর্ণয়ামাস চোদ্ধতম্‌।

বাস্কলং ভিন্দিপালেন বাণৈস্তাম্রং তথান্ধকম্‌। ১৭

[উদগ্রঃ চ রণে দেব্যাঃ শিলা-বৃক্ষাদিভিঃ হতঃ। দন্ত-মুষ্টি-তলৈঃ চ এব করালঃ চ নিপাতিতঃ।। ১৬

দেবী ক্রুদ্ধা গদাপাতৈঃ চূর্ণয়ামাস চ উদ্ধতম্‌। বাস্কলম্‌ ভিন্দিপালেন বাণৈঃ তাম্রম্‌ তথা অন্ধকম্‌। ১৭]

সেই যুদ্ধে দেবী শিলা ও পাথরের আঘাতে উদগ্রকে নিহত করলেন, দাঁত, মুষ্টি ও করতলের আঘাতে নিহত করলেন করালকে। ক্রুদ্ধা দেবী গদার আঘাতে চূর্ণ করলেন উদ্ধতকে, ভিন্দিপাল দিয়ে বাস্কলকে এবং তিরের আঘাতে তাম্র ও অন্ধক-অসুরকে বধ করলেন।

উগ্রাস্যমুগ্রবীর্যঞ্চ তথৈব চ মহাহনুম্‌।

ত্রিনেত্রা চ ত্রিশূলেন জঘান পরমেশ্বরী।। ১৮

বিড়ালস্যাসিনা কায়াৎ পাতয়ামাস বৈ শিরঃ।

দুর্ধরং দুর্মুখঞ্চোভৌ শরৈর্নিন্যে যমক্ষয়ম্‌।। ১৯

এবং সংক্ষীয়মাণে তু স্বসৈন্যে মহিষাসুরঃ।

মাহিষেণ স্বরূপেণ ত্রাসয়ামাস তান্‌ গণান্‌।। ২০

[উগ্রাস্যম্‌ উগ্রবীর্যম্‌ চ তথা এব চ মহাহনুম্‌। ত্রিনেত্রা চ ত্রিশূলেন জঘান পরমেশ্বরী।। ১৮

বিড়ালস্য অসিনা কায়াৎ পাতয়ামাস বৈ শিরঃ। দুর্ধরম্‌ দুর্মুখম্‌ চ উভৌ শরৈঃ নিন্যে যমক্ষয়ম্‌।। ১৯

এবম্‌ সংক্ষীয়মাণে তু স্বসৈন্যে মহিষাসুরঃ। মাহিষেণ স্বরূপেণ ত্রাসয়ামাস তান্‌ গণান্‌।। ২০]

ত্রিনয়নী পরমেশ্বরী ত্রিশূল দিয়ে বধ করলেন উগ্রাস্য, উগ্রবীর্য এবং মহাহনু অসুরকে। অসির আঘাতে বিড়ালাসুরের মাথা দেহ থেকে আলাদা করে ফেললেন এবং তির দিয়ে যমালয়ে পাঠালেন দুই অসুর দুর্ধর আর দুর্মুখকে। এইভাবে নিজের সৈন্যবল ক্ষীণ হতে দেখে মহিষাসুর মহিষের রূপ ধারণ করে দেবীসেনাদের সন্ত্রস্ত করতে লাগল।

কাংশ্চিত্তুণ্ডপ্রহারেণ খুরক্ষেপৈস্তথাপরান্‌।

লাঙ্গুলতাড়িতাংশ্চান্যান্‌ শৃঙ্গাভ্যাঞ্চ বিদারিতান্‌।। ২১

বেগেন কাংশ্চিদপরান্‌ নাদেন ভ্রমণেন চ।

নিঃশ্বাসপবনেনান্যান্‌ পাতয়ামাস ভূতলে।। ২২

[কাংশ্চিৎ তুণ্ড-প্রহারেণ খুর-ক্ষেপৈঃ তথা অপরান্‌। লাঙ্গুল-তাড়িতান্‌ চ অন্যান্‌ শৃঙ্গাভ্যাম্‌ চ বিদারিতান্‌।। ২১

বেগেন কাংশ্চিৎ অপরান্‌ নাদেন ভ্রমণেন চ। নিঃশ্বাস-পবনেন অন্যান্‌ পাতয়ামাস ভূতলে।। ২২]

কাউকে মুখের আঘাতে, অন্য কাউকে খুরের আঘাতে, কাউকে লেজের এবং আরও কাউকে শিঙের আঘাতে সে বিদীর্ণ করতে লাগল। কাউকে দ্রুত গতিবেগে, কাউকে গম্ভীর গর্জনে, কাউকে নিঃশ্বাস-বায়ুতে সে ভূতলশায়ী করতে লাগল।

 নিপাত্য প্রমথানীকমভ্যধাবত সোঽসুরঃ।

সিংহং হন্তুং মহাদেব্যাঃ কোপঞ্চক্রে ততোঽম্বিকা।। ২৩

সোঽপি কোপান্মহাবীর্যঃ খুরক্ষুণ্ণমহীতলঃ।

শৃঙ্গাভ্যাং পর্বতানুচ্চাংশ্চিক্ষেপ চ ননাদ চ।। ২৪

বেগভ্রমণবিক্ষুণ্ণা মহী তস্য ব্যশীর্যত।

লাঙ্গুলেনাহতশ্চাব্‌ধিঃ প্লাবয়ামাস সর্বতঃ।। ২৫

[নিপাত্য প্রমথ-অনীকম্‌ অভ্যধাবত সঃ অসুরঃ। সিংহম্‌ হন্তুম্‌ মহাদেব্যাঃ কোপম্‌ চক্রে ততঃ অম্বিকা।। ২৩

সঃ অপি কোপাৎ মহাবীর্যঃ খুর-ক্ষুণ্ণ-মহীতলঃ। শৃঙ্গাভ্যাং পর্বতান্‌ উচ্চান্‌ চিক্ষেপ চ ননাদ চ।। ২৪

বেগ-ভ্রমণ-বিক্ষুণ্ণা মহী তস্য ব্যশীর্যত। লাঙ্গুলেন আহতঃ চ অব্‌ধিঃ প্লাবয়ামাস সর্বতঃ।। ২৫]

সেই অসুর দেবীর প্রেত-সৈন্যদের সংহার করে, যখন তাঁর বাহন সিংহকে বধ করতে উদ্যত হল, তখন মহাদেবী ক্রুদ্ধা হয়ে উঠলেন। সেই মহাবীর অসুরও ক্রোধে খুর দিয়ে ভূমি বিদীর্ণ করতে লাগল, শিঙ দিয়ে উঁচু পাহাড় (দেবীর দিকে) নিক্ষেপ করে ভয়ংকর গর্জন করতে লাগল। ধরাতল তার সবেগ ছোটাছুটিতে ছিন্নভিন্ন হতে লাগল। তার লেজের আঘাতে সমুদ্র উত্তাল হয়ে সর্বত্র জলে প্লাবিত করল।

 ধুতশৃঙ্গবিভিন্নাশ্চ খণ্ডখণ্ডং যযুর্ঘনাঃ।

শ্বাসানিলাস্তাঃ শতশো নিপেতুর্নভসোঽচলাঃ।। ২৬

ইতি ক্রোধ সমাধ্মাতমাপতন্তং মহাসুরম্‌।

দৃষ্ট্বা সা চণ্ডিকা কোপং তদ্‌বধায় তদাকরোৎ।। ২৭

[ধুত-শৃঙ্গ-বিভিন্নাঃ চ খণ্ড-খণ্ডম্‌ যযুঃ ঘনাঃ। শ্বাস-অনিল-অস্তাঃ শতশঃ নিপেতুঃ নভসঃ-অচলাঃ।। ২৬

ইতি ক্রোধ সমাধ্মাতম্‌ আপতন্তম্‌ মহাসুরম্‌। দৃষ্ট্বা সা চণ্ডিকা কোপম্‌ তৎ বধায় তদা অকরোৎ।। ২৭]

তার তীক্ষ্ণ শিঙের আঘাতে মেঘ সকল ভেঙে খণ্ড-খণ্ড হয়ে গেল। তার নিঃশ্বাসের বাতাসে শতশত পাহাড় আকাশে উৎক্ষিপ্ত হয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ল। এইভাবে ক্রোধে উন্মত্ত মহিষাসুরকে দৌড়ে আসতে দেখে, তাকে বধ করার জন্য দেবী চণ্ডিকাও ক্রোধিতা হয়ে উঠলেন।

সা ক্ষিপ্ত্বা তস্য বৈ পাশং তং ববন্ধ মহাসুরম্‌।

তত্যাজ মাহিষং রূপং সোঽপি বদ্ধো মহামৃধে।। ২৮

ততঃ সিংহোঽভবৎ সদ্যো যাবত্তস্যাম্বিকা শিরঃ।

ছিনত্তি তাবৎ পুরুষঃ খড়্গপাণিরদৃশ্যত।। ২৯

[সা ক্ষিপ্ত্বা তস্য বৈ পাশং তম্‌ ববন্ধ মহাসুরম্‌। তত্যাজ মাহিষম্‌ রূপম্‌ সঃ অপি বদ্ধো মহামৃধে।। ২৮

ততঃ সিংহঃ অভবৎ সদ্যঃ যাবৎ তস্য অম্বিকা শিরঃ। ছিনত্তি তাবৎ পুরুষঃ খড়্গ-পাণিঃ অদৃশ্যত।। ২৯]

দেবী মহিষাসুরের দিকে পাশ নিক্ষেপ করে তাকে বেঁধে ফেললেন। সেও এই মহাযুদ্ধে পাশবদ্ধ হয়ে মহিষরূপ ত্যাগ করল এবং তখনই সিংহের রূপ ধারণ করল। এরপর যখন দেবী অম্বিকা তার মাথা ছিন্ন করে ফেললেন, তখনই সে খড়্গ-হাতে পুরুষ হয়ে দেখা দিল।

 তত এবাশু পুরুষং দেবী চিচ্ছেদ সায়কৈঃ।

তং খড়্গচর্মণা সার্ধং ততঃ সোঽভূন্মহাগজঃ।। ৩০

করেণ চ মহাসিংহং তং চকর্ষ জগর্জ চ।

কর্ষতস্তু করং দেবী খড়্গেন নিরকৃন্তত।। ৩১

ততো মহাসুরো ভূয়ো মাহিষং বপুরাশ্রিতঃ।

তথৈব ক্ষোভয়ামাস ত্রৈলোক্যং সচরাচরম্‌।। ৩২

[ততঃ এব আশু পুরুষম্‌ দেবী চিচ্ছেদ সায়কৈঃ। তম্‌ খড়্গচর্মণা সার্ধম্‌ ততঃ সঃ অভূৎ মহাগজঃ।। ৩০

করেণ চ মহাসিংহম্‌ তম্‌ চকর্ষ জগর্জ চ। কর্ষতঃ তু করম্‌ দেবী খড়্গেন নিরকৃন্তত।। ৩১

ততঃ মহাসুরঃ ভূয়ঃ মাহিষম্‌ বপুঃ-আশ্রিতঃ। তথা এব ক্ষোভয়ামাস ত্রৈলোক্যম্‌ সচরাচরম্‌।। ৩২]

দেবী তৎক্ষণাৎ খড়্গ-চর্ম সহ তাকে তিরে বিদ্ধ করলেন, তখন সে মহাহস্তীর রূপ ধারণ করল এবং তার শুঁড় দিয়ে দেবীর বাহন মহাসিংহকে টানতে টানতে গর্জন করতে লাগল। দেবী খড়্গ দিয়ে টানতে থাকা সেই শুঁড়টিকে কেটে ফেললেন। তখন মহাসুর আবার মহিষের শরীর ধারণ করল এবং আগের মতোই ত্রিলোক ও বিশ্ব-চরাচরকে আবার বিক্ষুব্ধ করে তুলল।

ততঃ ক্রুদ্ধা জগন্মাতা চণ্ডিকা পানমুত্তমম্‌।

পপৌ পুনঃ পুনশ্চৈব জহাসারুণলোচনা।। ৩৩

ননর্দ চাসুর সোঽপি বলবীর্যমদোদ্ধতঃ।

বিষাণাভ্যাঞ্চ চিক্ষেপ চণ্ডিকাং প্রতি ভূধরান্‌।। ৩৪

সা চ তান্‌ প্রহিতাংস্তেন চূর্ণয়ন্তী শরোৎকরৈঃ।

উবাচ তং মদোদ্ধূতমুখরাগাকুলাক্ষরম্‌।। ৩৫

[ততঃ ক্রুদ্ধাঃ জগৎ-মাতা চণ্ডিকা পানম্‌ উত্তমম্‌। পপৌ পুনঃ পুনঃ চ এব জহাস অরুণ-লোচনা।। ৩৩

ননর্দ চ অসুর সঃ অপি বল-বীর্য-মদ-উদ্ধতঃ। বিষাণাভ্যাম্‌ চ চিক্ষেপ চণ্ডিকাম্‌ প্রতি ভূধরান্‌।। ৩৪

সা চ তান্‌ প্রহিতান্‌ তেন চূর্ণয়ন্তী শর-উৎকরৈঃ। উবাচ তম্‌ মদ-উদ্ধূত-মুখ-রাগ আকুল-অক্ষরম্‌।। ৩৫]

তখন জগন্মাতা চণ্ডিকা ক্রোধে বারবার দিব্য সুরা পান করতে লাগলেন এবং আরক্ত নয়নে অট্টহাস্য করতে লাগলেন। সেই অসুর নিজের বল-বীর্যের অহংকারে উদ্ধত হয়ে গর্জন করতে করতে তার দুই শৃঙ্গ দিয়ে পাহাড় উপড়ে দেবী চণ্ডিকার দিকে নিক্ষেপ করতে লাগল। দেবীও অসুরের নিক্ষেপ করা পাহাড়গুলিকে তিরের আঘাতে চূর্ণ করতে করতে, মদ্যপানের ফলে আরক্তিম মুখে বিজড়িত স্বরে বললেন-।

[কি সাংঘাতিক কাণ্ড, তাই না? জগন্মাতা দেবী চণ্ডিকা প্রচণ্ড রাগে বারবার উত্তম পানীয় অর্থাৎ সুরা বা সোমরস পান করতে লাগলেন এবং অতিরিক্ত পানের ফলে মাতাল অবস্থায় বিদ্রূপ করে ধমক দিলেন মহিষাসুরকে। ভাবা যায়?]    

দেব্যুবাচ।

গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম্‌।

ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।। ৩৬

ঋষিরুবাচ।

এবমুক্ত্বা সমুৎপত্য সারূঢ়া তং মহাসুরম্‌।

পাদেনাক্রম্য কণ্ঠে চ শূলেনৈনমতাড়য়ৎ।। ৩৭

ততঃ সোঽপি পদাক্রান্তস্তয়া নিজমুখাত্ততঃ।

অর্ধনিষ্ক্রান্ত এবাসীৎ দেব্যা বীর্যেণ সংবৃতঃ।। ৩৮

[দেবী উবাচ। গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবামি অহম্‌। ময়া ত্বয়ি হতে অত্র এব গর্জিষ্যন্তি আশু দেবতাঃ।। ৩৬

ঋষিঃ উবাচ। এবম্‌ উক্ত্বা সমুৎপত্য সা আরূঢ়া তম্‌ মহাসুরম্‌। পাদেন আক্রম্য কণ্ঠে চ শূলেন এনম্‌ অতাড়য়ৎ।। ৩৭

ততঃ সঃ অপি পদাক্রান্তঃ তয়া নিজ-মুখাৎ ততঃ। অর্ধ-নিষ্ক্রান্ত এব আসীৎ দেব্যা বীর্যেণ সংবৃতঃ।। ৩৮]

দেবী বললেন, “ওরে মূর্খ, যতক্ষণ আমি মধু পান করছি, ততক্ষণ তুই খুব গর্জন করে নে। আমার হাতে একটু পরেই যখন তোর মরণ হবে, তখন এইখানেই দেবতারা আনন্দে গর্জন করবেন”।

ঋষি বললেন, এই কথা বলেই দেবী লাফ দিয়ে মহাসুরের উপর চড়ে, তাঁর পা দিয়ে তার কণ্ঠ চেপে ধরে শূল দিয়ে তাকে বিদ্ধ করতে লাগলেন। তখন সেই অসুরও দেবীর পায়ের চাপে, মহিষের মুখ থেকে অর্ধেক বেরিয়ে এল এবং দেবীর উগ্রতেজে অভিভূত হয়ে গেল।

অর্ধনিষ্ক্রান্ত এবাসৌ যুধ্যমানো মহাসুরঃ।

তয়া মহাঽসিনা দেব্যা শিরশ্ছিত্ত্বা নিপাতিতঃ।। ৩৯

ততো হাহাকৃতং সর্বং দৈত্যসৈন্যং ননাশ তৎ।

প্রহর্ষঞ্চ পরং জগ্মুঃ সকলা দেবতাগণাঃ।। ৪০

তুষ্টুবুস্তাং সুরা দেবীং সহ দিব্যৈর্মহর্ষিভিঃ।

জগুর্গন্ধর্বপতয়ো ননৃতুশ্চাপ্সরোগণাঃ।। ৪১

[অর্ধ-নিষ্ক্রান্ত এব অসৌ যুধ্যমানঃ মহাসুরঃ। তয়া মহা-অসিনা দেব্যা শিরঃ-ছিত্ত্বা নিপাতিতঃ।। ৩৯

ততঃ হাহাকৃতম্‌ সর্বম্‌ দৈত্যসৈন্যম্‌ ননাশ তৎ। প্রহর্ষম্‌ চ পরম্‌ জগ্মুঃ সকলাঃ দেবতাগণাঃ।। ৪০

তুষ্টুবুঃ তাম্‌ সুরাঃ দেবীং সহ দিব্যৈঃ মহর্ষিভিঃ। জগু গন্ধর্বপতয়ঃ ননৃতুঃ চ অপ্সরোগণাঃ।। ৪১]

সেই মহাসুর অর্ধমাত্র বের হয়েই তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগল এবং দেবীর মহাখড়্গের আঘাতে ছিন্ন-মস্তক হয়ে ধরাশায়ী হল। তখন (অবশিষ্ট) সকল দৈত্যসৈন্য হাহাকার করতে করতে পালিয়ে গেল এবং সকল দেবতারা পরম-আনন্দে উচ্ছসিত হলেন। স্বর্গের দেবতারা এবং মহর্ষিরা দেবীর স্তব শুরু করলেন। গন্ধর্বপতিরা গান ধরলেন এবং অপ্সরাগণ নৃত্য শুরু করলেন। 

   ইতি শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকে মন্বন্তরে দেবী মাহাত্ম্যে মহিষাসুরবধো

নাম তৃতীয়োঽধ্যায়।

শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণের অন্তর্গত সাবর্ণি মনুর অধিকার কালে

মহিষাসুর-বধ নামক দেবীমাহাত্ম্য কথার তৃতীয় অধ্যায় সমাপ্ত



...চলবে...


পরের পর্বে আসবে শ্রীশ্রী চণ্ডীর মধ্যম চরিত চতুর্থ অধ্যায় 

গ্রন্থঋণঃ স্বামী জগদীশ্বরানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয় এবং শ্রী সুবোধচন্দ্র মজুমদার, দেবসাহিত্য কুটির  

নতুন পোস্টগুলি

সুরক্ষিতা - শেষ পর্ব

  [এই ব্লগের প্রত্যেকটি লেখা সরাসরি আপনার মেলে পেতে চাইলে, ডান দিকের কলমে  " ফলো করুন"  👉  বক্সটি ক্লিক করে নিজের নাম ও মেল আইডি ...